শ্রবণশক্তি হানি বা শ্রুতিহানি বলতে কানে শোনা বা শ্রবণ করার আংশিক বা পূর্ণ অক্ষমতাকে বোঝায়।[৫] শ্রবণশক্তি হানি জন্মের সময়েই উপস্থিত থাকতে পারে কিংবা পরবর্তী জীবনে যেকোনও মুহূর্তে অর্জিত হতে পারে।[৬][৭] শ্রবণশক্তি হানি এক বা দুই কানেই ঘটতে পারে।[২] শিশুদের ক্ষেত্রে শ্রবণশক্তির সমস্যা ভাষা অর্জন প্রক্রিয়ায় ব্যাঘাত ঘটাতে পারে এবং প্রাপ্তবয়স্কদের মাঝে এটি সামাজিক আন্তঃক্রিয়া ও পেশাদারি কাজকর্মে ঝামেলার সৃষ্টি করতে পারে।[৮] শ্রবণশক্তি হানি সাময়িক বা স্থায়ী হতে পারে। বার্ধক্যজনিত কারণে শ্রবণশক্তি হানি সাধারণত দুই কানেই ঘটে থাকে; মূলত কর্ণকম্বুস্থ কেশকোষ হানির কারণে এটি ঘটে।[৯] কিছু ব্যক্তি, বিশেষ করে বৃদ্ধ বা প্রবীণ ব্যক্তিরা শ্রবণশক্তি হানির কারণে নিঃসঙ্গতায় ভুগতে পারেন।[২]বধির ব্যক্তিদের সাধারণত খুবই কম শ্রবণশক্তি থাকে বা একেবারেই থাকে না।[৬]
শ্রবণশক্তি হানি বেশ কিছুসংখ্যক কারণে হতে পারে, যাদের মধ্যে আছে: বংশগতি, জরাগ্রস্ততা (বুড়িয়ে যাওয়া), অপধ্বনির সংস্পর্শ, কিছু রোগজীবাণুর সংক্রমণ, জন্মকালীন জটিলতা, কানে আঘাত, এবং কিছু ঔষধ ও বিষাক্ত পদার্থ সেবন।[২] শ্রবণশক্তির একটি সাধারণ কারণ হল দীর্ঘমেয়াদী কর্ণ সংক্রমণ।[২] গর্ভাবস্থায় কিছু জীবাণু সংক্রমণ, যেমন সাইটোমেগালোভাইরাস, সিফিলিস ও রুবেলা, ইত্যাদি শিশুর মধ্যে শ্রবণশক্তি হানির কারণ হতে পারে।[২][১০] যখন শ্রবণশক্তি পরীক্ষাতে কোনও ব্যক্তি অন্তত একটি কানে ২৫ ডেসিবেল মাত্রার ধ্বনি শুনতে অক্ষম প্রমাণিত হন, তখন তার শ্রবণশক্তি হানি নির্ণীত হয়।[২] সমস্ত নবজাতকের জন্য দুর্বল শ্রবণশক্তির পরীক্ষার সুপারিশ করা হয়।[৮] শ্রবণশক্তি হানির মাত্রাকে মৃদু (২৫ থেকে ৪০ ডেসিবেল), মধ্যম (৪১ থেকে ৫৫ ডেসিবেল) এবং মধ্যম-গুরুতর (৫৬ থেকে ৭০ ডেসিবেল), গুরুতর (৭১ থেকে ৯০ ডেসিবেল) ও অতিগুরুতর (৯০ ডেসিবেলের বেশি) - এইরূপে শ্রেণীবিভক্ত করা হয়।[২] মূলত তিন প্রকারের শ্রবণশক্তি হানি হয়ে থাকে: সংবাহী, বেদন-স্নায়বিক ও মিশ্র শ্রবণশক্তি হানি[৩]
বৈশ্বিকভাবে প্রায় অর্ধেকসংখ্যক শ্রবণশক্তি হানির ঘটনা জনস্বাস্থ্য প্রতিকারমূলক ব্যবস্থার মাধ্যমে প্রতিরোধ করা সম্ভব।[২] এই প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা মধ্যে আছে টিকাদান, গর্ভাবস্থাকালীন সঠিক যত্ন, উচ্চ অপধ্বনি এড়িয়ে চলা ও কিছু বিশেষ ঔষধ পরিহার।[২]বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সুপারিশমতে তরুণ-তরুণীদের উচ্চধ্বনির সংস্পর্শে আসা সীমিত করা উচিত এবং ব্যক্তিগত ধ্বনিবাদক যন্ত্র ব্যবহারের পরিমাণ দৈনিক ১ ঘণ্টার সীমাবদ্ধ রাখা উচিত, যাতে অপধ্বনির সাথে সংস্পর্শে আসা সীমিত করা যায়।[১১] শিশুদের ক্ষেত্রে অবিলম্ব শনাক্তকরণ ও সহায়তা প্রদান খুবই গুরুত্বপূর্ণ।[২] বহু ব্যক্তির জন্য শ্রবণ সহায়ক যন্ত্র, ইশারা ভাষা, কর্ণকম্বু প্রোথ ও উপাখ্যার ব্যবহার উপকারী হতে পারে।[২] কেউ কেউ ঠোঁটের ভাষা পড়ার দক্ষতা অর্জন করাকে উপকারী মনে করেন।[২] তবে বিশ্বের বহু অঞ্চলেই শ্রবণসহায়ক যন্ত্র সুলভ নয়।[২]
২০১৩ সালের হিসাব অনুযায়ী বিশ্বের প্রায় ১১০ কোটি ব্যক্তি কমবেশি মাত্রায় শ্রবণশক্তি হানির শিকার।[১২] শ্রবণশক্তি হানি প্রায় ৪৬ কোটি ৬০ লক্ষ ব্যক্তির (বিশ্ব জনসংখ্যার প্রায় ৫%) জন্য পূর্ণ প্রতিবন্ধিতার সৃষ্টি করে এবং আরও প্রায় ১২ কোটি ৪০ লক্ষ ব্যক্তির জন্য মৃদু থেকে গুরুতর প্রতিবন্ধিতার কারণ।[২][১৩][১৪] শেষোক্ত মৃদু থেকে গুরুতর শ্রবণশক্তি হানির শিকার ব্যক্তিদের মধ্যে প্রায় ১০ কোটি নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলিতে বাস করে।[১৩] প্রায় ৬ কোটি ৫০ লক্ষ ব্যক্তি জন্ম থেকেই শ্রবণশক্তি হানির শিকার।[১৫] যারা ইশারা ভাষায় কথা বলেন এবং যারা বধির সংস্কৃতির সদস্য, তারা নিজেদেরকে অক্ষমতার শিকার না ভেবে ভিন্ন সক্ষমতাবিশিষ্ট ব্যক্তি হিসেবে গণ্য করতে পারে।[১৬] বধির সংস্কৃতির বহু সদস্য বধিরতা থেকে আরোগ্যলাভের প্রচেষ্টার বিরোধিতা করে।[১৭][১৮][১৯] এই সম্প্রদায়ের কিছু কিছু ব্যক্তি কর্ণকম্বু প্রোথকে উদ্বেগজনক মনে করেন, কেননা এগুলি বধির সংস্কৃতিকে শেষ করে দিতে পারে।[২০] শ্রবণশক্তি হানি পরিভাষাটিকে প্রায়শই নেতিবাচক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা হয়, কেননা এটিতে কোনও কিছু করার অক্ষমতার উপরে জোর দেওয়া হয়। তা সত্ত্বেও চিকিৎসাবৈজ্ঞানিক প্রেক্ষাপটে এই পরিভাষাটিই এখনও নিয়মিত ব্যবহৃত হয়ে থেকে।[১৬][২১]
↑ কখShearer AE, Hildebrand MS, Smith RJ (২০১৪)। "Deafness and Hereditary Hearing Loss Overview"। Adam MP, Ardinger HH, Pagon RA, Wallace SE, Bean LJ, Stephens K, Amemiya A। GeneReviews [Internet]। Seattle (WA): University of Washington, Seattle। পিএমআইডি20301607।উদ্ধৃতি টেমপ্লেট ইংরেজি প্যারামিটার ব্যবহার করেছে (link)
↑"Deafness"। Encyclopædia Britannica Online। Encyclopædia Britannica Inc.। ২০১১। ২০১২-০৬-২৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১২-০২-২২।উদ্ধৃতি টেমপ্লেট ইংরেজি প্যারামিটার ব্যবহার করেছে (link)
↑ কখ"Deafness and hearing loss"। World Health Organization (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২০-০৩-০১। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৭-১৩।উদ্ধৃতি টেমপ্লেট ইংরেজি প্যারামিটার ব্যবহার করেছে (link)
↑ কখLasak JM, Allen P, McVay T, Lewis D (মার্চ ২০১৪)। "Hearing loss: diagnosis and management"। Primary Care। 41 (1): 19–31। ডিওআই:10.1016/j.pop.2013.10.003। পিএমআইডি24439878।উদ্ধৃতি টেমপ্লেট ইংরেজি প্যারামিটার ব্যবহার করেছে (link)
↑Elzouki, Abdelaziz Y (২০১২)। Textbook of clinical pediatrics (2 সংস্করণ)। Berlin: Springer। পৃষ্ঠা 602। আইএসবিএন9783642022012। ২০১৫-১২-১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা।অজানা প্যারামিটার |name-list-style= উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য)উদ্ধৃতি টেমপ্লেট ইংরেজি প্যারামিটার ব্যবহার করেছে (link)
↑Tidy, Colin (মার্চ ২০১৪)। "Dealing with Hearing-impaired Patients"। patient.info (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ১৬ আগস্ট ২০২০।উদ্ধৃতি টেমপ্লেট ইংরেজি প্যারামিটার ব্যবহার করেছে (link)
Occupational Noise and Hearing Loss PreventionU.S. Department of Health and Human Services, Centers for Disease Control and Prevention, National Institute for Occupational Safety and Health. (6 February 2018).
Themann, Christa L.; Morata, Thais; Afanuh, Susan (২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯)। "Using Total Worker Health® concepts to address hearing health."। U.S. Department of Health and Human Services, Centers for Disease Control and Prevention, National Institute for Occupational Safety and Health. (ইংরেজি ভাষায়)। Cincinnati, OH। এসটুসিআইডি242864449Check |s2cid= value (সাহায্য)। ডিওআই:10.26616/NIOSHPUB2019155। সংগ্রহের তারিখ ৪ মার্চ ২০২০। Publication No. 2019-155উদ্ধৃতি টেমপ্লেট ইংরেজি প্যারামিটার ব্যবহার করেছে (link)