ইয়াও | |
---|---|
রাজত্ব | ২৩৩৩ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ-২২৩৪ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ (৯৯ বছর)[১] |
পূর্বসূরি | সম্রাট ঝি |
উত্তরসূরি | সম্রাট সুন |
জন্ম | ২৩৫৬ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ গাওইউ, জিয়াংসু অথবা তিয়ানচাং, আনহুই |
মৃত্যু | ২২০৬ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ (১১৮ বছর বয়সে) |
দাম্পত্য সঙ্গী | সান য়ি (উপপত্নী) |
পিতা | সম্রাট কিউ |
মাতা | কিংদু |
সম্রাট ইয়াও (সরলীকৃত চীনা: 尧; প্রথাগত চীনা: 堯; ফিনিন: Yáo; ২৩৫৬-২২৫৫ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ)[২] ছিলেন একজন পৌরাণিক চীনা শাসক। বিভিন্ন উৎসের ভিত্তিতে তাঁকে চীনের ঐতিহ্যবাহী পৌরাণিক ত্রিলোক ও পাঁচ সম্রাট এর একজন বলে মনে করা হয়।
ইয়াওর বংশগত নাম ছিল য়ি কি (伊祁) অথবা কি (祁),বংশের নাম ছিল তাওটাং(陶唐), এবং প্রদত্ত পারিবারিক নাম ছিল ফাংজুন (放勳)। তিনি ছিলেন সম্রাট কু এবং কিংদুর দ্বিতীয় পুত্র(慶都)। তিনি টাং ইয়াও(唐堯) নামেও পরিচিত।[৩][৪]
ইয়াওর মাকে দেবি ইয়াও-মু নামে পূজা করা হত।[৫]
নৈতিক মূল্যবোধ এবং অসাধারণ বুদ্ধিমত্তার জন্য প্রশংসিত ঋষি সম্রাট ইয়াও তার দয়াশীলতা ও অধ্যবসায় দিয়ে নিজেকে পরবর্তী চীনা রাজা ও সম্রাটদের জন্য আদর্শরূপে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সেকেলে চীনারা ইয়াও, সুন এবং মহামতি ইয়ুকে ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে বিবেচনা করত এবং সমসাময়িক ঐতিহাসিকরা বিশ্বাস করতেন যে তাঁরা সেসব মিত্রতাবদ্ধ গোত্রের প্রতিনিধিনিত্ব করতে পারতেন, যারা পিতৃপ্রধান সামন্ততান্ত্রিক সমাজের ক্রান্তিকালে একটি একতাবদ্ধ এবং পুরোহিতপ্রধান সরকারব্যবস্থা চালু করেছিল। কনফুসিয়ান ধর্মশাস্ত্রের পাঁচটি পুস্তকের একটি, ক্লাসিক অব হিস্টোরির প্রারম্ভিক অধ্যায়ে ইয়াও, সুন এবং ইয়ুর কথা বর্ণিত হয়েছে।
উপকথানুসারে ইয়াও ২০ বছর বয়সে শাসকের পদে আসীন হন এবং ১১৯ বছর বয়সে তাঁর দুই কন্যার স্বামী মহামতি সুনের হাতে সিংহাসনের ভার দিয়ে মৃত্যুবরণ করেন।[৬] বাঁশের কাহিনী নামক উপাখ্যান অনুসারে, ইয়াও তাঁর শাসনকালের ৭৩তম বছরে শুনের নিকট শাসনের দায়িত্ব অর্পণ করেন এবং সুনের রাজত্বে জীবনের বাকি ২৮ বছর কাটিয়ে দেন।
ইয়াওয়ের অনেক অবদানের মধ্যে একটি হল, বলা হয়ে থাকে তিনি তাঁর বদমেজাজি ফুর্তিবাজ পুত্র দানঝুকে প্রভাবিত করার জন্য ওয়েইকি নামক খেলাটি উদ্ভাবন করেছিলেন। [৭] ইয়াওয়ের মৃতুর পর তিন বছর প্রথাগত শোক পালনের পর সুন দানঝুকে শাসক হিসেবে ঘোষণা করে, কিন্তু জনগণ সুনকেই যোগ্য উত্তরাধিকারী হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।
বাঁশের কাহিনী উপাখ্যানে ইয়াও তাঁর রাজত্বের ৫৮তম বছরে রাজপুত্র দানঝুকে দানশুইয়ে নির্বাসিত করেন। উপাখ্যানটিতে আরো আছে যে, সুনকে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করার জন্য ইয়াওর পদত্যাগের পরে দানঝুর সাথে সুনের দূরত্ব সৃষ্টি হয়। ইয়াওর মৃত্যুর পর সুন দানঝুকে সিংহাসনে বসাতে চাইলেও তিনি ব্যর্থ হন।
যদিও কাহিনীর কিছু জায়গায় ভিন্ন ঘটনার বর্ণনা পাওয়া যায়। সেসব জায়গায় বলে হয়েছে যে, সুন ইয়াওকে সিংহাসনচ্যুত করেন এবং জেলখানায় আটক করেন। এরপর সুন নিজে ক্ষমতায় আসার আগে কিছু সময়ের জন্য দানঝুকে সিংহাসনে বসান।[৮]
হান রাজবংশের সম্রাট লিউ বাংকে ইয়াও তাঁর পূর্বপুরুষ হিসেবে দাবি করতেন।[৯] অন্যান্য বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ অভিজাত পরিবারও ইয়েলো সাম্রাজ্য এর মাধ্যমে বংশগত বিস্তারের দাবি করে।[১০]
কিছু চীনা সাহিত্যের নথি যেমন, শাং সুর (প্রাচীনকালের বই) ইয়াও দিয়ান (ইয়াওর নথি) এবং শিজির (ঐতিহাসিক দলিল) ইউদিবেনজি (পাঁচ রাজার দলিল) অনুসারে রাজা ইয়াও আকাশবিষয়ক বিভিন্ন ঘটনা, যেমন সূর্যোদয়, সূর্যাস্ত ও সন্ধ্যায় উদিত তারা পর্যবেক্ষণের জন্য বেশ কয়েকজন জ্যোতির্বিদ নিয়োগ করেন। মূলত, অধিবর্ষসহ ৩৬৬ দিনের একটি সৌর ও চান্দ্রবর্ষের পঞ্জিকা তৈরি করার জন্যই তিনি এসব পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন।
শানজির একটি প্রাচীন স্থান, তাওসিতে সাম্প্রতিক প্রত্নতাত্ত্বিক কাজের মাধ্যমে ২৩০০-১৯০০ খ্রিষ্ট্রপূর্বাব্দের কিছু প্রমাণ পাওয়া গেছে। পূর্ব এশিয়ার সবচেয়ে প্রাচীন এক ধরনের মানমন্দির[১১] – তাওসিতে পাওয়া গিয়েছিল যা প্রাচীন দলিলাদির সাথে মিলে যায়।[১২]
কিছু চীনা প্রত্নতত্ত্ববিদ মনে করেন যে, তাওসি ছিল ইউতাং(有唐) রাজ্যের একটি জায়গা যা সম্রাট ইয়াওর দ্বারা বিজিত হয়েছিল এবং তিনি এখানে তাঁর রাজধানী প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। [১৩][১৪]
তাওসিতে প্রাপ্ত স্থাপত্যের মধ্যে রয়েছে একটি বহিঃস্থ অর্ধচক্রাকৃতির পথ এবং একটি ৬০ মিটার ব্যাসবিশিষ্ট অর্ধবৃত্তাকার টাইপার (এক ধরনের নির্মাণকৌশল) মাচা; এটি ২০০৩-২০০৪ সালে আবিষ্কৃত হয়েছিল।
সম্রাট ইয়াও
| ||
রাজত্বকাল শিরোনাম | ||
---|---|---|
পূর্বসূরী সম্রাট ঝি |
চীনা সাম্রাজ্য | উত্তরসূরী সম্রাট সুন |