সিঙ্গাপুর সেনাবাহিনী

সিঙ্গাপুর সেনাবাহিনী
Tentera Singapura (মালয়)
新加坡陆军 (চীনা)
சிங்கப்பூர் தரைப்படை (তামিল)
প্রতিষ্ঠা১২ মার্চ ১৯৫৭; ৬৭ বছর আগে (1957-03-12)
দেশ সিঙ্গাপুর
আনুগত্য সিঙ্গাপুরের রাষ্ট্রপতি
শাখাসিঙ্গাপুর সশস্ত্র বাহিনী
ধরনস্থলবাহিনী
ভূমিকাস্থলযুদ্ধ
আকার৪৫,০০০ সেনা সদস্য[]
অংশীদারসিঙ্গাপুর সশস্ত্র বাহিনী
নীতিবাক্যYang Pertama Dan Utama (মালয়)
(দ্রুত এবং ক্ষিপ্র)
শক্তি সর্বদা প্রস্তুত
কুচকাত্তয়াজসিঙ্গাপুর পদাতিক রেজিমেন্ট মার্চ
কমান্ডার
সর্বাধিনায়করাষ্ট্রপতি হালিমা ইয়াকুব
প্রতিরক্ষামন্ত্রীডক্টর এনজি এং হেন
সশস্ত্র বাহিনী প্রধানলেফটেন্যান্ট জেনারেল মেলভিন অং
সেনাবাহিনী প্রধানমেজর জেনারেল গোহ সি হোউ
চীফ অব জেনারেল স্টাফব্রিগেডিয়ার জেনারেল কেনেথ লিও
সার্জেন্ট মেজর অব দ্য আর্মিসার্জেন্ট চুয়া গোয়া হোয়ান
প্রতীকসমূহ
পতাকা

সিঙ্গাপুর সেনাবাহিনী হচ্ছে সিঙ্গাপুরের সামরিক বাহিনী। এই সেনাবাহিনীর গোঁড়াপত্তন ঘটেছিলো ১৯৫৭ সালের মার্চ মাসের ১২ তারিখে, এই দিন সিঙ্গাপুরীয় একদল তরুণ একটি নবগঠিত পদাতিক রেজিমেন্টে যোগ দেয় যেটা সিঙ্গাপুর পদাতিক রেজিমেন্ট নাম ধারণ করেছিলো, ১৯৬৫ সালের ২৩শে ডিসেম্বর 'সিঙ্গাপুর সেনা আইন' দেশটির পার্লামেন্টে পাশ হয় এবং ১৯৬৭ সাল থেকে এই আইন কার্যকর হয়।[]

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে ব্রিটিশ ভারতীয় সেনাবাহিনীর 'মালয় কমান্ড'-এর সদর দপ্তর সিঙ্গাপুর ভূখণ্ডে ছিলো, এই কমান্ডের অধীনস্ত সৈনিকরা যুদ্ধটিতে জাপানী সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলো; এই মালয় কমান্ডের সৈন্যদলের অবস্থান সিঙ্গাপুর সহ পশ্চিম মালয় ভূখণ্ডের কয়েকটি শহরে ছিলো। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার পরে ব্রিটিশ ভারতীয় সেনাবাহিনীর সৈন্যরা সিঙ্গাপুর এবং মালয় ভূখণ্ড ত্যাগ করে এবং সিঙ্গাপুর ১৯৬৩ সাল থেকে ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত মালয়েশিয়ার অধীনে ছিলো। সিঙ্গাপুর পরিপূর্ণ ভাবে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে ১৯৬৫ সালের ৯ আগস্ট মালয়েশিয়ার কাছ থেকে আলাদা হওয়ার মাধ্যমে এবং সিঙ্গাপুর সেনাবাহিনী তৈরির বছর ধরা হয় ১৯৫৭ সালের ১২ই মার্চ কারণ ঐদিন সিঙ্গাপুর পদাতিক রেজিমেন্ট তৈরি করা হয়। সিঙ্গাপুর স্বাধীন হলে ১৯৬৫ সালে প্রধানমন্ত্রী লি কুয়ান ইউ সিঙ্গাপুরের সেনাবাহিনী বানানোর জন্য ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর কাছে সাহায্য চেয়েছিলেন, তিনি তারপর 'সিঙ্গাপুর পদাতিক রেজিমেন্ট'-এর আরও ব্যাটেলিয়ন গড়ে তোলার নির্দেশ দেন তার প্রতিরক্ষামন্ত্রীকে, ১৯৫৭ সালে গড়ে ওঠা সিঙ্গাপুর পদাতিক রেজিমেন্ট সিঙ্গাপুরের তরুণদেরকে নিয়ে গঠিত হলেও ১৯৬৩ সাল থেকে ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত সিঙ্গাপুর মালয়েশিয়ার অধীনে থাকায় এর নাম 'মালয়েশীয় পদাতিক রেজিমেন্ট' হয়ে যায় যদিও এটা আবার '৬৫ সালে তার পুরোনো নামে ফিরে যায় মালয়েশিয়া থেকে সিঙ্গাপুরের আলাদা হওয়ার কারণে এবং সিঙ্গাপুরের সৈনিক তরুণরা মালয়েশিয়া থেকে তাদের স্বদেশ সিঙ্গাপুরে ফিরে আসে। সিঙ্গাপুরের সেনাবাহিনী গড়ে তোলার দুরূহ কাজ হাতে নেন লি কুয়ান ইউ, সেনাবাহিনীর নিজস্ব কোনো ইতিহাস, ঐতিহ্য না থাকায় তিনি খুবই চিন্তিত ছিলেন, তিনি পরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সেনাবাহিনীর কাছে সাহায্য চেয়েছিলেন সৈন্যবাহিনী তৈরি করার জন্য। সিঙ্গাপুরের উত্তরে মালয়েশিয়া এবং দক্ষিণে ইন্দোনেশিয়া - এই দুটো দেশ থেকে তার দেশে কোনো আক্রমণ হুমকি আসার সম্ভাবনাকে তিনি উড়িয়ে দিচ্ছিলেন না, তাছাড়া সিঙ্গাপুরের জাতীয় একটি পরিচয়ের জন্য সেনাবাহিনী তৈরির প্রয়োজনীয়তা খুবই শক্তভাবে অনুভূত হয়। সিঙ্গাপুরের নিজস্ব ভূখণ্ড খুবই ছোটো কিন্তু প্রধানমন্ত্রী লি কুয়ান ইউ দৃঢ়প্রত্যয়ী ছিলেন তার দেশের অর্থনীতি এবং সামরিক বাহিনী শক্তিশালীকরণের ব্যাপারে। সিঙ্গাপুর সেনাবাহিনীর জন্য মূলত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সেনাবাহিনীর প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা, যুদ্ধ কৌশল-অনুশীলন সবই চালু করেন, মার্কিনদের মত পোশাকও চালু করা হয়। সেনা ফরমেশন শুরুতে কেবল তিনটি মাত্র ব্যাটেলিয়ন রাখা হয় তবে সত্তরের দশক থেকে সিঙ্গাপুর সামরিক বাহিনীর ঘাঁটি গুলো ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পেতে থাকে। সেনাবাহিনীর পদমর্যাদাগুলো মার্কিনদের আদলেই করা হয়।[][] লি কুয়ান ইউয়ের উত্তরসূরী প্রধানমন্ত্রী গোহ চক তং সিঙ্গাপুরের সেনাবাহিনীকে লি কুয়ান ইউয়ের পরিকল্পনা অনুযায়ীই সাজাচ্ছিলেন আর লি সিয়েন লুং যিনি লি কুয়ান ইউয়ের ছেলে ছিলেন তিনি রাজনীতিতে আসার আগে এই সেনাবাহিনীর একজন সদস্য ছিলেন, ১৯৭১ সালে সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট হিসেবে যোগ দেওয়া লি সিয়েন লুং ১৯৮০-এর দশকে সেনাবাহিনী থেকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেন, তখন তার পদবী ছিলো ব্রিগেডিয়ার জেনারেল।

সিঙ্গাপুর সেনাবাহিনীর মোট ১৫টি শাখা রয়েছে, এগুলো হলোঃ অ্যাম্যুনিশন কমান্ড (অস্ত্র শাখা), সাঁজোয়া, সামরিক গোয়েন্দা, সামরিক চিকিৎসা সেবা, গোলন্দাজ, কমব্যাট ইঞ্জিনিয়ার্স (যুদ্ধ প্রকৌশলী), কমান্ডো, গার্ডস, পদাতিক, রক্ষণাবেক্ষণ এবং প্রকৌশল সাপোর্ট, মিলিটারি পুলিশ কমান্ড, পার্সোনেল কমান্ড, সিগনালস, সাপ্লাই এবং ট্র্যান্সপোর্ট।

দেশটির মান্ডাই, চাঙ্গি এবং জুরং-এ সেনা ডিভিশন অবস্থিত।[]

১৯৯০ সালের আগ পর্যন্ত সিঙ্গাপুরে সেনাপ্রধানের কোনো পদ ছিলোনা, সেনাবাহিনী 'সশস্ত্র বাহিনী প্রধান'-এর অধীনে পরিচালিত হতো, এই সশস্ত্র বাহিনী প্রধান পদটিকে সিঙ্গাপুরের সেনাবাহিনী সহ বাকি দুই বাহিনী নৌ এবং বিমান বাহিনীর প্রধানের দায়িত্বও পালন করতে হতো। ১৯৯০ সালে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল বোয়ে টেক হ্যাপ নামের একজন সেনাপ্রধানের দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং তিনিই ছিলেন সিঙ্গাপুরের প্রথম সেনাপ্রধান।[]

সিঙ্গাপুরের সৈনিক এবং কর্মকর্তাদের মৌলিক সামরিক প্রশিক্ষণ একই সঙ্গে 'সিঙ্গাপুর সশস্ত্র বাহিনী প্রশিক্ষণ কেন্দ্র' (ইংরেজিতে 'সিঙ্গাপুর আর্মড ফোর্সেস ট্রেনিং ইন্সটিটিউট')-এ হয়।[]

চিত্রশালা

[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. International Institute for Strategic Studies (২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১)। The Military Balance 2021London: Routledge। পৃষ্ঠা 297। আইএসবিএন 9781032012278 
  2. "Singapore Army History"Ministry of Defence (Singapore)। ১৩ মার্চ ২০১৯। সংগ্রহের তারিখ ১৭ অক্টোবর ২০২২ 
  3. "Singapore Armed Forces Act"। ৪ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ 
  4. "Singapore Armed Forces Come Into Effect"HistorySG। National Library Board Singapore। ৬ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ 
  5. "Organisation Structure"। ২৯ অক্টোবর ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯ 
  6. "PAST LEADERSHIP"mindef.gov.sg। ২১ মার্চ ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৬ অক্টোবর ২০২৩ 
  7. "Army Careers: Training"mindef.gov.sg। ২৬ অক্টোবর ২০২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৬ অক্টোবর ২০২৩ 

বহিঃসংযোগ

[সম্পাদনা]