প্রথম বায়েজীদ بايزيد اول | |
---|---|
উসমানীয় সুলতান | |
৪র্থ উসমানীয় সুলতান | |
রাজত্বকাল | ১৬ জুন ১৩৮৯ ‒ ৮ মার্চ ১৪০৩ |
পূর্বসূরি | প্রথম মুরাদ |
উত্তরসূরি | অন্তবর্তীকাল (১৪০২ – ১৪১৩) প্রথম মুহাম্মদ |
জন্ম | ১৩৬০ |
মৃত্যু | ৮ মার্চ ১৪০৩ (৪৩ বছর) |
সমাধি | |
স্ত্রী | দাওলাত খাতুন হাফসা খাতুন দেসপিনা খাতুন মারিয়া খাতুন |
রাজবংশ | উসমানীয় রাজবংশ (উসমানলি হানেদানি) |
পিতা | প্রথম মুরাদ |
মাতা | গুলচিচেক খাতুন |
ধর্ম | ইসলাম |
তুগরা |
প্রথম বায়েজিদ (উসমানীয় তুর্কি: بايزيد اول,বায়েজীদ-ই-আউওয়াল(ডাকনাম= ইলদিরিম) (উসমানীয় তুর্কি: ییلدیرم), "বজ্রপাত বা বজ্রকঠিন।[১]") (৯ জানুয়ারি ১৩৬০ – ৮ মার্চ ১৪০৩) ছিলেন উসমানীয় সুলতান। তিনি ১৩৮৯ থেকে ১৪০২ সাল পর্যন্ত শাসন করেছেন। তিনি সুলতান প্রথম মুরাদ ও গুলচিচেক খাতুনের পুত্র।[২][৩] তিনি একটি সুবিশাল সেনাবাহিনী গড়ে তোলেন। তিনি কনস্টান্টিনোপলও আক্রমণ করেছিলেন তবে তাতে ব্যর্থ হন। ১৪০২ সালে আঙ্কারার যুদ্ধে তিনি তৈমুর লঙের কাছে পরাজিত ও বন্দী হন। বন্দী অবস্থায় ১৪০৩ সালের মার্চে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
কুতাহিয়ার গভর্নর হিসেবে বায়েজিদ প্রথম বড় দায়িত্বপালন শুরু করেন। কারামানিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ক্ষিপ্রতার জন্য তিনি ইলদিরিম বা বজ্রপাত নামে পরিচিত হয়েছিলেন।
কসোভোর যুদ্ধে সুলতান প্রথম মুরাদ নিহত হওয়ার পর বায়েজীদ সিংহাসনে বসেন। এই যুদ্ধ জয়লাভের ফলে সার্বিয়া উসমানীয় সাম্রাজ্যের করদ রাজ্যে পরিণত হয়। ১৩৯০ সালে বায়েজিদ কসোভোর যুদ্ধে নিহত রাজা লাজারের কন্যা ওলিভেরা দিসপিনাকে বিয়ে করেন।[৪] লাজারের পুত্র স্টিফেন লাজারেভিচকে বায়েজিদ কিছু স্বায়ত্তশাসন প্রদান করে সার্বিয়ার নতুন শাসক নিযুক্ত করেন।
১৩৯১ সালে সেনাপতি পাশায়িগিত স্কোপজা শহর অধিকারের পূর্ব পর্যন্ত উচ্চ সার্বিয়া প্রতিরোধ চালিয়ে যায়।
ইতোমধ্যে সুলতান আনাতোলিয়াকে তার শাসনাধীনে ঐক্যবদ্ধ করার কাজ শুরু করেন। ১৩৯০ সালের গ্রীষ্ম ও হেমন্তে বায়েজিদ আইদিন, সারুহান ও মেনতেশে বেয়লিক অধিকার করেন। ১৩৯০ সালের হেমন্ত ও শীতে বায়েজীদ অবশিষ্ট হামিদ, তেকে ও জেরমিয়ান বেয়লিক অধিকার করে নেন। পাশাপাশি আকশেহির ও নিগদে শহরও অধিকার করেন। তিনি কারামানের রাজধানী কোনিয়া অধিকার করেছিলেন। ১৩৯১ সালে তিনি কারামানের শান্তিপ্রস্তাব গ্রহণ করেন। এরপর বায়েজীদ উত্তরে কাসতামনুর দিকে অগ্রসর হয়ে শহরটি অধিকার করেন।[৫]
১৩৮৯ সালে বায়েজিদ বুলগেরিয়া ও উত্তর গ্রিস জয় করেন। ১৩৯৪ সালে তিনি দানিউব নদী অতিক্রম করে ওয়ালাচিয়া আক্রমণ করেন। উসমানীয়দের সৈন্য সংখ্যা বেশি হলেও রোভিনের যুদ্ধে ওয়ালাচিয়ানরা জয়ী হয় ফলে বায়েজিদের বাহিনী অগ্রসর হতে পারেনি।[৬]
১৩৯৪ সালে বায়েজিদ বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের রাজধানী কনস্টান্টিনোপল অবরোধ করেন।[৭] দ্বিতীয় অবরোধের অংশ হিসেবে আনাদোলুহিসারি দুর্গ ১৩৯৩ থেকে ১৩৯৪ সালের মধ্যে নির্মিত হয় এবং ১৩৯৫ সালে দ্বিতীয়বার অবরোধ করা হয়। বাইজেন্টাইন সম্রাট দ্বিতীয় মানুয়েলের আগ্রহে বায়েজীদকে পরাজিত করার জন্য একটি নতুন ক্রুসেড সংগঠিত করা হয়। এই চেষ্টা ব্যর্থ হয়, ১৩৯৬ সালে হাঙ্গেরির রাজা সিগিসমুন্ডের নেতৃত্বে খ্রিষ্টান জোটবাহিনী নিকোপলিসের যুদ্ধে পরাজিত হয়। এই বিজয়ের স্মরণে বায়েজীদ বুরসায় বুরসা জামে মসজিদ নির্মাণ করেন।
কনস্টান্টিনোপলের অবরোধ ১৪০২ সাল পর্যন্ত চলে।[৮] বায়েজিদ পূর্ব দিকে তৈমুরীয় সাম্রাজ্যের সাথে লড়াইয়ে জড়িয়ে পড়ার পর বাইজেন্টাইনরা অবরোধ থেকে নিস্কৃতি পায়।[৯] এসময় ইউরোপে উসমানীয় সাম্রাজ্য থ্রেস (কনস্টান্টিনোপল ব্যতীত), মেসিডোনিয়া, বুলগেরিয়া ও সার্বিয়ার অংশ জুড়ে ছিল। এশিয়ায় সাম্রাজ্য তোরোস পর্বতমালা পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। বায়েজিদের সেনাবাহিনী মুসলিম বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ হিসেবে বিবেচিত হত এবং বায়েজিদ মুসলিম বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী শাসক হিসেবে পরিচিত ছিলেন। ১৪০০ সালে মধ্য এশিয়ার শাসক তৈমুর লং আনাতোলিয়ার উসমানীয়দের অধীনে বেয়লিকগুলোকে নিজের পক্ষে আনেন। ১৪০২ সালের ২০ জুলাই সংঘটিত আঙ্কারার যুদ্ধে উসমানীয়রা পরাজিত হয় এবং বায়েজিদ বন্দী হন। অনেক লেখকের মতে তৈমুর বায়েজিদের সাথে দুর্ব্যবহার করেছিলেন। তবে তৈমুরের দরবারের লেখক ও ইতিহাসবিদের লেখা অনুযায়ী বায়েজিদের সাথে ভালো আচরণ করা হয়েছিল এবং তার মৃত্যুতে তৈমুর শোক পালন করেছিলেন। বায়েজিদের এক পুত্র মুস্তাফা চেলেবি তার সাথে বন্দী হন। তাকে ১৪০৫ সাল পর্যন্ত তিনি সমরকন্দে বন্দী ছিলেন।
বায়েজিদের পুত্র সুলাইমান চেলেবি, ঈসা চেলেবি, মুহাম্মদ চেলেবি ও মুসা চেলেবি যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। পরে সিংহাসন নিয়ে তাদের মধ্যে গৃহযুদ্ধ দেখা দেয়।[১০] ১৩১৩ খ্রিস্টাব্দে কা জয়ের পর প্রথম মুহাম্মদ হিসেবে সিংহাসনে বসেন।
পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ইলদারাম ব্যাটেলিয়ন নামক কমান্ডো ব্যাটেলিয়ন সুলতান বায়েজিদের নামে নামকরণ করা হয়েছে। তুরস্কের ইলদিরিম বায়েজিদ বিশ্ববিদ্যালয়ও তার নামে প্রতিষ্ঠিত হয়।
তৈমুরের কাছে বায়েজিদের পরাজয় পশ্চিমা লেখক, সুরকার ও শিল্পীদের কাছে জনপ্রিয় বিষয় হয়ে উঠে। তারা তৈমুর কর্তৃক বায়েজিদের বন্দী হওয়ার ঘটনাকে রূপদান করেন। ক্রিস্টোফার মার্লোর রচিত ট্যাম্বারলেইন নাটকটি ১৫৮৭ সালে লন্ডনে প্রথম মঞ্চস্থ হয়।
১৬৪৮ সালে লন্ডনে লা গ্রেন টামেরলেন এট বেজেজেত নাটক মঞ্চস্থ হয়। ১৭২৫ সালে জর্জ ফ্র্যাডেরিক হান্ডেলের নাটক টামেরলানো লন্ডনে প্রথম মঞ্চস্থ হয়।[১২]
রবার্ট ই. হাওয়ার্ডের লেখা লর্ড অব সমরকন্দ গল্পে বায়েজিদ কেন্দ্রীয় চরিত্র।[১৩]
সুলতান প্রথম বায়েজিদ জন্ম: ১৩৬০ মৃত্যু: ৮ মার্চ ১৪০৩
| ||
শাসনতান্ত্রিক খেতাব | ||
---|---|---|
পূর্বসূরী প্রথম মুরাদ |
উসমানীয় সুলতান ১৬ জুন ১৩৮৯ – ৮ মার্চ ১৪০৩ |
উত্তরসূরী অন্তবর্তীকাল |