স্ট্রেপটোকক্কাস হলো গ্রাম পজিটিভ ব্যাকটেরিয়ার একটি গণ যা গোলাকৃতির এবং Streptococcaceae পরিবারের অন্তর্গত।[২] স্ট্রেপটোকক্কাইতে কোষ বিভাজন একটি একক অক্ষ বরাবর ঘটে। তাই এগুলি বড় হওয়ার সাথে সাথে তারা জোড়া বা শিকল তৈরি করে যা বাঁকানো বা পেঁচানো দেখা যায়। এটি স্ট্যাফাইলোকক্কাই থেকে পৃথক, যা একাধিক অক্ষ বরাবর বিভক্ত। যার ফলে স্ট্যাফাইলোকক্কাসের কোষগুলো অনিয়মিত, আঙ্গুরের মতো থোকা তৈরি করে। বেশিরভাগ স্ট্রেপটোকক্কাই অক্সিডেস এবং ক্যাটালেস এনজাইম পরীক্ষায় নেতিবাচক। এদের অনেকগুলি প্রজাতি সুবিধাবাদী অ-বায়বীয় (বায়বীয় এবং অবায়বীয় উভয়ভাবেই বৃদ্ধি করতে সক্ষম)।
স্ট্রেপটোকক্কাস শব্দটি ১৮৭৭ সালে ভিয়েনিজ সার্জন আলবার্ট থিওডর বিলরথ (১৯২৯-১৮৯৪) সর্বপ্রথম ব্যবহার করা হয়েছিল।[৩] উপসর্গ "স্ট্রেপ্টো-" ( প্রাচীন গ্রিক: στρεπτός streptós "easily twisted, pliant" থেকে [৪] ), একসাথে "-coccus" প্রত্যয় (আধুনিক লাতিন: coccus থেকে , প্রাচীন গ্রিক: κόκκος kókkos "grain, seed, berry" .[৫] ) বর্তমানে, ব্যাকটেরিয়ার এই বংশে ৫০ টিরও বেশি ব্যাকটেরিয়া প্রজাতি স্বীকৃত। এই বংশের অধিকাংশ অণুজীব মানুষের লালায় পাওয়া গেছে।[৬]
স্ট্রেপটোকোকাল ফ্যারিঞ্জাইটিস (স্ট্রেপ থ্রোট) ছাড়াও, কিছু স্ট্রেপটোকক্কাস প্রজাতি চোখ উঠা,[৭] মেনিনজাইটিস,ব্যাকটেরিয়াজনিত নিউমোনিয়া, এন্ডোকার্ডাইটিস, ইরিসিপেলাস এবং নেক্রোটাইজিং ফ্যাসাইটিস ('মাংস-খাওয়া' ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ) জন্য দায়ী। যাইহোক, অনেক স্ট্রেপটোকক্কাস প্রজাতি প্যাথোজেনিক নয়, এবং মুখ, ত্বক, অন্ত্র এবং ঊর্ধ্ব শ্বাসনালীতে স্থানীয় অণুজীব হিসেবে থাকে।[৮]
স্ট্রেপটোকক্কাসের প্রজাতিগুলি তাদের হিমোলাইটিক বৈশিষ্ট্যের উপর ভিত্তি করে শ্রেণীবদ্ধ করা হয়।[৯] আলফা-হিমোলাইটিক প্রজাতি লোহিত রক্তকণিকার মধ্যে হিমোগ্লোবিন অণুতে লোহার অক্সিডাইজেশন ঘটায়, যা রক্ত আগ্যার মাধ্যমে সবুজ রঙ দেয়। বিটা-হিমোলাইটিক প্রজাতি লাল রক্তকণিকাকে সম্পূর্ণ ফাটিয়ে দেয়। ব্লাড অ্যাগারে, এটি ব্যাকটেরিয়া উপনিবেশের চারপাশের রক্তকণিকাগুলির বিস্তৃত এলাকা হিসাবে দেখা যায়। গামা-হিমোলাইটিক প্রজাতির কোনো হিমোলাইসিস হয় না।[১০]
বিটা-হিমোলাইটিক স্ট্রেপটোকক্কাইকে ল্যান্সফিল্ড গ্রুপিং দ্বারা, একটি সেরোটাইপ (অর্থাৎ ব্যাকটেরিয়ার কোষ প্রাচীরে উপস্থিত নির্দিষ্ট কার্বোহাইড্রেটের বর্ণনা) হিসেবে শ্রেণীবদ্ধ করা হয়।[১১] ২১ টি বর্ণিত সেরোটাইপগুলির নাম দেওয়া হয়েছে ল্যান্সফিল্ড গ্রুপ A থেকে W (I এবং J ব্যতীত)পর্যন্ত। এই শ্রেণিবিন্যাস পদ্ধতিটি রকফেলার বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানী রেবেকা ল্যান্সফিল্ড দ্বারা তৈরি করা হয়েছিল।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
চিকিৎসা ব্যবস্থায়, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ গ্রুপ হল আলফা-হিমোলাইটিক স্ট্রেপটোকক্কাই এস. নিউমোনি এবং স্ট্রেপটোকক্কাস ভিরিডানস গ্রুপ এবং ল্যান্সফিল্ড গ্রুপ A এবং B এর বিটা-হিমোলাইটিক স্ট্রেপটোকক্কাই (যা "গ্রুপ এ স্ট্রেপ" এবং "গ্রুপ বি স্ট্রেপ" নামেও পরিচিত। )
সারণী: চিকিৎসাগতভাবে প্রাসঙ্গিক স্ট্রেপটোকক্কাই (সবাই আলফা-হিমোলাইটিক নয়)[৯]
প্রজাতি | হোস্ট | রোগ |
এস. পায়োজেন | মানব | গলবিল প্রদাহ, সেলুলাইটিস, ইরিসিপেলাস |
এস. অ্যাগাল্যাকসিয়া | মানুষ, গবাদি পশু | নবজাতকের মেনিনজাইটিস এবং জীবাণুদূষণ |
এস. ডিসগ্যালাক্টিয়া | মানুষ, প্রাণী | এন্ডোকার্ডাইটিস, ব্যাকটেরেমিয়া, নিউমোনিয়া, মেনিনজাইটিস, শ্বাসনালির সংক্রমণ |
এস. গ্যালোলাইটিকাস | মানুষ, প্রাণী | পিত্তথলি বা মূত্রনালীর সংক্রমণ, এন্ডোকার্ডাইটিস |
এস. অ্যাঞ্জিনোসাস | মানুষ, প্রাণী | সাবকুটেনিয়াস/অর্গান ফোড়া, মেনিনজাইটিস, শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ |
এস. সাঙ্গুইনিস | মানব | এন্ডোকার্ডাইটিস, ডেন্টাল ক্যারিস |
এস. সুইস | সোয়াইন | মেনিনজাইটিস |
এস. মিটিস | মানব | এন্ডোকার্ডাইটিস |
এস. মিউটানস | মানব | দাঁতের অস্থির ক্ষয়রোগ |
এস. নিউমোনিয়া | মানব | নিউমোনিয়া |