স্ববিশ্লেষণ (জীববিজ্ঞান)

স্ববিশ্লেষণ

জীববিজ্ঞানে, স্ববিশ্লেষণ (ইংরেজি: autolysis; প্রচলিত ভাষায় স্ব-পরিপাক নামে পরিচিত) বলতে কোন কোষের নিজস্ব উৎসেচকের ক্রিয়াকলাপজনিত কারণে ঐ কোষের বিনাশ লাভের প্রক্রিয়া বোঝায়। এটি দ্বারা কোন উৎসেচকের একটি অণু কর্তৃক ঐ একই উৎসেচকের অপর একটি অণুর পরিপাক-ও নির্দেশ করতে পারে।

স্ব-বিশ্লেষণ শব্দটি এসেছে গ্রিক: αὐτο (বাংলা: স্বয়ং) এবং গ্রিক: λύσις (বাংলা: বিভাজন) শব্দ দুটি থেকে।

কোষের বিনাশ

[সম্পাদনা]

প্রাপ্তবয়স্ক জীবিত জীবদেহে স্ববিশ্লেষণের মাধ্যমে কোষের বিনাশ একটি অস্বাভাবিক ঘটনা এবং সচরাচর আঘাতপ্রাপ্ত কোষ কিংবা মরণাপন্ন কলা'র (টিস্যু) ক্ষেত্রেই এমনটা ঘটে থাকে। লাইসোসোম কর্তৃক কোষের সাইটোপ্লাজমে পরিপাক উৎসেচক নিঃসরণের মাধ্যমে স্ববিশ্লেষণের সূচনা ঘটে। এই উৎসেচকগুলো কোন সক্রিয় প্রক্রিয়ার ফলস্বরূপ নিঃসৃত হয় না, বরং সক্রিয় প্রক্রিয়া ব্যাহত হওয়ার কারণেই নিঃসৃত হয়। অন্য কথায়, স্ববিশ্লেষণ প্রক্রিয়াটি দেখে সজীব কোষ কর্তৃক পুষ্টি উপাদান হজমের সক্রিয় প্রক্রিয়ার মত মনে হলেও, মৃত কোষ কখনোই নিজে নিজে হজম হয়ে যায় না যেমনটা অনেক সময় দাবি করা হয়ে থাকে, কিংবা এর প্রতিশব্দ স্ব-পরিপাক শুনলেও এমনটা মনে হতে পারে। স্বতন্ত্র কোষীয় অঙ্গাণুসমূহের স্ববিশ্লেষণ হ্রাস করা সম্ভব যদি কোষ ভগ্নাংশীকরণের (cell fractionation) পর, অঙ্গাণুকে উষ্ণ আইসোটোনিক বাফার দ্রবণে সংরক্ষণ করা যায়।

ব্যবহার

[সম্পাদনা]

ক্ষত নিরাময়ের ক্ষেত্রে, স্ববিশ্লেষণশীল অপসারণ (autolytic debridement) বেশ সহায়ক একটি প্রক্রিয়া হতে পারে; যেখানে দেহ কর্তৃক মৃত কলাকে বিশ্লিষ্ট করে তরলে পরিণত করে ফেলা হয় যেন তা ধুয়ে বা সরিয়ে ফেলা যায়। আধুনিক ক্ষত ড্রেসিং প্রক্রিয়া যা ক্ষতস্থানকে আর্দ্র রাখতে সাহায্য করে, তা এই প্রক্রিয়ার জন্য সহায়ক হতে পারে।

খাদ্য শিল্পে, ঈস্ট নিধন ও বিভিন্ন উৎসেচক দ্বারা এর কোষ বিশ্লেষণ প্রক্রিয়ার সাথে স্ববিশ্লেষণ জড়িত। এই স্ববিশ্লেষিত ঈস্ট স্বাদ আনয়ন বা স্বাদবর্ধক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ঈস্ট নির্যাসের ক্ষেত্রে, যখন লবণ সংযোজনের মাধ্যমে এই প্রক্রিয়ার সূচনা ঘটানো হয়, তা প্লাজমোলাইসিস নামে পরিচিত।[]

পাউরুটি বেকিং এর ক্ষেত্রে, প্রাথমিকভাবে ময়দাপানি মেশানোর পর এবং ঐ খামিরে অন্যান্য উপকরণ (যেমন- লবণ, ঈস্ট) মেশানোর আগে, মিশ্রণটির বিশ্রামের সময়কাল বোঝাতে স্ববিশ্লেষণ শব্দটি ব্যবহৃত হয়।[] শব্দটির প্রচলন করেন বেকিং বিষয়ক ফরাসি অধ্যাপক রেমোঁ ক্যালভেল (Raymond Calvel), যিনি খামির তৈরির সময়কাল কমিয়ে এবং এর মাধ্যমে রুটির স্বাদ ও রং বর্ধনের উদ্দেশ্যে, এই প্রক্রিয়া অনুসরণের সুপারিশ করেন।[] দীর্ঘ সময় ধরে দলা পাকালে ঐ খামির বাতাসের অক্সিজেনের সংস্পর্শে থাকার কারণে, ময়দায় প্রাকৃতিকভাবে বিদ্যমান ক্যারোটিনয়েড নষ্ট করে ফেলে, যার ফলে রুটির স্বাভাবিক ননীসদৃশ রং ও স্বাদ বিনষ্ট হয়।[] এই প্রক্রিয়া খামিরকে ভিন্ন ভিন্ন আকার প্রদান সহজতর করে ও এর গঠন কাঠামোকেও সংহত করে।[]

গাঁজনকৃত পানীয় তৈরিতে, ঈস্টের মধ্যে আঙুরের রস (must) অথবা যব নির্যাস (wort) অধিক সময় ধরে রেখে দিলে স্ববিশ্লেষণ ঘটতে পারে। বিয়ার উৎপাদনে স্ববিশ্লেষণের ফলে অনাকাঙ্ক্ষিত স্বাদের উদ্রেক ঘটে। দ্রাক্ষাসুরা প্রস্তুতিতে স্ববিশ্লেষণ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অবাঞ্ছিত, তবে উত্তম মানের শ্যাম্পেইন তৈরির ক্ষেত্রে স্বাদ ও মুখানুভূতি সৃষ্টির জন্য এটি একটি অত্যাবশ্যক উপাদান।[]

আরও দেখুন

[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. Kevin Kavanagh (২০০৫)। Fungi: biology and applications। Chichester: John Wiley & Sons। পৃষ্ঠা 138–140। আইএসবিএন 0-470-86701-9। সংগ্রহের তারিখ ২০১০-০৭-২৫ 
  2. Gisslen, Wayne (২০০৯)। Professional baking (5th সংস্করণ)। New York: John Wiley। পৃষ্ঠা 136আইএসবিএন 978-0-471-78349-7 
  3. Calvel, Raymond (২০০১)। The taste of bread : a translation of Le Goût du pain, comment le préserver, comment le retrouver। Gaithersburg: Aspen Publishers। পৃষ্ঠা 31। আইএসবিএন 0834216469 
  4. J. Robinson (ed) The Oxford Companion to Wine Third Edition p. 54 Oxford University Press 2006 আইএসবিএন ০-১৯-৮৬০৯৯০-৬