স্যামুয়েল অ্যালোয়সিয়াস ম্যারি (১৮৬৯ - ৩ নভেম্বর, ১৯৪১) ছিলেন একজন আমেরিকান ভাস্কর এবং চিত্রকর টমাস এয়াকিনসের শিষ্য।
ম্যারির জন্ম হয়েছিল পেনসিলভানিয়ার ফিলাডেলফিয়ায়। তিনি এক আইরিশ স্টোন-কাটার ও তার পত্নীর বারো সন্তানের মধ্যে একাদশতম। শহরের প্যারোকিয়াল স্কুলে তিনি পড়াশোনা করেছিলেন। ১৮৮৬ সালের সেপ্টেম্বরে মাত্র সতেরো বছর বয়সে আর্ট স্টুডেন্টস লিগ অফ ফিলাডেলফিয়ায় যোগদান করেন ম্যারি। এই সংস্থার বয়স তখন ছিল সাত মাস। এখানে তিনি এয়াকিনসের অধীনে অধ্যয়ন করেছিলেন।[১] অল্পকালের মধ্যেই তিনি এয়াকিনসের প্রিয় ছাত্র হয়ে ওঠেন। পরে এয়াকিনসের সহকারীর দায়িত্ব পান। ১৮৯২ সালে তিনি প্রশিক্ষক তালিকাভুক্ত হন।[২] ১৮৯২ থেকে ১৯০০ সাল পর্যন্ত ১৩৩০ চেস্টনাট স্ট্রিটে দুই শিল্পী একই স্টুডিওয় কাজ করতেন। কখনও কখনও তারা একই মডেল নিয়ে ছবি আঁকতেন ও ভাস্কর্য নির্মাণ করতেন।
দুই শিল্পী একযোগে কাজ করতেন ও সময় কাটাতেন। এয়াকিনস যখন ক্যামডেনে ওয়াল্ট হুইটম্যানের সঙ্গে দেখা করতে যেতেন, তখন এয়াকিনস তার সঙ্গে যেতেন। ১৮৯২ সালের ২৬ মার্চ কবির মৃত্যু হলে তিনি তার মুখের একটি প্লাস্টার ডেথ মাস্ক প্রস্তুত করেন।[৩] ম্যারি সেন্ট চার্লস বোরোমেও সেমিনারির ক্যাথলিক পাদ্রিদের সঙ্গে এয়াকিনসের পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন। এয়াকিনস এঁদের অনেকের পোর্ট্রেট আঁকেন।
১৮৮৯ সালে এয়াকিনস ম্যারির একটি পোর্ট্রেট আঁকেন। এই পোর্ট্রেটটি ছাড়াও একাধিক ছবি ও ফটোগ্রাফে এয়াকিনস ম্যারিকে ধরে রেখেছিলেন। ম্যারিও এয়াকিনসের তিনটি মূর্তি নির্মাণ করেন। ম্যারি ছিলেন তার সারাজীবনের বন্ধু এবং বৃদ্ধ বয়সে অশক্ত শিল্পীর সহায়ক।
মাত্র একুশ বছর বয়সে (কথিত আছে, এয়াকিনসের সুপারিশক্রমে) ম্যারিকে ফিলাডেলফিয়াল স্কুল অফ ডিজাইন ফর উইমেন (অধুনা মুর কলেজ অফ আর্ট) "মডেলিং ফ্রম লাইফ" বিষয়ে প্রশিক্ষক ও "অ্যানাটমি" বিভাগে লেকচারার নিযুক্ত করে। দীর্ঘ পঞ্চাশ বছর তিনি এই পদে ছিলেন। তার ছাত্রীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য এডিথ ফেরিস, বেসি পেজ গাটমান, অ্যালিস নিল, অ্যানি প্যারিশ, এলা পিকক এবং "ফিলাডেলফিয়া টেন" গোষ্ঠীর অধিকাংশ শিল্পী।
ভাস্কর হিসেবে ম্যারির কর্মজীবনের সূত্রপাত ঘটেছিল বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশেই। ১৮৯৬ সালের মার্চ মাসে পেনসিলভানিয়া অ্যাকাডেমি অফ দ্য ফাইন আর্টস তার সৃষ্টিকর্মের একটি একক প্রদর্শনীর আয়োজন করেছিল। এই সময় তার বয়স ছিল সাতাশ বছর।[৪] তার প্রথম বড়ো কমিশনটি আসে ১৮৯৬ সালের সেপ্টেম্বরে। ফিলাডেলফিয়ার উইদারস্পুন বিল্ডিং-এর সম্মুখভাগের সজ্জার জন্য তার সৃষ্ট দশজন বাইবেলীয় নবির বৃহদাকার টেরাকোটা মূর্তি কিনে নেওয়া হয়।[৫] জনশ্রুতি আছে, এয়াকিনস স্বয়ং এই কাজে তাকে সাহায্য করেছিলেন এবং তাদের "চক্র"-এর অন্তত ছয়জন সদস্যকে মডেল করে ছয়টি মূর্তি নির্মিত হয়েছিল। এঁরা হলেন:
মোজেস: ওয়াল্ট হুইটম্যান (মরণোত্তর)
ইশাইয়া: জর্জ ডব্লিউ. হোমস (মরণোত্তর, এয়াকিনসের দ্য চেস প্লেয়ার্স থেকে)
ডেবোরাহ: সুজান ম্যাকডাওয়েল এয়াকিনস (এয়াকিনসের স্ত্রী)
স্যামুয়েল: ফ্র্যাঙ্কলিন এল. চেঙ্ক (এয়াকিনসের হোম র্যাঞ্চ ও অন্যান্য ছবি থেকে)
জেরেমিয়া: উইলিয়াম এইচ. ম্যাকডাওয়েল (এয়াকিনসের শ্বশুর).
হালডাহ: জেনি ডিন কারশ (পরবর্তীকালে ইনি ম্যারির স্ত্রী হন)
এলিজা, এজিকেল, ড্যানিয়েল ও জন দ্য ব্যাপটিস্ট মূর্তিগুলির মডেলদের চিহ্নিত করা যায়নি। ১৯৬১ সালে এই টেরাকোটা মূর্তিগুলি বিল্ডিং থেকে সরিয়ে ফেলা হয়েছে। এগুলির মধ্যে মাত্র তিনটি এখনও অক্ষত রয়েছে (মোজেস, এলিজা ও স্যামুয়েল)।[৬]
দীর্ঘ অর্ধশতাব্দীর কর্মজীবনে তিনি প্রায় একডজন বৃহদাকার ব্রোঞ্জ মূর্তি, দশ "উইদারস্পুন প্রফেট", প্রায় ২০০টি পোর্ট্রেট আবক্ষমূর্তি, মিনিয়েচার ও ক্ষুদ্র মূর্তি নির্মাণ করেন। তার কমোডোর জোসেফ ব্যারি (১৯০৬-০৮, ফাদার উইলিয়াম করবি (১৯০৯-১০), বিশপ জন ডব্লিউ. শানাহান মেমোরিয়াল (১৯১৬-১৮) প্রভৃতি কয়েকটি কমিশন সম্ভবত ফিলাডেলফিয়ার আইরিশ-ক্যাথলিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে তার সম্পর্কের ফলস্রূতি। তার নিজের এক বোন ছিলেন সন্ন্যাসিনী। ১৮৯২ থেকে ১৯৩৩ সাল পর্যন্ত পেনসিলভানিয়া অ্যাকাডেমি অফ দ্য ফাইন আর্টস-এর বিভিন্ন প্রদর্শনীতে, কখনও কখনও নিউ ইয়র্কের ন্যাশানাল অ্যাকাডেমি অফ ডিজাইন বা ন্যাশানাল স্কাল্পচার সোসাইটিতে তার সৃষ্টিকর্ম প্রদর্শিত হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য স্থানে এবং ১৯০০ সালে প্যারিসের এক্সপোজিশন ইউনিভার্সেলে-এও তার সৃষ্টি প্রদর্শিত হয়।
তার বৃহত্তম কমিশনটি ছিল গেটিসবার্গ ব্যাটেলফিল্ডে পেনসিলভানিয়া স্টেট মনুমেন্টের (১৯০৯-১০) জন্য। এটি একটি বিরাটাকার শ্বেতপাথরের প্যাভিলিয়ন। ম্যারি এর চারটি আর্কে যুদ্ধদৃশ্যের বাস-রিলিফ খোদাই করেন। গম্বুজের মাথায় একটি ২১ ফুট দীর্ঘ দেবদূতের মূর্তি বসান তিনি। এই মূর্তিটি এক দশক আগে নির্মিত নিউ ইয়র্ক সিটির সেন্ট্রাল পার্কে স্থিত অগাস্টাস সেন্ট-গডেনসের শেরম্যান মেমোরিয়াল-এর অনুরূপ।[৭]
১৯১৬ সালে তিনি অলংকরণ-শিল্পী জেনি ডিন কারশ-কে বিবাহ করেন।[৮] তাদের সন্তানাদি ছিল না। ৭২ বছর বয়সে ফিলাডেলফিয়াতেই ম্যারির জীবনাবসান হয়।