স্যালি রাইড | |
---|---|
জন্ম | স্যালি ক্রিস্টেন রাইড ২৬ মে ১৯৫১ এন্সিনো, লস অ্যাঞ্জেলেস, ক্যালিফোর্নিয়া, যুক্তরাষ্ট্র |
মৃত্যু | ২৩ জুলাই ২০১২ | (বয়স ৬১)
জাতীয়তা | আমেরিকান |
শিক্ষা | স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটি (বিএ, বিএস, এমএস, পিএইচডি) |
পেশা | প্রকৃতিবিজ্ঞানী |
দাম্পত্য সঙ্গী | স্টিভেন হাউলে (বি. ১৯৮২; ডি. ১৯৮৭) |
সঙ্গী | ট্যাম ও'শগ্নেসি (১৯৮৫-২০১২;রাইডের মৃত্যু) |
মহাকাশযাত্রা | |
নাসা মহাকাশচারী | |
মহাকাশে অবস্থানকাল | ১৪ দিন ৭ ঘণ্টা ৪৬ মিনিট |
মনোনয়ক | ১৯৭৮ নাসা গোষ্ঠী |
অভিযান | এসটিএস-৭, এসটিএস-৪১-জি |
অভিযানের প্রতীক | |
অবসর | অগস্ট ১৫, ১৯৮৭ |
স্যালি ক্রিস্টেন রাইড (মে ২৬, ১৯৫১ - জুলাই ২৩, ২০১২) একজন আমেরিকান মহাকাশচারী এবং প্রকৃতিবিজ্ঞানী ছিলেন। তাঁর জন্ম লস অ্যাঞ্জেলেসে, তিনি নাসায় যোগ দেন ১৯৭৮ খ্রিস্টাব্দে এবং তিনি ১৯৮৩ খ্রিস্টাব্দে প্রথম আমেরিকান নারী মহাকাশচারী হিসেবে মহাকাশে গিয়েছিলেন। সোভিয়েত মহাকাশচারীদ্বয় ভ্যালেন্তিনা তেরেশকোভা (১৯৬৩) এবং স্ভেৎলানা সাভিৎস্কায়ার (১৯৮২) পর সাকুল্যে তিনি মহাকাশে তৃতীয় নারী মহাকাশচারী। রাইড হলেন সর্বকনিষ্ঠ আমেরিকান যিনি মাত্র ৩২ বছর বয়সে মহাকাশ সফর করেন।<[১][২] মহাকাশযান চ্যালেঞ্জার এ দু-বার উড্ডয়ন করার পর তিনি ১৯৮৭ খ্রিস্টাব্দে নাসা থেকে অবসর নেন।
স্যালি রাইড দু-বছর স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশন্যাল সিকিউরিটি অ্যান্ড আর্মস কন্ট্রোলে এবং তারপর ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া, সান দিয়েগোতে প্রকৃতিবিজ্ঞানের অধ্যাপক হিসেবে কাজ করেছেন, প্রাথমিকভাবে ননলাইনার অপটিক্স এবং থমসন স্ক্যাটারিং নিয়ে গবেষণা করেন। যে কমিটিগুলো চ্যালেঞ্জার এবং কলাম্বিয়া মহাকাশযান দুর্ঘটনায় তদন্ত করেছিল, একমাত্র তিনিই উভয় কমিটিতে কাজ করেছেন।[৩] ২০১২ খ্রিস্টাব্দের ২৩ জুলাই অগ্ন্যাশয়ের ক্যান্সার রোগে স্যালি রাইডের মৃত্যু হয়।
ডেল বার্ডেল রাইড এবং ক্যারল জয়েস রাইডের (বিবাহপূর্ব অ্যান্ডারসন) জ্যেষ্ঠ সন্তান স্যালি রাইড লস আঞ্জেলেসে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর এক সহোদর ছিলেন, ক্যারেন 'বিয়ার' রাইড, যিনি প্রেসবিটারিয়ান মন্ত্রী ছিলেন। মাতাপিতা উভয়েই গির্জার প্রেসবিটারিয়ানদের মধ্যে জ্যেষ্ঠ ছিলেন। রাইডের মাতা মহিলাদের সংশোধনী সুবিধার একজন স্বেচ্ছাসেবী কাউন্সেলর হিসেবে কাজ করতেন। তাঁর পিতা সান্তা মোনিকা কলেজে একজন রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক ছিলেন।[৪]
রাইড লস অ্যাঞ্জেলেসের ওয়েস্টলেক স্কুল ফর গার্লস থেকে বৃত্তি নিয়ে স্নাতক হওয়ার আগে পোর্তোলা জুনিয়র হাইতে পড়াশোনা করেছেন (বর্তমানে পোর্তোলা মিডল স্কুল) এবং তারপর বার্মিংহাম হাই স্কুল।[৪] বিজ্ঞানে তাঁর আগ্রহ ছাড়াও তিনি ছিলেন একজন জাতীয় স্তরের টেনিস খেলোয়াড়। তিনটে সেমিস্টারের জন্যে রাইড স্বার্থমোর কলেজে পড়েছেন, ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া, লস অ্যাঞ্জেলেসে পদার্থবিজ্ঞান পাঠ্যক্রম নিয়েছিলেন এবং তারপর স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন জুনিয়র হিসেবে গিয়েছিলেন; স্নাতক উপাধি পেয়েছেন ইংরেজি এবং পদার্থবিজ্ঞানে। স্ট্যানফোর্ডে তিনি ১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দে স্নাতকোত্তর উপাধি এবং ১৯৭৮ খ্রিস্টাব্দে আন্তঃকেন্দ্রীয় মাধ্যমের সঙ্গে রঞ্জন রশ্মির মিথস্ক্রিয়া নিয়ে পদার্থবিজ্ঞানে পিএইচডি অর্জন করেন।[৫] জ্যোতির্পদার্থবিজ্ঞান এবং মুক্ত ইলেক্ট্রন লেজার ছিল তাঁর বিশেষ অধ্যয়নের ক্ষেত্র।[৬]
১৯৭৮ খ্রিস্টাব্দে রাইড নাসা মহাকাশচারী দল ৮-এর অংশ হিসেবে একজন প্রথম শ্রেণির নারী মহাকাশচারীরূপে মনোনীত হয়েছিলেন। একটা ছাত্র সংবাদপত্র স্ট্যানফোর্ডের বিজ্ঞাপন দেখার পর তিনি আবেদন করেছিলেন, এবং ৮০০০ দরখাস্তকারীর মধ্যে থেকে মনোনীত মাত্র ৩৫ জন বাছাইয়ের তিনি একজন ছিলেন।[৭] ১৯৭৯ খ্রিস্টাব্দে স্নাতক ট্রেনিংয়ের পর, মিশন স্পেশালিস্ট হিসেবে যোগ্যতা অর্জনের সঙ্গে সঙ্গে তিনি দ্বিতীয় এবং তৃতীয় স্পেশ শাটল উড়ানের জন্যে ভূমিভিত্তিক ক্যাপসুল কমিউনিকেটরের (ক্যাপকম) কাজ করেন; এবং স্পেস শাটলের 'কানাডার্ম' যন্ত্রমানব বাহুর উন্নয়নে সাহায্য করেন।[৮][৯]
তাঁর প্রথম মহাকাশ উড়ানের প্রাক্কালে নারী হওয়ার কারণে তাঁকে সংবাদ মাধ্যমের মুখোমুখি হতে হয়েছিল। এক সাংবাদিক সম্মেলনে তাঁকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, 'মহাকাশ উড়ান কী আপনার প্রজনন অঙ্গের ক্ষতি করবে?' এবং 'এই কাজে আপনার ক্ষতিসাধন হলে কী আপনি কান্নাকাটি করবেন? এসব সত্ত্বেও এবং অভিযানের ঐতিহাসিক গুরুত্বের ফলে রাইড বুঝিয়ে দিয়েছিলেন যে, তাঁর একমাত্র লক্ষ্য হল - একজন মহাকাশচারী হওয়া।[৮]
স্যালি রাইড ১৯৮৩ খ্রিস্টাব্দের ১৮ জুন এসটিএস-৭ অভিমুখে স্পেশ শাটল চ্যালেঞ্জারের একজন পরিচালক সদস্য হিসেবে আমেরিকার প্রথম নারী মহাকাশচারী হয়েছেন। যারা উৎক্ষেপণ দেখছিলেন সেই জনতার মধ্যে অনেকের টি-শার্টে লেখা ছিল 'রাইড, স্যালি রাইড', উইলসন পিকেটের গানের কলি ছিল 'মুস্টাং স্যালি'।[৩] এই মিশনের উদ্দেশ্য ছিল দুটো যোগাযোগের উপগ্রহ এবং শাটল প্যালেট উপগ্রহের (এসপিএএস-১) মধ্যে সংযোগ স্থাপন করা; পণ্য পরিবহন অঞ্চলে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানো এবং টিডিআরএসউপগ্রহকে পরীক্ষা করা। এসপিএএস-১ উপগ্রহকে সফলভাবে প্রয়োগ করা হয়েছিল, পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার পর পুনরায় সংগ্রহ করে পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনা হয়েছল।
রাইডের কাজের অংশ ছিল যন্ত্র মানবকে চালনা করে প্রয়োগ করা এবং এসপিএএস-১ পুনরুদ্ধার করা।[৫]
রাইডের দ্বিতীয় মহাকাশ উড়ান ছিল ১৯৮৪ খ্রিস্টাব্দে চ্যালেঞ্জারে চড়েই এসটিএস-৪১-জি অভিযান। তিনি মোট ৩৪৩ ঘণ্টার বেশি সময় মহাকাশে অবস্থান করেছেন।
স্পেস শাটল চ্যালেঞ্জার দুর্ঘটনা ঘটার সময় রাইড তাঁর তৃতীয় উড়ানের জন্যে (এসটিএস-৬১-এম, একটা টিডিআরএস প্রয়োগ মিশন) আট মাসের ট্রেনিং সম্পূর্ণ করেন।
রজার্স কমিশনে (চ্যালেঞ্জার দুর্ঘটনার তদন্ত করার জন্যে রাষ্ট্রপতি নিযুক্ত কমিশন) স্যালি রাইডের নাম নথিভুক্ত হয় এবং তিনি পরিচালনা সাবকমিটির প্রধান ছিলেন। তিনি ছিলেন একমাত্র ব্যক্তি যাঁর নাম চ্যালেঞ্জার দুর্ঘটনার উভয় তদন্ত কমিটিতেই ছিল। (একটা হল চ্যালেঞ্জার দুর্ঘটনা এবং পরে কলাম্বিয়া দুর্ঘটনা। চ্যালেঞ্জার তদন্তের পর রাইড ওয়াশিংটন ডিসিতে নাসা কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে কাজের দায়িত্বপ্রাপ্ত হন, যেখানে তিনি নাসার প্রথম কৌশলগত পরিকল্পনা প্রয়াসের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, তাঁর রচিত রিপোর্টের শিরোনাম ছিল 'নাসা লিডারশিপ অ্যান্ড আমেরিকাজ ফিউচার ইন স্পেস'; এবং তিনি নাসার অনুসন্ধানের কার্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন।[৫] ২০১২ খ্রিস্টাব্দে রাইডের মৃত্যুর পরজেনারেল ডোনাল্ড কুতিনা প্রকাশ করেন যে, রাইড তাঁকে বুদ্ধিদীপ্তভাবে ও-বলয় সম্পর্কে মূল তথ্য প্রদান করেছিলেন (যেমন, সেগুলো হবে কঠিন এবং নিচু তাপমাত্রার) যেগুলো বিস্ফোরণের কারণ ঘটিয়ে শেষ পর্যন্ত সনাক্তকরণের দিকে পরিচালিত করে। .[১০]
১৯৮৭ খ্রিস্টাব্দে রাইড সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল সিকিউরিটি অ্যান্ড আর্মস কন্ট্রোল, স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে কাজ করার জন্যে ওয়াশিংটন ডিসির কাজ ছেড়ে দিয়েছিলেন। ১৯৮৯ খ্রিস্টাব্দে তিনি ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া, সান দিয়েগোতে প্রকৃতিবিজ্ঞানের একজন অধ্যাপক এবং ক্যালিফোর্নিয়া স্পেস ইন্সটিটিউটের নির্দেশক হয়েছিলেন। ১৯৯০ খ্রিস্টাব্দের দশকের মাঝামাঝি থেকে তাঁর মৃত্যু পর্যন্ত নাসার দুটো জন-প্রসার কার্যক্রমের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন—একটা আইএসএস আর্থকেএএম এবং অন্যটাজিআরএআইএল মুনকেএএম কার্যক্রম, সহযোগিতায় ছিল নাসার জেট প্রোপালশন ল্যাবরেটরি এবং ইউসিএসডি। এই কার্যক্রমে মিডল স্কুল ছাত্রদের পৃথিবী[১১] এবং চাঁদের[১২] ছবির অনুরোধ মানা হোত। ১৯৯৯ খ্রিস্টাব্দে তিনি টাচড বাই অ্যান অ্যাঞ্জেল-এর সিজন ৫ ফাইনালে 'গডস্পিড' শিরোনামে অভিনয় করেছিলেন। ২০০৩ খ্রিস্টাব্দে তিনি <i id="mwrw">কলাম্বিয়া অ্যাকসিডেন্ট ইনভেস্টিগেশন বোর্ডে</i> কাজ করার জন্যে আহূত হয়েছিলেন। তিনি স্যালি রাইড সিয়েন্সের প্রেসিডেন্ট এবং সিইও ছিলেন, যে কোম্পানি ২০০১ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত হয়ে উচ্চ বুনিয়াদী ও মিডল স্কুল ছাত্র, বিশেষ নজর দিয়ে ছাত্রীদের জন্যে বিনোদনমূলক বিজ্ঞান কার্যক্রম এবং প্রকাশনা তৈরি করে।[১৩][১৪][১৫]
চ্যালেঞ্জার দুর্ঘটনার কারিগরি সমস্যা সম্পর্কে ইঞ্জিনিয়ার রজার বইসজলি সতর্কবাণী দিয়েছিলেন; মর্টন-থিওকলের পরে সমস্ত কার্যবাহিনী তার থেকে দূরে সরে গেলেও যখন তিনি তাঁর দুর্ঘটনা-পূর্ববর্তী সতর্কবাণী নিয়ে প্রকাশ্যে আসেন তখন একমাত্র বিখ্যাত ব্যক্তি রাইড তাঁকে সমর্থন করেন। তাঁর প্রয়াসে নিজের সমর্থন দেখানোর জন্যে স্যালি রাইড প্রকাশ্যে তাঁকে আলিঙ্গন করেন।[১৬]
রাইড একক এবং সহ-লেখক হিসেবে সাতটা বই লিখেছেন[১৭]; শিশুদের উপলক্ষ্যে বিষয় মহাকাশ, শিশুদের বিজ্ঞান অধ্যয়নে অনুপ্রেরণা দেওয়াই তাঁর উদ্দেশ্য ছিল।[১৮][১৯]
রাইড ২০০৮ খ্রিস্টাব্দে বারাক ওবামাকে মার্কিন রাষ্ট্রপতি পদের জন্যে অনুমোদন দিয়েছিলেন।[২০][২১] ২০০৯ খ্রিস্টাব্দের ৭ মে অফিস অফ দ্য সায়েন্স অ্যান্ড টকনোলজি পলিসি (ওএসটিপি)-এর দ্বারা একটা স্বাধীন সমীক্ষা করার অনুরোধে তিনি রিভিউ অফ দ্য ইউনাইটেড স্টেটস হিউম্যান স্পেস ফ্লাইট কমিটির সদস্য হয়েছিলেন।
ব্যক্তিগত জীবনে স্যালি রাইড একান্ত নিজস্বতা বজায় রাখতেন।১৯৮২ খ্রিস্টাব্দে তিনি নাসার সহ-মহাকাশচারী স্টিভ হাউলির সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। ১৯৮৭ খ্রিস্টাব্দে তাঁদের বিবাহবিচ্ছেদ হয়।[২২]
রাইডের মৃত্যুর পর তাঁর শ্রদ্ধার্ঘ্যতে প্রকাশিত হয় যে, তাঁর ২৭ বছরের সাথী সান দিয়েগো স্টেট ইউনিভার্সিটিতে স্কুল সাইকোলজির একজন অধ্যাপক এমেরিটা ট্যাম ও'শগ্নেসি, এবং তিনি ছিলেন রাইডের ছোটোবেলার বন্ধু, যাঁরা উচ্চাকঙ্ক্ষী টেনিস খেলোয়াড় হিসেবে একসাথে মিলিত হোতেন।[২৩][২৪] ও'শগ্নেসিও একজন বিজ্ঞান লেখক ছিলেন, এবং তিনি পরবর্তীতে স্যালি রাইড সায়েন্সের সহ-প্রতিষ্ঠাতা।[২৫][২৬] ও'শগ্নেসি স্যালি রাইড সায়েন্সের চিফ এগজিকিউটিভ অফিসার এবং বোর্ডের প্রধান হিসেবে কাজ করেছেন।[২৭] তাঁরা দুজনে শিশুদের ছ-টা প্রশংসিত বিজ্ঞান বই লিখেছিলেন।[১৭] রাইডের বোনের সাহচর্য এবং দৃঢ়তায় তাঁদের সম্পর্ক প্রকাশিত হয়; যিনি বলেছিলেন যে, রাইড তাঁর অসুস্থতা ও চিকিৎসাসহ ব্যক্তিগত জীবনকে গোপন রাখতে পছন্দ করতেন।[২৮][২৯] তিনি হলেন প্রথম পরিচিত এলজিবিটি মহাকাশচারী।[৩০][৩১]
২০১২ খ্রিস্টাব্দের ২৩ জুলাই লা জোলা, ক্যালিফোর্নিয়ার বাড়িতে ৬১ বছর বয়সে স্যালি রাইডের মৃত্যু হয়,[৩২] সতেরো মাস আগে তাঁর অগ্নাশয়ের ক্যান্সার রোগ নির্ণয় হয়েছিল।[৩][৩৩][৩৪][৩৫] শবদাহের পর, চিতাভষ্ম তাঁর পিতার[৩৬] চিতাভষ্মের পাশে উডলন মেমোরিয়াল সিমেট্রি, সান্তা মোনিকায় প্রোথিত করা হয়।
রাইড তাঁর জীবৎকাল এবং তার পরেও অসংখ্য পুরস্কার পেয়েছেন। তিনি গ্রহণ করেছেন ন্যাশনাল স্পেস সোসাইটির ভন ব্রাউন পুরস্কার, দ্য লিন্ডবার্গ ইগল, এবং দ্য এনসিএএ'জ থিওডোর রুজভেল্ট অ্যাওয়ার্ড। তিনি ন্যাশনাল ওমেন্স হল অফ ফেম ও অ্যাস্ট্রোনট হল অফ ফেম-এ অভিষিক্ত হয়েছিলেন এবং দুবার নাসা স্পেস ফ্লাইট মেডাল সহ পুরস্কৃত হয়েছিলেন। তাঁর নামে যুক্তরাষ্ট্রে দুটো স্কুল প্রতিষ্ঠিত হয়েছে: দ্য উডল্যান্ড, টেক্সাসে স্যালি রাইড এলিমেন্টারি স্কুল এবং জার্মানটাউন, মেরিল্যান্ডে স্যালি রাইড এলিমেন্টারি স্কুল।[৩৭]
১৯৯৪ খ্রিস্টাব্দে ৩৫ বছর বা তার নিচে একজন ব্যক্তি হিসেবে মহান জনসেবার জন্যে রাইড স্যামুয়েল এস অ্যাওয়ার্ড পেয়েছিলেন, জেফারসন অ্যাওয়ার্ড দ্বারা এই পুরস্কার প্রতি বছর দেওয়া হয়ে থাকে।[৩৮]
২০০৬ খ্রিস্টাব্দের ৬ ডিসেম্বর ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর আর্নল্ড শোয়ার্জনেগার এবং ফার্স্ট লেডি মারিয়া শ্রিভার ক্যালিফোর্নিয়া মিউজিয়াম ফর হিস্ট্রি, ওম্যান, অ্যান্ড আর্টস-এর ক্যালিফোর্নিয়া হল অফ ফেম-এ রাইডের প্রতিমূর্তি অধিষ্ঠিত করেছিলেন।[৩৯]
২০০৭ খ্রিস্টাব্দে ডেটন, ওহিয়ো-তে ন্যাশনাল অ্যাভিয়েশন হল অফ ফেম-এ তাঁর প্রতিমূর্তি প্রতিষ্ঠিত হয়।
নাসার জিআরএআইএল মিশনের জন্যে রাইড জনসংযোগ এবং শিক্ষাগত কার্যক্রমের নির্দেশক ছিলেন, যে প্রকল্পে চাঁদের মাধ্যাকর্ষণের মানচিত্র তৈরিতে একজোড়া উপগ্রহ পাঠানো হয়েছিল। ২০১২ খ্রিস্টাব্দের ১৭ ডিসেম্বর দুটো জিআরএআইএল ক্র্যাটার গোল্ডস্মিট-এর কাছে ভাটা ও প্রবাহ প্রমাণ করেছিল যখানে চাঁদের অনামি পাহাড় আছে, নির্দেশ ছিল সেখানে ধাক্কা দিয়ে তাঁদের মিশন সম্পূর্ণ করবে। নাসা এই অবতরণ স্থানের নাম স্যালি রাইডের সম্মানে তাঁর নামে ঘোষণা করেছিল।[৪০][৪১] ২০১২ খ্রিস্টাব্দের ডিসেম্বরে স্পেস ফাউন্ডেশনও রাইডকে তাদের সর্বোচ্চ সম্মান, জেনারেল জেমস ই. হিল লাইফটাইম স্পেস অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ডে ভূষিত করেছিল।[৪২]
২০১৩ খ্রিস্টাব্দের এপ্রিলে ইউ এস নেভি ঘোষণা করে যে, একটা গবেষণা জাহাজের নাম স্যালি রাইডের সম্মানে তাঁর নামে করা হবে।[৪৩] ২০১৪ খ্রিস্টাব্দে সমুদ্রবিজ্ঞান গবেষণা জাহাজের নামকরণ আরভি <i>স্যালি রাইড</i> (এজিওআর-২৮) দিয়ে একাজ সম্পূর্ণ হয়।[৪৪]
২০১৩ খ্রিস্টাব্দের ২০ মে ওয়াশিংটন, ডিসির জন এফ. কেনেডি সেন্টার ফর দ্য পারফর্মিং আর্টস-এ 'ন্যাশনাল ট্রিবিউট টু স্যালি রাইড' অনুষ্ঠিত হয়; এবং ওই দিনই রাষ্ট্রপতি বারাক ওবামা ঘোষণা করেন যে, স্যালি রাইডকে যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ নাগরিক সম্মান প্রেসিডেন্সিয়াল মেডাল অফ ফ্রিডম, দেওয়া হবে। ২০১৩ খ্রিস্টাব্দের ২০ নভেম্বর হোয়াইট হাউসে এক অনুষ্ঠানে এই মেডাল তাঁর জীবনসঙ্গী ট্যাম ও'শগ্নেসিকে প্রদান করা হয়।[৪৫] ২০১৩ খ্রিস্টাব্দের জুলাইতে ফ্লাইং ম্যাগাজিন তাদের '৫১ হিরোজ অফ অ্যাভিয়েশন' তালিকায় রাইডকে ৫০ নম্বরে স্থান দিয়েছিল।[৪৬]
২০১৪ খ্রিস্টাব্দে রাইডকে এলজিবিটি ইতিহাস ও জনগণ, এক বহিরঙ্গন সর্বজনীন প্রদর্শনে, লিগ্যাসি ওয়াকে অভিষিক্ত করা হয়েছিল।[৪৭][৪৮]
২০১৭ খ্রিস্টাব্দে এক গুগল ডুডল আন্তর্জাতিক নারী দিবসে তাঁকে সম্মান জানিয়েছিল। [৪৯]
২০১৮ খ্রিস্টাব্দে যুক্তরাষ্ট্রের ডাক বিভাগ রাইডের সম্মানে একটা প্রথম শ্রেণির ডাকটিকিট প্রকাশ করেছিল।[৫০]
২০১৯ খ্রিস্টাব্দে স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির লুসিয়া স্টার্ন হলে অবস্থিত সেরা হাউসের নাম বদল করে স্যালি রাইড হাউস করা হয়।[৫১] এর আগেকার নাম জুনিপেরো সেরার নামে ছিল।
২০১৯ খ্রিস্টাব্দের মার্চে তাদের প্রথম খেলায় ইউনাইটেড স্টেটস ওমেন্স ন্যাশনাল সকার টিম-এর নারীরা পূর্বে যে নারীকে সম্মান জানিয়ে প্রত্যেকে তাঁর নামে জার্সি পরত; তিয়েরনা ডেভিডসন টিম জার্সিতে স্যালি রাইডের নাম পছন্দ করেন।[৫২]
বিলি জোয়েলের ১৯৮৯ খ্রিস্টাব্দের 'উই ডিডন'ট স্টার্ট দ্য ফায়ার' গানে তাঁর উল্লেখ আছে।
১৯৯৯ খ্রিস্টাব্দে রাইড টাচড বাই অ্যান অ্যাঞ্জেল ধারাবাহিকের 'গডস্পিড' উপাখ্যানে প্রদর্শন করেছিলেন।
২০১৩ খ্রিস্টাব্দে জানেলে মনায় 'স্যালি রাইড' নামে একটা গান গেয়েছিলেন।[৫৩]
২০১৩ খ্রিস্টাব্দে মহাকশচারীদ্বয় ক্রিস হ্যাডফিল্ড এবং ক্যাথেরিন কোলম্যানও 'স্যালি রাইড' নাম একটা গান গেয়েছিলেন।[৫৪]
২০১৬ খ্রিস্টাব্দেরআওয়ার লেডি অফ দ্য ইনফার্নো উপন্যাসের কেন্দ্রীয় ঘটনা হল রাইডের মহাকাশ উড়ান।[৫৫]
২০১৭ খ্রিস্টাব্দে একটা 'ওমেন অফ নাসা' এলইজিও সেট বিক্রি হয়েছিল (অন্যান্য জিনিসের সঙ্গে) রাইডের ছোটো মূর্তি, মার্গারেট হ্যামিল্টন, মায়ে জেমিসন এবং ন্যান্সি গ্রেস রোম্যান।[৫৬]
২০১৯ খ্রিস্টাব্দে ম্যাটল আইএনসি তাদের 'ইন্সপায়ারিং ওম্যান' সিরিজের অংশ হিসেবে একটা রাইডের মতো বারবি ডল প্রকাশ করে।[৫৭]