স্রোং-ব্ত্সন-স্গাম-পো | |||||
---|---|---|---|---|---|
তিব্বতের সম্রাট | |||||
পূর্বসূরি | গ্নাম-রি-স্রোং-ব্ত্সন | ||||
উত্তরসূরি | খ্রি-মাং-স্লোন-র্ত্সান | ||||
জন্ম | ৬০৫ | ||||
মৃত্যু | ৬৪৯ (বয়স ৪৩–৪৪) | ||||
| |||||
তিব্বতী | |||||
ওয়াইলি | Srong-btsan sGam-po | ||||
পিনয়িন | Songzain Gambo | ||||
THL | Songtsen Gampo | ||||
পিতা | গ্নাম-রি-স্রোং-ব্ত্সন |
স্রোং-ব্ত্সন-স্গাম-পো (তিব্বতি: , ওয়াইলি: Srong-btsan sGam-po) বা সুং-ত্সান-কান-পু (松贊干布; ফিনিন: Sōngzàn Gānbù; ওয়েড-জাইলস: Sung1-tsan4 Kan1-pu4) বা কি-ত্সুং-ল্সুন-ত্সান (棄宗弄贊; ফিনিন: Qìzōng Lòngzàn; ওয়েড-জাইলস: Ch'i4-tsung1 Lung4-tsan4) [১] তিব্বত সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা ও দ্বিতীয় সম্রাট।
স্রোং-ব্ত্সন-স্গাম-পোর জন্মের সময় সম্বন্ধে নিশ্চিত জানা যায় না। তিব্বতীদের মতে তার জন্ম ষাঁড়ের নামে চিহ্নিত বছরে লাসার উত্তরপূর্বে মালদ্রো অঞ্চলের গ্যামাতে জন্মগ্রহণ করেন। সেই অনুযায়ী তার জন্ম ৫৫৭, ৫৬৯, ৫৮১, ৫৮৩, ৬০৫ বা ৬১৭ এর মধ্যে যে কোন একটি খ্রিষ্টাব্দে হয়েছে বলে মনে হয়। [২][৩] তার পিতা গ্নাম-রি-স্রোং-ব্ত্সন তিব্বতের প্রথম সম্রাট।
৬১৮ খ্রিষ্টাব্দে (?) গ্নাম-রি-স্রোং-ব্ত্সনকে বিষপ্রয়োগের মাধ্যমে হত্যা করা হলে স্রোং-ব্ত্সন-স্গাম-পো নাবালক অবস্থায় সিংহাসনে আরোহণ করেন। [৪][৫] :১৯ জিউ ট্যাংশু (সরলীকৃত চীনা: 唐书; প্রথাগত চীনা: 唐書) গ্রন্থেও তার নাবালক অবস্থায় সিংহাসনে আরোহণের উল্লেখ আছে। [৪][৬] ঐতিহাসিকদের মতে তখন তার বয়স তেরো বছর। [৭] সেই অনুযায়ী তার জন্ম ষাঁড়ের নামে চিহ্নিত ৬০৫ খ্রিষ্টাব্দে হয়েছিল।
৬২৭ খ্রিষ্টাব্দে পুরাতন তিব্বতী বর্ষানুক্রমিক ইতিবৃত্ত অনুসারে স্রোং-ব্ত্সন-স্গাম-পোর মন্ত্রী ম্যাং-মাং-পো-র্জে ঝাংঝুং রাজ্যের সাহায্যে উত্তর পূর্ব তিব্বতে বসবাসকারী সুমপা জাতিকে পরাজিত করেন।[৮] ছয় বছর পরে ম্যাং-মাং-পো-র্জেকে বিশ্বাসঘাতকতার অভিযোগে মৃত্যুদন্ড দেওয়া হয় এবং তার স্থানে ম্গর-স্রোং-র্ত্সনকে মন্ত্রী করা হয়।
তিব্বত সম্রাট স্রোং-ব্ত্সন-স্গাম-পো বা খ্রি-স্রোং-ল্দে-ব্ত্সান এর মধ্যে কে ঝাংঝুং আক্রমণ করেছিলেন, সে নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। [৯] যদিও রল্ফ আলফ্রেড স্টেইনের মতে এই আক্রমণ ৬৪৫ খ্রিষ্টাব্দে হয়েছিল[১০] কিন্তু জিউ ট্যাংশু গ্রন্থে বলা হয়েছে যে ৬৩৪ খ্রিষ্টাব্দে ইয়াংটং বা ঝাংঝুং ও অন্যান্য চিয়াং জাতি তিব্বতের অধীনস্থ হয়। এরপর সম্রাট ঝাংঝুং রাজ্য ও নিজের রাজ্যকে মিলিত করে তুয়ুহুন রাজ্যকে পরাজিত করেন।
ঝাংঝুং আক্রমণের ইতিহাস সম্বন্ধে পুরাতন তিব্বতী গ্রন্থে বলা হয় যে, রাজনৈতিক সন্ধির উদ্দেশ্যে তিব্বত সম্রাট স্রোং-ব্ত্সন-স্গাম-পো এবং ইয়াংটংয়ের রাজা লিগ-ম্যি-র্হ্যা পরস্পরের বোনকে বিবাহ করেন। কিন্তু লিগ-ম্যি-র্হ্যার তিব্বতী স্ত্রী ও স্রোং-ব্ত্সন-স্গাম-পোর বোন সদ-মর-কর তার সঙ্গে খারাপ ব্যবহারের অভিযোগ করলে দুই রাজ্যের মধ্যে যুদ্ধ বাঁধে এবং রাজা লিগ-ম্যি-র্হ্যা নিহত হন। এরফলে এই দুই সাম্রাজ্যকে মিলিত করে বোদ র্গ্যাল-খব নাম রাখা হয়। [১১][১২]
৬৩৪ খ্রিষ্টাব্দে স্রোং-ব্ত্সন-স্গাম-পো ট্যাং সম্রাটের নিকট দূত মারফৎ সোনা ও রেশম পাঠিয়ে চীনের যে কোন একজন রাজকুমারীকে বিবাহ করার প্রার্থনা করেন। কিন্তু এতে ট্যাং সম্রাট ট্যাং তাইজং আপত্তি করলে তিনি তুয়ুহুন রাজ্য ও সোংঝৌ নামক ট্যাং সাম্রাজ্যের সীমান্ত প্রদেশ আক্রমণ করেন।[১৩] ট্যাংদের লেখা রচনাতে বলা হয়েছে, এই যুদ্ধে স্রোং-ব্ত্সন-স্গাম-পো পরাজিত হয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করলে ট্যাং সম্রাট ট্যাং তাইজং তার বিবাহের প্রার্থনা স্বীকার করেন। [১৪][১৫] কিন্তু তিব্বত থেকে প্রাপ্ত রচনা থেকে যায় যে তিব্বতী সেনা চীনাদের পরাজিত করলে ট্যাং তাইজং তার ভ্রাতুষ্পুত্রী ওয়েংচেন গোংঝুকে তার হাতে দিতে বাধ্য হন। [১৩]
জিউ ট্যাংশু গ্রন্থ অনুযায়ী [১৬] 泥婆羅 (নিপোলুয়ো) বা নেপালে লিচ্ছবি রাজকুমার নরেন্দ্রদেবের পিতার মৃত্যু হলে নরেন্দ্রদেবের জৈষ্ঠ্যতাত বিষ্ণুগুপ্ত সিংহাসন দখল করে নেন। [১৭] নরেন্দ্রদেবকে তিব্বত সম্রাট আশ্রয় দেন ও ৬৪১ খ্রিষ্টাব্দে তকে নেপালে নিজের রাজ্য দখলে সহায়তা করেন। [৪]:৫২৯[৬][১৮] স্রোং-ব্ত্সন-স্গাম-পোর সঙ্গে ভৃকুটী দেবী নামে এক লিচ্ছবি রাজকুমারীর বিবাহ হয়।
স্রোং-ব্ত্সন-স্গাম-পোর কনিষ্ঠ ভ্রাতা ব্ত্জন-স্রোং এবং ভগিনী সদ-মর-করের মধ্যে বিবাদ উপস্থিত হলে শাস্তিস্বরূপ ব্ত্জন-স্রোংকে ইয়ার্লুং উপত্যকার দক্ষিণ পশ্চিমে ৫,০৯০ মিটার উচ্চ ইয়ার্তো গিরিবর্ত্ম পেরিয়ে গ্ন্যাল প্রদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। [১৯][২০] আবার কোন কন ঐতিহাসিকদের মতে তাকে ম্খাস স্রেগ্স নামে এক মন্ত্রী ৬৩৯ খ্রিষ্টাব্দে সম্রাটের নির্দেশে পুড়িয়ে মারেন। [২১][২২] স্রোং-ব্ত্সন-স্গাম-পোর ভগিনী সাদ-মার-কারের সঙ্গে ঝাংঝুংয়ের রাজা লিগ-ম্যি-র্হ্যার বিবাহ হয়।
স্রোং-ব্ত্সন-স্গাম-পোর প্রধান দুই রাণী ছিলেন রাজকুমারী ওয়েংচেন গোংঝু এবং লিচ্ছবি রাজকুমারী ভৃকুটী দেবী। এছাড়াও তিনি ইয়াংটংয়ের রাজা লিগ-ম্যি-র্হ্যার ভগিনী এবং লাসার পশ্চিমে অবস্থিত স্তোদ-লুং উপত্যকার মাং গোষ্ঠীর রাজকুমারী মাং-ব্জা খ্রি-মো-ম্ন্যেন-ল্দোং-স্তেংকে বিবাহ করেন। মাং-ব্জা খ্রি-মো-ম্ন্যেন-ল্দোং-স্তেংয়ের পুত্র গুং-স্রোং-গুং-ব্ত্সন ছিলেন তিব্বত সাম্রাজ্যের উত্তরাধিকারী। [২৩][২৪][২৫] গুং-স্রোং-গুং-ব্ত্সন তেরো বছর বয়সে আঝা মাং-মো-র্জেকে বিবাহ করেন এবং তাদের খ্রি-মাং-স্লোন-র্ত্সান নামে এক পুত্র সন্তানের জন্ম হয়।
স্রোং-ব্ত্সন-স্গাম-পোর রাজত্বে তিব্বতে প্রথম বৌদ্ধ ধর্ম প্রবেশ করে। তিনি লাসা শহরে জোখাং সহ বহু বৌদ্ধ মন্দির স্থাপন করেন।[২৬][২৭] লাসা শহরকে তিনি সুসজ্জিত করে রাজধানীর মর্যাদা দেন। [২৮][২৯] এছাড়াও নেদংয়ের খ্রা-ব্রুগ বৌদ্ধবিহার তিনি নির্মাণ করান। তার আমলে প্রথম বৌদ্ধ ধর্মগ্রন্থগুলি সংস্কৃত থেকে তিব্বতী ভাষায় অনুবাদ করা শুরু হয়। [৩০]
স্রোং-ব্ত্সন-স্গাম-পো তার মন্ত্রী স্লোপ-ত্পোন-থু-মি-সম-ভো-তাকে ভারতে পাঠান যাতে তিনি তিব্বতী ভাষার জন্য লিপি প্রস্তুত করতে পারেন। তার তৈরী লিপিতে তিব্বতে প্রথম অনুবাদকর্ম ও সংবিধান রচনা শুরু হয়।[৩১] জিউ ট্যাংশু গ্রন্থে বলা হয়েছে যে ৬৪৮ খ্রিষ্টাব্দে ট্যাং সম্রাট ট্যাং তাইজং স্রোং-ব্ত্সন-স্গাম-পোকে বিংওয়াং উপাধি ও ৩০০০ রেশমের কাপড় প্রদান করেন এবং কাগজ, কালি ও মদ প্রস্তুত করার কৌশল প্রদানে সম্মত হন। [৩২]
তিনি তিব্বতে চীন থেকে হস্তশিল্প ও জ্যোতিষবিদ্যা, ভারত থেকে ধর্ম ও লিপি, নেপাল থেকে ঐশ্বর্য এবং উইঘুরদের থেকে আইন ও প্রশাসন এনে এক শক্তিশালী সাম্রাজ্য গঠনে ব্রতী হন। [৩৩]
গুং-স্রোং-গুং-ব্ত্সনের তেরো বছর বয়স হলে স্রোং-ব্ত্সন-স্গাম-পো তাকে সিংহাসন ছেড়ে দেন। গুং-স্রোং-গুং-ব্ত্সন পাচ বছর রাজত্ব করেন ও আঠারো বছর বয়সে তার মৃত্যু হলে স্রোং-ব্ত্সন-স্গাম-পো আবার রাজ্যভারের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। [২৩][৩৪] কিন্তু এই ঘটনার সময়কাল সম্বন্ধে জানা যায়নি।[২৫][৩৫] ৬৪৯ খ্রিষ্টাব্দে স্রোং-ব্ত্সন-স্গাম-পোর মৃত্যু হলে গুং-স্রোং-গুং-ব্ত্সনের পুত্র খ্রি-মাং-স্লোন-র্ত্সান পরবর্তী সম্রাট হন।
|name=
উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য)
রাজত্বকাল শিরোনাম | ||
---|---|---|
পূর্বসূরী গ্নাম-রি-স্রোং-ব্ত্সন |
স্রোং-ব্ত্সন-স্গাম-পো ? ৬০৫–৬৪৯ |
উত্তরসূরী খ্রি-মাং-স্লোন-র্ত্সান |