হদল নারায়ণপুর | |
---|---|
পশ্চিমবঙ্গে অবস্থান | |
স্থানাঙ্ক: ২৩°১৬′ উত্তর ৮৭°৩১′ পূর্ব / ২৩.২৭° উত্তর ৮৭.৫২° পূর্ব | |
দেশ | India |
প্রদেশ | পশ্চিমবঙ্গ |
জেলা | বাঁকুড়া জেলা |
সময় অঞ্চল | IST (ইউটিসি+৫:৩০) |
হদল এবং নারায়ণপুর ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বাঁকুড়া জেলার পাত্রসায়র থানায় পাশাপাশি অবস্থিত দুটি গ্রাম। এই গ্রাম দুটি আলাদা মৌজায় অবস্থিত হলেও, পাশাপাশি থাকার জন্য তারা এই যৌথ নামেই পরিচিত।[১]
হদল নারায়ণপুর গ্রামের মন্ডল উপাধিধারী জমিদার পরিবারের ইতিহাস বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এই পরিবারের মুচিরাম ঘোষ মল্লরাজা গোপাল সিংহের রাজত্বকালে (১৭২০-১৭৫২) নিজের আদি বাসস্থান নীলপুর থেকে এখানে এসে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। এখানে আসার পর মুচিরাম ঘোষের সাথে গোপাল সিংহের সভাসদ বিখ্যাত গণিতজ্ঞ শুভঙ্কর দাসের আলাপ হয়। শুভঙ্কর দাস তাঁকে মল্লরাজের সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার পর খুব অল্প সময়ের মধ্যে মুচিরাম ঘোষ নিজের চেষ্টায় হদলনারায়ণপুরের প্রশাসক হিসাবে নিযুক্ত হন। পরবর্তি কালে তিনি মন্ডলপতি উপাধি লাভ করে নিজের জমিদারি বিস্তার করেন। নীলচাষ থেকেও এই পরিবারের অনেক ধন সম্পত্তি উপার্জন হয়েছিল। [২] পরে এই জমিদার পরিবার সুবিশাল অট্টালিকা এবং অনেক মন্দির স্থাপন করেন| এই পরিবারের বড় তরফের বাস স্থান সুরম্য প্রাসাদের চেয়ে কোনও অংশে কম ছিলনা| [৩]
হদলনারায়ণপুর গ্রামে ঢোকবার মুখেই একটি দালান মন্দির চোখে পড়ে| গ্রামে এটি ব্রহ্মাণী দেবীর মন্দির বলে পরিচিত| কষ্ঠিপাথরের এই অনিন্দ্যসুন্দর মূর্তিটির উচ্চতা ৫ ফুট ১০ ইঞ্চি ও প্রস্থ ২ ফিট ১১ ইঞ্চি| তবে এই মূর্তিটির পায়ে, দুই পাশে এবং পিছনের খিলানে সবশুদ্ধু পাঁচটি প্রজ্জ্বলিত অগ্নিকুন্ডের অনুকৃতি থেকে একে "পঞ্চকুন্ডাঅগ্নিমধ্যস্থা" পার্বতী বলে অনুমান করা যেতে পারে|[৪]
এই দেবীর ইতিহাস বেশ চিত্তাকর্ষক| গ্রামের লোককথা অনুসারে কোন এক "মুড়োকাটা" চক্রবর্তী এই অঞ্চলের গাছের মুড়ো কেটে এখানে বসতি স্থাপন করেন| তাঁর বিধবা মেয়ে স্বপ্নাদেশ পেয়ে দামোদরের এক গভীর দহ থেকে এই মূর্তি উদ্ধার করেন|[৫]
এই লোককথার ভিন্নমত আছে| অন্য মতে রানী ময়রা নামক এক তাম্বুলি মহিলা স্বপ্নাদেশ পান| তার কথা শুনে গ্রামের লোকজন দামোদরের পাশে গভীর কাদার ভিতর থেকে মূর্তিটি উদ্ধার করে ব্রহ্মাণী দেবী হিসাবে গ্রামে প্রতিষ্ঠিত করে|[৬]
বাঁকুড়া জেলার দামোদরের শাখানদী বোদাই এর দক্ষিণ তীরে হদল এবং নারায়ণপুর গ্রামের অবস্থান[১]
নারায়ণপুর গ্রামে অবস্থিত হদল নারায়ণপুর আপার প্রাইমারি হায়ার সেকেন্ডারি স্কুলটি ১৯০৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এখানে বাংলা মাধ্যমে পড়ানো হয়। এটি একটি কো-এডুকেশন স্কুল। এই স্কুলে পঞ্চম শ্রেণী থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত পড়ানোর ব্যবস্থা আছে | [৭]
হদল নারায়ণপুরের স্থাপত্যের মধ্যে মন্ডল পরিবারের বসতবাড়ি, রাসমঞ্চ এবং তাঁদের নির্মিত তিনটি টেরাকোটা মন্দির বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য |
মন্ডল পরিবারের বড় তরফের প্রাসাদোপম দোতলা অট্টালিকাটিকেও পুরাকীর্তি বলা চলে | এই জাতীয় সাত মহলা বসতবাড়ি পশ্চিম বাংলার গ্রামে দেখতে পাওয়া বিরল | এই বসতবাটির বাইরের প্রাঙ্গনে একটি সতেরো চূড়া বিশিষ্ট, আটকোনা, দ্বিতল রাসমঞ্চ দেখতে পাওয়া যায় । এটির উচ্চতা ৪০ ফুট এবং ভিত্তি বরাবর প্রতি দিকের দৈর্ঘ্য ৮ ফুট ৩ ইঞ্চি । এটির দেওয়াল গাত্রের ভাস্কর্যের মধ্যে অনন্তশয়নে বিষ্ণু,পুত্রকন্যা সহ মহিষমর্দিনী দুর্গা,শিব বিবাহ,কৃষ্ণের গোষ্ঠলীলা, গজলক্ষী, রামসীতা এবং কৃষ্ণরাধিকা উল্লেখযোগ্য । এই বসতবাটির ভিতরে উঠানের মাঝে রাধা দামোদরের ত্রিখিলান দালানসহ দক্ষিণমুখী পঞ্চরত্ন মন্দির রয়েছে | এই মন্দিরের গায়ে স্থাপত্য ভাস্কর্য সাধারণ মানের | তবে এটি হদল নারায়ণপুরের একমাত্র মন্দির যার গাত্রে প্রতিষ্ঠালিপি রয়েছে | সেখান থেকে জানা যায় যে এই মন্দির ১৭২৮ শকাব্দে (১৮০৬ খ্রিস্টাব্দে) নির্মিত হয়েছিল | [৮]
এই গ্রামের উত্তর দিকে মন্ডল পরিবারের মেজ তরফের পুবমুখী, নবরত্ন রাধাদামোদরের নবরত্ন মন্দির অবস্থিত | এই মন্দিরের পূর্ব ও উত্তর দিকে ত্রিখিলান দালান রয়েছে | এই মন্দিরের দেওয়ালে যে টেরাকোটা অলংকরণ রয়েছে, তা বাঁকুড়া জেলার শ্রেষ্ঠ দেবালয়গুলির সমকক্ষ ধরা যেতে পারে | এই অলংকরণদের মধ্যে পূর্ব দিকের খিলানে লঙ্কা যুদ্ধ, অনন্তশায়ী বিষ্ণু, কৃষ্ণের চূড়াবাঁধা ও ষড়ভুজ গৌরাঙ্গ উল্লেখযোগ্য | [৯]
মন্ডল পরিবারের ছোটতরফের আবাসগৃহের প্রাঙ্গনে দক্ষিণমুখী নবরত্ন যে মন্দিরটি দেখা যায় তার আদল কতকটা গীর্জার মতন । এই মন্দিরের সামনের দিকে ত্রিখিলান যুক্ত দালান রয়েছে । এছাড়া পশ্চিম দিকে দেওয়াল ঘেঁষে উপরে যাওয়ার সিঁড়ি চোখে পড়ে। এই মন্দিরের দক্ষিণ ও পশ্চিম দিকের দেওয়ালে উচ্চ শ্রেণীর টেরাকোটা অলংকরণের কাজ রয়েছে । কেন্দ্রীয় খিলানের শীর্ষে অর্জুনের মৎস চক্ষু লক্ষ্যভেদের বড় প্যানেলটি নি:সন্দেহে অভিনব | মন্ডল পরিবারের সূত্রে জানা যায় যে প্রায় ২০০ বছর আগে বাবুরাম মন্ডল তার নাবালক পুত্র গঙ্গাগোবিন্দর নামে এই মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন ।[১০]
|সংগ্রহের-তারিখ=
(সাহায্য);
|সংগ্রহের-তারিখ=
(সাহায্য);
|সংগ্রহের-তারিখ=
(সাহায্য);