হরিহর হল হিন্দু দেবতা বিষ্ণু (হরি) ও শিবের (হর) একটি মিশ্র রূপ। এই রূপটি শঙ্করনারায়ণ ("শঙ্কর" মানে শিব, এবং "নারায়ণ" নামে বিষ্ণু) নামেও পরিচিত। বৈষ্ণব ও শৈব ধর্মাবলম্বীরা এই রূপটিকে সর্বোচ্চ ঈশ্বরের একটি রূপ হিসেবে পূজা করেন। একই পরমেশ্বরের দুটি ভিন্ন বৈশিষ্ট্যের সহাবস্থান বোঝাতেও হিন্দু দর্শনে "হরিহর" কথাটি ব্যবহার করা হয়ে থাকে। উল্লেখ্য, বিষ্ণু ও শিবের স্বরূপ (বৈদিক ও পৌরাণিক ধর্মশাস্ত্রের বর্ণনা অনুসারে) এবং তাদের ভিন্ন বা অভিন্ন অবস্থা হিন্দু দর্শনের বিভিন্ন শাখায় একটি বিতর্কের বিষয়।
হিন্দুধর্মের বৈচিত্র্যময় প্রকৃতি বিষ্ণু ও শিবকে ঘিরে একাধিক কিংবদন্তি ও প্রথার জন্ম দিয়েছে। কোনো কোনো সম্প্রদায়ের মতে শুধু বিষ্ণুই (ও তার অবতারসমূহ) সর্বোচ্চ ঈশ্বর। আবার কোনো কোনো সম্প্রদায় শিবকে (তার বিভিন্ন রূপভেদ সহ) সর্বোচ্চ ঈশ্বর মনে করে। কোনো কোনো সম্প্রদায়ের মতে শিব ও বিষ্ণু একই ঈশ্বরের দুটি ভিন্ন রূপ এবং উভয়েই পরমেশ্বর। আবার কোনো কোনো সম্প্রদায় পরমেশ্বরকে নিরাকার (অদ্বৈত) মনে করে। তারা বিষ্ণু ও শিবকে নিরাকার ব্রহ্মের দুটি ভিন্ন রূপ মনে করেন।
বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থ ও সেগুলির অনুবাদ উদ্ধৃত করে প্রত্যেক মতের স্বপক্ষেই প্রমাণ দেওয়া যায়। প্রত্যেক ক্ষেত্রেই একটি রূপকে অপর রূপের ঊর্ধ্বে রাখা হয়। তবে আজও শৈবরা শিবকে এবং বৈষ্ণবরা বিষ্ণুকে অন্যান্য দেবতাদের উপরে স্থান দেন।[১]
শিবানন্দের মতে: "শিব ও বিষ্ণু এক ও অভিন্ন। তাঁরা স্বরূপত এক ও অভিন্ন। সর্বব্যাপী পরমাত্মা বা পরম সত্যের বিভিন্ন রূপের এই দুটি ভিন্ন নাম। ‘শিবস্য হৃদয়ং বিষ্ণুর্বিষ্ণোশ্চ হৃদয়ং শিবঃ’—শিব বিষ্ণুর হৃদয় ও একই ভাবে বিষ্ণু শিবের হৃদয়।"
স্বামীনারায়ণ মতেও বিষ্ণু ও শিব একই ঈশ্বরের দুটি ভিন্ন রূপ মাত্র।[২][৩][৪] উল্লেখ্য, স্বামীনারায়ণ মতবাদ বৈষ্ণবদের মধ্যে সংখ্যালঘু হলেও সমসাময়িক স্মার্ত মতানুসারী হিন্দুধর্মে বেশ গুরুত্বপূর্ণ একটি মত।[৫]
হরিহরের মূর্তিটির অর্ধেক অংশ শিবের মতো, অর্ধেক অংশ বিষ্ণুর মতো। শিব অর্ধের মাথায় জটা, কোনো কোনো ক্ষেত্রে বাঘছাল পরা। এই অর্ধের গায়ের রং সাদাটে, কোথাও কোথাও ছাইমাখা। বিষ্ণু অর্ধটি মুকুট ও অন্যান্য অলংকার পরিহিত। এটির গায়ের রং কালো। শিব অংশটি যোগীদের মতো। বিষ্ণু অংশটি রাজসিক। তাই এই মূর্তিটিকে যোগী ও গৃহস্থের উভয়ের পূজার উপযোগী মনে করা হয়।[৬] যদিও অন্যমতে শিবকে গৃহস্থেরও আদর্শ মনে করা হয়। এবং সেই কারণেই তাকে বিষ্ণুর সঙ্গে একীকৃত করা হয়েছে বলে মনে করা হয়।