হাইলাকান্দি জেলা আইলাখান্দি | |
---|---|
জেলা | |
আসামের মানচিত্রে হাইলাকান্দি জেলার অবস্থান | |
দেশ | ভারত |
রাজ্য | আসাম |
সদর | হাইলাকান্দি |
আয়তন | |
• মোট | ১,৩২৬.১০ বর্গকিমি (৫১২.০১ বর্গমাইল) |
জনসংখ্যা (২০১১) | |
• মোট | ৬,৫৯,২৬০ |
সময় অঞ্চল | আইএসটি (ইউটিসি+৫:৩০) |
ওয়েবসাইট | www.hailakandi.nic.in |
হাইলাকান্দি (সিলেটী: আইলাখান্দি) আসামের বরাক উপত্যকার একটি জেলা। এই জেলা আসামের একেবারে দক্ষিণ দিকে অবস্থিত। এর সদর হাইলাকান্দি নগর রাজ্যের রাজধানী গুয়াহাটি থেকে প্রায় ৩৫০ কি.মি. নিকটে। জিলাটির অবস্থিতি বরাক উপত্যকার মাঝামাঝিতে।এর উত্তর এবং উত্তর-পূর্ব দিকে বরাক নদী এবং কাছাড় জেলা অবস্থিত। দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্বে মিজোরাম রাজ্য। পশ্চিমে করিমগঞ্জ জেলা।
১৯৮৯ সনে আসাম সরকার একে জেলা ঘোষণা করে। এর পূর্বে এটি আসামের কাছাড় জেলার একটি মহকুমা ছিল। মহকুমা হিসাবে এটি আসামের অন্যতম পুরোনো মহকুমা। ১৮৬৯ সনে এই মহকুমাটি গঠন করা হয়েছিল।
১লা জুন ১৮৬৯ সালে, এটি একটি নাগরিক উপবিভাগ হিসাবে গঠিত হয়। এরপরে, ১৯৮৯ সালে, এটি একটি জেলার মর্যাদা পায়। হাইলাকান্দির পরবর্তী ইতিহাসটি আব্দুল মতলিব মজুমদার (১৮৯০-১৯৮০), প্রয়াত নগেন্দ্রনাথ চৌধুরী, প্রয়াত (ক্যাপ্টেন) মন্মথ চৌধুরী, প্রয়াত (ক্যাপ্টেন) সুবোধ কুমার দত্ত ও প্রয়াত সুনীল চক্রবর্তীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সংযুক্ত, যাঁরা পূর্ব উপ-বিভাগে স্বাধীনতা আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। নগেন্দ্রনাথ চৌধুরী ছিলেন একজন বিশিষ্ট কংগ্রেস নেতা; ১৯৩৯ সালে হাইলাকান্দি সফরকালে পণ্ডিত জওহরলাল নেহ্রু তাঁর বাড়িতে দেখা করেন। তাঁর ভাই মন্মথ চৌধুরী, সুভাষচন্দ্র বসু প্রতিষ্ঠিত আজাদ হিন্দ ফৌজের ক্যাপ্টেন ছিলেন। ১৯৪৬ সালে, যখন ভারত ব্রিটিশ শাসনাধীন ছিল, শ্রী আবদুল মাতলিব মজুমদার এমএলএ হয়েছিলেন এবং তিনি আসামের পরিষদীয় মন্ত্রীও ছিলেন। [১] হিন্দু-মুসলিম ঐক্যের সমর্থনে তিনি পূর্ব ভারতের বিশিষ্ট মুসলিম নেতাদের একজন ছিলেন, এবং তাঁরা সম্প্রদায়ের ভিত্তিতে ভারত বিভাজনের বিরোধী ছিলেন। মজুমদার এবং ফখরুদ্দিন আলি আহমেদ (যিনি পরে ভারতের ৫ম রাষ্ট্রপতি হয়েছিলেন) পৃথক মুসলিম রাষ্ট্র পাকিস্তানের বিরোধিতাকারী সবচেয়ে সরব মুসলমান নেতা ছিলেন, বিশেষ করে দেশের পূর্ব অংশে। মজুমদার ১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে মাস্টার অব আর্টস করেন এবং ১৯২৪ সালে কলকাতা থেকে বি.এল. ডিগ্রী লাভ করেন। ১৯২৫ সালে তিনি হাইলাকান্দি বারে আইনি অনুশীলন শুরু করেন। তিনি আইনজীবী হিসাবে হাইলাকান্দি জনগণের সেবা করে বিশিষ্টতা লাভ করেছিলেন। তৎকালীন সরকার তাঁকে একটি ম্যাজিস্ট্রেট পদ প্রদান করতে চাইলে তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেছিলেন।[২] তিনি ১৯২৫ সালে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসে যোগ দেন। ১৯৩৭ সালে তিনি হাইলাকান্দি কংগ্রেস কমিটির প্রতিষ্ঠা করেন এবং তার প্রথম সভাপতি হন। নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু এবং পণ্ডিত জওহরলাল নেহ্রু যথাক্রমে ১৯৩৯ ও ১৯৪৫ সালে হাইলাকান্দি সফরকালে মজুমদারের আমন্ত্রণে স্বাধীনতা আন্দোলনকে শক্তিশালী করার পাশাপাশি দক্ষিণ আসামে কংগ্রেস পার্টিকে জোরদার করার জন্য এসেছিলেন। মৌলানা আবুল কালাম আজাদ ও মাতলিব মজুমদারের মধ্যে যোগাযোগ শুরু করিয়ে দিয়েছিলেন নেতাজী, এই অঞ্চলে ক্রমবর্ধমান মুসলিম লীগের বিরুদ্ধে জাতীয়তাবাদী মুসলমানদের একত্রিত করার জন্য।[৩] মজুমদার ১৯৩৯ সালে হাইলাকান্দি শহরের প্রথম সভাপতি হন এবং ১৯৪৫ সালে তিনি হাইলাকান্দি স্থানীয় বোর্ডের প্রথম ভারতীয় সভাপতি হন, এই পদটি এর আগে সবসময় ইউরোপীয় চা রোপনকারীরাই অলংকৃত করতেন।[৪] ১৯৩৭ সালের নির্বাচনে ভারতের প্রভাবশালী মুসলিম অঞ্চলে মুসলিম লীগ তার ক্ষমতা প্রমাণ করল। মুসলিম লীগের ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তাকে পাল্লা দিতে, তিনি আসামে সফলভাবে জমিয়ত উলামায়ে হিন্দ আন্দোলন সংগঠিত করেছিলেন। জমিয়ত জাতীয়তাবাদী মুসলমানদের মধ্যে ব্যাপক সংখ্যক কংগ্রেসের সহযোগী ছিলেন। ভারতের স্বাধীনতার ঠিক আগে, ১৯৪৬ সালের খুব গুরুত্বপূর্ণ সাধারণ নির্বাচনের সময়, তিনি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে, হাইলাকান্দি আসন, মুসলিম লীগের কাছ থেকে হস্তগত করেন। এই জয়ের ফলে, দক্ষিণ আসামকে পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত করার জন্য মুসলিম লীগের প্রত্যাশা ও আকাঙ্ক্ষা, বিনষ্ট হল। এটা এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে যে, সেই নির্বাচনে, ফখরুদ্দিন আলি আহমেদ (পরে ভারতের ৫ম রাষ্ট্রপতি) সহ ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের মুসলিম মনোনীতদের বেশিরভাগই, মুসলিম লীগ প্রতিদ্বন্দ্বীদের হাতে শোচনীয়ভাবে পরাজিত হন। আসামের সুরমা উপত্যকায় (এখন আংশিকভাবে বাংলাদেশে), মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ জনসংখ্যা ছিল। দেশভাগের প্রাক্কালে, মুসলিম লীগ ও কংগ্রেসের মধ্যে হিংসাত্মক ক্রিয়াকলাপ তীব্র আকার ধারণ করে, যদিও মুসলিম লীগ কিছুটা ভালো অবস্থায় ছিল। সিলেট জেলা (এখন বাংলাদেশে)র জন্য একটি গণভোট প্রস্তাব করা হয়। মজুমদার এবং বসন্ত কুমার দাস (তখন আসামের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী) উপত্যকা জুড়ে ভ্রমণ করে কংগ্রেসকে সংগঠিত করেন এবং ধর্মের ভিত্তিতে দেশভাগ হলে তার ফলাফল কি হতে পারে, সে বিষয়ে সমাবেশ করে জনগনকে শিক্ষিত করতে থাকেন। ১৯৪৭ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি, মৌলবী মজুমদার শিলচরে আসাম জাতীয়তাবাদী মুসলিম কনভেনশনের উদ্বোধন করেন। এর পর, ৮ই জুন ১৯৪৭এ আরেকটি বড় সভা শিলচরে অনুষ্ঠিত হয়।[৫] উভয় সভাতেই, মুসলমানদের একটি বড় অংশ উপস্থিত ছিলেন, যা তাঁদের একটি সুবিধাজনক অবস্থান দেয়। আসামের বরাক উপত্যকাকে, বিশেষ করে করিমগঞ্জকে, ভারতের সঙ্গে রেখে দেবার জন্য যাঁরা উদ্যোগ নিয়েছিলেন, তিনি ছিলেন তাঁদের মধ্যে একজন।[৪][৬] মজুমদার সেই প্রতিনিধি দলের নেতা ছিলেন, যাঁরা রাডক্লিফ কমিশনের সামনে এই দাবি জানিয়েছিলেন যে, সিলেটের (বর্তমানে বাংলাদেশে) একটি অংশ (বর্তমানে করিমগঞ্জ জেলা), মুসলমান অধ্যুষিত হওয়া সত্ত্বেও যেন ভারতে থাকে।[৭] ১৯৪৬ সালে আসামের স্থানীয় স্বশাসিত-সরকারে, মৌলবী মজুমদার কৃষি ও পশুরোগ সংক্রান্ত বিভাগ নিয়ে একজন পরিষদ্ভুক্ত মন্ত্রী হিসেবে যোগ দেন। ১৯৪৭ সালে, যখন ভারত ব্রিটিশ শাসন থেকে মুক্ত হয়, তখন মজুমদার গোপীনাথ বরদলৈএর মন্ত্রিসভায় আবার একই বিভাগের দায়িত্বে নেন। তিনি ছিলেন একমাত্র মুসলিম মন্ত্রী (মৌলানা তায়েবুল্লাকে ১৯৪৮ সালে অন্তর্ভুক্ত করা হয়) এবং সমগ্র বরাক উপত্যকার একমাত্র সদস্যও। ১৫ই আগস্ট ১৯৪৭ সালে দেশভাগ এবং ভারতের স্বাধীনতার পর সমগ্র পূর্ব ভারতে সহিংসতা শুরু হয়, অসংখ্য হিন্দু নতুন পূর্ব পাকিস্তান (এখন বাংলাদেশ) ছেড়ে ভারতে পালিয়ে আসেন, এবং মুসলমানরা আসাম ছেড়ে পূর্ব পাকিস্তানে পালিয়ে যান। সহিংসতার কারণে বিপুল সংখ্যক মানুষ প্রাণ হারান, ১৯৫০ সালে যা আরো তীব্রভাবে আবার দেখা দেয়। মন্ত্রিসভার একমাত্র মুসলিম সদস্য মজুমদার, তাঁর মন্ত্রিসভার এবং দলের সহকর্মীদের নিয়ে হাইলাকান্দিতে হিন্দু ও মুসলমান উভয়ের নিরাপত্তার দায়িত্ব নেন, প্রভাবিত এলাকা ভ্রমণ এবং শরণার্থীদের জন্য ক্যাম্প এবং পুনর্বাসন ব্যবস্থা, সরবরাহ ও নিরাপত্তা সংগঠিত করেন। ১৯৫৭ সাল পর্যন্ত বিষ্ণুরাম মেধির মন্ত্রিসভায় তিনি একজন পরিষদীয় মন্ত্রী হিসাবে কাজ করে গেছেন।[৮][৯] ১৯৬৭ সালে তাঁর শেষ নির্বাচনে, ৭৭ বছর বয়সে, মজুমদার আসামের বিধানসভাতে জয়ী হন। এরপর তিনি বিমলা প্রসাদ চালিহার মন্ত্রিসভায় আইন, সমাজকল্যাণ ও রাজনৈতিক হিংসার শিকার বিভাগের মন্ত্রী হন। আইনমন্ত্রী হিসাবে তিনি জেলা পর্যায়ে নির্বাহী ও বিচার বিভাগকে আলাদা করা শুরু করেন। ১৯৭০-৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়, তিনি তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান থেকে পালিয়ে আসা হাজার হাজার উদ্বাস্তুদের ত্রাণ ও পুনর্বাসনের দায়িত্বে ছিলেন। তিনি ১৯৭১ সালে সক্রিয় রাজনীতি থেকে পদত্যাগ করেন। তাঁর দীর্ঘ কর্মজীবনের অন্যান্য পদগুলি ছিল আসাম মাদ্রাসা বোর্ডের সভাপতি; রাজ্য হজ কমিটির সভাপতি এবং আসাম বিধানসভার প্রোটেম স্পিকার (১৯৬৭ সালে)। গুয়াহাটিতে হজ ঘর (হাজী মুসাফির খানা) স্থাপনে তিনি গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেছেন। মাদ্রাসা বোর্ডের সভাপতি হিসেবে, তিনি এই ধর্মীয় বিদ্যালয়গুলির আধুনিকীকরণ শুরু করেন এবং আসামের মাদ্রাসা পাঠক্রমে ইংরেজি এবং বিজ্ঞান প্রবর্তনের জন্যও তাঁর অবদান আছে।[১০] হাইলাকান্দিতে উচ্চশিক্ষা কেন্দ্র স্থাপনের জন্য তিনি অগ্রণী ভূমিকা নিয়ে ছিলেন।[১১]
হাইলাকান্দির আরেকজন বিশিষ্ট ব্যক্তি ছিলেন, একজন সুপরিচিত প্রকৌশলী, রাজ মোহন নাথ। তিনি প্রকৌশল ছাড়াও আরও অন্য অনেক বিষয়ে বই লেখেন। তাঁর একটি বই ছিল পশ্চিমবঙ্গের শিবপুর বেঙ্গল ইঞ্জিনীয়ারিং কলেজের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য পাঠ্যপুস্তক। আজকের দিনের "আসাম টাইপ হাউস" সম্পূর্ণরূপে তাঁর পরিকল্পনা, যা ভূমিকম্পপ্রবণ অঞ্চলগুলিতে বিশেষ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। মস্কোর একটি রাস্তা তাঁর নামে করা হয়েছে।
হাইলাকান্দি বিমানক্ষেত্র ভারতের একটি যুদ্ধকালীন (পূর্ববর্তী) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সেনাবিমান বাহিনীর বিমানবন্দর, যেটি বার্মা প্রচারাভিযান ১৯৪৪-১৯৪৫এর সময় ব্যবহার হত। এটি এখন পরিত্যক্ত। হাইলাকান্দি ভারতের আসাম রাজ্যের একটি জেলা।
হাইলাকান্দি নামটির সমন্ধে অনেককটা জনরব শোনা যায়। তারই একটা অনুসারে, বরাক নদীর বানের পরে বাঁচার জন্য দেওয়া বাঁধের স্থানীয় নাম "আইল" বা "হাইল" এবং বড়ো-কছারী ভাষার "কান্দি" (কঠিয়া তলী, ধাননি পথার)র থেকে "হাইলাকান্দি" নামের উৎপত্তি। অন্য কিছুর মতে, জিলাটির নামটি কুকি শব্দ "হালাম" (সরু রাজ্য, ক্ষেত্ৰ বা অঞ্চল) এবং "কুন্দিয়া" (হালোয়া তলী)র থেকে এসেছে। অন্য একটি সূত্ৰ মতে, এখানে প্ৰচুর পরিমানে উৎপন্ন হয় শালি ধান এবং সেখান থেকেই "শাইল কান্দি" এবং কালক্ৰমে এখনকার নামটি এসেছে। উল্লেখ্য, কিছু পণ্ডিতদের মতে, "হাইলাকান্দি" নামটি সিলেটী শব্দ "হাইলাকুন্দি" থেকে এসেছে।
হাইলাকান্দি জেলা ১,৩২৭ বর্গকিলোমিটার (৫১২ মা২) জায়গা নিয়ে গঠিত,[১৩] তুলনামূলকভাবে ইরানের কেশম দ্বীপের সমান।[১৪] এর বাইরে, ৫০% এর বেশি সংরক্ষিত বনাঞ্চল। হাইলাকান্দি জেলায় মোট দুটি সংরক্ষিত বনভূমি রয়েছে, যেগুলি হল অভ্যন্তরীণ লাইন সংরক্ষিত বন ও কাটাখাল সংরক্ষিত বন। জেলাটির দক্ষিণে মিজোরামের সাথে আন্তঃ-রাজ্য সীমানা রয়েছে, যার দৈর্ঘ্য ৭৬ কিমি এছাড়াও করিমগঞ্জ জেলা ও কাছাড় জেলার সাথে আন্তঃ জেলা সীমানা রয়েছে। ২০১১ এর জনগণনা অনুযায়ী, এই অঞ্চলের জনসংখ্যা ৬.৫৯ লাখ। এর দুটি অবহিত শহর আছে, সেগুলি হল হাইলাকান্দি (জেলা সদর দপ্তর) এবং লালা এবং একটি শিল্প শহর পঞ্চগ্রাম। একটি পৌরসভা বোর্ড হাইলাকান্দি শহর পরিচালনা করে এবং একটি শহর কমিটি লালা পরিচালনা করে। এর পাঁচটি উন্নয়ন ব্লক আছে, যেগুলি হল আলগাপুর, হাইলাকান্দি, লালা, কাটলিছেড়া ও দক্ষিণ হাইলাকান্দি উন্নয়ন ব্লক। এই ৫টি উন্নয়ন ব্লকের আওতায় হাইলাকান্দি মহকুমা পরিষদ নামে একটি মহকুমা পরিষদ রয়েছে। এই পাঁচটি ব্লকের অধীনে মোট ৬২টি গ্রাম পঞ্চায়েত রয়েছে। জেলাটি মোট চার রাজস্ব বৃত্তে বিভক্ত, যার মধ্যে মোট ৩৯৩টি গ্রাম (২৭টি অরণ্য সহ) রয়েছে। প্রায় অর্ধেক জেলায় অরণ্য রয়েছে। অবশিষ্ট অর্ধেকের মধ্যে, ৩৩.২% অংশে চাষ হয়। ধান এখানকার প্রধান ফসল। জেলায় ১৭টি চা বাগান রয়েছে। জেলাটিতে ৪টি পুলিশ স্টেশন, ২টি পুলিশ আউটপোস্ট, ২টি কলেজ এবং বেশ কিছু বিদ্যালয় রয়েছে।
হাইলাকান্দি জেলার বনগুলি একসময় বন্যপ্রাণী সমৃদ্ধ ছিল কিন্তু এখন মানব আক্রমণের কারণে লুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। হুলক গিবন, ফাইরের লিফ বানর, পিগ-টেল ম্যাকাকু, হোয়াইট-উইংড উড ডাক, বেগুনি উড পিজিয়ন ইত্যাদি কিছু দুর্লভ প্রজাতি এখানে দেখা গেছে।[১৫][১৬] দক্ষিণ অংশটি 'ধলেশ্বরী' বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য হিসাবেও সুপারিশ করা হয়েছিল।[১৭][১৮]
২০০৬ সালে, ভারত সরকার হাইলাকান্দিকে দেশের ৬৪০টির মধ্যে ২৫০তম সর্বাধিক পিছিয়ে পড়া জেলা ঘোষণা করে।[১৯] বর্তমানে একে নিয়ে আসামের এগারোটি জেলা ব্যাকওয়ার্ড রিজিয়ন গ্রান্ট ফান্ড প্রোগ্রাম (বিআরজিএফ) থেকে অর্থ গ্রহণ করছে।[১৯]
এই জেলায় তিনটি আসাম বিধানসভা নির্বাচনী এলাকা রয়েছে: হাইলাকান্দি, কাটলীছড়া, এবং আলগাপুর।[২০] সমগ্র জেলাটি করিমগঞ্জ লোকসভা কেন্দ্রের অধীনে।[২১]
২০১১ সালের জনগণনা অনুসারে, হাইলাকান্দি জেলার জনসংখ্যা ৬৫৯,২৬০ জন,[২২]মন্টিনিগ্রো অথবা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নর্থ ডাকোটার জনসংখ্যার প্রায় সমান।[২৩][২৪] এটি ভারতে জনসংখ্যার ভিত্তিতে ৫০৯তম স্থান পেয়েছে (৬৪০টিজেলার মধ্যে)।[২২] এই জেলার জনসংখ্যার ঘনত্ব ৪৯৭ জন প্রতি বর্গকিলোমিটার (১,২৯০ জন/বর্গমাইল)।[২২] এখানকার জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ২০০১-২০১১ এর দশকে ২১.৪৪% ছিল।[২২] হাইলাকান্দিতে যৌন অনুপাত প্রতি ১০০০ জন পুরুষ পিছু ৯৪৬ জন মহিলা [২২] এবং সাক্ষরতার হার ৭৫.২৬%।[২২]
ধর্মের সাপেক্ষে, জনসংখ্যার প্রায় ৬০.৩১% মুসলমান, ৩৮.১০% হিন্দু এবং ১.২৯% খ্রিস্টান।[২২] জনসংখ্যার ঘনত্ব ৪৫১ প্রতি কিলোমিটার২, যেখানে রাষ্ট্রীয় গড় ৩৪০জন প্রতি কিমি২। জেলার মোট জনসংখ্যার মধ্যে, আনুমানিক ১২০,০০০ জন তপশিলী জাতি এবং প্রায় ৪০,০০০ জন তপশিলী উপজাতি সম্প্রদায়ভুক্ত (১৯৯১ সালের জনগণনা অনুযায়ী)। এই জেলায় বিভিন্ন সম্প্রদায়ের একটি বড় সংখ্যা বসবাস করেন। এর মধ্যে আছেন,[২৫][২৬][২৭] মৈতৈ, বিষ্ণুপ্রিয়া, কুকি, রেয়াং, চাকমা এবং অভিবাসী জনসংখ্যা। জনসংখ্যার অধিকাংশ কথা বলেন সিলেটি ভাষায়। মৈতৈ সংখ্যালঘু দ্বারা কথিত, জেলার একটি গুরুত্বপূর্ণ ভাষা।
Qeshm 1,336
Montenegro 661,807 July 2011 est.
North Dakota 672,591