হিমাংশু রায় | |
---|---|
জন্ম | ১৮৯২ |
মৃত্যু | ১৬ মে ১৯৪০ (বয়স ৪৮) |
জাতীয়তা | ব্রিটিশ ভারত |
পেশা | চলচ্চিত্র নির্মাতা |
দাম্পত্য সঙ্গী | দেবিকা রাণী |
সন্তান | নীলিমা |
পিতা-মাতা | হেমেন্দ্রকুমার রায় |
হিমাংশু রায় (১৮৯২ – ১৬ মে ১৯৪০) ভারতবর্ষের চলচ্চিত্রের প্রবর্তনকারীদের একজন। ১৯৩৪ সালে বোম্বে টকিজের প্রতিষ্ঠার সাথে তিনি জড়িত ছিলেন। তিনি গডেস (১৯২২), দ্য লাইট অব এশিয়া (১৯২৫), সিরাজ (১৯২৬), কর্ম (১৯৩৩) ছবির মত বিখ্যাত সৃষ্টিকর্মের সাথে জড়িত।
হিমাংশুর বাবা হেমেন্দ্রকুমার রায় বিহার ও ওড়িশার রাজাদের এস্টেটের ম্যানেজার ছিলেন। হিমাংশু পড়তেন শান্তিনিকেতনে। বিশ্বযুদ্ধের সময়ে বিলেত গিয়ে আইন পড়তে ঢোকেন।
জার্মান নাট্য জগতে মিউনিখের ডয়েশ থিয়েটারের অভিনেত্রী , মেরি হাইনলিন ছিলেন হিমাংশুর প্রথম স্ত্রী। ১৯২৪-এই মেরিকে বিয়ে করেন হিমাংশু। বিয়েটা অবশ্য গোপন ছিল। ওঁদের একটি কন্যাসন্তান , হিমাংশু তার নাম রেখেছিলেন নীলিমা। কিন্তু দীর্ঘস্থায়ী হয়নি সে বিয়ে। নীলিমা বিয়ের পরে অস্ট্রেলিয়া আসেন। সেখানে তার তিন সন্তান : পিটার ডাইটজ়, ওয়াল্টার ডাইটজ় আর পল ডাইটজ়।
পরবর্তীতে হিমাংশু জড়িয়ে পড়লেন দেবিকা রাণীর সঙ্গে ।
হিমাংশুর বোনপো আর দেবিকার অন্যতম নায়ক ছিলেন অশোক কুমার।
হিমাংশুর জীবন যাঁকে বাদ দিয়ে পড়া যায় না, তিনি নিরঞ্জন পাল (১৮৮৯-১৯৫৯)। জাতীয়তাবাদী নেতা বিপিনচন্দ্র পাল-এর পুত্র।
সালটা ১৯২০। লন্ডনে এসেছেন ওয়েস্ট এন্ড-এর বিখ্যাত পরিচালক গাই ব্র্যাগডন। নিরঞ্জনের ‘দ্য গডেস’ নাটক পড়ে ব্র্যাগডন মুগ্ধ। নাটকটা করতে আগ্রহী তিনি। অভিনয়টা ভারতীয়দের দিয়েই করাতে পারলে ভাল হয়। এই নাটকেই নায়কের ভূমিকায় আত্মপ্রকাশ করলেন হিমাংশু । নিরঞ্জনের জীবনে হিমাংশু এবং হিমাংশুর জীবনে নিরঞ্জন এর পর থেকে প্রায় নিয়তিনির্দিষ্টের মতো একে অপরের পরিপূরকের ভূমিকা পালন করে চললেন।[১]
ভারতে এসে হিমাংশু-দেবিকা গড়ে তুললেন তাঁদের বিখ্যাত ‘বম্বে টকিজ’ (১৯৩৩-১৯৫৪)। হিমাংশুর ডাকে নিরঞ্জনও এসে যোগ দিলেন, আর আবিষ্কার করলেন এই ক’বছরে হিমাংশু অনেক পাল্টে গিয়েছেন। হিমাংশু এখন দিবারাত্র তাঁর ধ্যানজ্ঞান, বম্বে টকিজকে কী করে একটা সম্মাননীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে দাঁড় করানো যায়। হিমাংশু ক্রমশ থিতু হচ্ছেন, আর এ বার পাপড়ি মেলছেন দেবিকা! চারদিকে তাঁর মুগ্ধ ভক্তের দল। নায়কের ভূমিকায় ‘অশোক কুমার’ নাম দিয়ে আনা হল কুমুদলাল গঙ্গোপাধ্যায়কে। পরের ছবি ‘অচ্ছুত কন্যা’ (১৯৩৬) থেকেই তাঁদের জুটি সুপারহিট!
বক্স অফিসে একের পর এক ঢেউ তোলা বম্বে টকিজের পুরো পর্বটাই অত্যন্ত ঘটনাবহুল। যেমন, ১৯৩৭-এ নিরঞ্জন সরে যাওয়ায় সে জায়গায় শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়র যোগদান। ১৯৪০-এ হিমাংশুর মৃত্যু। দেবিকার সর্বময় কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা। শিশুশিল্পী ‘বেবি মুমতাজ’ নামে মধুবালার আত্মপ্রকাশ (১৯৪২)। বম্বে টকিজ ছেড়ে বেরিয়ে শশধর মুখোপাধ্যায়দের ‘ফিল্মিস্তান’ (১৯৪৩) গড়া। দেবিকার ছত্রচ্ছায়ায় নায়ক হিসেবে দিলীপ কুমার আত্মপ্রকাশ (১৯৪৪) এবং এর পরেই ১৯৪৫-এ চিত্রশিল্পী রোয়েরিখকে বিয়ে করে দেবিকার প্রস্থান।
দেবিকা-রোয়েরিখের কোনও সন্তান হয়নি। তাঁদের বিপুল সম্পত্তির মীমাংসাও হয়নি! শুধু বম্বে টকিজের কাগজপত্রগুলো দেবিকা নিজেই নিউ ইয়র্কে পাঠিয়ে রেখেছিলেন। হিমাংশুর নাতি হিসেবে সেগুলোই পিটারের কাছে গিয়ে ‘ডাইটজ় ফ্যামিলি আর্কাইভ’-এর রূপ নিয়েছে।