হীরক রাজার দেশে | |
---|---|
পরিচালক | সত্যজিৎ রায় |
প্রযোজক | পশ্চিমবঙ্গ সরকার |
রচয়িতা | সত্যজিৎ রায় |
চিত্রনাট্যকার | সত্যজিৎ রায় |
কাহিনিকার | সত্যজিৎ রায় |
শ্রেষ্ঠাংশে | তপন চট্টোপাধ্যায়, রবি ঘোষ, উৎপল দত্ত, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, সন্তোষ দত্ত, প্রমোদ গাঙ্গুলী, অজয় বন্দ্যোপাধ্যায়, কার্তিক চট্টোপাধ্যায়, হরিধন মুখোপাধ্যায় |
সুরকার | সত্যজিৎ রায় |
চিত্রগ্রাহক | সৌমেন্দু রায় |
সম্পাদক | দুলাল দত্ত |
মুক্তি | ১৯ ডিসেম্বর, ১৯৮০ |
স্থিতিকাল | ১১৮ মিনিট |
দেশ | ভারত |
ভাষা | বাংলা |
হীরক রাজার দেশে ভারতীয় বাঙালি চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায় পরিচালিত একটি জনপ্রিয় চলচ্চিত্র। রূপকের আশ্রয় নিয়ে চলচ্চিত্রটিতে কিছু ধ্রুব সত্য ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। এটি গুপী গাইন বাঘা বাইন সিরিজের একটি চলচ্চিত্র। এর একটি বিশেষ দিক হচ্ছে মূল শিল্পীদের সকল সংলাপ ছড়ার আকারে করা হয়েছে। তবে কেবল একটি চরিত্র ছড়ার ভাষায় কথা বলেননি। তিনি হলেন উদয়ন পণ্ডিত, যিনি একজন শিক্ষক। এ দ্বারা বোঝানো হয়েছে একমাত্র শিক্ষক মুক্ত চিন্তার অধিকারী, বাদবাকি সবার চিন্তাই নির্দিষ্ট পরিসরে আবদ্ধ।[১]
হীরক রাজা অত্যাচারী এক রাজা। সে তার তোষামোদকারীদের নিয়ে রাজ্য পরিচালনা করে। ভিন্নমত পছন্দ করেনা। নিজের রাজ্যে হীরের খনি থাকা সত্ত্বেও প্রজাদের দারিদ্রের মধ্যে রাখে। চাষিদের দিন কাটে অনাহারে। চাবুক মেরে শ্রমিকদের বেগার খাটায়। প্রজারা খাজনা দিতে না পারলে তাদের ওপর অত্যাচার করে।
হীরক রাজা সবার ‘ব্রেন ওয়াশ’ বা মগজ ধোলাই করে ছাড়ে। তার জন্য সাহায্য নেয় নিজের পোষা বিজ্ঞানীর তৈরি ‘যন্তর-মন্তর’ ঘরের। প্রতিবাদী প্রজাদের ‘যন্তর-মন্তর’ ঘরে পুরে রাজার গুণগান গাওয়া কোনো মন্ত্র দিয়ে তাদের মগজ ধোলাই করে ছেড়ে দেওয়া হয়। যাতে সারা জীবন তারা রাজার সব অত্যাচার-অনাচার ভুলে গিয়ে কেবল তার গুণগান করে বেড়ায় । সত্যবাদী স্পষ্টবক্তা মানুষদের মগজ ধোলাই করে, তার বিচার করার ক্ষমতা নষ্ট করে, শুধু ভুল তথ্য দিয়ে নিজের গুণগান গাইবার জন্য তাদের বাঁচিয়ে রাখত।
এই রাজার শিক্ষাকে ছিল খুব ভয়। রাজা মনে করে মানুষ ‘যত বেশি পড়ে, তত বেশি জানে, তত কম মানে’। বেশি জানলে অত্যাচারী রাজার মুখোশ খুলে যাবে। তাই হীরক রাজা তার রাজ্যে শিক্ষা চায় না। মাইনে করা কবিকে দিয়ে নিজের মনের মতো মগজ ধোলাই করার বিভিন্ন ছড়া শিখিয়ে আজীবনের জন্য পাঠশালা বন্ধ করে দেয় সে। শিক্ষক উদয়ন পণ্ডিতকে পালিয়ে বেড়াতে হয় রাজার পেয়াদাদের হাত থেকে বাঁচার জন্য।
অন্যদিকে রাজা প্রজাদের নানা অনাচার করেও বাইরের রাজাদের হীরক রাজত্বের বর্ষপূর্তি উৎসবে নিমন্ত্রণ করে আনে নিজের প্রাচুর্য দেখাতে। পাছে বাইরের লোকের চোখে প্রজাদের দুঃখ দারিদ্র চোখে পড়ে যায় তাই একটা তাঁবুতে জোর করে সব গরিব-দুঃখী মানুষদের জন্তু জানোয়ারের মতো বন্দি করে রেখে দেয়। হীরক রাজার দম্ভ এতটাই যে নিজেরই একটা বিশাল মূর্তি গড়ে সব নিমন্ত্রিতদের কাছে নিজের অহমিকা প্রচার করতে চায়।
একদিন হীরক রাজ্যে রাজার নিমন্ত্রণে গুপী-বাঘা আসে। ঘটনাচক্রে তাদের দেখা হয়ে যায় পালিয়ে বেড়ানো উদয়ন পণ্ডিতের সঙ্গে। হীরক রাজার দেশে চলচ্চিত্রে রূপকথার আদলে প্রতিবাদ, আন্দোলনের মাধ্যমে একনায়কতন্ত্রের বিরুদ্ধে গণজাগরণ তৈরি ও স্বৈরাচারী শাসকের পতন দেখানো হয়েছে।[২]
চরিত্র | অভিনেতা |
---|---|
গুপী | তপেন চট্টোপাধ্যায় |
বাঘা | রবি ঘোষ |
হীরক রাজা | উৎপল দত্ত |
উদয়ন পণ্ডিত | সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় |
শুণ্ডীর রাজা | সন্তোষ দত্ত |
গবেষক | সন্তোষ দত্ত |
প্রহরী | কামু মুখোপাধ্যায় |
উদয়নের পিতা | প্রমোদ গঙ্গোপাধ্যায় |
উদয়নের মাতা | আল্পনা গুপ্ত |
চরণদাস | রবীন মজুমদার |
ফজল মিয়া | সুনীল সরকার |
বলরাম | ননী গঙ্গোপাধ্যায় |
বিদূষক | অজয় বন্দ্যোপাধ্যায় |
সভাকবি | কার্তিক চট্টোপাধ্যায় |
সভার জ্যোতিষশাস্ত্রবিদ | হরিধন মুখোপাধ্যায় |
মন্ত্রী | বিমল দেব তরুণ মিত্র গোপাল দে শৈলেন গঙ্গোপাধ্যায় সমীর মুখোপাধ্যায় |
বছর | পুরস্কার | পুরস্কার বিজয়ী | মন্তব্য |
---|---|---|---|
১৯৮০ | শ্রেষ্ঠ পুরুষ নেপথ্য কণ্ঠশিল্পী বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার (ভারত) | অনুপ ঘোষাল | "পায়ে পড়ি বাঘমামা..." |
১৯৮০ | সেরা সঙ্গীত পরিচালনা বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার (ভারত) | সত্যজিৎ রায় | -- |
১৯৮০ | সেরা গানের কথা বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার (ভারত) | সত্যজিৎ রায় | "আহা কী আনন্দ আকাশে বাতাসে..." |
১৯৮০ | শ্রেষ্ঠ বাংলা ভাষার পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার (ভারত) | সত্যজিৎ রায় | -- |
১৯৮৪ | সাইপ্রাস আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব - বিশেষ পুরস্কার | সত্যজিৎ রায় | -- |
সংখ্যা | শিরোনাম | গায়ক | সময় |
---|---|---|---|
০১ | "মোরা দু’জনাই রাজার জামাই" | অনুপ ঘোষাল | ০৫:০৯ |
০২ | "আর বিলম্ব নয়" | অনুপ ঘোষাল | ০২:১৫ |
০৩ | "কতই রঙ্গ দেখি দুনিয়ায়" | অমর পাল | ০১:৪৬ |
০৪ | "আহা কী আনন্দ আকাশে বাতাসে" | অনুপ ঘোষাল | ০২:৫৪ |
০৫ | "আহা সাগরে দেখো চেয়ে" | অনুপ ঘোষাল | ০১:৪০ |
০৬ | "এ যে দৃশ্য দেখি অন্য" | অনুপ ঘোষাল | ০১:৩২ |
০৭ | "এবারে দেখো গর্বিত বীর" | অনুপ ঘোষাল | ০১:০৯ |
০৮ | "এসে হীরক দেশে" | অনুপ ঘোষাল | ০২:৫৫ |
০৯ | "ধরো নাকো সান্ত্রীমশাই" | অনুপ ঘোষাল | ০১:৪১ |
১০ | "পায়ে পড়ি বাঘমামা" | অনুপ ঘোষাল | ০৩:২১ |
১১ | "নহি যন্ত্র" | অনুপ ঘোষাল | ০৪:২৬ |
১২ | "মোরা গুপী বাঘা দু’জন ভায়রা ভাই" | অনুপ ঘোষাল | ০১:১৯ |
হীরক রাজার দেশে চলচ্চিত্রে গবেষক একটি কক্ষ নির্মাণ করেন, যার নাম যন্তর মন্তর। এই কক্ষে কাউকে ঢুকিয়ে নির্দিষ্ট কোনো হাতলে চাপ দিলে কক্ষটি জোরে জোরে শব্দ করে নির্দিষ্ট কোনো মন্ত্র উচ্চারণ করে, যা এর ভেতরে থাকা ব্যক্তিদের মাথায় গেঁথে যায়, বা "মগজ ধোলাই" হয়। এছাড়া কিছু মন্ত্র যন্তর মন্তরের বাইরেও বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে বলা হয়েছে, তবে সেগুলো কারো মগজে গেঁথে যায়নি। এই মন্ত্রগুলো এবং যার উপর তা প্রয়োগ করা হয়েছে তার তালিকা নিম্নরূপ:
সংখ্যা | সূত্র | চরিত্র | পেশা |
---|---|---|---|
০১ | "বাকি রাখা খাজনা, মোটে ভাল কাজ না" | ফজল মিয়া | কৃষক |
০২ | "ভর পেট নাও খাই, রাজ কর দেওয়া চাই" | ফজল মিয়া | কৃষক |
০৩ | "যায় যদি যাক প্রাণ, হীরকের রাজা ভগবান" | ফজল মিয়া | কৃষক |
০৪ | "যে কয় পেটে খেলে পিঠে সয়, তার কথা ঠিক নয়" | হীরক রাজা | রাজা |
০৫ | "যে করে খনিতে শ্রম, যেন তারে ডরে যম" | বলরাম | খনি মজুর |
০৬ | "অনাহারে নাহি খেদ, বেশি খেলে বাড়ে মেদ" | বলরাম | খনি মজুর |
০৭ | "ধন্য শ্রমিকের দান, হীরকের রাজা ভগবান" | বলরাম | খনি মজুর |
০৮ | "লেখাপড়া করে যে, অনাহারে মরে সে" | উদয়ন পণ্ডিত | শিক্ষক |
০৯ | "দড়ি ধরে মারো টান, রাজা হবে খানখান" | হীরক রাজা | রাজা |
১০ | "জানার কোন শেষ নাই, জানার চেষ্টা বৃথা তাই" | মন্ত্রী | আমলা |