হেনরি কুপার | |
---|---|
জন্ম | লন্ডন, ইংল্যান্ড | ৩ মে ১৯৩৪
মৃত্যু | ১ মে ২০১১ অক্সটেড, সারে, ইংল্যান্ড[১] | (বয়স ৭৬)
জাতীয়তা | ইংরেজ |
অন্যান্য নাম | আওয়ার 'এনরি |
পরিসংখ্যান | |
উচ্চতা | ৬ ফুট ২ ইঞ্চি (১.৮৮ মি) |
অবস্থান | অর্থোডক্স ভঙ্গিমা |
মুষ্টিযুদ্ধের তথ্য | |
মোট লড়াই | ৫৫ |
জয় | ৪০ |
নকআউট দ্বারা জয় | ২৭ |
পরাজয় | ১৪ |
ড্র | ১ |
ফলাফলহীন | ০ |
স্যার হেনরি কুপার, ওবিই, কেএসজি (ইংরেজি: Henry Cooper; জন্ম: ৩ মে, ১৯৩৪ - মৃত্যু: ১ মে, ২০১১) হচ্ছেন সাবেক ব্রিটিশ, ইউরোপীয় এবং কমনওয়েলথ হেভীওয়েট চ্যাম্পিয়ন বক্সার। ৭৭তম জন্মদিনের ঠিক ২ দিন পূর্বে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।[১]
বিশেষতঃ একজন ইংরেজ হিসেবে কার্যকরী বাম হুকের সাহায্যে তৎকালীন সময়ের তরুণ মুষ্টিযোদ্ধা মুহাম্মদ আলীকে ভূপাতিত করায় বক্সিং জগতে চিহ্নিত ও চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন তিনি। বক্সিং জগৎ থেকে অবসরের পর তিনি টেলিভিশন ও রেডিওতে বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব হিসেবে কর্মরত ছিলেন। গত বছর অর্থাৎ ২০১০ সালে বক্সিংয়ের ধারাভাষ্যকার হিসেবে অবসর নেন কুপার।[২]
কুপার ১৯৬৯ সালে অর্ডার অব দ্য ব্রিটিশ এম্পায়ার বা ওবিই এবং ২০০০ সালে নাইটহুড খেতাব লাভ করেন।[৩]
ব্রিটেনে তিনি অসম্ভব জনপ্রিয় খেলোয়াড় হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছেন। কুপার-ই প্রথম ব্যক্তি (বর্তমান সময় পর্যন্ত ৩জন ব্যক্তির মধ্যে) যিনি দুই-দুইবার বিবিসি কর্তৃক দর্শক-শ্রোতাদের ভোটে বছরের শ্রেষ্ঠ ক্রীড়াবিদ হিসেবে মনোনীত হয়েছিলেন।
লন্ডনের ওয়েস্টমিনিস্টার এলাকায় জন্মগ্রহণকারী হেনরি কুপার তার সহোদর যমজ ভাই জর্জ কুপারকে নিয়ে দক্ষিণ-পূর্ব লন্ডনের বেলিংহাম স্টেটে বেড়ে ওঠেন। ২য় বিশ্বযুদ্ধের সময় তারা সাসেক্স উপকূলে চলে যান।[৪] ১৯৪২ সালে তাদের বাবা হেনরি সিনিয়র যুদ্ধে চলে যান। লিউয়িসহ্যামের এথেলনে রোড স্কুলে পড়াশুনো করেছেন দু'ভাই। পাশাপাশি বড় হয়ে উঠার সুবাধে হেনরি খেলার মাঠে নকআউট করেন জর্জকে। ঐ সমযে চলমান বিশ্বযুদ্ধের কঠিন ও দুর্বিষহ জীবনের প্রেক্ষাপটে হেনরি কুপার দৈনিক পত্রিকা বিক্রয় থেকে শুরু করে ব্যবহৃত গলফ্ বলগুলোকে পুনরায় নতুন করে ক্লাবহাউজে বিক্রয় ইত্যাদি অনেকগুলো কাজে নিযুক্ত ছিলেন। এছাড়াও দু'ভাই ফুটবল এবং ক্রিকেটেও নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব দেখিয়েছেন।[৫] জর্জ কুপার ১১ এপ্রিল, ২০১০ সালে ৭৫ বছর বয়সে মারা যান। হেনরি কুপারকে মুষ্টিযুদ্ধে দক্ষতার কারণে জাতীয় সেবা হিসেবে রয়্যাল আর্মি অর্ডন্যান্স কোরে নিয়োগ দেয়া হয়।[৬] হেনরি কুপার কর্তৃক বিশ্বখ্যাত মুষ্টিযোদ্ধা মুহাম্মদ আলীকে ভূপাতিত করায় স্মরণীয় হয়ে আছেন। এছাড়াও, তিনি হেভিওয়েটে জোরা ফোলে, রয় হ্যারিস, কার্ল মিল্ডেনবার্গার, অ্যালেক্স মিটেফ, ওয়েন বেথিয়া, ব্রায়ান লন্ডন, জো এর্সকাইন, জোস ম্যানুয়েল আর্টেইন, পিয়েরো টোমাসোনি, ডিক ওয়াইপারম্যান, ডিক রিচার্ডসন, বিলি ওয়াকার, টনি হিউজেস, জ্যাক বোদেল, জেফারসন ডেভিস এবং গাওয়ি ডি ক্লার্ককে পরাভূত করেন।
কুপার বাহাতি বক্সার বা মুষ্টিযোদ্ধা ছিলেন। তিনি অর্থোডক্স ভঙ্গীমায বা হাত ও পা সামনে রাখতেন সাউথপ ভঙ্গীমার পরিবর্তে। এ প্রচেষ্টার দরুন তিনি ব্যতিক্রমধর্মী শক্তিশালী বাম হুকের সাহায্যে প্রতিপক্ষ খেলোয়াড়কে অত্যন্ত নিখুঁতভাবে আক্রমণ করতেন। "আওয়ার এনেরি" নামে যুক্তরাজ্যের অন্যতম জনপ্রিয় বক্সার হিসেবে দর্শকদের কাছে পরিচিত ছিলেন হেনরি কুপার। তিনি ১৯৪৯ সালে শৌখিন মুষ্টিযোদ্ধা হিসেবে এলথাম এ্যামেচার বক্সিং ক্লাবে যোগ দেন এবং চুরাশিটি খেলার মধ্যে তেয়াত্তরটি খেলায় জয়ী হন। সতের বছর বয়সে দু'টির মধ্যে একটিতে অ্যাবা লাইট-হেভিওয়েট শিরোপা জয় করেন। সেনাবাহিনীতে যোগদানের পূর্বে ১৯৫২ সালের অলিম্পিক ক্রীড়ায় বৃটেনের প্রতিনিধিত্ব করেন। কিন্তু সোভিয়েত ইউনিয়নের (বর্তমান রাশিয়া) খেলোয়াড় আনাতোলি পেট্রোভের কাছে ২য় পর্যায়ে হেরে যান।
হেনরি একসময় শীর্ষস্থানীয় খেলোয়াড় হিসেবে ব্রিটিশ, ইউরোপিয়ান এবং কমনওয়েলথ্ হেভিওয়েট বক্সিং চ্যাম্পিয়নধারীদের তালিকায় ছিলেন। শুরুতে শিরোপা নির্ধারণী প্রতিযোগিতায় তার অবস্থান ছিল অসফলতায় ভরপুর। জো বায়গ্রেভস্, ইঙ্গিমার জনসন এবং জো এরস্কিনকের কাছে হেরে যান। তারপর তিনি তৎকালীন সর্বোচ্চ পয়েন্টধারী জোরা ফোলিকে হারান। জানুয়ারি, ১৯৫৯ সালে ব্রিটিশ এবং কমনওয়েলথ্ বেল্টের নতুন চ্যাম্পিয়ন ব্রায়ান লন্ডনকে ১৫ রাউন্ডের গেমে হারান।[৭]
কুপার দুইবার ক্যাসিয়াস ক্লে (পরবর্তীতে মুহাম্মদ আলী নামে পরিচিত)-এর মুখোমুখি হন। শিরোপা নির্ধারণবিহীন প্রথম খেলাটি ১৯৬৩ সালে ওয়েম্বলী স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়। ঐ সময় কুপারের কোন ট্রেইনার ছিল না। তাই চমৎকার নৈপুণ্য প্রদর্শন করা স্বত্ত্বেও তিনি জয়লাভ করতে পারেননি।[৮] যখন হেনরি কুপার মুহাম্মদ আলীকে ভূপাতিত করেন, তখন ২৭ পাউন্ড ওজন কম নিয়ে জয়ী হওয়ায় ভাষ্যকার হ্যারি কার্পেন্টার তাদের ওজন নিয়ে শুরুতে করা বক্তব্যকে স্মরণ করিয়ে দেন।[৯] ৫ম রাউন্ডে ক্লে ক্ষীপ্রগতিতে হেনরি কুপারকে আক্রমণ করেন এবং রক্তাক্ত করে ফেলেন। রেফারী টমি লিটিল আমেরিকান ক্লে'র হাত উচিয়ে দ্রুত খেলা বন্ধের ঘোষণা দেন ও বিজয়ী ঘোষণা করেন। যদিও স্কোরের দিক দিয়ে ক্লে'র চেয়ে বেশ এগিয়ে ছিলেন কুপার।
১৯৬৪ সালে ক্যাসিয়াস ক্লে তার নাম ও ধর্ম পরিবর্তন করে মুহাম্মদ আলী রাখেন। পরে তিনি ব্রিটিশ টেলিভিশনে বলেছিলেন যে, কুপার তাকে এতো জোরে আঘাত করেছেন যে মনে হলো তিনি পূর্বপুরুষদের আবাসস্থল হিসেবে আফ্রিকায় গিয়ে পড়েছেন। ১৯৬৬ সালে আর্সেনাল স্টেডিয়ামে দ্বিতীয়বারের মতো মুহাম্মদ আলীর মুখোমুখি হন কুপার। আলী পূর্বের খেলার অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে কুপারের আক্রমণাত্মক ভঙ্গিকে পাশ কাটান। কুপার চোখের কোনায় আঘাতপ্রাপ্ত হলে নকআউটে বিজয়ী হন আলী।[১০]
মুহাম্মদ আলী'র কাছে হারার পর কুপার সাবেক হেভীওয়েট চ্যাম্পিয়ন ফ্লয়েড প্যাটারসনের কাছে চতুর্থ রাউন্ডে হারেন। এরপর তিনি তার জীবনের শেষ খেলার পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত অপরাজিত ছিলেন। ১৯৬৮ সালে কুপার ইউরোপীয় শিরোপা জয় করেন কার্ল মিলডেনবার্গারের বিরুদ্ধে লড়ে। ১৯৭১ সালে তিনি শেষ লড়াইয়ে জো বাগনারের বিরুদ্ধে লড়ে অল্প ব্যবধানে পরাজিত হন। ভাষ্যকার হ্যারী কার্পেন্টারের প্রশ্ন, "কি করে তারা কুপারকে শিরোপা থেকে বঞ্চিত করল?" এছাড়াও অন্য আরেক ভাষ্যকার বলেছেন যে তরুণ, শক্তিশালী বাগনার জয়ের জন্য অনেক কিছু করেছেন।[১১]
এ লড়াইয়ের পর খুব তাড়াতাড়ি হেনরি কুপার বক্সিং জগৎ থেকে অবসর নেন। একবছর পর কুপার ম্যাচ রেফারী হ্যারি গিবসের ভূমিকা নিয়ে কথা বলতে অস্বীকৃতি জানান। কুপার বলেছিলেন, "আমি তার সাথে কথা বলিনি। আমি সাধারণতঃ ঘৃণাবোধ ধারণ করতে অপছন্দ করি। কিন্তু আমার ধারণা লড়াইয়ের পূর্বে কিছু একটা হয়েছে। এ নিয়ে আমি কোন কথা বলতে চাচ্ছি না। আমি তার মৃত্যুর ছয় মাস পূর্বে এ বিষয়ে কথা বলিনি"। অবশ্য, হেনরি কুপার দাতব্য তহবিলে অর্থ সংগ্রহের উদ্দেশ্যে তার সাথে হাত মিলানোর জন্য সম্মতি দিয়েছিলেন।[১২]
১৯৮০ সালে কুপার দ্য গ্রেট হেভিওয়েটস্ শিরোনামে একটি বই লিখেন। সর্বকালের সেরা ব্যক্তিদেরকে ঘিরে লেখা এ বইয়ে জ্যাক জনসন, জ্যাক ডেম্পসে, জো লুইস, রকি মার্সিয়ানো এবং মুহাম্মদ আলী স্থান পেয়েছেন। তিনি তাদের প্রত্যেকের খেলা নিয়ে বিশ্লেষণ, শক্তিমত্তা প্রদর্শন ও দূর্বলতাগুলো তুলে ধরেছেন সুগভীরভাবে। কুপার কেন্টের হিল্ডেনবোরোতে বসবাস করতেন। সেখানে তিনি মৃত্যুর পূর্বপর্যন্ত নাইজেলস্ গল্ফ ক্লাবের চেয়ারম্যান ছিলেন।[১]
ফ্রাঙ্ক ব্রুনো, জো বাগনার, টমি ফার এবং লেনক্স লুইস প্রমূখদের পাশাপাশি হেনরি কুপার সর্বকালে সেরা ব্রিটিশ হেভিওয়েট মুষ্টিযোদ্ধাদের তালিকায় স্থান পেয়েছিলেন।
হেনরি কুপার ১ মে, ২০১১ইং সালে সারেতে তার ছেলের বসতভিটায় দীর্ঘদিন যাবৎ রোগভোগের পর মারা যান।[১]