হেনিপাভাইরাস

হেনিপাভাইরাস
Colored transmission electron micrograph of a "Hendra henipavirus" virion (ca. 300 nm length)
একটি "হিয়ান্দ্রা হেনিপা ভাইরাস" এর রঙিন ট্রান্সমিশন ইলেক্ট্রন মাইক্রোগ্রাফ (প্রায় ৩০০ ন্যানোমিটার দৈর্ঘ্য)
ভাইরাসের শ্রেণীবিন্যাস e
অপরিচিত শ্রেণী (ঠিক করুন): হেনিপাভাইরাস
Species

হেনিপা ভাইরাস
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস
বর্গ: মনোনেগাভিরালিস
পরিবার: প্যারামিক্সোভিরিডি
গণ: হেনিপাভাইরাস
আদর্শ প্রজাতি
হেন্ড্রাভাইরাস
প্রজাতি

নিপাহ ভাইরাস

হেনিপা ভাইরাস (Henipavirus) প্যারামিক্সো ভাইরাসমূহের একটি গণ যা প্যারামিক্সোভিরিডি (Paramyxoviridae) গোত্রের মনোনেগাভিরালিস (Mononegavirales) বর্গের অন্তর্গত। এই গোত্রের ২টি সদস্যের নাম হচ্ছে- হেন্ড্রাভাইরাস এবং নিপাহ ভাইরাস। টেরোপাস গোত্রের ফলাহারী বাদুর (fruit bat) (উড়ন্ত শেয়াল) এই ভাইরাসগুলোর প্রাকৃতিক পোষক। ভাইরাসগুলোর বৈশিষ্ট্যমূলক বৃহৎ জিনোম এবং বিস্তৃত পোষকশ্রেনী রয়েছে। সাম্প্রতিককালে এটি জুনোটিক(Zoonotic) জীবাণু হিসাবে আবির্ভূত হয়েছে যা গৃহপালিত পশু এবং মানুষের দেহে রোগ সৃষ্টি করতে পারে।[]
২০১১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে সবচেয়ে সাম্প্রতিক নিপাহ ভাইরাস সৃষ্ট এনসেফাইলাটিসে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা ঘটে বাংলাদেশের লালমনিরহাট জেলার হাতিবান্ধা উপজেলায়। ৭ফেব্রুয়ারি ২০১১ পর্যন্ত আক্রান্ত ২৪ জনের মধ্যে ১৭ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়।[]

ভাইরাসের গঠন

[সম্পাদনা]
হেনিপা ভাইরাসের গঠন
হেনিপাভাইরাসের জিনোম (৩’ থেকে ৫’ মুখী সজ্জা) এবং পি জিন এর উৎপাদসমূহ

হেনিপা ভাইরাসগুলো প্লিওমরফিক(Pleomorphic) (বিভিন্ন আকার বিশিষ্ট), এবং ৪০-৬০০ ন্যানোমিটার ব্যাস বিশিষ্ট হয়ে থাকে।[] এদের ভাইরাল ম্যাট্রিক্স প্রোটিন এর উপরে একটি লিপিড পর্দা থাকে। ভাইরাসের কেন্দ্রে একটি এক-সুত্রক প্যাচানো আরএনএ জিনোম থাকে যা এন (নিউক্লিওক্যাপসিড) প্রোটিন এর সাথে দৃঢ়ভাবে যুক্ত থাকে এবং এটি এল (বৃহৎ) প্রোটিন ও পি (ফসফোপ্রোটিন) এর সাথে সম্পৃক্ত যারা ভাইরাল রেপ্লিকেশন এর সময় আরএনএ পলিমারেজ এনজাইমের কাজ করে।
লিপিড পর্দার অভ্যন্তরে এফ (ফিউসন) প্রোটিন ট্রাইমার ও জি (সংযোগ) প্রোটিন টেট্রামার এর কাটা (Spike) থাকে। জি প্রোটিনের কাজ হচ্ছে ভাইরাসকে পোষক কোষের পৃষ্ঠে সংযুক্ত করা ইএফএনবি২(EFNB2) নামক একটি প্রোটিনের মাধ্যমে যা অনেক স্তন্যপায়ী প্রানীতে বিদ্যমান।[][] এফ প্রোটিন ভাইরাস পর্দা কে পোষক কোষপর্দার সাথে একত্রীভূত করে এবং ভিরিয়নের আধেয় (content) কে কোষের অভ্যন্তরে পাঠায়। এছাড়াও এই প্রোটিন আক্রান্ত কোষকে পার্শ্ববর্তী কোষগুলোর সাথে একত্রীভূত করে একাধিক নিউক্লিয়াস বিশিষ্ট বৃহৎ সিনসাইটিয়াতে (Syncytia) পরিনত করে।

জিনোমের গঠন

[সম্পাদনা]

মনোনেগাভিরালিস বর্গের সব ভাইরাসের মধ্যে হেন্ড্রা ভাইরাস এবং নিপাহ ভাইরাস এর জিনোম অখণ্ডিত, একসূত্রক, ঋনাত্নক সূত্রক আরএনএ। উভয়ের জিনোমই ১৮.২ কেবি দৈর্ঘ্য বিশিষ্ট এবং ৬টি জিন বহন করে যা ভাইরাসগুলোর ৬টি গাঠনিক প্রোটিনের সাথে সম্পর্কিত।[]
সাধারনভাবে প্যারামিক্সোভিরিডি উপ-গোত্রের অন্যান্য সদস্যগুলোতে নিউক্লিওটাইডের সংখ্যা ৬ এর গুনীতক যাকে "রুল অফ সিক্স" বলা হয়। মিউটেশন বা অপূর্ণ জিনোম সংশ্লেষন এর কারণে এই নিয়মের ব্যতিক্রম ঘটলে ভাইরাসের রেপ্লিকেশন বাধাগ্রস্ত হয়।
হেনিপাভাইরাস একটি ব্যতিক্রমী প্রক্রিয়ায় একটি জিন থেকে একাধিক প্রোটিন তৈরী করে যার নাম আরএনএ সম্পাদনা। এই প্রক্রিয়ায় ট্রান্সলেশন এর পূর্বে পি জিন এম-আরএনএ এ একটি অতিরিক্ত গুয়ানোসাইডের খন্ডাংশ প্রবেশ করানো হয়। কতগুলো খন্ডাংশ প্রবিষ্ট হল তার উপরে নির্ভর করে পি, ভি বা ডাবলু প্রোটিন সংশ্লেষিত হয়। ভি এবং ডাবলু প্রোটিনের কাজ এখনও জানা যায়নি তবে ধারণা করা হয় এরা পোষক কোষের ভাইরাসরোধী প্রক্রিয়ায় বাধা সৃষ্টি করে।

হেন্ড্রা ভাইরাস

[সম্পাদনা]

আবির্ভাব

[সম্পাদনা]

ভাইরাসটি (প্রকৃত নাম ইকুইন মরবিলি ভাইরাস) প্রথম আবিষ্কৃত হয় ১৯৯৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে। এই সময়ে অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ডের ব্রিসবেন শহরের হেন্ড্রা নামক স্থানে একটি ঘোড়ার প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে ১৪টি ঘোড়া এবং ১জন প্রশিক্ষক মারা যায়।[]

ইনডেক্স কেস ছিল একটি মেয়ার যেটি আরো ২৩ টি ঘোড়ার সাথে একই আস্তাবলে ছিল। আক্রান্ত হওয়ার ২দিন পরে এটি মারা যায় এবং এর মৃত্যুর পর আরো ১৯টি ঘোড়া আক্রান্ত হওয়ার লক্ষন প্রকাশ পায় যার মধ্যে ১৩ টি মারা যায়। আস্তাবলের প্রশিক্ষক এবং পরিচর্যাকারী উভয়েই ইনডেক্স কেস এর পরিচর্যায় নিয়জিত ছিলেন এবং ঘোড়াটির মৃত্যুর পর তারা দুজনেই ইনফ্লুয়েঞ্জার মত অসুস্থতায় আক্রান্ত হন। পরিচর্যাকারী সুস্থতা লাভ করলেও প্রশিক্ষক শ্বাসতন্ত্র ও রেচনতন্ত্রের ব্যার্থতায় মৃত্যু বরন করেন। ভাইরাসটির সবচেয়ে বড় সম্ভাব্য উৎস ছিল ইনডেক্স কেস এর নসিকা নিঃসরণ।

নিপাহ রোগ

[সম্পাদনা]

ভাইরাসজনিত নিপাহ রোগ প্রধানত বাদুড়ের সংস্পর্শে সংক্রমিত হয়। এ রোগের প্রধান প্রধান লক্ষণগুলো হচ্ছে - জ্বর, মাথাব্যথা, প্রলাপ বকা, অজ্ঞান হওয়া এবং তন্দ্রাচ্ছন্ন থাকা। এছাড়াও, কাশি, পেট ব্যথা, বমি ভাব, দূর্বলতা ইত্যাদি অন্যতম উপসর্গ। এ রোগ থেকে প্রতিরোধের জন্যে -

  • খেজুরের কাঁচা রস পান করা উচিত নয়।
  • গাছ থেকে যে-কোন ধরনের আংশিক ফল ভক্ষণ করা উচিত নয়।
  • ফলমূল পরিষ্কার পানি দিয়ে ভালোভাবে ধৌত করা উচিত।
  • আক্রান্ত রোগীর সংস্পর্শে আসলে সাবান ও পানি দিয়ে ভালোভাবে হাত ধৌত করা উচিত।

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. Sawatsky; ও অন্যান্য (২০০৮)। "Hendra and Nipah Virus"Animal Viruses: Molecular Biology। Caister Academic Press। ISBN 978-1-904455-22-6 
  2. "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২ মার্চ ২০১১ 
  3. Hyatt AD, Zaki SR, Goldsmith CS, Wise TG, Hengstberger SG (২০০১)। "Ultrastructure of Hendra virus and Nipah virus within cultured cells and host animals"Microbes Infect.3 (4): 297–306। ডিওআই:10.1016/S1286-4579(01)01383-1পিএমআইডি 11334747 
  4. Bonaparte, M; Dimitrov, A; Bossart, K; ও অন্যান্য (২০০৫)। "Ephrin-B2 ligand is a functional receptor for Hendra virus and Nipah virus"PNAS102 (30): 10652–7। ডিওআই:10.1073/pnas.0504887102পিএমআইডি 15998730পিএমসি 1169237অবাধে প্রবেশযোগ্য 
  5. Negrete OA, Levroney EL, Aguilar HC; ও অন্যান্য (২০০৫)। "EphrinB2 is the entry receptor for Nipah virus, an emergent deadly paramyxovirus"। Nature436 (7049): 401–5। ডিওআই:10.1038/nature03838পিএমআইডি 16007075 
  6. Wang L, Harcourt BH, Yu M; ও অন্যান্য (২০০১)। "Molecular biology of Hendra and Nipah viruses"Microbes Infect.3 (4): 279–87। ডিওআই:10.1016/S1286-4579(01)01381-8পিএমআইডি 11334745 
  7. Selvey LA, Wells RM, McCormack JG; ও অন্যান্য (১৯৯৫)। "Infection of humans and horses by a newly described morbillivirus"Med. J. Aust.162 (12): 642–5। পিএমআইডি 7603375 

বহিঃসংযোগ

[সম্পাদনা]