হেমন্ত মুখোপাধ্যায় | |
---|---|
প্রাথমিক তথ্য | |
জন্মনাম | হেমন্ত মুখোপাধ্যায় |
জন্ম | বারাণসী, ভারত | ১৬ জুন ১৯২০
মৃত্যু | ২৬ সেপ্টেম্বর ১৯৮৯ কলকাতা, ভারত | (বয়স ৬৯)
পেশা | বাংলা ও হিন্দি কন্ঠশিল্পী, সংগীত পরিচালক এবং প্রযোজক |
হেমন্ত মুখোপাধ্যায় (১৬ জুন ১৯২০ – ২৬ সেপ্টেম্বর ১৯৮৯) একজন কিংবদন্তি বাঙালি কণ্ঠসঙ্গীত শিল্পী সুরকার, সঙ্গীত পরিচালক এবং প্রযোজক ছিলেন। তিনি হিন্দি সঙ্গীত জগতে হেমন্ত কুমার নামে প্রসিদ্ধ ছিলেন। তিনি বাংলা, হিন্দি এবং অন্যান্য ভারতীয় ভাষায় গান গেয়েছেন। তিনি রবীন্দ্র সংগীতের সর্বশ্রেষ্ঠ শিল্পী ছিলেন। তিনি শ্রেষ্ঠ পুরুষ নেপথ্য গায়ক বিভাগে দু-বার জাতীয় পুরস্কার পেয়েছিলেন। এছাড়াও ফিল্মফেয়ার সহ অসংখ্য দেশি ও বিদেশি পুরস্কার পেয়েছিলেন। তিনি উপমহাদেশের সবথেকে শ্রেষ্ঠ সঙ্গীতশিল্পীদের একজন ছিলেন। শুধুমাত্র রবীন্দ্রসঙ্গীতই নয়, বিভিন্ন ঘরানার গানে তিনি শ্রেষ্ঠ ছিলেন। নানামুখী গানে আর কোন শিল্পী হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের সমকক্ষ হতে পারেননি। হেমন্ত মুখোপাধ্যায়কে বলা হয় ভারতীয় সঙ্গীতের একচ্ছত্র সম্রাট। হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের কণ্ঠকে বলা হয় ঈশ্বরের কণ্ঠ, তথা সঙ্গীতের ঈশ্বর।
শিল্পী হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের জন্ম তার মাতামহের বাড়ি পবিত্র বারাণসী শহরে। তার মাতামহ ছিলেন একজন শীর্ষস্থানীয় চিকিৎসক। তার পৈতৃক নিবাস ছিল দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার জয়নগরে। তারপরিবার কলকাতা শহরে আসে দ্বিতীয় শতকের প্রথমার্ধে। হেমন্ত সেখানে বড়ো হতে থকেন এবং প্রথমে নাসিরুদ্দিন স্কুল এবং পরবর্তীতে ভবানীপুরের মিত্র ইনস্টিটিউশনে পড়াশোনা করেছিলেন। সেখানেই তারসঙ্গে পরিচয় হয় সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের, যিনি পরবর্তীকলে বাংলার স্বনামধন্য কবি হয়েছিলেন। ওই সময়কালে বিশিষ্ট লেখক সন্তোষকুমার ঘোষ মহাশয়ের সঙ্গে তারসখ্যতা গড়ে ওঠে। ওই সময়ে হেমন্ত ছোটো গল্প লিখতেন, সন্তোষ কুমার কবিতা লিখতেন এবং সুভাষ মুখোপাধ্যায় গান গাইতেন।[১]
ইন্টারমিডিয়েট পাস করে হেমন্ত যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে যান। কিন্তু তিনি সঙ্গীতের জন্য আপন শিক্ষা ত্যাগ করেন।[২] তার সাহিত্যিক হওয়ার ইচ্ছে ছিল। কিছুদিন তিনি দেশ পত্রিকার জন্যে লেখেন। ১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দ থেকে তিনি সম্পূর্ণভাবে সঙ্গীত জগতে প্রবেশ করেন।
১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দে হেমন্ত তার বন্ধু সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের প্রভাবে আকাশবাণীতে তার গান রেকর্ডিং করেন। গানের প্রথম লাইন ছিল 'আমার গানেতে এলে নবরূপী চিরন্তনী'। হেমন্ত তার প্রারম্ভিক সঙ্গীত কর্মজীবনে পরামর্শদাতা হিসেবে পেয়েছিলেন বাংলা সঙ্গীতজ্ঞ শৈলেশ দত্তগুপ্তকে। প্রথম জীবনে হেমন্ত বাংলার প্রখ্যাত গায়ক পঙ্কজ মল্লিককে অনুসরণ করতেন। এজন্যে তার ডাকনাম ছিল 'ছোটো পঙ্কজ'। ১৯৮০ খ্রিস্টাব্দে এক দূরদর্শন সাক্ষাৎকারে হেমন্ত উল্লেখ করেছিলেন যে, তিনি উস্তাদ ফৈয়াজ খানের শিষ্য ফণীভূষণ ব্যানার্জির কাছে ধ্রুপদী সঙ্গীতেরও তালিম নিয়েছিলেন, কিন্তু উস্তাদের অসময়ের মৃত্যুতে তার শিক্ষা অসমাপ্ত রয়ে যায়।
১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দে কলাম্বিয়ার লেবেলে হেমন্ত তার প্রথম গ্রামোফোন রেকর্ড প্রকাশ করেন। চলচ্চিত্রের বাইরে রেকর্ডের ওই গানগুলো ছিল 'জানিতে যদি গো তুমি' এবং 'বলো গো বলো মোরে', যেগুলোর কথা নরেশ ভট্টাচার্যের এবং সঙ্গীত শৈলেশ দত্তগুপ্তের। তার পর থেকে ১৯৮৪ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত প্রতি বছর গ্রামোফোন কোম্পানি অফ ইন্ডিয়ার (জিসিআই) জন্যে ধারাবাহিকভাবে চলচ্চিত্রের বাইরে হেমন্তের রেকর্ড প্রকাশিত হোত। তার প্রথম হিন্দি গানগুলো 'কিতনা দুখ ভুলায়া তুমনে' এবং 'ও প্রীত নিভানেওয়ালি' ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দে জিসিআইয়ের কলাম্বিয়া লেবেলেই প্রকাশিত হয়েছিল। ওই গানগুলোর সঙ্গীতকার ছিলেন কমল দাশগুপ্ত; কথা লিখেছিলেন ফৈয়াজ হাসমি।
১৯৪১ খ্রিস্টাব্দে মুক্তিপ্রাপ্ত বাংলা চলচ্চিত্র নিমাই সন্যাস চলচ্চিত্রে হেমন্ত প্রথম গান গেয়েছিলেন। সঙ্গীত দিয়েছিলেন হরিপ্রসন্ন দাস। ১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দে চলচ্চিত্রের বাইরে বাংলা গানে হেমন্ত নিজে প্রথম সুর দিয়েছিলেন 'কথা কোয়োনাকো শুধু শোনো' এবং 'আমার বিরহ আকাশে প্রিয়া' এই দুটি গানে। এগুলোর কথা লিখেছিলেন অমিয় বাগচি। ১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দে পণ্ডিত অমরনাথের সঙ্গীত পরিচালনায় তিনি ইরাদা (১৯৪৪ চলচ্চিত্র) চলচ্চিত্রে প্রথম হিন্দি গানগুলো গেয়েছিলেন। হেমন্তকে শীর্ষস্থানীয় রবীন্দ্র সংগীত শিল্পী হিসেবে ধরা হয়। ১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দে প্রিয় বান্ধবী বাংলা চলচ্চিত্রে তার প্রথম রবীন্দ্র সঙ্গীত রেকর্ড করা হয়েছিল।[৩] গানটা ছিল 'পথের শেষ কোথায়'। ১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দেই তিনি কলাম্বিয়া লেবেলের অধীনে চলচ্চিত্রের বাইরে প্রথম রবীন্দ্র সঙ্গীত রেকর্ড করেন। গানগুলো ছিল 'আমার আর হবে না দেরি' এবং 'কেন পান্থ এ চঞ্চলতা'। তার আগে তিনি অল ইন্ডিয়া রেডিয়ো/আকাশবাণীতে আমার মল্লিকাবনে রেকর্ড করেছিলেন, কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত রেকর্ডটা বিস্মৃতিতে চলে গিয়েছে।[৪]
১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে সংগীত পরিচালক হিসেবে তার প্রথম বাংলা চলচ্চিত্র ছিল অভিযাত্রী। যদিও ওই সময় অনেক গান রেকর্ড করে হেমন্ত প্রচুর প্রশংসা পেয়েছেন, ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত তিনি বড়ো বাণিজ্যিক সাফল্য পেয়েছিলেন। বাংলায় তার সমসাময়িক পুরুষ সঙ্গীত শিল্পীরা ছিলেন জগন্ময় মিত্র, রবীন মজুমদর, সত্য চৌধুরী, ধনঞ্জয় ভট্টাচার্য্য, সুধীরলাল চক্রবর্তী, বেচু দত্ত[৫] এবং তালাৎ মাহমুদ।
হেমন্ত মুখোপাধ্যায়রা তিন ভাই এবং এক বোন, নীলিমা। বড়ো ভাই শক্তিদাস মুখোপাধ্যায় চাকরি করতেন,সেজো ভাই তারাজ্যোতি ছোটো গল্প লিখতেন। ছোটো ভাই অমল মুখোপাধ্যায় কিছু বাংলা চলচ্চিত্রে সঙ্গীত পরিচালনা করেছিলেন এবং গানও গেয়েছিলেন, তার গান 'এই পৃথিবীতেই সারাটা জীবন'; নামকরা চলচ্চিত্রগুলো ছিল হসপিটাল এবং অবাক পৃথিবী। তিনি ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দের দশকে কিছু গান রেকর্ড করেছিলেন এবং জীবনের অনেকটা পথ একলাই, হেমন্তের এই গানে খুবই স্মরণীয় সুরও দিয়েছিলেন।[৬]
১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দে হেমন্ত বাংলা সঙ্গীত শিল্পী বেলা মুখোপাধ্যায়ের (মৃত্যু ২৫ জুন ২০০৯),[৭] সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দে কাশীনাথ বাংলা চলচ্চিত্রে সঙ্গীত পরিচালক পঙ্কজ মল্লিক বেলাকে দিয়ে কিছু জনপ্রিয় গান গাইয়েছিলেন কিন্তু বিবাহের পর বেলা আর সঙ্গীত জগতে প্রবেশ করেননি। তাঁদের দুই সন্তান — পুত্র জয়ন্ত এবং কন্যা রাণু। সীমিত সাফল্য নিয়ে রাণু মুখোপাধ্যায় ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দের দশকের শেষে এবং ১৯৭০ খ্রিস্টাব্দের দশকের শুরুর দিকে গান গাইতেন। জয়ন্ত ১৯৭০ খ্রিস্টাব্দের দশকের জনপ্রিয় ভারতীয় অভিনেত্রী মৌসুমী চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।
১৯৪০ খ্রিস্টাব্দের দশকে হেমন্ত ভারতীয় গণনাট্য সংঘ (আইপিটিএ) সংস্থার সক্রিয় সদস্য হয়েছিলেন এবং আর এক আইপিটিএ সদস্য - সঙ্গীত রচয়িতা এবং সঙ্গীতজ্ঞ সলিল চৌধুরির সঙ্গে অনুষঙ্গ শুরু করেছিলেন। আইপিটিএ সংস্থার অন্যতম চালিকাশক্তি ছিল ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দে বাংলার দুর্ভিক্ষ এবং এর প্রতিরোধে ব্রিটিশ শাসক ও সম্পদশালী ভারতীয়দের নিষ্ক্রিয়তা।
হেমন্ত ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে সলিল চৌধুরির কথায় ও সুরে চলচ্চিত্রের বাইরে একটা গান গাঁয়ের বধূ রেকর্ড করেন। দু-পিঠের ৭৮ আরপিএম ছ-মিনিটের ওই ডিস্ক রেকর্ডে বাংলার ভিন্ন গতির এক আবেগমথিত প্রচলিত কাঠামোকে নিবদ্ধ করেছিল। এই গান এক উন্নত এবং মমতাময়ী গ্রাম্য নারীর জীবন ও পরিবারকে সরল শান্ত মনোরম করে ফুটিয়ে তুলেছিল এবং বর্ণিত হয়েছিল কীভাবে দুর্ভিক্ষের দৈত্য ও আসন্ন দারিদ্র্যের দ্বারা বিধ্বস্ত হয়েছিল। এই গান হেমন্ত এবং সলিলকে পূর্ব ভারতে এক অভাবনীয় জনপ্রিয়তা এনে দিয়েছিল, এককথায়, হেমন্তকে তার সমসাময়িক পুরুষ গায়কদের থেকে এগিয়ে রেখেছিল। পরবর্তী কয়েক বছরে হেমন্ত এবং সলিল জুটি সমাজকে অনেক গান উপহার দিয়েছিল। প্রায় এই সমস্ত গানেই জনপ্রিয়তার প্রমাণ ছিল।[৮]
একই সময়কালে হেমন্ত বাংলা চলচ্চিত্রে সুরসৃষ্টির জন্যে বরাত পেতে শুরু করেন। তার মধ্যে কয়েকটা ছিল পরিচালক হেমেন গুপ্তের জন্যে। কয়েক বছর পর হেমেন যখন মুম্বই যান, ফিল্মিস্তান স্টুডিয়োর ব্যানারে তার পরিচালনায় আনন্দমঠ নামে প্রথম হিন্দি চলচ্চিত্রে সুরসৃষ্টির জন্যে হেমন্তকে ডাকেন। ওই ডাকে সড়া দিয়ে ১৯৫১ খ্রিস্টাব্দে হেমন্ত মুম্বই পাড়ি দেন এবং ফিল্মিস্তান স্টুডিয়োতে যোগ দেন। আনন্দমঠ (১৯৫২) চলচ্চিত্রের সঙ্গীত মাঝারি সাফল্য পেয়েছিল। সম্ভবত, এই চলচ্চিত্র থেকে খুবই উল্লেখযোগ্য গানের মধ্যে লতা মঙ্গেশকরের গাওয়া বন্দে মাতরম গানটায় হেমন্ত একটা কুচকাওয়াজের সুরারোপ করেছিলেন। আনন্দমঠ-এর পর শর্ত চলচ্চিত্রের মতো কয়েকটা ফিল্মিস্তান চলচ্চিত্রে হেমন্ত পরবর্তী কয়েক বছরে সুরসৃষ্টি করেছিলেন, যে গানগুলো মাঝারি জনপ্রিয়তা লাভ করেছিল। একই সঙ্গে হেমন্ত মুম্বইতে নেপথ্য গায়ক হিসেবে জনপ্রিয়তা লাভ করেছিলেন।[৯] অভিনেতা দেব আনন্দের জন্যে নেপথ্য গায়ক হিসেবে তার গান শচীন দেব বর্মন সুরারোপিত জাল ("য়েহ রাত, য়েহ চাঁদনি ফির কাঁহা..."), হাউস নম্বর ৪৪ ("চুপ হ্যায় ধরতি, চুপ হ্যায় চাঁদ সিতারে..."), সোলবা সাল ("হ্যায় আপনা দিল তো আওয়ারা..."), ফান্টুস ("তেরি দুনিয়া মে জীনে সে..."), এবং বাত এক রাত কি ("না তুম হামে জানো...") খুবই জনপ্রিয় হয়েছিল এবং এভাবে চলতে থাকে। ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দের দশকে তিনি হিন্দি চলচ্চিত্রের অন্যান্য কয়েকজন নায়কের জন্যে নেপথ্য গায়কের কাজ করেছিলেন; যেমন, প্রদীপ কুমার (নাগিন, ডিটেকটিভ), সুনীল দত্ত (দুনিয়া ঝুঁকতি হ্যায়) এবং ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দের দশকের শেষদিকে বিশ্বজিতের জন্যে (বিস সাল বাদ, বিন বাদল বরসাত, কোহরা) এবং ধর্মেন্দ্রের জন্যে (অনুপমা); তিনি এই সমস্ত চলচ্চিত্রের জন্যে সুরসৃষ্টি করেছিলেন।
১৯৫০ খ্রিস্টাব্দের দশকের মাঝামাঝি হেমন্ত একজন গায়ক ও সুরকার হিসেবে তার অবস্থান মজবুত করেছিলেন। তিনি নিজে গাইতে এবং সুর করতে মূলত পছন্দ করতেন সহজ-সরল মেলডিপ্রধান গান, কেননা বাঙালীর সাঙ্গীতিক অন্তরটি সুরকার ও গায়ক হিসাবে খুব ভালো অনুভব করতেন। বাংলায় তিনি রবীন্দ্র সংগীতের একজন শীর্ষস্থানীয় শিল্পী ছিলেন এবং সম্ভবত পুরুষ গায়কদের মধ্যে খুবই অগ্রগণ্য বিবেচ্য ছিলেন। ১৯৮০ খ্রিস্টাব্দের মার্চে কলকাতায় দেবব্রত বিশ্বাসের (১৯১১-১৯৮০) সম্মানে হেমন্ত এক অনুষ্ঠান আয়োজন করেছিলেন; ওই অনুষ্ঠানে কিংবদন্তি রবীন্দ্র সঙ্গীত শিল্পী দেবব্রত বিশ্বাস নিঃসংকোচে বলেছিলেন যে, হেমন্ত হচ্ছে রবীন্দ্র সঙ্গীতকে জনপ্রিয় করে তোলার 'দ্বিতীয় নায়ক', প্রথম জন হলেন কিংবদন্তি পঙ্কজ কুমার মল্লিক। রবীন্দ্রসঙ্গীত আর রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কে হেমন্তকুমার তার আত্মকথা "আনন্দধারা" এক জায়গায় লিখেছেন-
" সারা পৃথিবীর গানের সুরকে আয়ত্ত করে নতুন সুর সৃষ্টি করলেন রবীন্দ্রনাথ । সেই সুরের আলপনাকে বাংলা গানে ছিটিয়ে দিলেন । হয়ে গেল এক অপূর্ব সৃষ্টি । সর্বযুগের, সর্বকালের সৃষ্টি । এতবড়ো সুরকার আজও জন্মায়নি কোন দেশে। এই বুড়ো পৃথিবীকে ইচ্ছে হয় জিজ্ঞাসা করি, বয়েস তো অনেক হল। রবীন্দ্রনাথের মতো এমন সর্বতোমুখী প্রতিভা আর দেখেছে একটা ।
[১০] মুম্বইতে নেপথ্য গায়নের পাশাপাশি হেমন্ত সুর সৃষ্টিকারীর একটা ঘরানা গড়ে তুলেছিলেন। তিনি নাগিন (১৯৫৪) নাম এক হিন্দি চলচ্চিত্রের জন্যে সুর সৃষ্টি করেছিলেন, যেটা ওই চলচ্চিত্রে সঙ্গীতের জন্যেই বড়ো সাফল্য এসেছিল। নাগিনের গানগুলো ধারাবাহিকভাবে দু-বছর তালিকা-শীর্ষে অবস্থান করেছিল এবং ১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দে হেমন্তর মর্যাদাপূর্ণ ফিল্মফেয়ার শ্রেষ্ঠ সংগীত নির্দেশনা পুরস্কার লাভে সর্বোচ্চ সীমায় পৌঁছে দিয়েছিল। ঠিক ওই বছরই তিনি বাংলা চলচ্চিত্র শাপমোচনের জন্যে সঙ্গীত প্রস্তুত করেন, যেখানে অভিনেতা উত্তম কুমারের জন্যে নেপথ্য কণ্ঠে চারখানা গানও গেয়েছিলেন। এটা নেপথ্য গায়ক-নায়ক হিসেবে হেমন্ত-উত্তম জুটির এক লম্বা মেলবন্ধনের শুরুয়াত ছিল। তারা দুজনে পরবর্তী দশক জুড়ে বাংলা চলচ্চিত্র জগতে ভীষণ জনপ্রিয় গায়ক-নায়ক জুটি ছিলেন।
১৯৫০ খ্রিস্টাব্দের দশকের শেষ দিকে হেমন্ত অসংখ্য বাংলা এবং হিন্দি চলচ্চিত্রের জন্যে গান গেয়েছিলেন এবং সুর দিয়েছিলেন, অসংখ্য রবীন্দ্র সঙ্গীত এবং চলচ্চিত্রের বাইরের গান রেকর্ড করেছিলেন। যার মধ্যে প্রায় সবই, বিশেষ করে বাংলা গান অত্যধিক জনপ্রিয় হয়েছিল। ওই সময়কালকে তার কর্মজীবনে সাফল্যের শীর্ষবিন্দু হিসেবে ভাবা হয় এবং যেটা মোটামুটি এক দশক স্থায়ী ছিল। তিনি নচিকেতা ঘোষ, রবিন চ্যাটার্জী, সলিল চৌধুরী প্রমুখ বাংলার বিশিষ্ট সঙ্গীত নির্দেশকের সুরে গান গেয়েছেন। বেশ কিছু নামকরা চলচ্চিত্রে হেমন্ত সুর সৃষ্টি করেছেন; তার মধ্যে আছে: বাংলায় হারানো সুর, মরুতীর্থ হিংলাজ, নীল আকাশের নীচে, লুকোচুরি, স্বরলিপি, দীপ জ্বেলে যাই, শেষ পর্যন্ত, কুহক, দুই ভাই, সপ্তপদী এবং হিন্দিতে জাগৃতি, এক হি রাস্তা।
হেমন্ত ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দের দশকের অন্তিম পর্বে তার নিজের ব্যানারে হেমন্ত-বেলা প্রোডাকশন্স নামে চলচ্চিত্র প্রযোজনা শুরু করেছিলেন। ওই ব্যানারে প্রথম বাংলা চলচ্চিত্র ছিল স্বনামধন্য মৃণাল সেন পরিচালিত নীল আকাশের নীচে (১৯৫৯)। কাহিনি নেওয়া হয়েছিল ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের পটভূমিকায় কলকাতার রাস্তার এক চিনা ফেরিওয়ালার পরিশ্রমের যন্ত্রণা থেকে। এই চলচ্চিত্র ভারত সরকার কর্তৃক দেশের সর্বোচ্চ চলচ্চিত্র সম্মান রাষ্ট্রপতির স্বর্ণ পদক লাভ করেছিল। পরের দশকে হেমন্তের প্রযোজনা কোম্পানি নাম পরিবর্তন করে গীতাঞ্জলি প্রোডাকশন্স হয় এবং একের পর এক হিন্দি চলচ্চিত্রের প্রযোজনা করতে থাকে; যেমন, বিশ সাল বদ, কোহরা, বিবি অওর মকান, ফরার, রাহগির এবং খামোশি - উপর্যুক্ত সব চলচ্চিত্রেই সুর সৃষ্টি করেছেন হেমন্ত। শুধুমাত্র বিশ সাল বাদ এবং খামোশি এগুলোর মধ্যে অধিক বাণিজ্যিক সাফল্য পেয়েছিল।
এর পর বাংলায় ফেরা। ১৯৬৩ খ্রিস্টাব্দে হেমন্ত পলাতক চলচ্চিত্রের জন্যে সুর সৃষ্টি করেন, যেখানে তিনি পরীক্ষামূলকভাবে বাংলা লোক সংগীত এবং লঘু সঙ্গীতের সংমিশ্রণ ঘটিয়েছিলেন। এটা একটা বড়ো সাফল্যের প্রমাণ দিয়েছিল এবং হেমন্তের সঙ্গীত গ্রন্থনার ধরন ভবিষ্যতের চলচ্চিত্রগুলোতে উল্লেখযোগ্যভাবে পরিবর্তিত হয়েছিল, যেমন, বাঘিনি এবং বালিকা বধূ। বাংলা ছবিদ্বয় মণিহার এবং অদ্বিতীয়া সাংগীতিক এবং বাণিজ্যিক দিক থেকে বড়ো সাফল্য পেয়েছিল, তার সঙ্গীত গ্রন্থনায় লঘু ধ্রুপদী ছোঁয়া ছিল। ১৯৬১ খ্রিস্টাব্দে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্ম শতবার্ষিকী উদযাপনে গ্রামোফোন কোম্পানি অফ ইন্ডিয়া হেমন্তকে দিয়ে এক বড়ো অংশের স্মারক প্রস্তুত করেছিল। এটাও এক বড়ো সাফল্যের মুখ দেখেছিল। হেমন্ত ওয়েস্ট ইন্ডিজ ভ্রমণ সমেত অনেক কনসার্টের জন্যে বহুবার বিদেশে গিয়েছিলেন। সর্বসাকুল্যে ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দের দশকে তিনি বাংলার প্রধান পুরুষ গায়ক হিসেবে নিজের জায়গা ধরে রেখেছিলেন এবং হিন্দি চলচ্চিত্রের সঙ্গীতকার ও গায়ক হিসেবে পরিগণিত হয়েছিলেন।
১৯৬০ খ্রিস্টাব্দের দশকে তিনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গীতিনাট্যগুলোর উদীয়মান এবং প্রধান পুরুষ কণ্ঠ ছিলেন; যেমন, বাল্মিকী প্রতিভা, শ্যামা, শাপমোচন, চিত্রাঙ্গদা এবং চণ্ডালিকা। ওই গীতিনাট্যগুলোতে প্রধান নারী কণ্ঠ হিসেবে থাকতেন কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায় (১৯২৪-২০০০) এবং সুচিত্রা মিত্র (১৯২৪-২০১০), তিনি রবীন্দ্র সংগীত শিল্পীত্রয়ীর অংশ ছিলেন, যাঁরা জনপ্রিয় এবং শ্রদ্ধাষ্পদ ছিলেন। এঁদের বলা হত 'হেমন্ত-কণিকা-সুচিত্রা' এবং সঙ্গে ছিলেন দেবব্রত বিশ্বাস, এই শিল্পী চতুষ্টয় ধারাবাহিকভাবে রবীন্দ্র গ্রন্থনার বহুশ্রুত প্রদর্শক ছিলেন। অশোকতরু বন্দ্যোপাধ্যায়, চিন্ময় চট্টোপাধ্যায়, সাগর সেন, সুমিত্রা সেন এবং ঋতু গুহ ছিলেন সেই সময়কার রবীন্দ্র সঙ্গীতের অন্যান্য প্রধান শিল্পী।
১৯৭০ খ্রিস্টাব্দের দশকে হিন্দি চলচ্চিত্রে হেমন্তর নামমাত্র অবদান ছিল। তিনি তার নিজের প্রডাকশন্সে নিজের মতো সঙ্গীত রচনা করতেন, কিন্তু তার মধ্যে কোনো চলচ্চিত্র কিংবা তার সঙ্গীত সফলতা পায়নি। যাইহোক, বাংলায় তিনি রবীন্দ্র সঙ্গীত, চলচ্চিত্র এবং চলচ্চিত্রের বাইরের গানের বিশিষ্ট শিল্পী ছিলেন। তার সঙ্গীত দশক জুড়ে ধারাবাহিকভাবে জনপ্রিয় ছিল। তার মধ্যে কয়েকটা হলো: যদি জানতে চাও তুমি... (১৯৭২), একগোছা রজনীগন্ধা..., আমায় প্রশ্ন করে নীল ধ্রুবতারা... (সলীল চৌধুরির সুরে), সেদিন তোমায় দেখেছিলাম ... (১৯৭৪), খিড়কি থেকে সিংহ দুয়ার... (স্ত্রী, ১৯৭১), কে জানে ক-ঘণ্টা... (সোনার খাঁচা, ১৯৭৪), যেওনা দাঁড়াও বন্ধু... (ফুলেশ্বরী, ১৯৭৫) এবং চলচ্চিত্রের অবস্থা অনুযায়ী সুন্দরভাবে প্রযুক্ত জনপ্রিয় রবীন্দ্র সংগীতগুলো। একটা খুব জনপ্রিয় এবং উচ্চাঙ্গের উদাহরণ হলো দাদার কীর্তি (১৯৮০) চলচ্চিত্রে চরণ ধরিতে দিয়োগো আমারে...। ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে হেমন্ত তার নিজের প্রযোজিত অনিন্দিতা চলচ্চিত্রে চলচ্চিত্র পরিচালক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। এটা বক্স অফিসে খুব ভালো ফল দিতে পারেনি। যাইহোক, এর মূল উপজীব্য ছিল দিনের শেষে ঘুমের দেশে... তার এই শ্রেষ্ঠ ও জনপ্রিয় রবীন্দ্র সংগীত। ওই একই বছরে প্রখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক কনরাড রুকসের ডাকে হেমন্ত হলিউডে গিয়েছিলেন।
হেমন্ত কনরাড রুকসের সিদ্ধার্থ চলচ্চিত্রের সঙ্গীত পরিচালক। তিনি ওই চলচ্চিত্রে নেপথ্য গায়ক হিসেবে ''ও নদীরে...'' (সংগীত এবং কণ্ঠ তাঁর ''নীল আকাশের নীচে'' থেকে) গেয়েছেন। হেমন্ত হলিউডে নেপথ্য গায়ক হিসেবে গান করা প্রথম ভারতীয়। যুক্তরাষ্ট্র সরকার হেমন্তকে মেরিল্যান্ড, বাল্টিমোরের নাগরিকত্ব দিয়ে সম্মানিত করেছিলেন; তিনি যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব পাওয়া প্রথম ভারতীয় গায়ক। ১৯৭০ খ্রিস্টাব্দের শুরু থেকে মাঝামাঝি পর্যন্ত বাংলার দুজন প্রধান সংগীতকার নচিকেতা ঘোষ এবং রবিন চট্টোপাধ্যায়, যাঁরা ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দের দশকের প্রথমদিক থেকে হেমন্তের সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করতেন, তাঁদের জীবনাবসান হয়েছিল। একই সঙ্গে ফুলেশ্বরী, রাগ অনুরাগ, গণদেবতা এবং দাদার কীর্তি ইত্যাদি চলচ্চিত্রে হেমন্ত সংগীত পরিচালনা করায় তাঁকে বাংলার প্রধান সংগীত পরিচালকরূপে প্রতিষ্ঠিত করেছিল। ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দের দশক এবং ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দের দশকে সলিল চৌধুরীর সঙ্গে হেমন্ত যেসব কাজ করেছিলেন ১৯৭৯ খ্রিস্টাব্দে তার মধ্যে থেকে কিছু পুনরায় রেকর্ড করেছিলেন। এই অ্যালবামের নাম হলো লেজেন্ড অফ গ্লোরি, ভল্যুম ২, হেমন্তের বয়সের ছাপ এবং শ্রান্ত কণ্ঠ সত্ত্বেও রেকর্ডটা ভালো বাণিজ্যিক সাফল্য পেয়েছিল।
১৯৮০ খ্রিস্টাব্দে হৃদাঘাত হয়েছিল, যার ফলে তার কণ্ঠস্বর ক্ষেপণের, বিশেষত তার শ্বাস নিয়ন্ত্রণের মারাত্মক ক্ষতি হয়েছিল। তিনি আটের দশকের গোড়ার দিকে ধারাবাহিকভাবে গান রেকর্ড করছিলেন, কিন্তু তার পুরুষালি কণ্ঠে একটু স্বরের তফাৎ পড়ে। ১৯৮৪ খ্রিস্টাব্দে হেমন্ত তার সংগীত জীবনের ৫০ বর্ষপূর্তিতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে সংবর্ধনা পেয়েছিলেন, এর মধ্যে খুব উল্লেখযোগ্য হলো গ্রামোফোন কোম্পানি অফ ইন্ডিয়া। ওই বছরই হেমন্ত গ্রামোফোন কোম্পানি অফ ইন্ডিয়া থেকে তার শেষ অ্যালবাম প্রকাশ করেন - এটা ছিল চারটে চলচ্চিত্রের বাইরের গান সমৃদ্ধ একটা ৪৫ আরপিএম সমন্বিত সম্প্রসারিত রেকর্ড। পরবর্তী বছরগুলোতে হেমন্ত ছোটোখাটো কোম্পানিগুলো থেকে কিছু চলচ্চিত্রের বাইরের গান রেকর্ড করেছিলেন যারা উঠতি ক্যাসেট-ভিত্তিক সংগীত তৈরি শিল্পের সঙ্গে এঁটে উঠছিল। সেগুলোর মধ্যে অল্প কয়েকটা বাণিজ্যিকভাবে সফল হয়েছিল। তিনি তখন মুষ্টিমেয় কিছু চলচ্চিত্র, একট বাংলা এবং একটা হিন্দি দূরদর্শন ধারাবাহিকের জন্যে সংগীত পরিচালনা করেছিলেন। যাইহোক, এই সময়ের মধ্যে তিনি এক প্রতিষ্ঠান, প্রিয় এবং শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্বে পরিণত হয়েছিলেন, যিনি ছিলেন নম্র এবং বন্ধুত্বপূর্ণ ভদ্রলোক। তার মানবধর্মী কার্যকলাপের মধ্যে অঙ্গীভূত ছিল পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলায় তার নিজের গাঁ বহড়ুতে তার প্রয়াত পিতার স্মরণে একটা হোমিয়োপ্যাথিক হাসপাতাল চালানো। তার সময়কালে তিনি আকাশবাণী, দূরদর্শন (টিভি) এবং চলন্ত অনুষ্ঠান/কনসার্টে নিয়মিত বৈশিষ্ট্যে অবিরত ছিলেন।
১৯৯০ খ্রিস্টাব্দের দশকের প্রথমদিকে রেকর্ড করা বাচিক শিল্পী গৌরী ঘোষের সঙ্গে এক দূরদর্শন সাক্ষাৎকারে হেমন্তের স্ত্রী বেলা মুখোপাধ্যায় পুনরুল্লেখ করেন যে, তিনি জানতেন না জীবৎকালে হেমন্ত কত সংখ্যক ব্যক্তি এবং পরিবারকে আর্থিক ও অন্যান্য ভাবে সাহায্য করেছেন; শুধুমাত্র তার চলে যাওয়ার পরেই সেসব ক্রমশ প্রকাশ পেয়েছিল।
১৯৮৭ খ্রিস্টাব্দে হেমন্ত ভারত সরকার কর্তৃক পদ্মভূষণ পুরস্কারের জন্যে মনোনীত হয়েছিলেন যেটা তিনি বিনীতভাবে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন, ইতিমধ্যে ১৯৭০ খ্রিস্টাব্দে তিনি একইভাবে পদ্মশ্রী পুরস্কার নিতে অস্বীকার করেছিলেন। ওই বছরই কলকাতার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে হেমন্তের সংগীত জীবনের ৫০ বর্ষপূর্তিতে তাঁকে এক রাজকীয় গণসংবর্ধনা দেওয়া হয়েছিল; তার ভক্ত এবং গুণগ্রাহীদের তরফ থেকে আর এক কিংবদন্তি সংগীত শিল্পী লতা মঙ্গেশকর তাঁকে স্মারক দিয়ে সংবর্ধনা জানান। তার বয়সের ছাপ পড়া গলাতেও তিনি ১৯৮৮ খ্রিস্টাব্দে লালন ফকির চলচ্চিত্রে গান গেয়ে শ্রেষ্ঠ পুরুষ গায়কের সম্মান পেয়েছিলেন।
১৯৮৯ খ্রিস্টাব্দে মাইকেল মধুসূদন পুরস্কার গ্রহণের জন্যে তথা একটা কনসার্টে সংগীত পরিবেশনের তাগিদে হেমন্ত বাংলাদেশের ঢাকা শহরে ভ্রমণ করেছিলেন। ওই সফরের অব্যবহিত পর ফিরেই ২৬ সেপ্টেম্বর তিনি আর একটা হৃদাঘাত পেয়েছিলেন এবং দক্ষিণ কলকাতার এক নার্সিং হোমে রাত ১১:১৫টায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।
হেমন্ত মুখোপাধ্যায় প্রায় দেড়শোটি বাংলা ছবিতে সুর দিয়েছেন, গান গেয়েছেন। তার প্রয়াণের প্রায় দুই দশক পরেও গ্রামোফোন কোম্পানি অফ ইন্ডিয়া প্রত্যেক বছর অন্তত একটা হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের অ্যালবাম প্রকাশ করে থাকে, বাণিজ্যিক সম্ভাব্যতা থাকায় তার পুরোনো গানের পুনর্প্রস্তুতকরণ করে। যে গান তিনি রেকর্ড করেছেন, যে সুর তিনি সৃষ্টি করেছেন, এবং অসংখ্য গায়ক বাংলা এবং ভারতে তার গায়কী ধরন অবিরত নকল/অনুকরণ করার ফলে তার উত্তরাধিকার এখনো জীবন্ত!
হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের গাওয়া অসংখ্য গানের মধ্যে জনপ্রিয় কিছু গান:
বছর | নাম |
---|---|
১৯৭২ | সিদ্ধার্থ |
সর্বমোট চলচ্চিত্রের সংখ্যা: ১৩৮
বছর | নাম | মন্তব্য |
---|---|---|
১৯৪৭ | অভিযাত্রী | |
পূর্বরাগ | ||
১৯৪৮ | ভুলি নাই | |
পদ্মা প্রমত্ত নদী | ||
প্রিয়তমা | ||
১৯৪৯ | দিনের পর দিন | |
'৪২ | ||
সন্দীপন পাঠশালা | ||
স্বামী | ||
১৯৫১ | জিঘাংসা | |
প্রতিদান | ||
১৯৫২ | স্বপ্ন ও সমাধি | খগেন দাশগুপ্তের সঙ্গে যুগ্মভাবে |
১৯৫৫ | শাপমোচন | |
১৯৫৬ | সূর্যমুখী | |
১৯৫৭ | শেষ পরিচয় | |
তাসের ঘর | ||
হারানো সুর | ||
১৯৫৮ | লুকোচুরি | |
শিকার | ||
সূর্যতোরণ | ||
যৌতুক | ||
নীল আকাশের নীচে | ||
১৯৫৯ | দীপ জ্বেলে যাই | |
খেলাঘর | ||
মরুতীর্থ হিংলাজ | ||
সোনার হরিণ | ||
ক্ষণিকের অতিথি | ||
১৯৬০ | বাইশে শ্রাবণ | |
গরিবের মেয়ে | ||
কুহক | ||
খোকাবাবুর প্রত্যাবর্তন | ||
শেষ পর্যন্ত | ||
১৯৬১ | দুই ভাই | |
অগ্নি সংস্কার | ||
মধ্য রাতের তারা | ||
পুনশ্চ | ||
সপ্তপদী | ||
সাথীহারা | ||
স্বরলিপি | ||
১৯৬২ | অতল জলের আহ্বান | |
আগুন | ||
দাদাঠাকুর | ||
হাঁসুলী বাঁকের উপকথা | ||
নবদিগন্ত | ||
১৯৬৩ | বাদশা | |
বর্ণচোরা | ||
এক টুকরো আগুন | ||
হাই হিল | ||
পলাতক | ||
সাত পাকে বাঁধা | ||
শেষ প্রহর | ||
ত্রিধারা | ||
১৯৬৪ | আরোহী | |
বিভাস | ||
নতুন তীর্থ | ||
প্রতিনিধি | ||
প্রভাতের রং | ||
স্বর্গ হতে বিদায় | ||
সিঁদুরে মেঘ | ||
১৯৬৫ | আলোর পিপাসা | |
একটুকু বাসা | ||
একটুকু ছোঁয়া লাগে | ||
সূর্যতপা | ||
১৯৬৬ | কাঁচ কাটা হিরে | |
মণিহার | ||
১৯৬৭ | বালিকা বধূ | |
দুষ্টু প্রজাপতি | ||
নায়িকা সংবাদ | ||
অজানা শপথ | ||
১৯৬৮ | অদ্বিতীয়া | |
বাঘিনি | ||
হংসমিথুন | ||
জীবন সঙ্গীত | ||
পঞ্চসর | ||
পরিশোধ | ||
১৯৬৯ | চেনা অচেনা | |
মন নিয়ে | ||
পরিণীতা | ||
শুক সারি | ||
১৯৭০ | দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন | |
দুটি মন | ||
১৯৭১ | কুহেলি | |
মাল্যদান | ||
নবরং | ||
নিমন্ত্রণ | ||
সংসার | ||
মহাবিপ্লবী অরবিন্দ | ||
১৯৭২ | অনিন্দিতা | |
শ্রীমান পৃথ্বীরাজ | ||
১৯৭৪ | বিকেলে ভোরের ফুল | |
ঠগিনি | ||
ফুলেশ্বরী | ||
১৯৭৫ | অগ্নীশ্বর | |
মোহন বাগানের মেয়ে | ||
নিশি মৃগয়া | ||
রাগ অনুরাগ | ||
সংসার সীমান্তে | ||
১৯৭৬ | বহ্নিশিখা | |
দত্তা | ||
শঙ্খবিষ | ||
প্রতিশ্রুতি | ||
১৯৭৭ | দিন আমাদের | |
হাতে রইল তিন | ||
মন্ত্রমুগ্ধ | ||
প্রতিমা | ||
প্রক্সি | ||
রজনী | ||
সানাই | ||
শেষ রক্ষা | ||
স্বাতী | ||
১৯৭৮ | গণদেবতা | |
নদী থেকে সাগরে | ||
প্রণয় পাশা | ||
১৯৭৯ | শহর থেকে দূরে | |
নৌকা ডুবি | ||
১৯৮০ | বন্ধন | |
দাদার কীর্তি | ||
পাকা দেখা | ||
পঙ্খীরাজ | ||
শেষ বিচার | ||
১৯৮১ | কপাল কুণ্ডলা | |
খেলার পুতুল | ||
মেঘমুক্তি | ||
সুবর্ণ গোলক | ||
১৯৮২ | ছোটো মা | |
ছুট | ||
উত্তর মেলেনি | ||
প্রতীক্ষা | ||
১৯৮৩ | অমর গীতি | |
রাজেশ্বরী | ||
১৯৮৪ | অগ্নি শুদ্ধি | |
অজান্তে | ||
বিষবৃক্ষ | ||
দিদি | ||
মধুবন | ||
সূর্যতৃষ্ণা | ||
১৯৮৫ | ভালোবাসা ভালোবাসা | |
টগরী | ||
১৯৮৬ | পথভোলা | |
আশীর্বাদ | ||
১৯৮৭ | প্রতিভা | |
টুনিবউ | ||
বোবা সানাই | ||
পরশমণি | ||
সুরের সাথী | ||
১৯৮৮ | আগমন | |
১৯৮৯ | ভালোবাসার রাত |
বছর | নাম |
---|---|
১৯৫২ | আনন্দ মঠ |
১৯৫৪ | ডাকু কি লেড়কি |
ফেরি | |
নাগিন | |
সম্রাট | |
শর্ত | |
১৯৫৫ | বহূ |
বন্দিশ | |
ভগবত মহিমা | |
জাগৃতি | |
লগন | |
১৯৫৬ | অনজান |
আরব কা সউদাগর | |
বন্ধন | |
দুর্গেশনন্দিনী | |
এক হি রাস্তা | |
হামারা ওয়তন | |
ইন্সপেক্টর | |
লালতেঁ | |
তাজ | |
১৯৫৭ | বাঁদি |
চম্পাকলি | |
এক ঝলক | |
হিল স্টেশন | |
কিতনা বদল গয়া ইনসান | |
মিস মেরি | |
পায়ল | |
ইয়াহুদি কি লেড়কি | |
ফ্যাশন | |
১৯৫৮ | দো মস্তানে |
পুলিশ | |
সাহারা | |
১৯৫৯ | চাঁদ |
হম ভি ইনসান হ্যায় | |
১৯৬০ | গার্ল ফেন্ড |
দুনিয়া ঝুকতি হ্যায় | |
১৯৬২ | বিস সাল বাদ |
মা বেটা | |
সাহিব বিবি অওর গুলাম | |
১৯৬৩ | বিন বাদল বরসাত |
১৯৬৪ | কোহরা |
১৯৬৫ | দো দিল |
ফরার | |
১৯৬৬ | বিবি অওর মকান |
সান্নাটা | |
অনুপমা | |
১৯৬৭ | মঝলি দিদি |
১৯৬৮ | দো দুনি চার |
১৯৬৯ | খামোশি |
রাহগীর | |
দেবী চৌধুরানী | |
১৯৭০ | উস রাত কে বাদ |
১৯৭২ | বিস সাল পহলে |
১৯৭৭ | দো ল্যাড়কে দোনো কড়কে |
১৯৭৯ | লভ ইন কানাডা |
বছর | নাম |
---|---|
১৯৬১ | আয়েল বসন্ত বাহার |
১৯৬৪ | বলমা বড়া নাদান |