হেলিওডোরাস স্তম্ভ হল খ্রিস্টপূর্ব ১১৩ অব্দে প্রাচীনমধ্য ভারতেরবিদিশায় (অধুনা ভারতীয় প্রজাতন্ত্রেরমধ্যপ্রদেশরাজ্যেরবেসনগর শহর) স্থাপিত একটি প্রস্তরস্তম্ভ।[১] স্তম্ভটিকে সাধারণভাবে একটি রাষ্ট্রদূত হেলিওদোরাস কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত "গরুড়স্তম্ভ" হিসেবে অভিহিত করা হয়। এই হেলিওদোরাস ছিলেন ভারতীয় রাজা ভগভদ্রের রাজ্যে প্রেরিত তক্ষশিলারইন্দো-গ্রিক রাজা আন্তিয়াল্কিদাস নিকেফোরোসের রাষ্ট্রদূত।[২] স্তম্ভগাত্রে ব্রাহ্মী লিপিতে উৎকীর্ণ উৎসর্গলিপিতে বাসুদেব অর্থাৎ কৃষ্ণকে দেবদেব অর্থাৎ পরমেশ্বর রূপে বন্দনা করা হয়েছে[৩][৪][৫][৬] এবং সেই অঞ্চলের ভারতীয় রাজাকে স্তুতিবাদ করা হয়েছে পরিত্রাতা ভগভদ্র নামে। হিন্দুধর্মে এই-জাতীয় স্তম্ভ ভূমি, অন্তরীক্ষ ও স্বর্গের সংযুক্তির প্রতীক; মনে করা হয় এটি ব্রহ্মাণ্ডের অক্ষ ধারণাটিরও দ্যোতক এবং সেই সঙ্গে এই ধরনের স্তম্ভ ঈশ্বরের বৈশ্বিক সামগ্রিকতার ভাবটিকেও প্রকাশ করে।[৩]
হেলিওদোরাস স্তম্ভ মধ্যপ্রদেশের রাজধানী ভোপাল থেকে ৬০ কিলোমিটার (৩৭ মাইল) উত্তরপূর্বে, সাঁচিরবৌদ্ধস্তুপটি থেকে ১১ কিলোমিটার (৬.৮ মাইল) এবং হিন্দু তীর্থউদয়গিরি থেকে ৪ কিলোমিটার (২.৫ মাইল) দু’টি নদীর সঙ্গমস্থলের কাছে অবস্থিত।[৭]
১৮৭৭ সালে আলেকজান্ডার কানিংহাম এই স্তম্ভটি আবিষ্কার করেন। বিশ শতকে দু’টি গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নতাত্ত্বিক খননকার্যের ফলে জানা যায় যে, স্তম্ভটি একটি প্রাচীন বাসুদেব মন্দির চত্বরে স্থাপিত হয়েছিল।[৪][৮][৯]ভগবদ্গীতা প্রভৃতি ধর্মগ্রন্থ ছাড়া এই হেলিওদোরাস স্তম্ভলিপি ও হাথীবাড়া ঘোসুণ্ডী শিলালিপিতেইবাসুদেব-কৃষ্ণের প্রতি ভক্তি তথা কার্ষ্ণি সম্প্রদায়ের কয়েকটি আদিতম লিখিত প্রমাণ পাওয়া যায়। এই অভিলিখনগুলিই এই-জাতীয় ধর্মমতের অস্তিত্বের প্রথম প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমাণ বলে পরিগণিত হয়।[১০][৬][১১][১২][১৩][১৪] বারজোর অ্যাভারি প্রমুখেরা এই স্তম্ভটিকে কোনও বিদেশির কার্ষ্ণি সম্প্রদায়ে ধর্মান্তরিত হওয়ার আদিতম প্রাপ্ত প্রমাণগুলির একটি মনে করেন।[৬][১৫] অবশ্য একটি বিকল্প ব্যাখ্যা অনুযায়ী, বিদেশি দেবতাদের প্রতি শ্রদ্ধানিবেদন গ্রিকদের কাছে এক যুক্তিসঙ্গত প্রথা ছিল। স্থানীয় রাজশক্তির সঙ্গে মৈত্রীস্থাপনের অঙ্গ হিসেবেই তারা এই কাজ করত।[১৬]
↑উদ্ধৃতি: "আন্তিয়াক্লিদাসের সময়কালে হেলিওদোরাস যেমন বাসুদেব বন্দনা করেছিলেন, তাকে হিন্দুধর্মে "ধর্মান্তরণ" বলে ধরে নেওয়া যায় না; বরং তা ছিল বিদেশিদের হাত থেকে নিজেদের ঐতিহ্যকে বাঁচিয়ে সর্বাধিক উপকারী স্থানীয় শক্তিটিকে অনুসন্ধানের একটি ফল মাত্র।" (মূল: "Venerating Vāsudeva, as did Heliodor in the time of Antialkidas, should not be regarded as a "conversion" to Hinduism, but rather as the result for a search for the most helpful local powers, upholding own traditions in a foreign garb.")ফক, হ্যারি। গ্রিক স্টাইল ডেডিকেশনস (ইংরেজি ভাষায়)। পৃষ্ঠা ৪০।