হ্যাকসো রিজ | |
---|---|
![]() প্রেক্ষাগৃহে মুক্তির পোস্টার | |
Hacksaw Ridge | |
পরিচালক | মেল গিবসন |
প্রযোজক |
|
চিত্রনাট্যকার | |
উৎস | টেরি বেনেডিক্ট কর্তৃক দ্য কন্সিয়েনশাস অবজেক্টর |
শ্রেষ্ঠাংশে | |
সুরকার | রুপার্ট গ্রেগসন-উইলিয়ামস |
চিত্রগ্রাহক | সিমন ডুগান |
সম্পাদক | জন গিলবার্ট |
পরিবেশক |
|
মুক্তি |
|
স্থিতিকাল | ১৩৯ মিনিট[২] |
দেশ |
|
ভাষা | ইংরেজি |
নির্মাণব্যয় | $৪০ মিলিয়ন[৩][৪] |
আয় | $১৮০.৪ মিলিয়ন[৫] |
হ্যাক-স রিজ মেল গিবসন পরিচালিত এবং অ্যান্ড্রু নাইট ও রবার্ট শেনকান রচিত ২০০৪ সালের জীবনীনির্ভর যুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র। এটি ২০০৪ সালের প্রামাণ্যচিত্র দ্য কন্সিয়েনশাস অবজেক্টর অবলম্বনে নির্মিত। চলচ্চিত্রটির গল্প মার্কিন প্রশান্তবাদী যুদ্ধকালীন চিকিৎসক ডেসমন্ড ডসের দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অভিজ্ঞতাকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠেছে, যিনি সেভেন্থ ডে অ্যাডভেন্টিস্ট খ্রিস্টান হিসাবে কোনও ধরনের অস্ত্র বা আগ্নেয়াস্ত্র বহন করতে বা ব্যবহার করতে অস্বীকার করেছিলেন। ওসাইনাবার যুদ্ধের সময় ডস তার দায়িত্বের পালনের জন্য প্রথম কন্সিয়েনশাস অবজেক্টর হিসেবে মেডেল অব অনার লাভ করেন। চলচ্চিত্রটিতে ডস চরিত্রে অভিনয় করেন অ্যান্ড্রু গারফিল্ড, এবং স্যাম ওয়ার্থিংটন, লুক ব্র্যাসি, টেরিজা পামার, হুগো ওয়েভিং, রেচেল গ্রিফিথস এবং ভিন্স ভন পার্শ্ব চরিত্রে অভিনয় করেন।
চলচ্চিত্রটি ২০১৬ সালের ৪ নভেম্বর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মুক্তি পেয়েছিল এবং বিশ্বজুড়ে ১৮০.৪ মিলিয়ন ডলার আয় করে। এতে গিবসনের নির্দেশনা এবং গারফিল্ডের অভিনয় সমালোচকদের প্রশংসা অর্জন করে। এই গিবসনের ঘিরে বিভিন্ন বিতর্কের কারণে তার কর্মজীবন পতনের দিকে যাচ্ছিল, ঠিক তখন তিনি এই চলচ্চিত্র দিয়ে পুনরায় প্রশংসিত হন। আমেরিকান ফিল্ম ইনস্টিটিউট হ্যাকসো রিজকে বর্ষসেরা দশটি চলচ্চিত্রের মধ্যে একটি হিসেবে নির্বাচন করে। চলচ্চিত্রটি অসংখ্য পুরস্কার এবং মনোনয়ন লাভ করে। এটি ৮৯তম একাডেমি পুরস্কারে শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র, শ্রেষ্ঠ পরিচালনা, গারফিল্ড তার অভিনয়ের জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেতা এবং শ্রেষ্ঠ শব্দ সম্পাদনা বিভাগে মনোনয়ন লাভ করে এবং শ্রেষ্ঠ শব্দ মিশ্রণ ও শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র সম্পাদনা বিভাগে পুরস্কৃত হয়।[৬] এটি শ্রেষ্ঠ নাট্যধর্মী চলচ্চিত্র, শ্রেষ্ঠ পরিচালক ও শ্রেষ্ঠ অভিনেতা বিভাগে গোল্ডেন গ্লোব পুরস্কারের মনোনয়ন লাভ করে;[৭] এবং ১২টি এএসিটিএ পুরস্কারের মনোনয়ন লাভ করে, তন্মধ্যে শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র, শ্রেষ্ঠ পরিচালনা, শ্রেষ্ঠ মৌলিক চিত্রনাট্য, শ্রেষ্ঠ অভিনেতা ও শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেতা বিভাগে পুরস্কৃত হয়।
১৯২৫ সালে ভার্জিনিয়ার লিঞ্চবার্গে যুবক ডেসমন্ড ডস হাতাহাতি করতে গিয়ে তার ভাইকে প্রায় হত্যা করে ফেলেছিল। এই ঘটনা এবং সেভেন্থ-ডে অ্যাডভেন্টিস্ট হিসেবে লালিত-পালিত হওয়া ডেসমন্ড "কাউকে হত্যা করবে না" এই বিশ্বাস ধারণ করে। ১৫ বছর পর ডস একজন আহত ব্যক্তিকে হাসপাতালে নিয়ে যায় এবং ডরথি শুট নামে এক সেবিকার সাথে পরিচিত হয়। তাদের মধ্যে প্রণয়ের সম্পর্ক শুরু হয় এবং ডস ডরথিকে চিকিৎসা সেবায় তার আগ্রহের কথা জানায়।
জাপানিরা পার্ল হারবার আক্রমণ করলে ডস যুদ্ধাহতদের সেবা প্রদানের লক্ষ্যে মার্কিন সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। তার বাবা টম একজন সাবেক যোদ্ধা। তিনি তার সিদ্ধান্তে মর্মাহত হন। ফোর্ট জ্যাকসন ছাড়ার আগে ডেসমন্ড ডরথিকে বিয়ের প্রস্তাব দেয় এবং ডরথি সেই প্রস্তাব গ্রহণ করে।
ডসকে সার্জেন্ট হাওয়েলের অধীনে মৌলিক প্রশিক্ষণের জন্য পাঠানো হয়। সে দৈহিক দিক থেকে পাশ করে যায়, কিন্তু রাইফেল গ্রহণে অস্বীকৃতি ও শনিবারে প্রশিক্ষণ থেকে বিরত থাকার কারণে তার বাকি সহযোদ্ধাদের কাছ থেকে আলাদা হয়ে পড়ে। হাওয়েল ও ক্যাপ্টেন গ্লোভার ডসকে তার মানসিক কারণে বাদ দিতে চান কিন্তু ধারা ৮-এর বদৌলতে নিষ্কৃতি পান, কারণ ডসের ধর্মীয় বিশ্বাস মানসিক অসুস্থতা নয়। তারা ডসকে প্রচুর পরিশ্রম করিয়ে নিদারুণ যন্ত্রণা দিতে শুরু করে যেন ডস নিজেই চলে যায়। এক রাতে তার সহযোদ্ধারা তাকে মারধোর করলেও সে কারও নাম প্রকাশ করে না এবং প্রশিক্ষণ চালিয়ে যায়।
ডসের ইউনিট মৌলিক প্রশিক্ষণ সমাপ্ত করে। এসময় ডস ডরথিকে বিয়ে করতে চায়। কিন্তু বন্দুক বহন করতে অস্বীকৃতি জানালে তাকে অবাধ্যতার জন্য গ্রেফতার করা হয়। ক্যাপ্টেন গ্লোভার ও ডরথি জেলে ডসকে দেখতে যায় এবং তাকে তার অপরাধ স্বীকার করতে বলে যাতে কোন প্রকার মামলা ব্যতীত সে মুক্ত হতে পারে। কিন্তু ডস তার ধর্মীয় বিশ্বাসকে অবজ্ঞা করতে অস্বীকৃতি জানায়। কোর্ট মার্শালে ডস নিজেকে অপরাধী বলতে অস্বীকৃতি জানায়, কিন্তু তার সাজা শুনানোর আগে তার বাবা তার সাবেক কমান্ডিং অফিসারের (বর্তমানে বিগ্রেডিয়ার জেনারেল) নিকট থেকে একটি চিঠি নিয়ে আসে এবং জানায় মার্কিন সংবিধান তার পুত্রের শান্তিবাদকে সমর্থন জানায়। ডসের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ খালাস হয় এবং সে ডরথিকে বিয়ে করে।
ডসের ইউনিটকে ৭৭তম পদাতিক বিভাগের সাথে নিযুক্ত করা হয় এবং তাদের প্রশান্ত মহাসাগরীয় যুদ্ধক্ষেত্রে পাঠানো হয়। ওকিনাওয়ার যুদ্ধে ডসের ইউনিটকে জানানো হয় যে ৯৬তম পদাতিক বিভাগকে অব্যহতি দেওয়া হবে, তারা মেডা এস্কার্পমেন্ট ("হ্যাকসো রিজ") দখলে নিয়োজিত ছিল। শুরুর যুদ্ধে দুই পক্ষেরই বিপুল ক্ষয়ক্ষতি হয়। ডস তার স্কোয়াডমেট স্মিটির জীবন বাঁচায়। রাতে মার্কিন ক্যাম্পে ডস স্মিটিকে বলে আগ্নেয়াস্ত্রের প্রতি তার বিরাগের কারণ হল একদিন তার বাবা মদ্যপ অবস্থায় তার মাকে পিস্তল দিয়ে হুমকি দিলে সে তার বাবাকে প্রায় গুলি করে দিচ্ছিল। স্মিটি তার সাহসের প্রতি সন্দেহের জন্য ক্ষমা চায় এবং তাদের মধ্যকার বিরোধ মিটমাট করে।
পরের দিন সকালে জাপানিরা ব্যাপক প্রতি-আক্রমণ করে এবং মার্কিনীদের এস্কার্পমেন্ট ত্যাগ করতে বাধ্য করে। স্মিটি এই আক্রমণে মারা যায় এবং হাওয়েল ও ডসের স্কোয়াডের কয়েকজন যুদ্ধক্ষেত্রে আহত অবস্থায় রয়ে যায়। ডস কয়েকজন মুমূর্ষু সৈনিকের চিৎকার শুনতে পায় এবং তাদের বাঁচাতে ফিরে আসে। সে আহতদের পাহাড়ের চূড়ায় নিয়ে যায় এবং দড়ির সাহায্যে নিচে নামিয়ে দিয়ে আসে ও প্রতিবার আরও একজনকে বাঁচানোর প্রার্থনা করে। ডজন খানেক আহত সৈনিক ফিরে আসলে পাহাড়ের নিচে অবস্থানরত সৈনিকেরা বিস্মিত হয় কারণ তারা ধারণা করেছিল তারা মারা গেছেন। যুদ্ধবিরতে ডস হাওয়েলকে উদ্ধার করে এবং দুজনে হ্যাকসোতে শত্রুর গোলাবর্ষণ থেকে পালিয়ে আসে।
ক্যাপ্টেন গ্লোভার ডসের ধর্মীয় বিশ্বাসকে কাপুরুষত্ব বলার জন্য তার কাছে ক্ষমা চায় এবং জানায় তারা শনিবারে রিজ পুনঃদখলের জন্য ফিরে আসবে কিন্তু তাকে ছাড়া পরবর্তী আক্রমণে যাবে না। ডস তাতে সম্মতি জানায়, কিন্তু তার সাবাথ প্রার্থনা শেষ হওয়া অবধি সেই অপারেশন স্থগিত থাকে। জাপানি সেনাবাহিনীর ওত পেতে থাকা অতর্কিত আক্রমণের হাত থেকে ডস গ্লোভার ও অন্যান্যদের বাঁচায়। ডস গ্রেনেড বিস্ফোরণে আহত হয়, কিন্তু তারা এই যুদ্ধে জয় লাভ করে। ডস পাহাড়ের চূড়ায় আরোহণ করে এবং ডরথির দেওয়া বাইবেল আঁকড়ে ধরে।
চলচ্চিত্রটি ডসের আসল ছবি এবং হ্যাকসো রিজ থেকে ৭৫ জন সৈনিককে বাঁচানোর জন্য রাষ্ট্রপতি হ্যারি এস. ট্রুম্যানের কাছ থেকে মেডেল অব অনার গ্রহণের ফুটেজ দেখানো হয়। ডসের স্ত্রী ডরথি ১৯৯১ সালে মারা যায়। ডস ২০১৬ সালের ২৩শে মার্চ ৮৭ বছর বয়সে মারা যায়।