অগ্নিকম্বল একটি সুরক্ষা ব্যবস্থা আগুন নিভানোর জন্য ব্যবহার করা হয়। এটি অগ্নি প্রতিরোধকারী উপাদান দিয়ে তৈরি হয় এবং এই অগ্নিকম্বলকে জ্বলন্ত আগুনের উপর চাপা দিয়ে, আগুন নেভানো হয়।
ছোটো আকারের অগ্নিকম্বল যা রান্নাঘরে এবং গৃহস্থালির কাজে ব্যবহার হয়, সেগুলি প্রধানত ফাইবার গ্লাস অথবা কেভ্লার জাতীয় উপাদান দিয়ে তৈরি হয় এবং এগুলিকে সহজেই ভাজ করে খুব স্বল্প জায়গার মধ্যে সঞ্চয় করে রাখা যায়।
অগ্নি নিরোধক যন্ত্র এবং অগ্নিকম্বল উভয়েই আগুন থেকে সুরক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ব্যবস্থা হিসাবে ব্যবহার হয়। এই আগুনপ্রতিরোধী কম্বল ৯০০ ডিগ্রি অবধি তাপমাত্রায় আগুন থেকে সুরক্ষা দিতে সক্ষম।[quantify][তথ্যসূত্র প্রয়োজন] এই কম্বল আগুনের সঙ্গে বাতাসের অক্সিজেনের সংযোগ ঘটতে বাধা দেয় যার ফলে আগুন নিভে যায়। অগ্নিকম্বলের কার্যপ্রণালীর অত্যন্ত সরল হওয়ার জন্য যারা অগ্নি নিরোধক যন্ত্রের ব্যবহার সম্পরকে অজ্ঞ, তাদের কাছে এই কম্বল ব্যবহার অত্যন্ত সুবিধাজনক।
গবেষণাগার এবং শিল্পে ব্যবহৃত বড়ো অগ্নি কম্বলগুলি সাধারনতঃ পশম জাতীয় উপাদান অথবা কখনও কখনও অগ্নিশিখা প্রতিবন্ধী তরল তৈরি হয়। এই কম্বলগুলি সাধারণত এক বিশেষ উল্লম্ব পাত্রে রাখা হয় যাতে সহজেই সেটিকে বের করা যায় এবং এমন ব্যক্তির চারপাশে জড়িয়ে দেওয়া যায় যার পোশাক আগুন লেগেছে।
কিছু কিছু পুরাতন অগ্নিকম্বলে অ্যাসবেসটস তন্তু ব্যবহার হত যা এনএফপিএ দ্বারা সঙ্গত নয়। পুরানো ক্ষয়িষ্ণু সরঞ্জামে ব্যবহার করার সময় একটি বিপত্তি ডেকে আনতে পারে।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
২০১৩ এবং ২০১৪ সালে একটি সমীক্ষার পর নেদারল্যান্ড খাদ্য ও গ্রাহক পণ্য সুরক্ষা কর্তৃপক্ষ -এর পক্ষ থেকে একটি ঘোষণা জারি করা হয় যে তেল বা অন্য কোন স্নেহপদার্থ জনিত আগুন নিভানোর সময় অগ্নিকম্বল ব্যবহার করা উচিত নয়, যদিও অগ্নিকম্বল ব্যবহারের নির্দেশাবলীতে দেওয়া আছে যে তা, তৈলপদার্থ জনিত আগুনে ব্যবহার করা যেতে পারে।[১][২][৩] বিএস এন ১৮৬৯ দ্বারা পরীক্ষিত অগ্নিকম্বলও এই শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত।[৪] সমীক্ষায় ব্যবহৃত ২২ টি কম্বলের মধ্যে ১৬ টি কম্বলে আগুন ধরে যায়, বাকি ৬ টি কম্বল প্রাথমিকভাবে সুরক্ষা প্রদান করলেও যখন ১৭ মিনিট পর সেই ৬ টি কম্বলকে স্থানান্তরিত করা হয় তখন আবার আগুন জ্বলে ওঠে। ডাচ অগ্নি প্রজ্জ্বলন (ফায়ার বার্ন) সংস্থা তাদের তৈলপদার্থ জনিত আগুন নিভানোর সময় অগ্নিকম্বল ব্যবহারের জন্য বেশ কয়েকটি দুর্ঘটনার কথা জানান দেয়।[৫] গ্রাহকদের তাদের সংগৃহীত অগ্নিকম্বল ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয় যাতে তার ব্যবহারকারী নির্দেশ সংশোধন, বিশেষত তৈলপদার্থ জনিত আগুনে তার ব্যবহার সম্পর্কে সতর্কতা সম্পর্কিত নির্দেশ যুক্ত করা সম্ভব হয়। নতুন প্রস্তুত অগ্নিকম্বলগুলিতে স্টিকারের পরিবর্তে ব্যবহারের নির্দেশ পুনাপুঙ্খভাবে খোদিত থাকে।[৬]
অগ্নি প্রজ্জ্বলিত হওয়ার জন্য; তাপ, জ্বালানী এবং অক্সিজেন এই তিনটি উপাদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং এই তিন উপাদানকে একত্রে অগ্নি ত্রিকোণও বলা হয়ে থাকে। অগ্নিকম্বলের কাজ হল আগুনে অক্সিজেন সরবরাহ প্রতিরোধ করা যার ফলে আগুন নিভে যায়। অগ্নিকম্বলকে প্রজ্বলিত আগুনের চারপাশে কোন কঠিন তলের সাথে ভালভাবে আবদ্ধ করে দেওয়া হয়। অগ্নিকম্বলের দুটি প্রান্তকে তার আবরনের বাইরের অংশে সামান্য বের করে রাখা হয়। এই প্রান্তদুটিকে টেনে ধরে অগ্নিকম্বলকে তার আবরন বা থলে থেকে বাইরে বের করে আনা হয়। অগ্নিকম্বলের এই বিশেষ প্রান্তদুটি সাধারণত কম্বলের উপর দিকের অংশে থাকে এবং এই প্রান্তদুটি ব্যবহারকারী ব্যক্তি তার হাতের উপর জড়িয়ে আগুনের সরাসরি স্পর্শ থেকে নিজেকে বাঁচাতে পারেন। এরপর অগ্নিকম্বলকে আগুনের উপর চাপা দিয়ে আগুনে অক্সিজেন সরবরাহে বাঁধা দিয়ে আগুন নেভান যায়। শরিরের কোন অংশে আগুন লাগলেও এই পদ্ধতিতে আগুন নেভান যায়। আগুনের উপর চাপা দেওয়ার অগ্নিকম্বলকে প্রজ্বলিত আগুনের চারপাশে কোন কঠিন তলের সাথে এমনভাবে আবদ্ধ করে দেওয়া জরুরি যাতে বাইরের হাওয়া প্রবেশ না করতে পারে এবং আগুনে কোনভাবেই অক্সিজেন সরবরাহ না হয়।[৭]
ফায়ার ইন্ডাস্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন (এফআইএ) "বিএস এন ১৮৬৯ তে তৈরি অগ্নিকম্বলগুলির সম্পাদন এবং রক্ষণাবেক্ষণের জন্য নিয়মাবলী" প্রকাশ করেছে।[৮] এই নিয়মাবলী অনুসারে অগ্নিকম্বলের অধিকারী ব্যক্তি উপযুক্ত পরিষেবা সরবরাহকারিদের সুপারিশে অগ্নিকম্বলের বার্ষিক রক্ষণাবেক্ষণ সুনিশ্চিত করবে। এই নিয়মাবলীতে এটাও উল্লেখ করা আছে যে ৭ বছর অন্তর অন্তর অগ্নিকম্বল পরিবর্তন করা উচিত অথবা এই সাপেক্ষে অগ্নিকম্বল প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের পরামর্শ গ্রহণ করা উচিত।