অতরঙ্গি রে | |
---|---|
পরিচালক | আনন্দ এল. রাই |
প্রযোজক |
|
রচয়িতা | হিমাংশু শর্মা |
শ্রেষ্ঠাংশে | |
সুরকার | এ আর রহমান |
চিত্রগ্রাহক | পঙ্কজ কুমার |
সম্পাদক | হেমল কোঠারী |
প্রযোজনা কোম্পানি |
|
পরিবেশক | ডিজনি+ হটস্টার |
মুক্তি |
|
স্থিতিকাল | ১৩৭ মিনিট |
দেশ | ভারত |
ভাষা | হিন্দি |
নির্মাণব্যয় | ৪০ কোটি |
অতরঙ্গি রে (হিন্দি: अतरंगी रे) ২০২১ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত আনন্দ এল. রাই পরিচালিত একটি ভারতীয় হিন্দি ভাষার রোম্যান্টিক নাট্যধর্মী চলচ্চিত্র।[১] এটি রচনা করেছেন হিমাংশু শর্মা এবং প্রযোজনা করেছেন ভূষণ কুমার এবং কৃষাণ কুমার। প্রযোজনা সংস্থাগুলি হল টি-সিরিজ, কালার ইয়েলো প্রোডাকশনস এবং কেপ অফ গুড ফিল্মস। ছবিটিতে রিংকু (সারা আলি খান) নামে একজন বাকপটু মেয়ের গল্প বলা হয়েছে, যিনি সাজ্জাদ (অক্ষয় কুমার) নামে একজন কাল্পনিক ব্যক্তির প্রেমে পড়েছেন। যদিও বিশু (ধনুষ) নামে অন্য একজনের সাথে তার জোরপূর্বক বিয়ে হয়ে যায় এবং সাজ্জাদের সাথে পূনর্মিলিত হবার জের ধরে তিনি বাস্তবতার জ্ঞান ফিরে পান। ছবিটির সুরারোপ এবং গান রচনা করেছেন এ আর রহমান, আর গানের কথা লিখেছেন ইরশাদ কামিল। সাউন্ডট্র্যাক অ্যালবামটি ৬ ডিসেম্বর ২০২১-এ মুক্তি পায়।
আনন্দ এল রাই ২০১৪ সালে রাঞ্ঝনা মুক্তির পর এই চলচ্চিত্রটির প্রথম ধারনাটি দিয়েছিলেন। তিনি হিমাংশু শর্মার সাথে এর চিত্রনাট্য রচনা করেন। তিনি চলচ্চিত্রটিতে মানুষের আবেগ এবং প্রেমের জটিলতাকে ফুটিয়ে তোলেন। চলচ্চিত্রটি ২০২০ সালের মার্চ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে বারাণসী, বিহার, দিল্লি, আগ্রা এবং মুম্বই জুড়ে শুটিং করা হয়েছিল। ভারতে কভিড-১৯ মহামারীর জন্য ছয় মাস এর চিত্রগ্রহণ বন্ধ ছিল। চলচ্চিত্রটি ২৪ ডিসেম্বর ২০২১- এ ডিজনি+ হটস্টারে মুক্তি পায় সমালোচকদের মিশ্র-প্রতিক্রিয়া জানার জন্য, যারা মৌলিক কাহিনী এবং প্রধান চরিত্রের অভিনয়ের প্রশংসা করে থাকে। যাইহোক, অনেকেই এর কাহিনীকে অসংলগ্ন এবং অস্পষ্ট বলেছেন এবং কেউ কেউ এর দুর্বল চিত্রনাট্যের কারনে বিভ্রান্তও হয়েছেন।
রিংকু সূর্যবংশী তার পুরোনো প্রেমিকের সাথে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করার সময় সিওয়ান জংশন রেল স্টেশনে তার পরিবারের গুন্ডারা তাকে ধাওয়া করে। বিশু এবং তার বন্ধু মধুসুধন (এমএস বলে ডাকা হয়) রিংকুকে তাদের দিকে বোতল ছুঁড়তে দেখে। তাকে তার মামারা বাড়িতে নিয়ে আসে এবং তার মাতামহ দুলহায়েন তাকে মারধর করে। যখন রিংকু তার ইচ্ছা প্রকাশ করে তখন দুলহায়েন রিংকুর এক মামাকে বলে যেখান থেকেই হোক একটি ছেলেকে তুলে এনে তার সাথে বিয়ে দিয়ে দিতে।
তার বিয়ের প্রস্তুতির সময় রিংকুকে গুন্ডারা অর্ধচেতন করে দেয় এবং বিশুকে অপহরণ করে এবং বর হিসাবে নিয়ে আসে। যদিও তাদের লক্ষ্য ছিল মধুসূদন। বিশু এবং রিংকু নয়াদিল্লিতে চলে আসে। এখানে এসে তারা বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নেয়, কারণ বিশু দুই দিনের মধ্যে তার বাগদত্তা মন্দাকিনির (ডাকনাম ম্যান্ডি) সাথে বিয়ে করবে এবং রিংকুর প্রেমিক সাজ্জাদ তার সাথে দিল্লিতে দেখা করতে চায়। রিংকুর ভাষ্যমতে সাজ্জাদ একজন বহুমুখী অভিনয়শিল্পী।[২] সে দক্ষিণ আফ্রিকায় গিয়েছে এবং ১০ দিনের মধ্যেই চলে আসবে। রিংকু, বিশু এবং তার বন্ধুরা বিয়ের জন্য মাদুরাই পৌঁছে। কিন্তু ম্যান্ডির বন্ধুরা বিশু ও রিংকুর জোরপূর্বক বিয়ের একটি ট্রেন্ডিং ভিডিও ম্যান্ডিকে দেখায় এবং বিয়ে ভেঙ্গে যায়। তবে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পূর্ণ হয়ে গিয়েছিল। তারা দিল্লিতে ফিরে আসে। ম্যান্ডির সাথে তার সাম্প্রতিক বিচ্ছেদের কারণে বিশুর রিংকুর জন্য অনুভূতি সৃষ্টি হয়। কিন্তু রিংকু বলে সাজ্জাদ একটি হাতিতে চড়ে ফিরে এসেছে। মধুসূদন রিংকুর সাথে দেখা করে বুঝতে পারে যে, সাজ্জাদ হল একটি কাল্পনিক চরিত্র এবং রিংকু মানসিকভাবে অসুস্থ। সাজ্জাদের সাথে চলে যাবার আগমুহুর্তে বিশু রিংকুকে বিবাহবিচ্ছেদের বাহানায় রেখে দেয়।
মধুসূদন বিশুকে বলে, রিংকুর অপরাধবোধই তার মন থেকে কাল্পনিক সাজ্জাদকে মুছে ফেলতে পারে। তারা তাকে বিশুর প্রেমে পড়ার জন্য ওষুধ খাওয়ায় এবং সাজ্জাদকে দেখতে পাওয়ার অভিনয় করে। রিংকু প্রতিবার ডোজ নেবার সময় সাজ্জাদ কোনো না কোনো সমস্যায় ভুগতে থাকে। বিশু রিংকুর কাছে প্রেম প্রকাশ করার পর বিশু সাজ্জাদের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে। কিন্তু রিংকু দাবী করে যে, সাজ্জাদ তাজমহলকে উধাও করে দেখাবে। রিংকু, বিশু এবং মধুসূদন আগ্রায় যায়। সাজ্জাদকে একটি কাল্পনিক চরিত্র জানা সত্ত্বেও নাটকটির প্রতিক্রিয়া জানানোর জন্য উপস্থিত জনতাকে রাজি করায়। পরবর্তিতে রিংকু কল্পনা করে যে, সাজ্জাদ মারা যাচ্ছে। যেহেতু বিশু, মধুসূদন এবং তার বন্ধুরা সার্জন ছিল, তাই তারা সাজ্জাদকে "সার্জিক্যাল রুমে" নিয়ে যাওয়ার মত অভিনয় করে। তারা রিংকুকে এটা বলার ইচ্ছা করে যে, সাজ্জাদ মারা গেছে। তবে বিশু এতে রাজি হয়না। পরের দিন বিবাহবিচ্ছেদের জন্য আদালতে গিয়ে কাগজে সাক্ষর করার সময় রিংকু বলে যে, সে প্রেমিক (সাজ্জাদ) এবং স্বামী (বিশু) উভয়কেই চায়।
বিশু সাজ্জাদের সাথে দেখা করতে রিংকুকে নয়াদিল্লি রেল স্টেশনে নিয়ে যায়। সাজ্জাদ তাকে বলে যে, সে (রিংকু) তার প্রাণের সঙ্গীকে (বিশু) খুঁজে পেয়েছে। তার (সাজ্জাদ) চলে যাবার পর তাকে (রিংকু) অবশ্যই বিশুর নিকট যেতে হবে।
তারপর একটি ফ্ল্যাশব্যাকে দেখা যায় যে, প্রকৃত যেই সাজ্জাদ ছিলেন, তাকে রিংকুর মা বিয়ে করতে চেয়েছিলেন। যদিও তার বাবা-মা ধর্মীয় কারণে তাকে অপছন্দ করত। তাদের একটি সন্তানও ছিল। সে তার বাবার সাথে দেখা করার জন্য মায়ের সাথে থিয়েটারে যেত। ফায়ারওয়াকিং (আগুনের মধ্যে হাটা)-এর অভিনয়ের সময় রিংকুর নানী এবং মামারা জাদুর জ্বালানির স্থানে আসল আগুন রেখে দেয়, ফলে সাজ্জাদ দগ্ধ হয়ে যায়। এদিকে রিংকুর মা এবং রিংকু এসব দেখছিল। রিংকুর মা যখন বুঝতে পারেন যে, সে মারা যাচ্ছে তখন তিনিও সাজ্জাদের সাথে ফায়ারওয়াকের উপর ঝাঁপিয়ে পড়েন এবং উভয়েই মারা যান।
তারপর থেকেই রিংকুর মনে একটি কাল্পনিক সাজ্জাদ চরিত্রের সৃষ্টি হয়েছিল এবং এটি থাকে তার প্রাপ্তবয়স্ক হবার আগপর্যন্ত। বিশুকে দেখতে পাওয়ার পর তার মন থেকে এটি মুছে যায় এবং বিশু দেখতে পায় যে, তার স্ত্রী ফিরে এসেছে এবং তাদের পূনর্মিলন হয়।
চলচ্চিত্রটিতে অভিনয় করেন:[৩]
আনুষ্ঠানিক ঘোষণা অনুযায়ী[৪] চলচ্চিত্রটি ভালোবাসা দিবস (১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১) উপলক্ষ্যে মুক্তির পরিকল্পনা করা হয়েছিল।[৫][৬] তবে ভারতে কভিড-১৯ লকডাউনের কারণে প্রস্তুতি বিলম্ব হওয়ায় নির্মাতাগণ ৬ আগস্ট ২০২১ পর্যন্ত মুক্তি স্থগিত করতে বাধ্য হন।[৭][৮] মহারাষ্ট্রে প্রেক্ষাগৃহ পুনরায় খোলার বিষয়ে অনিশ্চয়তার কারণে পরিকল্পনা অনুযায়ী এটি মুক্তি পায়নি। ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে জানা যায় যে, ২০২১ সালের অক্টোবর থেকে মহারাষ্ট্রে প্রেক্ষাগৃহ ব্যবসা পুনরায় শুরু হওয়া সত্ত্বেও ছবিটি সরাসরি অনলাইন প্ল্যাটফর্মে মুক্তি পেতে পারে।[৯]
২০২১ সালের নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে প্রযোজকরা ঘোষণা করেন যে, ক্রিসমাস ইভ (২৪ ডিসেম্বর ২০২১) উপলক্ষে ওটিটি প্ল্যাটফর্ম ডিজনি+ হটস্টারে ছবি মুক্তি পাবে।[১০][১১]
ছবিটি তামিল ভাষায় ডাব করা হয়েছে এবং গালাত্তা কল্যাণম শিরোনামে মুক্তি পেয়েছে। এই নামটি নেওয়া হয়েছে ১৯৬৮ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত শিবাজি গণেশনের গালাত্তা কল্যাণম নামক একটি চলচ্চিত্র থেকে।[১২]
হিন্দি সংস্করণের প্রিমিয়ারের সাথে সামঞ্জস্য রেখে একই দিনে ছবিটির তামিল সংস্করণও মুক্তি পায়।[১২]