অতিক্রিয়াশীল সহমহামারী (ইংরেজি: syndemic বা Synergistic epidemic) বলতে কোনও জনসমষ্টির মধ্যে একই স্থানে ও একই সময়ে বিদ্যমান দুই বা ততোধিক মহামারীর গুচ্ছবদ্ধতা ও আন্তঃক্রিয়ার পরিণামে মাত্রাতিরিক্ত রোগীর সৃষ্টি হবার ঘটনাকে বোঝায়। জৈবিক দৃষ্টিকোণ থেকে কোনও জনসমষ্টির বহুসংখ্যক রোগীর মাঝে আন্তঃক্রিয়া ঘটলে এবং এসব ব্যক্তি গুচ্ছবদ্ধ হয়ে বসবাস করলে তাদের মধ্যে অনেকের দেহে দুই বা ততোধিক রোগের উপস্থিতি দেখা দেয়, যে ব্যাপারটিকে অতিক্রিয়াশীল মহামারী বলে নির্দেশ করা যায়। আবার, জৈবিক আন্তঃক্রিয়া ও গুচ্ছীভবনের বাইরেও সামাজিক ও পরিবেশগত কারণেও (যেমন দারিদ্র্য, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, জলবায়ু পরিবর্তন, বায়ুদূষণ, স্বাস্থ্যসেবায় আর্থসামাজিক বৈষম্য, সামাজিক কাঠামোগত সহিংসতা, ইত্যাদি) অতিক্রিয়াশীল সহমহামারীর সৃষ্টি হতে পারে।[১]
মার্কিন চিকিৎসা নৃবিজ্ঞানী মেরিল সিঙার ১৯৯০-এর দশকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অবহেলিত জনসম্প্রদায়ে এইডস ও যক্ষ্মা রোগের মহামারীর সম্মিলনে সৃষ্ট অবস্থাটির বর্ণনা দিতে গিয়ে অতিক্রিয়াশীল সহমহামারী পরিভাষাটি ব্যবহার করেন। তিনি মহামারী সৃষ্টিকারী প্রতিটি রোগকে সংকীর্ণ দৃষ্টিকোণ থেকে আলাদা করে না দেখে এগুলিকে জৈবিক, সামাজিক ও পরিবেশগত দৃষ্টিভঙ্গি থেকে সামগ্রিকভাবে পর্যবেক্ষণ করে জনস্বাস্থ্যের উপর এদের সম্মিলিত নেতিবাচক প্রভাবের উপরে জোর দেন। দুইটি মারাত্মক রোগ একই সময়ে হলেই সেটিকে অতিক্রিয়াশীল সহমহামারী বলা হয় না। অতিক্রিয়াশীল সহমহামারীর আলোচনাতে আলোচ্য সম্প্রদায়ে বিভিন্ন অস্বাস্থ্যকর অবস্থা ও রোগের ঘনীভবন, এগুলির মধ্যকার আন্তঃক্রিয়া এবং একই সাথে এগুলির নেপথ্যের আর্থ-সামাজিক-পরিবেশগত কারণগুলি একত্রে আলোচিত হয় এবং এগুলির সামষ্টিক নেতিবাচক প্রভাব অধ্যয়ন করা হয়।[১]
উদাহরণস্বরূপ, করোনাভাইরাস রোগ ২০১৯ (কোভিড-১৯) একটি সংক্রামক ব্যাধি হলেও এতে সেসব রোগীর মৃত্যুর ঝুঁকি বেশি, যাদের পূর্ব থেকেই উচ্চ রক্তচাপ, মেদবাহূল্য বা অতিস্থূলতা, মধুমেহ রোগ, হৃৎরক্তবাহিকার রোগ, দীর্ঘমেয়াদী শ্বাসযন্ত্রীয় রোগ ও কর্কট রোগ বা ক্যান্সার বিদ্যমান। এর সাথে আর্থ-সামাজিক বৈষম্যজনিত কারণে সঠিক সময়ে সঠিক স্বাস্থ্যসেবার স্বল্প খরচে সহজলভ্যতার অভাবও বিশেষ বিশেষ জনসম্প্রদায়ের রোগীদের মৃত্যুর ঝুঁকি বহুগুণে বাড়িয়ে দেয়। এজন্য কোনও কোনও বিশেষজ্ঞ করোনাভাইরাস রোগকে একটি স্বতন্ত্র বৈশ্বিক মহামারী হিসেবে না দেখে এটিকে একটি বৈশ্বিক অতিক্রিয়াশীল সহমহামারীর অংশ হিসেবে গণ্য করা উচিত বলে মনে করেন।[২]