গঠিত | ১৮৯৯ |
---|---|
উদ্দেশ্য | অদ্বৈত বেদান্ত চর্চা, জনকল্যাণ, ধর্ম-সংক্রান্ত গবেষণা, আধ্যাত্মিকতা |
সদরদপ্তর | বেলুড় মঠ |
যে অঞ্চলে কাজ করে | বিশ্বব্যাপী |
ওয়েবসাইট | Advaita Ashrama |
অদ্বৈত আশ্রম, মায়াবতী রামকৃষ্ণ মঠের একটি শাখা। ১৮৯৯ সালের ১৯ মার্চ স্বামী বিবেকানন্দের নির্দেশে তার দুই শিষ্য ক্যাপ্টেন জেমস হেনরি সেভিয়ার ও তার স্ত্রী শার্লট সেভিয়ার অদ্বৈত আশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন।[২][৩] অদ্বৈত আশ্রম অদ্বৈত বেদান্ত গবেষণা ও অনুশীলনের কেন্দ্র। স্বামী বিবেকানন্দের আদেশ অনুসারে এই আশ্রমে কোনো রকম মূর্তি রাখা বা পূজা করা নিষিদ্ধ,[৪] এমনকি রামকৃষ্ণ পরমহংসের ছবি বা মূর্তিও এখানে রাখা হয় না।[৫] বর্তমানে স্বামী বিবেকানন্দের মূল রচনাগুলির প্রচারের দায়িত্ব অদ্বৈত আশ্রমের উপর ন্যস্ত।[৩]
অদ্বৈত আশ্রমের অপর নাম মায়াবতী আশ্রম।[৬][৭] অধুনা উত্তরাখণ্ড রাজ্যের চম্পাবত জেলার চম্পাবত থেকে ২২ কিলোমিটার ও লোহাঘাট শহর থেকে ৯ কিলোমিটার দূরে ১৯৪০ মিটার উচ্চতায় আশ্রমটি অবস্থিত।[৬] আশ্রমের কলকাতা শাখাটি রামকৃষ্ণ সংঘের ইংরেজি ও হিন্দি ভাষার বইয়ের একটি অন্যতম প্রধান প্রকাশনা কেন্দ্র। মায়াবতীতে অদ্বৈত আশ্রম একটি দাতব্য হাসপাতালও চালায়। আশ্রমের মুখ্য প্রকাশনাগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য দ্য কমপ্লিট ওয়ার্কস অফ স্বামী বিবেকানন্দ (ইংরেজিতে), স্বামী বিবেকানন্দের রচনাসমগ্রের হিন্দি অনুবাদ, দ্য লাইফ অফ স্বামী বিবেকানন্দ ও গুরুত্বপূর্ণ হিন্দু ধর্মগ্রন্থগুলির ইংরেজি অনুবাদ।
অদ্বৈত আশ্রমের কিছু প্রাচীন পাণ্ডুলিপি এখন মাইক্রোফিল্মের আকারে দিল্লির ইন্দিরা গান্ধী জাতীয় চারুকলা কেন্দ্রে সংরক্ষিত আছে।[৮]
ইতিপূর্বে ১৮৯৫ সালে ইংল্যান্ডে স্বামী বিবেকানন্দের সঙ্গে ক্যাপ্টেন জেমস হেনসি সেভিয়ার ও তার স্ত্রী শার্লট এলিজাবেথ সেভিয়ারের আলাপ হয়। ক্যাপ্টেন সেভিয়ার পাঁচ বছর ব্রিটিশ ভারতীয় সেনাবাহিনীতে কাজ করেছিলেন।[৯] ১৮৯৬ সালে নয় মাস সেভিয়ার-দম্পতি স্বামী বিবেকানন্দের সঙ্গে সুইজারল্যান্ড, জার্মানি ও ইতালি ভ্রমণ করেন। তাদের সঙ্গে আল্পস পর্বতমালায় ভ্রমণের সময় স্বামী বিবেকানন্দের মনে ভারতে অনুরূপ একটি স্থানে বেদ-চর্চার কেন্দ্র স্থাপনের ইচ্ছা জাগে।[১০] তাই ১৮৯৬ সালের ডিসেম্বর মাসে সেভিয়ার-দম্পতি স্বামী বিবেকানন্দের সঙ্গে ইতালির নেপলস থেকে একটি স্টিমারে চড়ে সোজা ভারতে চলে আসেন। তাদের লক্ষ্য ছিল আলমোড়ার কাছে কোনো একটি জায়গা খুঁজে নিয়ে আশ্রম স্থাপন করা।[১১] ১৮৯৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে তারা মাদ্রাজে এসে পৌঁছান।[১২] এরপর বিবেকানন্দ কলকাতা অভিমুখে যাত্রা করেন, সেভিয়ার-দম্পতি যান আলমোড়ায়। সেখানে একটি বাংলো ভাড়া করেন।[১৩] পরের দুই বছর সেভিয়ার-দম্পতির সঙ্গে স্বামী বিবেকানন্দও এই বাংলোয় বাস করেছিলেন।
বিবেকানন্দ যখন কাশ্মীর ভ্রমণে গিয়েছিলেন, সেই সময় সেভিয়ার-দম্পতি বিবেকানন্দের সন্ন্যাসী-শিষ্য স্বামী স্বরূপানন্দকে নিয়ে উত্তরাখণ্ডের পার্বত্য অঞ্চলে আশ্রমের উপযুক্ত স্থান নির্বাচনে বের হন। ১৮৯৮ সালের জুলাই মাসে তারা একটি জায়গার সন্ধান পান। জায়গাটি সেই সময় ছিল একটি চা-বাগানের অংশ। এখানেই ঘন দেবদারু, পাইন ও ওক বনের মধ্যে স্বামী স্বরূপানন্দের সাহায্যে আশ্রম স্থাপিত হয়।[১৪] একই সময় কলকাতায় বেলুড় মঠ স্থাপিত হয়েছিল।[১৫]
১৮৯৮ সালের মাঝামাঝি মাদ্রাজে প্রবুদ্ধ ভারত পত্রিকার সম্পাদকের অকালমৃত্যুতে পত্রিকাটির প্রকাশনা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। স্বামী বিবেকানন্দের অনুরোধে সেভিয়ার দম্পতি পত্রিকাটি পুনরুজ্জীবনে এগিয়ে আসেন। স্বামী স্বরূপানন্দকে পত্রিকার সম্পাদক নিযুক্ত করা হল। ১৮৯৯ সালের ১৯ মার্চ, রামকৃষ্ণ পরমহংসের জন্মদিনে স্বরূপানন্দকেই আশ্রম-প্রধান করে আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হল অদ্বৈত আশ্রম।[১৬] ১৯০৬ সালে মৃত্যুর আগে পর্যন্ত স্বরূপানন্দ এই যুগ্ম দায়িত্ব পালন করেছিলেন।[১৭][১৮][১৯]
আশ্রম প্রতিষ্ঠার সময় ১৮৯৯ সালের মার্চ মাসে স্বামী বিবেকানন্দ একটি চিঠিতে আশ্রমের উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করে লেখেন: "...To give this ONE TRUTH a freer and fuller scope in elevating the lives of individuals and leavening the mass of mankind, we start this Advaita Ashrama on the Himalayan heights, the land of its first expiration.
Here it is hoped to keep Advaita free from all superstitions and weakening contaminations. Here will be taught and practised nothing but the Doctrine of Unity, pure and simple; and though in entire sympathy with all other systems, this Ashrama is dedicated to Advaita and Advaita alone." [২০]
১৯০০ সালের ২৮ অক্টোবর ক্যাপ্টেন সেভিয়ারের মৃত্যু হয়। তার শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী, স্থানীয় সারদা নদীর তীরে তাকে হিন্দু মতে দাহ করা হয়।[১০][১৭] শোকাতুরা শ্রীমতী সেভিয়ারকে সান্ত্বনা দিতে ১৯০১ সালের ৩-১৮ জানুয়ারি স্বামী বিবেকানন্দ আশ্রমে অবস্থান করেন।[২১][২২] ক্যাপ্টেন সেভিয়ারের থাকার জায়গাটি গ্রন্থাগারে পরিণত করা হয়।[১৪] শ্রীমতী সেভিয়ারও বেশ কয়েক বছর সেই আশ্রমে বাস করেছিলেন।
অদ্বৈত আশ্রম অনেকগুলি গুরুত্বপূর্ণ ইংরেজি ও হিন্দি বইয়ের প্রকাশক। রামকৃষ্ণ মিশনের সবচেয়ে পুরনো পত্রিকা প্রবুদ্ধ ভারত-ও অদ্বৈত আশ্রমই প্রকাশ করে থাকে। আশ্রমে প্রকাশিত কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বই হল:
অদ্বৈত আশ্রমের প্রথম তিন অধ্যক্ষ ছিলেন প্রবুদ্ধ ভারত-এর সম্পাদক। তারপর থেকে ভিন্ন ভিন্ন ব্যক্তি অধ্যক্ষ ও সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৫৯ সাল থেকে আশ্রম অধ্যক্ষকে প্রবুদ্ধ ভারত-এর সম্পাদক এবং সম্পাদককে যুগ্ম সম্পাদক বলা হতে থাকে। ১৯৯৩ সালের সেপ্টেম্বর থেকে আশ্রম অধ্যক্ষ পরিচিত হন ব্যাবস্থাপক সম্পাদক বা ম্যানেজিং এডিটর ও যুগ্ম সম্পাদক পরিচিত হন সম্পাদক নামে।
× | বছর | অধ্যক্ষ |
---|---|---|
১ | ১৮৯৯-১৯০৬ | স্বামী স্বরূপানন্দ |
২ | ১৯০৬-১৯১৩ | স্বামী বিরজানন্দ |
৩ | ১৯১৪-১৯১৮ | স্বামী প্রজ্ঞানানন্দ |
৪ | ১৯১৮-১৯২৭ | স্বামী মাধবানন্দ |
৫ | ১৯২৭-১৯৩৭ | স্বামী বীরেশ্বরানন্দ |
৬ | ১৯৩৭-১৯৪৭ | স্বামী পবিত্রানন্দ |
৭ | ১৯৪৮-১৯৫৩ | স্বামী যোগেশ্বরানন্দ |
৮ | ১৯৫৩-১৯৬৩ | স্বামী গম্ভীরানন্দ |
৯ | ১৯৬৪-১৯৬৮ | স্বামী চিদাত্মানন্দ |
১০ | ১৯৬৯-১৯৭৬ | স্বামী বুধানন্দ |
১১ | ১৯৭৬-১৯৭৭ | স্বামী বন্দনানন্দ |
১২ | ১৯৭৭-১৯৭৮ | স্বামী তদ্রূপানন্দ |
১৩ | ১৯৭৮-১৯৮৮ | স্বামী অনয়ানন্দ |
১৪ | ১৯৮৮-১৯৯০ | স্বামী স্বানন্দ |
১৫ | ১৯৯১-২০০৬ | স্বামী মুমুক্ষানন্দ |
১৬ | ২০০৬-বর্তমান | স্বামী বোধসারানন্দ |