জীববিজ্ঞানে অধিবংশাণুবিজ্ঞান (ইংরেজি Epigenetics) বলতে উত্তরাধিকার সূত্রে অর্জিত এমন সব বহির্বৈশিষ্ট্য বা ফিনোটাইপকে বোঝায়, যা ডিএনএ অনুক্রমের মধ্যে কোনও পরিবর্তন আনে না। [১] গ্রিক উপসর্গ "এপি" epi- ( ἐπι- "বাইরে, বহিঃস্থ") অধিবংশাণুগত বৈশিষ্ট্য বলতে প্রথাগত উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত বৈশিষ্ট্য "ছাড়াও" কিছু "অতিরিক্ত বা বাড়তি" বৈশিষ্ট্যকে বোঝায়। [২]
জিন বা বংশাণুর কার্যকলাপ বা অভিব্যক্তির পরিবর্তন (বংশানুক্রম ছাড়া) বাইরের যেসব মাধ্যম দ্বারা প্রভাবান্বিত তা অধিবংশাণুবিজ্ঞানের আলোচ্য বিষয়। [৩][৪]
সুকেন্দ্রিক কোষের জীববিজ্ঞানে কোষ বিভাজনে অধিবংশাণুগত পরিবর্তন একটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ। কোষের গাঠনিক পরিবর্তনের সময় মাতৃকোষ ভ্রুণে অন্য কার্যক্ষমতা বিশিষ্ট ভিন্ন ভিন্ন কোষে পরিবর্তিত হয় এবং এক পর্যায়ে এক অপরের থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন কোষে পরিবর্তিত হয়। অন্য কথায়, একটি একক নিষিক্ত ডিম্বাণু - ভ্রূণকোষ - মাইটসিস প্রক্রিয়ায়, বিভিন্ন ধরনের অপত্য কোষ যেমনঃ স্নায়ুকোষ, পেশী কোষ, আবরণী টিস্যু , রক্তনালী ইত্যাদিতে পরিবর্তিত হয়। আর তা সম্ভব হয় একেক ক্ষেত্রে একেক বংশাণুর অভিব্যক্তি প্রকাশের মাধ্যমে। [৫]
এপিজিনেটিক্স শব্দটি সমকালীন সময়ে ১৯৯০-এর দশকে উদ্ভূত হয়। তবে কয়েক বছর ধরে কিছুটা পরিবর্তিত অর্থে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। [৬] এপিজিনেটিক বৈশিষ্ট্যের ধারণার একটি সংজ্ঞা ২০০৮ সালে একটি কোল্ড স্প্রিং হারবার সভায় প্রণীত হয়েছিল। যা হলোঃ "ডিএনএ সিকুয়েন্সে বা বংশাণুক্রমে কোনও পরিবর্তন ছাড়াই ক্রোমোসোমে পরিবর্তনের ফলে "প্রতিষ্ঠিত উত্তরাধিকার সূত্রে বহনযোগ্য ফিনোটাইপ" [৪] যদিও আলাদা সংজ্ঞায় উত্তরাধিকার সূত্রে বহনযোগ্য নয় এরূপ জিনগত বৈশিষ্ট্যসমূহও অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে। [৭]
অধিবংশাণুগত পরিবর্তন কিছু নির্দিষ্ট বংশাণুকে সক্রিয় করে, কিন্তু ডিএনএ ক্রমকে পরিবর্তিত করে না। ডিএনএর আণবিক গঠন (ক্রম নয়) অথবা সাহায্যকারী ক্রোমাটিন প্রোটিন পরিবর্তিত হয়ে সক্রিয় বা নিষ্ক্রিয়করণ করতে সক্ষম। এই প্রক্রিয়ায় কোষ বিভাজিত হয়ে বহুকোষী জীবে প্রতিটি কোষের নিজ নিজ কাজের জন্যপ্রয়োজনীয় বংশাণু শুধু প্রকাশিত হয়। অধিবংশাণুগত পরিবর্তনসমূহ কোষ বিভাজিত হলেও অপরিবর্তিত থাকে। বেশিরভাগ অধিবংশাণুগত পরিবর্তন প্রতিটি জীবের জীবদ্দশায় সংগঠিত হয়। আর তা উত্তরাধিকার সূত্রে জীবের বংশধরের মাঝে "আন্তঃপ্রজন্ম অধিবংশাণুগত উত্তরাধিকার" (ট্রান্সজেনারেশনাল এপিজিনেটি ইনহেরিটেন্স) পদ্ধতিতে প্রেষিত হয়। সর্বোপরি, ডিম্বাণু বা শুক্রাণুতে যদি কোনো বংশাণু নিষ্ক্রিয়করণ ঘটে, তা নিষিক্ত হলে পরবর্তী প্রজন্মের মাঝেও স্থানান্তরিত হওয়ার সুযোগ থেকে যায়।[৮]
অধিবংশাণুগত পদ্ধতি কয়েকটি ধাপের হতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে প্যারামিউটেশন, বুকমার্কিং, বংশাণু নিষ্ক্রিয়করণ, এক্স - ক্রোমোজোম নিষ্ক্রিয়করণ, ডিএনএ মিথাইলেশোন, কার্সিনোজিনেসিসের ধাপ, হিস্টোন নিয়ন্ত্রণ, অপুংজনি এবং ক্লোনিং।