অনানুষ্ঠানিক অর্থনীতি বা অর্থনীতির অনানুষ্ঠানিক খাত বলতে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড, ব্যবসা- প্রতিষ্ঠান, কাজ বা চাকুরি ও শ্রমিকদের এক বৈচিত্র্যময় সমবায়ে গঠিত অর্থনৈতিক একটি খাতকে বোঝায়, যেটি রাষ্ট্র কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত বা সুরক্ষিত নয়। রাষ্ট্র এই খাত থেকে কোনও কর আদায় করে না, কিংবা এটিকে পর্যবেক্ষণও করে না। আদিতে ক্ষুদ্র অনিবন্ধিত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে স্ব-কর্মসংস্থানের ব্যাপারটিকে অনানুষ্ঠানিক অর্থনীতি বলা হলেও বর্তমানে সুরক্ষাহীন দিনমজুরের কর্মসংস্থানকেও এর আওতায় ধরা হয়।
অনানুষ্ঠানিক অর্থনীতিকে প্রায়শই অবৈধ বাজার, অনৈতিক, কালোবাজার, ভূগর্ভস্থ বাজার বা অর্থনীতি ইত্যাদি কলঙ্কজনক নামে ডাকা হয়। অনেক সময় ছায়া অর্থনীতি নামেও ডাকা হয়। কিন্তু বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ অনানুষ্ঠানিক কর্মীই বিরাট ঝুঁকি নিয়ে সৎভাবেই জীবিকা অর্জন করার চেষ্টা করছে। তারা লোকচক্ষুর আড়ালে নয়, বরং সর্বসাধারণ্যের চোখের সামনেই কাজ করে থাকে এবং তাদের সমাজ, সম্প্রদায় ও অর্থনীতিতে বিশাল অবদান রেখে থাকে।
বিশ্বের শ্রমশক্তির (বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশগুলিতে) সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশই অনানুষ্ঠিক অর্থনীতির অংশ। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা ২০১৮ সালে বিশ্বের অনানুষ্ঠানিক শ্রমশক্তির উপরে প্রথম বারের মতো একটি হিসাব প্রকাশ করে। এটি অনুযায়ী বিশ্বের ৬১% শ্রমিকই অনানুষ্ঠানিক অর্থনীতিতে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে। ১৯৬০-এর দশক থেকে এই খাত দ্রুত বিস্তার লাভ করে[১] এবং ১৯৭০-এর দশকে প্রথম এই শ্রমিকদেরকে "অনানুষ্ঠানিক পেশা"-র লোক হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। বর্তমানে এদের সংখ্যা প্রায় ২ শত কোটি। বিশ্ব অর্থনীতিতে এর ব্যাপক প্রভাব আছে। দারিদ্র্য ও অর্থনৈতিক বৈষম্য হ্রাসকরণে এর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে। [২][৩] অনানুষ্ঠানিক অর্থনীতিকে আনুষ্ঠানিক অর্থনৈতিক খাতের সাথে অঙ্গীভূতকরণ নীতিনির্ধারকদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা যার মোকাবেলা করতে হবে।[২]
আনুষ্ঠানিক অর্থনীতির বিপরীতে অনানুষ্ঠিক অর্থনীতির কর্মকাণ্ডগুলি কোনও দেশের স্থূল জাতীয় উৎপাদন (জিএনপি) বা স্থূল অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের (জিডিপি) অংশ হিসেবে গণ্য করা হয় না। [২]