তন্ত্র | অন্তঃক্ষরা গ্রন্থিতন্ত্র |
---|---|
উল্লেখযোগ্য রোগ | বহুমূত্ররোগ, থাইরয়েডের রোগ, অ্যান্ড্রোজেন বৃদ্ধি |
উল্লেখযোগ্য পরীক্ষা | থাইরয়েডের কার্যকারীতা পরীক্ষা, রক্তে শর্করার মাত্রা |
বিশেষজ্ঞতা | এন্ডোক্রিনোলজিস্ট |
শব্দকোষ | চিকিৎসাবিজ্ঞানের শব্দকোষ |
এন্ডোক্রিনোলজি (ইংরেজি: Endocrinology) বা আক্ষরিক অর্থে অন্তঃক্ষরাবিজ্ঞান বা অন্তঃক্ষরাগ্রন্থিবিজ্ঞান হচ্ছে জীববিজ্ঞান ও চিকিৎসাবিজ্ঞানের একটি শাখা অন্তঃক্ষরা গ্রন্থিতন্ত্র, এর রোগ, এবং হরমোন নামক সুনির্দিষ্ট জৈব যৌগের নিঃসরণ নিয়ে অধ্যয়ন করে। এছাড়াও শরীরের বিভিন্ন কার্যপ্রক্রিয়ার সমন্বয়ও বিজ্ঞানের এই শাখার অন্তর্ভুক্ত। হরমোন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত এসকল সমন্বয় কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে শরীরের বিভিন্ন বিকাশমূলক প্রক্রিয়ার স্বতঃবিস্তার, দেহের বৃদ্ধি ও বিকাশ, পার্থক্য, বিপাকের শারীরিক বা আচরণগত প্রক্রিয়া, টিস্যুর কর্মপ্রক্রিয়া, ঘুম, পরিপাক, শ্বসন, রেচন, মেজাজ, মানসিক চাপ, স্তন্যদান, নড়াচড়া করার ক্ষমতা, প্রজনন, এবং প্রত্যক্ষণ। এন্ডোক্রাইনোলজির বিশেষায়িত শাখার মধ্যে রয়েছে আচরণগত এন্ডোক্রাইনোলজি[১][২][৩] এবং তুলনামূলক এন্ডোক্রিনোলজি। এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ পেশাজীবিদের এন্ডোক্রিনোলজিস্ট বলা হয়।
বিভিন্ন ধরনের গ্রন্থির সমন্বয়ে অন্তঃক্ষরা গ্রন্থিতন্ত্র গঠিত। শরীরের বিভিন্ন অংশে এই গ্রন্থিগুলো বিস্তৃত। এই গ্রন্থিগুলো থেকে বিভিন্ন ধরনের হরমোন কোনো নালি ছাড়াই সরাসরি রক্ত নিঃসরিত হয়। এজন্য অন্তঃক্ষরা গ্রন্থিগুলো নালিবিহীন গ্রন্থি হিসেবে স্বীকৃত। হরমোনের বিভিন্ন রকমের কাজ রয়েছে এবং তাদের কাজের ধরনও ভিন্ন। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, একটি নির্দিষ্ট হরমোন শরীরের একাধিক অঙ্গের উপর বিভিন্ন ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে, অপরদিকে একটি নির্দিষ্ট অঙ্গ বিভিন্ন ধরনের হরমোন দ্বারা প্রভাবিতও হতে পারে।
এন্ডোক্রিনোলজি মানব দেহের অন্তঃক্ষরা গ্রন্থিতন্ত্র নিয়ে আলোচনা ও গবেষণা করে। এটি হরমোন নিঃসরণকারী অন্তঃক্ষরা গ্রন্থিগুলোর সমন্বয়ে গঠিত একটি তন্ত্র। হরমোন হচ্ছে এক প্রবার রাসায়নি যৌগ যা দেহের বিভিন্ন অঙ্গতন্ত্রের কার্যক্রমকে প্রভাবিত করে। হরমোনের উদাহরণের মধ্যের রয়েছে থাইরয়েড হরমোন, বিকাশ হরমোন, ইনসুলিন, ইত্যাদি। অন্তঃক্ষরা গ্রন্থিতন্ত্রের কাজ প্রতিক্রিয়াশীলতার ওপর নির্ভরশীল। কারণ দেখা যায় এক হরমোনের কাজ (মাধ্যমিক হরমোন) বা নিঃসরণ নিয়ন্ত্রিত হয় অন্য হরমোনের (প্রাথমিক হরমোন) নিঃসরণ দ্বারা। উদারহরণস্বরূপ থাইরয়েড হরমোনের (মাধ্যমিক হরমোন) নিঃসরণ নিয়ন্ত্রিত হয় থাইরয়েড উত্তেজক হরমোনের (প্রাথমিক হরমোন) নিঃসরণের মাধ্যমে। যদি মাধ্যমিক হরমোনের নিঃসরণ খুব বেশি পরিমাণে হয় তবে তা হোমিওস্ট্যাটিস অনুসরণের মাধ্যমে প্রাথমিক হরমোনের দিকে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে।
জার্মান বিজ্ঞানি আর্নল্ড আডোলফ বের্টহোল্ডকে এন্ডোক্রিনোলজির জনক বলা হলেও সর্বপ্রথম চীনে এন্ডোক্রিনোলজি নিয়ে কাজ করার প্রমাণ পাওয়া যায়।[৪] খ্রিষ্টপূর্ব ২০০ শতকের দিকে চীনারা মানুষের মূত্র থেকে যৌন হরমোন ও পিটুইটারি হরমোন আলাদা করতে সমর্থ হয়।[৪] এ কাজের জন্য তারা স্টেরয়েড হরমোনের ঊর্দ্ধপাতন করার মতো বিভিন্ন ধরনের জটিল পদ্ধতি প্রয়োগ করেছিলো।[৪] ১১০০ খ্রিষ্টাব্দের প্রাচীন চৈনিক লেখনিতে হরমোন আলাদা করার আরেকটি পদ্ধতি প্রয়োগের প্রমাণ পাওয়া যায়। এ পদ্ধতিতে হরমোন আলাদা করতে গ্লেডিটসিয়া সাইনেনসিয়া নামক ফুলের বিচি থেকে প্রাপ্ত স্যাপোনিন যৌগ ব্যবহার করা হয়েছিলো। এছাড়া জিপসাম (ক্যালসিয়াম সালফেট) ব্যবহারের প্রমাণও পাওয়া যায়।[৪]