রানী অবন্তী বাঈ (অথবা রানী অবন্তী বাঈ লোধী ) একজন মুক্তিযোদ্ধা ও রামগড়ের রাণী ছিলেন, যিনি তার রাজত্ব রক্ষা করার জন্য ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিলেন। তিনি ২০ মার্চ ১৫৮৫ সালে মারা যান।
তিনি ভারতের রামগড় রাজ্যের শাসক রাজা বিক্রমাদিত্য সিংয়ের স্ত্রী ছিলেন। তিনি বর্তমান মধ্য প্রদেশের লোধীর রাণী ছিলেন। [১] রাজা যখন অসুস্থতায় পড়েছিলেন তখন তিনি রাজ্যের রাজত্ব গ্রহণ করেছিলেন। স্বাধীনতার জন্য ১৮৫৭ সালের বিদ্রোহের সময় ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে তার সাহসী যুদ্ধের জন্য তাকে স্মরণ করা হয়। [২][৩]
রামগড়ের 'রাজা বিক্রমাদিত্য সিংয়ের' রানী ছিলেন 'অবন্তী বাঈ লোধী'। অসুস্থতার কারণে 'বিক্রমাদিত্য সিং' রাষ্ট্রের বিষয়গুলি পরিচালনা করতে পারছিলেন না,[৪] ব্রিটিশরা তাকে শাসক হিসাবে অযোগ্য বলে ঘোষণা করে। তারা তার ছেলে আমান সিং এবং শের সিংকে সিংহাসনে উত্তরাধিকারী হিসেবে গ্রহণ করে নি, কারণ তারা বয়সে ছোট ছিল। [২] অবন্তী বাঈ লোধী ঐ অনুষ্ঠানে যোগ দেন এবং রাজ্যর দায়িত্বে নেন। কিন্তু ব্রিটিশরা তাকে বৈধ শাসক হিসাবে স্বীকৃত দেন নি।
১৮৫১ সালে ব্রিটিশরা রামগড়কে 'ওয়ার্ড কোর্ট' হিসাবে ঘোষণা করে এবং তাদের নিজস্ব শাসক নিযুক্ত করে। তিনি শাসককে ছুঁড়ে ফেলে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। [৫] অবন্তী বাঈ লোধী যুদ্ধে যোগ দেওয়ার জন্য প্রতিবেশী রাজ্যের শাসকদের কাছে দূত পাঠিয়েছিলেন, কেন্দ্রীয় প্রদেশগুলিতে বিপ্লবের তরঙ্গ তৈরি করেছিলেন। ১৮৫৭ সালের মাঝে সমগ্র উত্তর অঞ্চল সশস্ত্র বিদ্রোহে যোগ দেয়। [২]
১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহ ভেঙে পড়লে অবন্তী বাঈ লোধী চার হাজার সৈন্য নিয়ে সেনাবাহিনী গড়ে তোলেন এবং নিজে তার নেতৃত্ব দেন। [৩][৪][৫] ব্রিটিশদের সঙ্গে তার প্রথম যুদ্ধ ম্যান্ডেলার কাছে কেরী গ্রামে অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে তিনি এবং তার সেনাবাহিনী ব্রিটিশ বাহিনীকে পরাজিত করতে সক্ষম হয়। যাইহোক, পরাজিত ব্রিটিশরা প্রতিশোধ নিয়ে ফিরে আসে এবং রামগড় আক্রমণ করে। অবন্তী বাঈ লোধী নিরাপত্তার জন্য দেবহারগড় পাহাড়ে চলে যান। ব্রিটিশ সেনাবাহিনী রামগড়ে অগ্নিসংযোগ করেছিল এবং রানীকে আক্রমণের জন্য দেবহারগড় রওনা হয়। [২][৪]
ব্রিটিশ সৈন্যদের ফাঁদে ফেলার জন্য অবন্তী বাঈ লোধী গেরিলা যুদ্ধে অবতীর্ণ হন।[২] কিন্তু তার সাহস ও যুদ্ধের শক্তি ব্রিটিশ শক্তিশালী সামরিক মেশিনের কাছে যথেষ্ট ছিল না। প্রায় পরাজয়ের মুখোমুখি হয়েও অবন্তী বাঈ লোধী চিন্তা করেন, আত্মসমর্পণের পরিবর্তে নিজের জীবনকে উৎসর্গ করা ভাল।। ১৮৫৮ সালের ২০ মার্চ তিনি নিজের তরবারি দিয়ে নিজেকে হত্যা করে শহীদ হন। [৪][৫]
স্বাধীনতার পর, লোক সমাবেশের মাধ্যমে অবন্তী বাঈ লোধীকে স্মরণ করা হয়েছিল। [৬] তাকে প্রায়ই ঝাঁসি রানী লক্ষ্মীবাঈ , কিতুর রানী চেন্নামার সাথে তুলনা করা হয়। যিনি তার রাজ্যকে রক্ষা করার জন্য ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে একই রকম যুদ্ধ করেছিলেন।
নরমদা উপত্যকা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ তার সম্মানে জাবালপুরে একটি বাঁধ নির্মাণ করে। [৭] রানী অবন্তী বাঈ লোধী একটি জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্লান্ট সহ একটি বহুমুখী প্রকল্প। ভারত পোস্ট ২০ মার্চ ১৯৯৮ সালে প্রথম এবং ১৯ সেপ্টেম্বর ২০০১ সালে দ্বিতীয়বার অবন্তী বাঈ লোধীর সম্মানে দুটি স্ট্যাম্প জারি করে। [৮][৯]
২০১১ সালে, বিজেপি ও বিএসপি রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিবাদে ১৮৫৭ সালের স্বাধীনতা সংগ্রামের অংশ হিসেবে রাষ্ট্রীয় শৈক্ষিক অনুসন্ধান এবং প্রশিক্ষণ পরিষদ ইতিহাসের পাঠ্যপুস্তকগুলিতে যোগ করে। [৩]