বৌদ্ধধর্ম |
---|
এর ধারাবাহিক নিবন্ধের অংশ |
![]() |
অভিধম্মত্থ-সঙ্গহ (অভিধম্মের অন্তর্গত বিষয়বস্তুর সংক্ষিপ্তসার) হল একটি পালি বৌদ্ধ শিক্ষণমূলক সহায়িকা। এটি থেরবাদ সম্প্রদায়ের অভিধম্মের সংক্ষিপ্তসার।[১] অষ্টম থেকে দ্বাদশ শতাব্দীর মধ্যবর্তী কোনও এক সময়ে শ্রীলঙ্কীয় ভিক্ষু আচরিয় অনুরুদ্ধ এই গ্রন্থটি রচনা করেছিলেন।[২]
ভিক্ষু বোধির মতে, অভিধম্মত্থ-সঙ্গহ হল থেরবাদ অভিধম্ম পরম্পরার সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ধর্মগ্রন্থগুলির অন্যতম এবং এই গ্রন্থে অভিধম্মের এমন এক "পাণ্ডিত্যপূর্ণ সংক্ষিপ্তসার" প্রদত্ত হয়েছে যে তা "দক্ষিণ ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার সকল থেরবাদ বৌদ্ধ দেশগুলিতে অভিধম্ম অধ্যয়নের প্রামাণ্য প্রাথমিক পাঠ্যপুস্তকে পরিণত হয়েছে"।[৩]
ভিক্ষু বোধি উল্লেখ করেছেন যে, সুবৃহৎ ও জটিল অভিধম্মপিটক এবং বুদ্ধঘোষ প্রমুখ ব্যাখ্যাকর্তা রচিত অসংখ্য টীকা-সমন্বিত থেরবাদ অভিধম্ম (যা পালি টেক্সট সোসাইটি প্রকাশিত লাতিন লিপিতে মুদ্রিত সংস্করণের চল্লিশটিরও বেশি খণ্ড জুড়ে রয়েছে) এতটাই জটিল ও প্রকাণ্ড আকার ধারণ করে যে শিক্ষানবিশ ভিক্ষুদের ক্ষেত্রে তা অধ্যয়ন করা অত্যন্ত জটিল হয়ে পড়ে। এই কারণেই তাঁদের প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্যে সংক্ষিপ্তসার রচনার প্রয়োজন অনুভূত হয়। এই উদ্দেশ্যে একাধিক গ্রন্থ রচিত হলেও পঞ্চাশ পৃষ্ঠার অভিধম্মত্থ-সঙ্গহ বইটি যে সর্বাধিক জনপ্রিয়তা লাভ করে, তার কারণ এটিতে "সংক্ষেপ ও বোধগম্যতার এক উল্লেখযোগ্য সামঞ্জস্য" রক্ষিত হয়েছিল।[২]
আচরিয় অনুরুদ্ধ এই গ্রন্থের মাধ্যমে থেরবাদ অভিধম্মে কোনও নতুন বিষয় বা মতবাদ অন্তর্ভুক্ত করেননি। বরং এই বইটি মূল মতবাদের একটি সংক্ষিপ্তসার বা পাঠ্যপুস্তকের আকারেই লিখিত হয়। তাঁর ব্যবহৃত উৎসগ্রন্থগুলির মধ্যে অন্যতম অভিধম্মপিটক ও বুদ্ধঘোষের বিসুদ্ধিমাগ্গ। যদিও অভিধম্মের বিষয়বস্তু তিনি যেভাবে সংগঠিত ও প্রণালীবদ্ধ করেছিলেন তা স্বতন্ত্র ধাঁচের ও নতুন রকমের। জেফ্রি ওয়েনি বাসের মতে, অনুরুদ্ধ গ্রন্থটিকে অভিজ্ঞতার (অবচর) ক্ষেত্রের ভিত্তিতে সংগঠিত করেন, যার মধ্যে প্রত্যেক প্রকার চিত্তের কথা উল্লিখিত হয়েছে। তিনি অভিধম্মের বিষয়বস্তুকে বৌদ্ধ ধ্যানের স্তরের (সাধারণ মানসিক অবস্থা থেকে ঝান-এর উচ্চতর স্তর) দর্পণে একটি স্তরভিত্তিক ছকে বিভক্ত করেছিলেন। এই কারণে এই বইটিকে ধ্যান অনুশীলনের সহায়িকা হিসেবেও দেখা যেতে পারে।[২]
এছাড়াও অভিধম্ম শিক্ষণকে তিনি সংক্ষিপ্ত করেন "বিশ্বজনীন" মানসিক উপাদান (সব্বচিত্তসাধারণ) প্রভৃতি নতুন বিষয়শ্রেণির অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে। এর ফলে তিনি উপাদানগুলিকে অধিকতর সংক্ষিপ্ত আকারে (উদাহরণস্বরূপ ধম্মসঙ্গনীর তুলনায়) উপস্থাপন করতে সক্ষম হন। এর ফলে তা মুখস্থ করা ও প্রজন্মান্তরে সঞ্চারিত করার কাজটি সহজ হয়ে যায় এবং সম্ভবত সেই কারণেই এর জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পায়।[২]