লেখক | অমরসিংহ |
---|---|
মূল শিরোনাম | अमरकोशः (নামলিঙ্গানুশাসন বা নামলিঙ্গানুশাসনং) |
দেশ | ভারত |
ভাষা | সংস্কৃত |
ধরন | অভিধান |
এলসি শ্রেণী | n81098281 |
অমরকোষ (দেবনাগরী: अमरकोशः, IAST: Amarakośa) অমরসিংহ প্রণীত সংস্কৃত কোষ। এটি প্রাচীনতম সংস্কৃত কোষগুলির মধ্যে একটি।[১] লেখক নিজে এর ১৮টি পূর্ববর্তী কাজের উল্লেখ করেছেন, কিন্তু সেগুলি হারিয়ে গেছে। অমরকোষের প্রায় ৪০টিরও অধিক ধারাভাষ্য রয়েছে। কোষগ্রন্থটি তখনকার যূগে অভিধানের প্রয়োজন মিটিয়েছিল বলে অমরসিংহ নবরত্নমালার অন্যতম রত্ন হিসেবে বিক্রমাদিত্যের 'কীর্তিগাথা'য় যুক্ত হয়ে আছেন।
"অমরকোষ" শব্দটি সংস্কৃত অমর এবং "কোষ" ("ধন, ঝাঁক, ভাণ্ড, সংগ্রহ, অভিধান") থেকে এসেছে। বইটির মূল নাম "নামলিঙ্গানুশাসন"-এর অর্থ "বিশেষ্য এবং লিঙ্গ সম্পর্কিত নির্দেশ"।[১] মীরাশি আমরকোষ রচনার সময়কাল খতিয়ে দেখেছেন, এবং তার ধারণামতে আমোগবর্ষের শাসনকালে (৮১৪-৮৬৭) রচিত শাকাতায়নের আমোগবৃতিতে প্রথম নির্ভরযোগ্য উল্লেখ খুঁজে পেয়েছিলেন।[২]
অমরসিংহ (খ্রিস্টাব্দ ৩৭৫) ছিলেন প্রাচীন ভারতের সংস্কৃত ব্যাকরণবিদ এবং কবি, যার ব্যক্তিগত ইতিহাস খুব কমই জানা যায়।[৩][৪] কিছু সূত্র ইঙ্গিত দেয় যে তিনি সপ্তম শতাব্দীর বিক্রমাদিত্যের সময়কালেও বিদ্যমান ছিলেন।[৪][৩]
প্রচলিত অর্থে এটি মূলত অভিধান নয়। এর প্রতিশব্দ কোষ, লিঙ্গানুসারে সাজানো। এতে সরল পদ্যে এক হাজার পাঁচশ শ্লোকে রয়েছে যা সহজেই মুখস্থ করা যায়। লিঙ্গ ভট্ট (দশটীকা), সুভূতিচন্দ্র (কামধেনু টীকা), সর্বানন্দ (টীকাসর্বস্ব, ১১৫৯-৬০), ক্ষীরস্বামী প্রমুখ পণ্ডিত অমরকোষের টীকা রচনা করেছিলেন। এটি তিনটি কাণ্ডে বা খণ্ডে বিভক্ত বলে একে 'ত্রিকাণ্ড' বা 'ত্রিকাণ্ডী' নামেও অভিহিত করা হয়।[১] প্রথম কাণ্ড, স্বর্গদী-কাণ্ড ("স্বর্গ ও অন্যান্য") দেবতা ও আকাশ সম্পর্কিত শব্দ রয়েছে। দ্বিতীয় কাণ্ড, ভাবার্গাদি-কাণ্ড ("পৃথিবী ও অন্যান্য") পৃথিবী, নগর, প্রাণী এবং মানুষ সম্পর্কিত শব্দ নিয়ে আলোচিত। এবং তৃতীয় কাণ্ড, সামান্যাদি-কাণ্ড ("সাধারণ") ব্যাকরণ এবং অন্যান্য বিবিধ শব্দ সম্পর্কিত শব্দ অন্তর্ভুক্ত করেছে।
প্রথম কাণ্ড, স্বর্গদী-কাণ্ড স্ব, অভ্য, স্বর্গ, নাকা, ত্রিদিব, ত্রিদাসালয় বিভিন্ন নাম বর্ণনা করে 'স্বরব্যয়াম স্বর্গনাথথ্রিদিত্রালয় ..' শ্লোকের মাধ্যমে শুরু হয়। দ্বিতীয় শ্লোক "আমার, নির্জর, দেব," দেবতা ও উপদেবতাদের উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত বিভিন্ন শব্দের বর্ণনা রয়েছে। পঞ্চম এবং ষষ্ঠ শ্লোকে রয়েছে বুদ্ধ এবং শাক্যমুনির বিভিন্ন নাম। পরবর্তী শ্লোকগুলিতে ব্রহ্মা, বিষ্ণু, বাসুদেব, বলরাম, কামদেব, লক্ষ্মী, কৃষ্ণ, শিব, ইন্দ্র ইত্যাদি বিভিন্ন নাম রয়েছে। এই সমস্ত নাম অত্যন্ত শ্রদ্ধার সাথে বিবেচনা করা হয়। যদিও অমরসিংহকে বৌদ্ধ হিসাবে গণ্য করা হলেও,[৫][৬] অমরকোষ-এ সাম্প্রদায়িকতার উত্থান পর্বের সময় প্রতিফলিত হয়েছে।
অমরকোষ-এর দ্বিতীয় কাণ্ড, ভাবার্গাদি-কাণ্ড দশটি বর্গ বা অংশে বিভক্ত। দশটি বর্গ হল: ভুর্বর্গ (পৃথিবী), পুরর্বর্গ (শহর বা নগর), শৈলর্বর্গ (পর্বতমালা), ভানোশাদিবার্গ (বন এবং চিকিৎসা), সিংহাদ্বর্গ (সিংহ ও অন্যান্য প্রাণী), মনুষ্যবর্গ (মানবজাতি), ব্রহ্মবর্গ (ব্রাহ্মণ), ক্ষত্রিয়বর্গ (ক্ষত্রিয়), বৈশ্যবর্গ (বৈশ্য) এবং সুদ্রাবর্গ (সুদ্র)।
তৃতীয় কাণ্ড, সামান্যাদি-কাণ্ড মূলত বিশেষণ, ক্রিয়া, প্রার্থনা ও ব্যবসায় সম্পর্কিত শব্দ যোগ করেছে। প্রথম শ্লোকে "ক্ষেমঙ্কোররিস্তাতী শিবথথী শিবমকর শুভকর" শব্দের নানার্থকে বা ক্ষেমঙ্কর, আরিষ্ঠাথী, শিবথথী এবং শুভঙ্কর হিসাবে প্রবাদপ্রাপ্ত।
উজ্জয়িনীর "গুণরথ" ৭ম শতাব্দীতে চীনা ভাষায় অমরকোষ অনুবাদ করেছিলেন। দ্বাদশ শতাব্দীতে ব্যাকরণবিদ মুজ্ঞাল্লনা থেরা রচিত পালি কোষ অভিধনাপ্পাদিপিকা অমরকোষের ওপর ভিত্তি করে নির্মিত।
হেনরি টমাস কোলব্রুক ১৮০৮ ও ১৮২৫ সালে কলকাতা থেকে অমরকোষের একটি সংস্করণ প্রকাশ করেন। ১৮৭৭ সালে বম্বে থেকে, চিন্তামণি শাস্ত্রী থাট্টে ও কিয়েন হর্ন মহেশ্বর-ভাষ্যসহ অপর একটি সংস্করণ প্রকাশ করেছিলেন। পরবর্তীতে প্রসন্নকুমার শাস্ত্রী অমরকোষের বাংলা অনুবাদ প্রকাশ করার পর, জীবানন্দ বিদ্যাসাগর, ত্রৈলোক্যনাথ দত্ত, ভুবনচন্দ্র বসাক, হরগোবিন্দ রক্ষিত প্রমুখ এর বিভিন্ন সংস্করণ প্রকাশ করেছেন। অমরকোষ এছাড়াও ইংরেজি, ফার্সি, জার্মান সহ অন্যান্য ইউরোপিয় ভাষায় অনূদিত হয়েছে।[১]
অমরকোষ সম্পর্কিত ভাষ্যগুলি ব্রাহ্মণ্য, জৈন এবং বৌদ্ধ পণ্ডিতদের দ্বারা রচিত হয়েছে।[৭]