![]() | এই নিবন্ধটি উইকিপিডিয়ার জন্য মানসম্পন্ন অবস্থায় আনতে পরিচ্ছন্ন করা প্রয়োজন। মূল সমস্যা হল: .। |
অর্থনীতি ও অর্থশাস্ত্র |
---|
![]() |
সামষ্টিক অর্থনীতি |
---|
সামষ্টিক অর্থনীতি বিষয়ক সিরিজের অংশ |
|
অর্থনীতিবিদ্যা অনুযায়ী দীর্ঘ সময় ধরে অর্থনৈতিক কার্যকলাপের ধীর গতি অথবা বাণিজ্যিক আবর্তন-এর সংকোচনকে মন্দা বলা হয়।[১][২] মন্দার সময় বড় অর্থনৈতিক সূচকগুলোর ধরন একই রকম থাকে। মন্দার সময়, জাতীয় গড় আয় (গ্রস ডোমেস্টিক প্রোডাক্ট বা GDP), চাকরি, বিনিয়োগ সংক্রান্ত ব্যয়, উৎপাদন ক্ষমতার ব্যবহার, পারিবারিক আয়, ব্যবসায়িক লাভ- এ সব কিছুই অনেক কমে যায়; মুদ্রাস্ফীতি ঘটে ( একই অর্থ ব্যয় করে কম পরিমাণ দ্রব্য ক্রয় করতে হয় ),এই সময় অনেকেই দেউলিয়া হয়ে যায় এবং বেকারত্বের হার বেড়ে যায়।
সরকার নানা প্রকার সম্প্রসারণমূলক কাজকর্ম যেমন, বৃহদাকার অর্থনৈতিক নীতি গ্রহণ করে, টাকার জোগান বৃদ্ধি করে, সরকারি খরচ বৃদ্ধি করে এবং করের পরিমাণ কমিয়ে মন্দার মোকাবিলা করার চেষ্টা করে।
১৯৭৫ সালে নিউ ইয়র্ক টাইমস-এ প্রকাশিত একটি প্রবন্ধে অর্থনৈতিক পরিসংখ্যানবিদ জুলিয়াস শিস্কিন মন্দা পরিস্থিতি শনাক্ত করার জন্য বেশ কয়েকটি মূল বিধির কথা বলেছেন, তাদের মধ্যে অন্যতম হল "জাতীয় গড় আয়ের দুটি নিম্নমুখী ত্রৈমাসিক পর্ব"।[৩] সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সজ্ঞাগুলোও পরিবর্তিত হয়ে যায়[৪] এবং বর্তমানে মন্দা বলতে বোঝায় এমন একটি সময়কাল যখন অন্তত দুটি ত্রৈমাসিক পর্বে জাতীয় গড় আয় ( প্রকৃত অর্থনৈতিক বৃদ্ধির ঋণাত্মক হার) কমে যায়।[৫][৬] অনেক অর্থনীতিবিদ ১২ মাসের মধ্যে বেকারত্বের পরিমাণ ১.৫% বৃদ্ধিকে মন্দার সংজ্ঞা বলে চিহ্নিত করেন।[৭]
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ন্যাশনাল ব্যুরো অফ ইকনমিক রিসার্চ (NBER)-এর বিজনেস সাইকল ডেটিং কমিটি(ব্যবসায়িক আবর্তনের সময় নির্ধারক সমিত)-কে সাধারণ ভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মন্দা চিহ্নিতকরণের ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ বলে মনে করা হয়। NBER-এর মন্দার সংজ্ঞা এই রকম: "কয়েক মাসের বেশি সময় ধরে দেশ জুড়ে অর্থনৈতিক কার্যকলাপ যেমন, প্রকৃত জাতীয় আয় বৃদ্ধি, প্রকৃত ব্যক্তিগত আয়, চাকরি (সংস্থাগত বেতন তালিকার বাইরের), শিল্প উৎপাদন এবং পাইকারি খুচরো বিক্রয় ইত্যাদির উল্লেখযোগ্য হ্রাস দেখা দিলে তাকে মন্দা বলা হবে।" [৮] তবে সার্বিকভাবে শিক্ষাবিদ, অর্থনীতিবিদ, নীতি-নির্ধারণকারীরা এবং ব্যবসায়িক সংস্থাগুলি NBER-এর নির্ধারণ করা মন্দার শুরু এবং শেষ হওয়ার নির্দিষ্ট দিনটি সম্পর্কে ভিন্ন মত পোষণ করেন।
অনুগ্রহ করে এই নিবন্ধ বা অনুচ্ছেদটি সম্প্রসারণ করে এর উন্নতিতে সহায়তা করুন। অতিরিক্ত তথ্যের জন্য আলাপ পাতা দেখতে পারেন।
(March 2009) |
মন্দার অনেকগুলো চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য আছে যেগুলো একই সঙ্গে হতে পারে যেমন, বিনিয়োগ, ব্যবসায়িক সংস্থাগত লাভ ও চাকরির সুযোগ একই সঙ্গে কমে যায়।
একটা তীব্র (জাতীয় গড় আয়ের ১০% পতন) অথবা দীর্ঘস্থায়ী (তিন অথবা চার বছর) মন্দাকে অর্থনৈতিক নিম্নচাপ বলা হয়, যদিও অনেকে যুক্তি দেন যে তার কারণ ও সমাধান, দুই-ই আলাদা।[৭] অর্থনীতিবিদেরা সাধারণভাবে সংক্ষেপে মন্দার নানা আকারের কথা বলে থাকেন, যেমন V-আকার, U-আকার, L-আকার, এবং W-আকারের।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ১৯৫৪ সালে এবং ১৯৯০-৯১ সালে V-আকারের মন্দা দেখা দিয়েছিল, অর্থাৎ প্রথমে সংক্ষিপ্ত এবং তীব্র সংকোচন এবং তার পরে দ্রুত এবং দীর্ঘ সময় ধরে কার্যকরী থাকা উদ্ধার; ১৯৭৪-৭৫ সালে এসেছিল U-আকারের (প্রলম্বিত) মন্দা, এবং ১৯৪৯ সালে এবং ১৯৮০-৮২ সালে দেখা দিয়েছিল W-আকারের বা দ্বৈত অর্থাৎ একবার নেমে আবার উঠে আবার নেমে যাওয়া মন্দা। ১৯৯৩-৯৪ সালে জাপানে যে মন্দা এসেছিল, তা ছিলো U-আকারের এবং ১৯৯৭-৯৯ সালের মধ্যে তার ৯টি ত্রৈমাসিক পর্বের ৮টি সংকোচনকে L-আকারের বলা যেতে পারে। ১৯৯৭-৯৮ সালে কোরিয়া, হংকং এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় U-আকারের মন্দা আসে, যদিও তাইল্যান্ডের পর পর আটটি ত্রৈমাসিক পতনকে L-আকারের বলা যেতে পারে।[৯]
মন্দা নির্ধারণের জন্য সম্পূর্ণভাবে নির্ভরযোগ্য কোনো সূচক না থাকলেও নিম্নলিখিত বিষয়গুলোকে সম্ভাব্য সূচক হিসেবে গণ্য করা যায়।[১০]
অনুগ্রহ করে এই section সম্প্রসারণ করে এর উন্নতিতে সহায়তা করুন। অতিরিক্ত তথ্যের জন্য আলাপ পাতা দেখতে পারেন।
(March 2009) |
মূলধারার অধিকাংশ অর্থনীতিবিদ মনে করেন যে অর্থনীতিতে অপর্যাপ্ত গড় চাহিদার কারণে মন্দা দেখা দেয় এবং তাঁরা মন্দার সময় সম্প্রসারণমূলক বৃহদাকার অর্থনৈতিক নীতি গ্রহণের পক্ষপাতী। কোনও অর্থনীতিকে মন্দার কবল থেকে মুক্ত করার জন্য নানা কৌশল আছে. নীতিনির্ধারণকারীরা অর্থনীতির কোন শাখাকে অনুসরণ করছেন তার উপর নির্ভর করে কৌশলগুলি ভিন্ন ভিন্ন হয়। মুদ্রা সরবরাহকে নিয়ন্ত্রণ করার মাধ্যমে অর্থনীতিতে পরিবর্তন আনার প্রক্রিয়ায় বিশ্বাসীরা সম্প্রসারণমূলক মুদ্রানীতি ব্যবহারের পক্ষপাতী। আবার কেইনস-এর অনুসারী অর্থনীতিবিদেরা অর্থনীতির বৃদ্ধিতে গতি আনার জন্য সরকারের ব্যয় বৃদ্ধি করার কথা বলেন। জোগানের উপর জোর দেন যে সব অর্থনীতিবিদ, তাঁরা ব্যবসায় পুঁজির বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য কর-ছাড়ের প্রস্তাব করেন। অবাধ বাণিজ্য নীতিতে বিশ্বাসী অর্থনীতিবিদেরা বাজারের স্বাভাবিক কর্মক্ষমতার উপর সরকারি হস্তক্ষেপ না করার পরামর্শ দেন।
শেয়ার বাজারের পতনশীলতা থেকেই কিছু মন্দার পূর্বাভাস পাওয়া গিয়েছিল। স্টকস ফর দ্য লং রান-এ সিজেল বলছেন, ১৯৪৮ সাল থেকে ০ থেকে ১৩ মাস (গড়ে ৫.৭ মাস) সময়সীমার পূর্বকাল বিশিষ্ট ১০ টি মন্দার ক্ষেত্রেই আগে শেয়ার বাজারের সূচকের পতন হয়েছিল অথচ DJIA-তে শেয়ার বাজারের সূচকের ১০%-এর বেশি পতন হয়েছে এমন দশটি ক্ষেত্রে পরে মন্দা দেখা দেয়নি।[১৭]
মন্দার আগে সাধারণত স্থাবর সম্পত্তির বাজারও দুর্বল হয়ে পড়ে।[১৮] তবে স্থাবর সম্পত্তির ক্ষেত্রে পতন মন্দার থেকেও অনেক বেশি দিন স্থায়ী হতে পারে।[১৯]
বাণিজ্যের চক্র ঠিক কোন পথে আবর্তিত হবে, তা আগে থাকতে আঁচ করা খুব কঠিন হওয়ায় সিজেল বলেছেন, বিনিয়োগের সঠিক সময় বের করার জন্য অর্থনৈতিক চক্রের সুবিধা নেওয়া সম্ভব নয়। এমনকী,মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অর্থনীতি শীর্ষ ছুঁয়েছে না খাদে নেমে গিয়েছে, তা নির্দিষ্টভাবে বলার জন্য ন্যাশনাল ব্যুরো অফ ইকনমিক রিসার্চও (NBER) কয়েক মাস সময় নেয়।[২০]
অর্থনীতির পতনের সময়, দ্রুত বিক্রি হওয়া ভোগ্যপণ্য, ওষুধপত্র এবং তামাক, ইত্যাদি উচ্চ উৎপাদনশীল পণ্যের শেয়ার ভালভাবে টিকে থাকতে পারে। ।[২১] তবে যখন অর্থনীতি আবার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে শুরু করে এবং বাজারের তলানিতে ঠেকে থাকা অবস্থা কেটে যায় (এই অবস্থাকে তালিকায় কখনও কখনও MACD[২২] বলে উল্লেখ করা হয়), তখন বিকাশশীল পণ্যের শেয়ারেরই দ্রুত উন্নতি হয়। স্বাস্থ্যপরিষেবা ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যগুলো কী ভাবে স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরে, তা নিয়ে উল্লেখযোগ্য মতবিরোধ রয়েছে।[২৩] শেয়ারের পোর্টফোলিও একাধিক আন্তর্জাতিক শেয়ারে ভাগ করে দিলে কিছুটা নিরাপত্তা সম্ভাবনা আসতে পারে; তবে যে সব অর্থনীতি ঘনিষ্ঠভাবে মার্কিন অর্থনীতির সঙ্গে জড়িত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মন্দা এলে তারাও প্রভাবিত হতে পারে।[২৪]
এ প্রসঙ্গে অর্ধেকের নিয়ম (হাফওয়ে রুল) [২৫] নামে একটি মতের উল্লেখ করা যায়। এই মত অনুসারে মন্দার মাঝপথে বিনিয়োগকারীরা অর্থনীতির স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরার বিষয়টির সূযোগ নিতে শুরু করেন। ১৯১৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১৬ টি মার্কিন মন্দার গড় দৈর্ঘ্য ছিল ১৩ মাস, যদিও সাম্প্রতিক মন্দাগুলির দৈর্ঘ্য আরও কম। তাই ২০০৮-এর মন্দা যদি সেই গড় নিয়মটিই অনুসরণ করে থাকে, তা হলে শেয়ার বাজারের অধোগতি ২০০৮-এর নভেম্বর নাগাদ একেবারে তলানিতে গিয়ে ঠেকার কথা।
অর্থনৈতিক পরিস্থিতির জন্য সাধারণত দেশের তৎকালীন প্রশাসনকেই প্রশংসা অথবা দোষের ভাগী হতে হয়।[২৬] এর ফলে একটি মন্দা ঠিক কখন শুরু হয়েছে, তা নিয়ে মতবিরোধ সৃষ্টি হয়।[২৭] কোনও অর্থনৈতিক সম্প্রসারণ যদি এমন একটি স্তরে পৌঁছয় যেখানে তার পক্ষে টিকে থাকা আর সম্ভবপর নয়, তা হলে তার ফলাফলই হল অর্থনৈতিক চক্রের অধোগতি, এবং সংক্ষিপ্ত একটি পতনের দ্বারা সেই পরিস্থিতি সংশোধিত হয়। তাই এই আবর্তের কোন নির্দিষ্ট পর্যায়ের কারণকে আলাদা করা খুব একটা সহজ কাজ নয়।
রোনাল্ড রেগান দায়িত্ব নেওয়ার আগে ১৯৮১ সালে যে মন্দা হয় তার কারণ হিসেবে দায়ী করা হয় ফেডেরাল রিজার্ভ বোর্ডের চেয়ারম্যান পল ভোলকারের মুদ্রা-সংকোচন নীতিকে (টাইট-মানি পলিসি)। রেগান এই নীতিকে সমর্থন করেছিলেন। ১৯৬০-এর দশকে কাউনসিল অফ ইকনমিক এডভাইসারস-এর চেয়ারম্যান, অর্থনীতিবিদ ওয়াল্টার হেলার বলেছিলেন, "এই মন্দাকে আমি রেগান-ভোলকার-কার্টার মন্দা বলব।[২৮] তবে এই মুদ্রাস্ফীতি সংকোচনের ফলে অবশ্য রেগানের শাসনকালে শক্তিশালী অর্থনৈতিক বিকাশের পথ প্রশস্ত হয়ছিল।
সাধারণভাবে মনে করা হয়[ওয়েসেল শব্দ], মন্দা এবং তার তীব্রতার উপর সরকারের কাজকর্মের কিছু প্রভাব থাকে। [তথ্যসূত্র প্রয়োজন]অর্থনীতিবিদেরাও বলেন যে সাধারণত মন্দা সম্পূর্ণরূপে এড়ানো সম্ভব নয় এবং তার কারণগুলিও সঠিকভাবে বোঝা যায় না। ফলে, আধুনিক সরকার ও প্রশাসন মন্দা প্রশমিত করতে কিছু পদক্ষেপ নেয়, কিন্তু সেগুলি নিয়েও মতবিরোধ থাকে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এই পদক্ষেপগুলি মন্দা আটকানোর ক্ষেত্রে অন্তত ব্যর্থ, এবং এই পদক্ষেপগুলি নেওয়ার কারণে মন্দা কম তীব্র অথবা দীর্ঘায়িত হয়েছে কিনা, তা স্থির করাও কঠিন।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
বিশ্বব্যাপী মন্দার কোনও সাধারণভাবে স্বীকৃত সংজ্ঞা নেই। IMF-এর বক্তব্য অনুসারে বিশ্বের বিকাশ যখন ৩% এর কম, তখন সেই পরিস্থিতিকে বিশ্বব্যাপী মন্দা বলা যায়।[২৯] IMF-এর আনুমানিক হিসেব অনুসারে ৮ থেকে ১০ বছরের এক-একটি চক্র অন্তর বিশ্বব্যাপী মন্দা দেখা দেয়। গত তিন দশক ধরে IMF যে তিনটি মন্দাকে বিশ্বব্যাপী মন্দা আখ্যা দিয়েছে, সেই ক্ষেত্রগুলোতে বিশ্ব জুড়ে মাথাপিছু উৎপাদন বৃদ্ধির হার ছিল শূন্য বা ঋণাত্মক ।[৩০]
ইন্টারন্যাশনাল মানিটারি ফান্ড (IMF)-এর অর্থনীতিবিদেরা বলেন বিশ্বব্যাপী মন্দার কারণে বিশ্বের বিকাশের হার তিন শতাংশ বা তারও কম হবে। এই মান অনুসারে ১৯৮৫ সাল থেকে এ পর্যন্ত চারটি সময়সীমা উপযুক্ত বলে চিহ্নিত হয়েছে: ১৯৯০-১৯৯৩, ১৯৯৮, ২০০১-২০০২ এবং ২০০৮-২০০৯।
অর্থনীতিবিদদের মত অনুযায়ী, ১৮৫৪ সাল থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গড়ে ১৭ মাসের সংকোচন ও ৩৮ মাসের সম্প্রসারণ মোট ৩২ টি সম্প্রসারণ ও সংকোচন চক্র কার্যকরী হয়েছে।[৮] তবে ১৯৮০ সাল থেকে একটি অথবা তার বেশি[৩১] আর্থিক ত্রৈমাসিক সময়সীমায় মাত্র আটটি ঋণাত্মক অর্থনৈতিক বিকাশ দেখা গিয়েছে এবং তার মধ্যে চারটি সময়সীমাকে মন্দা হিসেবে গণ্য করা হয়:
গত তিনটি মন্দার ক্ষেত্রে NBER-এর সিদ্ধান্ত পর পর দুটি ত্রৈমাসিক ক্ষেত্রে আর্থিক পতনের সংজ্ঞার সঙ্গে মোটামুটিভাবে এক মত হয়েছে। ২০০১ সালের মন্দার ক্ষেত্রে দুটি পর পর ত্রৈমাসিক পতন না হলেও এই মন্দা হওয়ার আগে পর্যায়ক্রমে দুটি পতন ও ক্ষীণ বৃদ্ধির হার দেখা যায়।[৩১]
সরকারি সূত্রে প্রাপ্ত অর্থনৈতিক তথ্য অনুযায়ী ২০০৯-এর শুরুর দিকে বহু দেশ মন্দার কবলে পড়ে। ২০০৭ সালের শেষ দিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মন্দা দেখা দেয়,[৩৩] এবং ২০০৮ সালে আরও অনেকগুলি দেশ অনুসরণ করেছিল।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আবাসন বাজারের সংশোধনী (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আবাসনের বুদবুদ -এর একটা সম্ভাব্য ফলাফল) এবং উপমুখ্য বন্ধকী সংকট মন্দা পরিস্থিতি সৃষ্টির ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলেছিল।
২০০৮-২০০৯ সালের মন্দার সময় বিগত ২০ বছরের মধ্যে প্রথমবার ব্যক্তিগত ব্যয়ের পরিমাণে হ্রা ঘটে। এর থেকেই সাম্প্রতিক মন্দার তীব্রতা এবং গভীরতার আন্দাজ পাওয়া যায়। উপভোক্তাদের আস্থা অত্যন্ত কম হয়ে যাবার ফলে এই মন্দা থেকে এর থেকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে দীর্ঘ সময় লাগবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উপভোক্তারা সাম্প্রতিক মন্দার ফলে দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তাঁদের বাড়ির মূল্য কমে গিয়েছে এবং শেয়ার বাজারে বিনিযুক্ত তাঁদের পেনশনের সঞ্চয়ও ক্ষতির মুখে পড়েছে। উপভোক্তারা শুধু যে নিজেদের সম্পদ ক্ষয় হতে দেখছেন তাই নয় - বেকারত্ব বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে তাঁরা এখন নিজেরাও কর্মহীনতার আশঙ্কায় ভুগছেন। [৩৪]
২০০৮-এর ফেব্রুয়ারিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিয়োগকর্তারা ৬৩,০০০ কর্মীকে চাকরি থেকে ছাঁটাই করেছেন,[৩৫] গত পাঁচ বছরে যা সর্বোচ্চ। ৬ই এপ্রিল, ২০০৮ এ ফেডেরাল রিজার্ভের প্রাক্তন সভাপতি (চেয়ারম্যান) এলান গ্রিনস্প্যান বলেন, "মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মন্দা দেখা দেওয়ার আশঙ্কা রয়েছে ৫০ শতাংশেরও অধিক।" [৩৬]। ১লা অক্টোবর ব্যুরো অফ ইকনমিক অ্যানালিসিস জানায় যে সেপ্টেম্বরে আরোও অতিরিক্ত ১৫৬,০০০ জনের চাকরি ছাঁটাই হয়েছে। ২০০৮ সালের ২৯শে এপ্রিল মুডি'স ঘোষণা করেন যে নয়টি মার্কিন প্রদেশ মন্দা কবলিত হয়েছে। ২০০৮-এর নভেম্বরে নিয়োগকর্তারা ৫৩৩,০০০ জন কর্মীকে ছাঁটাই করেন যেটা ৩৪ বছরের ইতিহাসে এক মাসে সর্বোচ্চ ছাঁটাইয়ের দৃষ্টান্ত।[৩৭]। ২০০৮ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আনুমানিক ২.৬ মিলিয়ন (এক মিলিয়ন = ১০ লক্ষ) জনের চাকরি ছাঁটাই করা হয়।[৩৮]
২০০৯-এর মার্চে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বেকারত্বের হার বেড়ে ৮.৫ শতাংশে পৌঁছয়, এবং ২০০৭-এর ডিসেম্বরে মন্দা শুরু হওয়ার সময় থেকে ২০০৯-এর মার্চ পর্যন্ত ৫.১ মিলিয়ন কর্মী চাকরি থেকে ছাঁটাই হয়েছেন।[৩] মাত্র এক বছর আগেকার পরিস্থিতির তুলনায় তা প্রায় পাঁচ মিলিয়ন বেশি।[৪] ১৯৪০-এর দশকের পর বেকার মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে এটি বাত্সরিক হিসেবে সর্বোচ্চ বৃদ্ধি।[৫]
প্রথম ত্রৈমাসিকে মার্কিন অর্থনীতি প্রায় ১% বৃদ্ধি পেলেও[৩৯][৪০] কিছু বিশ্লেষকের মতে ঋণ ক্ষেত্রে দীর্ঘায়িত সংকট এবং "তেল, খাদ্যবস্তু ও ইস্পাতের মতো ভোগ্যপণ্যে প্রচণ্ড মুদ্রাস্ফীতির" ফলে দেশ মন্দা-কবলিতই ছিল।[৪১] ২০০৮ সালের তৃতীয় ত্রৈমাসিকে জাতীয় গড় আয়ে ০.৫% সংকোচন দেখা দেয়,[৪২] যা ২০০১-এর পরে সর্বোচ্চ পতন। তৃতীয় ত্রৈমাসিকে পোশাক এবং খাদ্যের মতো দীর্ঘকাল টিকে থাকার পক্ষে অণুপযুক্ত ভোগ্যপণ্যের ক্ষেত্রে ব্যয়ের পরিমাণ ৬.৪% পড়ে যায়, যা ১৯৫০ সালের পর সর্বোচ্চ ছিল।[৪৩]
১৭ই নভেম্বর, ২০০৮ এ ফেডেরাল রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ফিলাডেলফিয়ার ৫১ জন পূর্বাভাস প্রদানকারীর করা একটি সমীক্ষা থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায়, মন্দা শুরু হয়েছে ২০০৮ সালের এপ্রিল মাস থেকে এবং তা ১৪ মাস[৪৪] বহাল থাকবে। তারা জানায় চতুর্থ ত্রৈমাসিকে প্রকৃত জাতীয় গড় আয় বার্ষিক ২.৯% হারে পড়বে এবং ২০০৯-এর প্রথম ত্রৈমাসিকে এই হার দাঁড়াবে ১.১%। এই পূর্বাভাসগুলি তিন মাস আগের করা পূর্বাভাসের তুলনায় উল্লেখযোগ্য অধোগতির কথা বলে।
২০০৮ সালের ১লা ডিসেম্বর ন্যাশনাল ব্যুরো অফ ইকনমিক রিসার্চের একটি প্রতিবেদন জানায় যে ২০০৭-এর ডিসেম্বর থেকে (যখন অর্থনৈতিক কার্যকলাপ তুঙ্গে ছিল) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মন্দা-কবলিত হয়ে পড়েছে। চাকরি থেকে ছাঁটাই, ব্যক্তিগত আয় হ্রাস এবং প্রকৃত জাতীয় আয়ের নিম্নগতির মতো কিছু মানদণ্ডের ভিত্তিতে এই প্রতিবেদনটি দেওয়া হয়েছিল।[৪৫] ২০০৯ সালের জুলাইয়ের মধ্যে ক্রমবর্ধমান সংখ্যায় অর্থনীতিবিদরা বিশ্বাস করতে থাকেন যে মন্দা হয়তো শেষ হয়ে গিয়েছে।[৪৬][৪৭] কিন্তু ন্যাশনাল ব্যুরো অফ ইকনমিক রিসার্চ সরকারিভাবে এই ঘোষণা করতে আরও কিছুদিন সময় নেবে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ২০০১ সালের মন্দার ক্ষেত্রে ২০০১-এর নভেম্বরেই মন্দা শেষ হয়ে গিয়েছিল, কিন্তু ২০০৩ সালের জুলাইয়ের আগে NBER সরকারিভাবে সে মর্মে কোনও ঘোষণা করেনি।[৪৮]
অন্যান্য আরও কয়েকটি দেশ নিজেদের জাতীয় গড় আয় বৃদ্ধির হার পতিত হতে দেখেছে। এর কারণ হিসেবে দায়ী করা হয় কমে যাওয়া আর্থিক সাচ্ছল্য, খাদ্য ও শক্তি ক্ষেত্রে মুদ্রাস্ফীতি এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মন্দাকে। EEA-এর মধ্যে এই দেশগুলির অন্তর্গত হল ব্রিটিশ যুক্তরাজ্য, আয়ারল্যান্ড, কানাডা, জাপান, চিন, ভারত, নিউজিল্যান্ড এবং অন্যান্য আরও কয়েকটি দেশ। এর মধ্যে কিছু দেশের ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞেরা ইতোমধ্যেই মন্দা পরিস্থিতি ঘোষণা করেছেন, বাকিরা পর পর দুটি ত্রৈমাসিকে ঋণাত্মক বিকাশ হয়েছে কিনা জানার জন্য এখনও চতুর্থ ত্রৈমাসিকের জাতীয় গড় আয়ের বিকাশের তথ্যের অপেক্ষায় রয়েছে। ভারত ও চিন অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে স্লথগতির মুখোমুখি হলেও পুরোপুরি মন্দার মুখে পড়েনি। আফ্রিকা ও দক্ষিণ আফ্রিকাও অর্থনৈতিক স্লথগতি ও বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া মন্দার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। অস্ট্রেলিয়া ২০০৯ সালের প্রযুক্তিগত মন্দা এড়াতে সক্ষম হয়েছে এবং বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক অধঃপতন সত্ত্বেও ধনাত্মক বিকাশ ঘটাতে পেরেছে।
|publishdate=
উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য)
A downturn in the property market, especially in turnover (sales) of properties, is a leading indicator of recession, with a lead time of up to 9 quarters...