অলক্ষ্মী | |
---|---|
অন্যান্য নাম | নৈর্ঋতা বা নির্ঋতি, জ্যেষ্ঠা |
দেবনাগরী | अलक्ष्मी |
মন্ত্র | অলক্ষ্মী নাশন মন্ত্র (অলক্ষ্মীকে ধ্বংস করার মন্ত্র) |
বাহন | গাধা |
গ্রন্থসমূহ | লিঙ্গ পুরাণ[১]
শ্রী সুক্তম পদ্মপুরাণ |
ব্যক্তিগত তথ্য | |
দম্পত্য সঙ্গী | কলি |
সন্তান | মন্থন (পুত্র) এবং মন্থি (কন্যা) |
গ্রিক সমকক্ষ | ইরিস |
রোমান সমকক্ষ | দিস্করদিয়া |
অলক্ষ্মী একজন হিন্দু দেবী। তিনি লক্ষ্মীর ছায়া এবং দুর্ভাগ্যের দেবী। অলক্ষ্মী কল্কি পুরাণ ও মহাভারত কথিত দৈত্য কলির দ্বিতীয়া স্ত্রী।[২]
অলক্ষ্মীর বর্ণনায় তাকে “গোরু-খেদানো, হরিণের মতো পদবিশিষ্ট ও বৃষের মতো দন্তযুক্তা” বলা হয়েছে।[৩] অপর বর্ণনা অনুযায়ী, “তাঁর দেহ শুষ্ক, গাল কুঞ্চিত, ওষ্ঠাধর স্ফীত, ক্ষুদ্র, গোলাকার ও উজ্জ্বল চক্ষুবিশিষ্টা এবং তিনি গর্দভের পিঠে উপবিষ্টা।”[৩] তিনি কখনও কখনও লক্ষ্মীর বাহন পেচকের রূপ ধারণ করেন। মনে করা হয়, পেচক হল “লক্ষ্মী দ্বারা আনীত সৌভাগ্যের সঙ্গে আসা ঔদ্ধত্য ও মূর্খামির প্রতিনিধি এবং দুর্ভাগ্যের প্রতীক।”[৩] এই জন্য লক্ষ্মীর ভক্তেরা পেচকের থেকে দূরে থাকেন।[৩]
অলক্ষ্মীর জন্ম-সংক্রান্ত অনেকগুলি উপাখ্যান রয়েছে। একটি উপাখ্যানের মতে, লক্ষ্মী প্রজাপতির মুখের আভা থেকে জন্ম নেন, এবং অলক্ষ্মী জন্ম নেন প্রজাপতির পৃষ্ঠদেশ থেকে। অপর একটি উপাখ্যান অনুযায়ী, লক্ষ্মীর জন্ম সমুদ্রমন্থনের সময়। এইসময় বাসুকি নাগের মুখনিসৃত কালকূট বিষ থেকে অলক্ষ্মীর জন্ম হয়।[৩] এই কাহিনীর পাঠান্তর অনুযায়ী, দু’জনেই সমুদ্রমন্থনের সময় জন্ম নেন। অলক্ষ্মী আগে জন্মান।[৪] অপর একটি কাহিনী অনুযায়ী, “বলা হয়, যখন অলক্ষ্মী গৃহে প্রবেশ করেন, তখন তিনি সেই গৃহে ঈর্ষা ও অমঙ্গল নিয়ে আসেন। তিনি ভ্রাতৃদ্বন্দ্ব এনে কুলবিনাশ করেন।”[৫]
অপর একটি উপাখ্যান অনুযায়ী, অলক্ষ্মী তার কনিষ্ঠা ভগিনীকে বিষ্ণুর মতো স্বামীর সঙ্গে বৈকুণ্ঠে বাস করতে দেখে মনঃক্ষুণ্ণ হয়েছিলেন। কারণ তার স্বামী বা বাসস্থান কিছুই ছিল না। লক্ষ্মী তখন তাকে বর দেন, “কলি হবে অলক্ষ্মীর স্বামী এবং অপরিচ্ছন্ন, কুৎসিত, আলস্য, অত্যাচার, ঈর্ষা, ক্রোধ, ভণ্ড, লোভ ও কামের মধ্যে তিনি বাস করবেন।”[৩][৬]
খ্রিষ্টপূর্ব সপ্তম ও দশম শতাব্দীর মধ্যে তামিলনাড়ু এবং কর্ণাটকে তার পূজা প্রাচীনকাল থেকেই প্রচলিত। অন্যান্য দেবীদের সাথে তার পুজো তামিলনাড়ুতে করা হত। সময়ের বিবর্তনের সাথে সাথে তার পূজা কমতে শুরু করে এবং তাকে অনেকে অশুভ বলে বিবেচনা করতে শুরু করে। কিছু জায়গায় তার মূর্তির মুখ নিচের দিকে দিয়ে সমাধি দেওয়া হয়েছিল।তিরুক্কুরাল, নন্দিকালম্বকাম, কাম্বা রামায়ণম, আজভার প্রভান্দম এবং সঙ্গম সাহিত্যে তার উল্লেখ আছে। বেশ কয়েকটি শিলালিপিতে তার উল্লেখ পাওয়া গেছে। চোল আমলে নির্মিত দেবীর একটি পাথরের ভাস্কর্য থাঞ্জাভুর জেলার আদানজুরে ওপিলা অম্বিকাই-আনন্দীশ্বর মন্দিরের বাইরের দেওয়ালে অবহেলিত অবস্থায় পাওয়া গেছে।[৭]
হিন্দুদের উৎসব দীপাবলির সন্ধ্যায় বাংলার বিভিন্ন অঞ্চলে হিন্দু রমণীদের দ্বারা কৃত অনুষ্ঠান বিশেষ। অলক্ষ্মী অমঙ্গল ও অশুভের প্রতীক। তাই অলক্ষ্মী বিদায় করে লক্ষ্মীবরণই এই অনুষ্ঠানের উদ্দেশ্য। গোবর দিয়ে অলক্ষ্মীর এবং পিটুলি দিয়ে লক্ষ্মী, কুবের ও নারায়ণের মূর্তি নির্মাণ করা হয়। উঠানের এক কোণে অলক্ষ্মীর মূর্তি রেখে প্রথমে পূজা করা হয়। পূজা শেষে মেয়েরা কুলো পিটাতে পিটাতে মূর্তিটি তেমাথায় নিয়ে যায়। সেখানে সমবেত কণ্ঠে 'লক্ষ্মী আয়, অলক্ষ্মী যা' ধ্বনি সহকারে মূর্তিটি ফেলে দেওয়া হয়। ফেরার পথে, আলোর রোশনাই মশালের চল। পুরুষেরা বাজাতে থাকেন ঢাক, কাঁসর, ঘণ্টা। এরপর গৃহিণীরা গৃহে ফিরে লক্ষ্মীর পূজা করে।[৮]