অশনি সংকেত | |
---|---|
পরিচালক | সত্যজিৎ রায় |
প্রযোজক | শ্রাবণী ভট্টাচার্য |
চিত্রনাট্যকার | সত্যজিৎ রায় |
উৎস | বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় কর্তৃক অশনি সংকেত (উপন্যাস) |
শ্রেষ্ঠাংশে | |
সুরকার | সত্যজিৎ রায় |
চিত্রগ্রাহক | সৌমেন্দু রায় |
সম্পাদক | দুলাল দত্ত |
প্রযোজনা কোম্পানি | বলাকা মুভিস্ |
পরিবেশক | নন্দা ভট্টাচার্য |
মুক্তি |
|
স্থিতিকাল | ১০১ মিনিট |
দেশ | ভারত |
ভাষা | বাংলা |
অশনি সংকেত হল ১৯৭৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত একটি বাংলা চলচ্চিত্র। বিশিষ্ট ভারতীয় চলচ্চিত্র পরিচালক সত্যজিৎ রায় এই ছায়াছবিটি পরিচালনা করেন। ছায়াছবিটি নির্মিত হয়েছিল বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা একই নামের একটি উপন্যাস অবলম্বনে।[১] অশনি সংকেত সত্যজিৎ রায় পরিচালিত প্রথম রঙিন ছায়াছবি। ছায়াছবিতে মুখ্য ভূমিকায় অভিনয় করেন বিশিষ্ট ভারতীয় অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় ও বাংলাদেশী অভিনেত্রী ববিতা। অন্যান্য ভূমিকায় অভিনয় করেন সন্ধ্যা রায়, চিত্রা বন্দ্যোপাধ্যায়, পরিতোষ বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ। নাট্যাভিনেতা মৃত্যুঞ্জয় শীল অভিনীত প্রথম ছায়াছবিও এটি।[২]
ছায়াছবির মূল বিষয় ছিল তেতাল্লিশের মন্বন্তর এবং তার পরিপ্রেক্ষিতে গ্রামীণ বাংলার আর্থ-সামাজিক পটপরিবর্তন। বর্তমানে এই ছায়াছবিটি " দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস গাইড টু দ্য বেস্ট ১,০০০ মুভিজ এভার মেড" তালিকার অন্তর্ভুক্ত।[২]
অশনি সংকেত ছায়াছবিটির পটভূমি ১৯৪৩-৪৪ সালের দুর্ভিক্ষপীড়িত বৃহত্তর বাংলা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটিশ সরকার সেনাবাহিনীর জন্য অতিরিক্ত খাদ্য সংগ্রহ করলে বাংলার গ্রামীণ অঞ্চলে তীব্র খাদ্যাভাব দেখা দেয়। ফলে ৫০ লাখ মানুষ মৃত্যুমুখে পতিত হন। এই দুর্ভিক্ষ কীভাবে সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের জীবনকে প্রভাবিত করেছিল তা-ই এই ছায়াছবির মূল উপজীব্য।
গঙ্গাচরণ নামে এক শিক্ষিত ব্রাহ্মণ সস্ত্রীক নতুন গাঁয়ে এসে বসতি স্থাপন করে। নতুন গাঁ ব্রাহ্মণবিহীন, সেই সুযোগে ধূর্ত গঙ্গাচরণ সেখানকার প্রধান পুরোহিত হয়ে টোল খোলার পরিকল্পনা করতে থাকেন। সরল গ্রামবাসীরাও নিজেদের মধ্যে একজন ব্রাহ্মণকে পেয়ে খুশি হয়ে ওঠে। তার স্ত্রী অনঙ্গ নিজের মধুর ও স্নেহশীলা স্বভাবের জন্য অচিরেই গ্রাম্যবধূদের ভালবাসা অর্জন করে। এই সময় দুর্ভিক্ষ লাগলে গ্রামে খাদ্যের আকাল দেখা যায়। চতুর গঙ্গাচরণ নিজের জন্য কিছু চাল সংগ্রহ করে নেয়। কিন্তু তাতেও শেষরক্ষা হয় না। অনঙ্গ যখন কায়িক শ্রমের মাধ্যমে কিছু উপার্জনের কথা চিন্তা করতে শুরু করে, তখন অনিচ্ছা সত্ত্বেও গঙ্গাচরণকে সম্মতি দিতে হয়। অনঙ্গ অন্যান্য গ্রাম্যবধূদের সঙ্গে কাজ করতে যায়। এই সময় যদু নামে এক পোড়ামুখ গ্রাম্যযুবক গ্রামের বউ ছুটকিকে ফুঁসলিয়ে নিয়ে যেতে চাইলে ছুটকি তাকে প্রত্যাখ্যান করে। অনঙ্গ তার সোনার বালার বদলে গঙ্গাচরণকে কিছু চাল নিয়ে আসতে বলে। গঙ্গাচরণ চলে গেলে, ছুটকি ও অন্য একটি মেয়ের সঙ্গে অনঙ্গ আলু তুলতে যায় ঝোপে। কিন্তু কায়িক শ্রম অনঙ্গের ধাতে নেই। সে একটি ফুল দেখে আলু ফেলে সেই দিকে ছুটে যায়। এই সময় একটি লোক ছুটকিতে তুলে নিয়ে যেতে চাইলে, আলু তোলার হাতা দিয়ে আঘাত করে ছুটকি তাকে খুন করে। পরে ছুটকি পেটের জ্বালায় সেই পোড়ামুখ লোকটির সঙ্গে পালিয়ে যায়। এই সময় একটি তথাকথিত নিচু জাতের মহিলা মারা গেলে, গঙ্গাচরণ মানবিকতার খাতিরে তার ব্রাহ্মণ্য সংস্কার ত্যাগ করে সেই মহিলার সৎকার করে।
ছায়াছবির শেষে অন্তঃসত্ত্বা অনঙ্গকে নিয়ে গঙ্গাচরণ ও অন্যান্য গ্রামবাসীরা গ্রামত্যাগ করে। শেষে ১৯৪৩ সালের মনুষ্যসৃষ্ট সেই দুর্ভিক্ষে মৃত্যুর খতিয়ান দেখিয়ে ছায়াছবি সমাপ্ত হয়।[৩][৪]