অশ্বত্থ

অশ্বত্থ / পিপুল
Ficus religiosa
অশ্বত্থ গাছ
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস
জগৎ: উদ্ভিদ
বিভাগ: Magnoliophyta
শ্রেণী: Magnoliopsida
বর্গ: Rosales
পরিবার: Moraceae
গণ: Ficus
প্রজাতি: F. religiosa
দ্বিপদী নাম
Ficus religiosa
L.

অশ্বত্থ, অশথ বা পিপুল (বৈজ্ঞানিক নাম: Ficus religiosa) এক প্রকার বট বা ডুমুর জাতীয় বৃক্ষ যার আদি নিবাস স্থানীয় ভারতীয় উপমহাদেশ[] এবং ইন্দোচীন[] বাংলাদেশ, নেপাল, মায়ানমার, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, দক্ষিণ পশ্চিম চীন প্রভৃতি দেশেও এটি দেখতে পাওয়া যায়। এটি Moraceae পরিবারভুক্ত সপুষ্পক উদ্ভিদ। [][]

বর্ণনা

[সম্পাদনা]

অশ্বত্থ গাছ ৩০ মিটার লম্বা হতে পারে। এর কান্ডের বেড় ৩ মিটার পর্যন্ত হতে পারে। এর ফুলগুলো ফলের ভেতরে লুকায়িত থাকে। এর পাতা পান পাতার আকৃতির, ডগায় লেজ থাকে। পাতা ১০-১৭ সেমি লম্বা এবং ৮-১২ সেমি চওড়া। শীতকালে এর পাতা ঝরে যায়, বসন্তে তামাটে রঙের কচি পাতা গজায়। পিপল ফল ডুমুরের মতই তবে পাকা ফল বেগুনি রঙের; কাঁচা ফল সবুজ; ফলের আকার ১-১.৫ সেমি। এই গাছতলায় অল্প বাতাসেও ঝমঝম আওয়াজ শোনা যায়। পাতার লেজের সাথে পাতার ফলকের আঘাতেই এমন শব্দ হয়। অশ্বত্থে ঝুরিমূল থাকে না। অশ্বত্থ গাছের বনসাই বেশ জনপ্রিয়।

অশ্বত্থ একটি দীর্ঘজীবী গাছ যার, গড় আয়ু ৯০০-১৫০০ বছর। কয়েকটি স্থানীয় আবাসস্থলে এটি ৩০০০ বছরের বেশি সময় ধরে বসবাস করছে বলে জানা যায়। এছাড়াও ২০০০ বছরের পুরোনো কিছু গাছের বর্ণনা পাওয়া গেছে, যেমন শ্রীলঙ্কার প্রাচীন শহর অনুরাধাপুরের পিপুল গাছ জয়া শ্রী মহা বোধি যা ২২৫০ বছরেরও বেশি বয়সী বলে মনে করা হয় এবং এটি "বিশ্বের প্রাচীনতম ঐতিহাসিক ধর্মীয় গুরুত্ববহ গাছ"।

বিস্তার

[সম্পাদনা]

অশ্বত্থ মূলত এশিয়ার গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলের অধিবাসী হলেও বর্তমানে এটি সারা বিশ্বে বিস্তার লাভ করছে, চাষ করা হয়েছে এবং কিছু ক্ষেত্রে এটি প্রাকৃতিকভাবে অভিযোজিত হয়ে গিয়েছে।

এশিয়া

[সম্পাদনা]

অশ্বত্থ ভারতীয় উপমহাদেশ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া যেমন বাংলাদেশ, ভুটান, চীন (ইউনান প্রদেশ), ভারত (আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ বাদে), লাওস, নেপাল, পাকিস্তান, থাইল্যান্ড এবং ভিয়েতনাম অঞ্চলের স্থানীয় বৃক্ষ। প্রাথমিকভাবে ২৮৮ খ্রিস্টপূর্বাব্দে শ্রীলঙ্কা এবং পরে ফিলিপাইনসিঙ্গাপুরসহ অন্যান্য প্রতিবেশী এশীয় দেশগুলিতে এর সূচনা হয়েছিল।

আফ্রিকা

[সম্পাদনা]

আফ্রিকার চাদে অশ্বত্থ একটি স্থানীয় প্রজাতি। এছাড়া এটি মিশর, লিবিয়ামাদাগাস্কারে চাষ করা হয়।

ধর্মীয় গুরুত্ব

[সম্পাদনা]

অশ্বত্থ গাছ সনাতন হিন্দু, জৈনবৌদ্ধ ধর্মে পবিত্র বলে বিবেচিত হয়।

বৌদ্ধধর্ম

[সম্পাদনা]

গৌতম বুদ্ধ এক অশ্বত্থ বৃক্ষের নিচে ধ্যান করার সময় বোধি (জ্ঞান) লাভ করেন। এই স্থানটি বর্তমানে ভারতের বিহারে বুদ্ধগয়ায় অবস্থিত। যদিও মূল গাছটি একাধিকবার ধ্বংস হয়ে গিয়েছে, এবং প্রতিস্থাপিত হয়েছে। মূল গাছের একটি শাখা ২৮৮ খ্রিস্টপূর্বাব্দে শ্রীলঙ্কার অনুরাধাপুরে রোপণ করা হয় এবং এটি জয় শ্রী মহা বোধি নামে পরিচিত। এটি বিশ্বের প্রাচীনতম সপুষ্পক উদ্ভিদ।

যে-কোনও অশ্বত্থ বৃক্ষকে ‘বোধিবৃক্ষ’ বলা যায় না। গৌতম বুদ্ধ যে অশ্বত্থ বৃক্ষটির নিচে বোধিলাভ করেন, সেই বৃক্ষের বংশধরদেরকেই বোধিবৃক্ষ বলে। এর অন্যান্য নামগুলো হলো বোধিবৃক্ষ, বোধিদ্রুম, Bo-Tree, Bo, bawdir, bodhi tree, holy tree ইত্যাদি। সংস্কৃত ভাষায় 'বোধি' শব্দের অর্থ 'জ্ঞান'; এই শব্দটি শ্রীলঙ্কায় বিবর্তিত হয়ে 'বো' শব্দে রূপান্তরিত হয়েছে।

সনাতন হিন্দুধর্ম

[সম্পাদনা]

হিন্দু সাধু-সন্ন্যাসীরা এখনও পবিত্র অশ্বত্থ গাছের নিচে ধ্যান করেন এবং হিন্দু ধর্মাবলম্বীগণ অশ্বত্থ গাছের চারপাশে প্রদক্ষিণ করেন। সাধারনত "বৃক্ষ রাজায় নমঃ" বলতে বলতে গাছের চারপাশে সাত বার প্রদক্ষিণ করা হয়, যার অর্থ "গাছের রাজাকে নমস্কার"। ধারণা করা হয় যে বিশেষ ২৭ টি গাছ, ২৭ টি নক্ষত্রকে প্রতিনিধিত্ব করে। এর মধ্যে অশ্বত্থ গাছ পুষ্যা নক্ষত্রের প্রতিনিধিত্ব করে।

৺শ্রীমদ্ভাগবতগীতায় ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলছেন— “আমি গাছের মধ্যে পিপুল, ঋষিদের মধ্যে নারদ, গান্ধারদের মধ্যে চিত্ররথ এবং সিদ্ধপুরুষদের মধ্যে ঋষি কপিল।”

ব্যবহার

[সম্পাদনা]
লেজওয়ালা পিপল পাতা

ডায়াবেটিস, ডায়রিয়া, মৃগীরোগ, গ্যাস্ট্রিক সমস্যা, প্রদাহজনক রোগ, সংক্রামক এবং যৌন রোগ সহ প্রায় ৫০ ধরনের রোগের জন্য অশ্বত্থ গাছ ব্যবহার করা হয়।

ছবির গ্যালারি

[সম্পাদনা]

আরও দেখুন

[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. Chisholm, Hugh, ed. (1911). "Peepul" . Encyclopædia Britannica. 21 (11th ed.). Cambridge University Press. p. 45.
  2. "Ficus religiosa". Germplasm Resources Information Network (GRIN). Agricultural Research Service (ARS), United States Department of Agriculture (USDA). Retrieved 29 January 2017.
  3. Oxford English Dictionary, Oxford University Press, 1971, p. 1014
  4. "Ficus religiosa — Peepal"। Flowers of India। সংগ্রহের তারিখ নভেম্বর ৩, ২০১১