Australopithecus anamensis সময়গত পরিসীমা: প্লায়োসিন | |
---|---|
জীবাশ্ম | |
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস | |
জগৎ: | Animalia |
পর্ব: | Chordata |
শ্রেণী: | Mammalia |
বর্গ: | Primates |
পরিবার: | Hominidae |
উপপরিবার: | Homininae |
গণ: | Australopithecus or Praeanthropus |
প্রজাতি: | অঃ আনামেন্সিস or P. anamensis |
দ্বিপদী নাম | |
অস্ট্রালোপিথেকাস আনামেন্সিস M.G. Leakey et al., 1995 |
অস্ট্রালোপিথেকাস আনামেন্সিস হচ্ছে হোমিনিন প্রজাতি। অনুমান করা হয়; এই প্রজাতি আজ থেকে ৪৪ লক্ষ বছর পূর্বে বসবাস করত। ইথিওপিয়া[১] কেনিয়া থেকে প্রায় একশতের মত জীবাশ্ম আবিষ্কৃত হয়।[২][৩] এই জীবাশ্মগুলো ২০ জন আলাদা আলাদা মানুষের বলে শনাক্ত করা হয়েছে। অঃ আনামেন্সিসকে; অঃ আফারেন্সিস এর পূর্বপুরুষ বলে মেনে নেওয়া হয়েছে। এবং আঃ এনামেন্সিস বিবর্তনীয় বংশধারায় এগিয়ে যেতে থাকে।[৪] তুর্কানা হ্রদের অববাহিকা থেকে প্রাপ্ত জীবাশ্ম এটাই সুনিশ্চিত করে, অস্ট্রালোপিথেকাস আনামেন্সিস প্রাক হোমিনিন প্রজাতি।[৫]
১৯৬৫ সালে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদল তুকার্না হ্রদের পশ্চিম পাড়ের কানাপোই অঞ্চলে প্লায়োসিন স্তরের বাম উর্ধ্ববাহুর জীবাশ্ম হাড়ের খণ্ড খুঁজে পান। এটাই ছিল অস্ট্রালোপিথেকাস আনামেন্সিস এর প্রথম নমুনা জীবাশ্ম।[৬] এই হাড়ের উপর ব্রাইয়ান পিটারসন এবং উইলিয়াম ডব্লিও. হাওয়েলস তাদের গবেষণা প্রবন্ধ ১৯৬৭ সালে সায়েন্স জার্নালে প্রকাশ করেন। তারা প্রাথমিক ভাবে অনুমান করেন অস্ট্রালোপিথেকাসের এই নমুনার বয়স ২৫ লক্ষ বছর আগের।[৭] পরবর্তীতে প্যাটারসন এবং তার সহযোগীরা সে এলাকার অন্যান্য উপাত্তকে পুনঃপরীক্ষণের মাধ্যমে এই নমুনার বয়স আজ থেকে ৪০-৪৫ লক্ষ বছর আগের বলে প্রস্তাব করেন।[৮][৬]
১৯৯৪ সালে, লন্ডন বংশোদ্ভুত কেনীয় প্রত্ননৃতত্ত্ববিদ মিভ লিকি প্রত্নতত্ত্ববিদ এলান ওয়াকার এলান বে এলাকাকে খনন করেন। তারা সেখানে প্রচুর সংখ্যক (মোট ২১ টা) জীবাশ্মের টুকরো আবিষ্কার করেন। এই জীবাশ্মের মধ্যে সম্পূর্ণ নিম্ন চোয়ালের হাড় বিশিষ্ট একটি জীবাশ্ম পাওয়া গিয়েছে। এই চোয়ালের হাড় আধুনিক শিম্পাঞ্জির হাড়ের বৈশিষ্ট্য বহন করে। কিন্তু তার দাঁতের বৈশিষ্ট্য সম্পূর্ণরুপে মানুষের বৈশিষ্ট্য বহন করে। খুলির নিচের অংশের জীবাশ্মের অপর্যপ্ততার জন্য সুনিশ্চিত না হলেও এটা বলা যায় অঃ আনামেন্সিস দুইপায়েই হাটত, তবে তাদের মধ্যে প্রাক হোমিনিডদের বৈশিষ্ট্যও কিছুটা ছিল।[৯]
১৯৯৫ তে মিভ লিকি এবং তার সহযোগীরা অস্ট্রালোপিথেকাস আফারেন্সিস এবং তাদের প্রাপ্ত নব্য ফসিলের মধ্যকার (অঃ আনামেন্সিস) তুলনা করেন। তারা সিদ্ধান্ত নেন, এই প্রজাতির নাম হবে অঃ আনামেন্সিস। এখানে আনাম শব্দটি এসেছে তুর্কানা ভাষা হতে; যার অর্থ "হ্রদ"।[২]
যদিও অস্ট্রালোপিথেকাস আনামেন্সিস এর কোনো পায়ুর হাড় (হিপবোন বা বস্তিপ্রদেশের হাড়) বা পায়ের হাড় পাওয়া যায় নি, মিভ লিকি বিশ্বাস করেন, এই প্রজাতি গাছে বিচরণ করত। গাছে বিচরণ করা প্রাক হোমিনিনদের একটা বৈশিষ্ট্য। পরবর্তীতে ২৫ লক্ষ বছর পূর্বে হোমো প্রজাতির উদ্ভবের মাধ্যমে গাছে বিচরণের অধ্যায়ের সম্পূর্ণ সমাপ্তি ঘটে। অঃ আনামেন্সিস এর সাথে অস্ট্রালোপিথেকাস আফারেন্সির (লুসি) অনেক মিল আছে। হতে পারে, এই লুসির সরাসরি পূর্বপুরুষ হলো অঃ আনামেন্সিস। অঃ আনামেন্সিস এর জীবাশ্ম রেকর্ড থেকে জানা যায়, এই জীবাশ্ম ৪২ থেকে ৩৯ লক্ষ বছর পূর্বের।[১০] সাম্প্রতিক সময়ের স্তরীয় বয়সসীমার পারিসংখ্যানিক উপাত্ত থেকে এর বয়স অনুমান করা হয়েছে ৪১ থেকে ৪২ লক্ষ বছর পূর্বের।[১]
২০০৬ সালে আসা ইসসে নামে পরিচিত একটি সাইটে প্রাপ্ত অঃ আনামেন্সিস এর ৩০ টার মত জীবাশ্ম এটাই সুনিশ্চিত করে অঃ আনামেন্সিস উত্তর পূর্ব ইথিওপিয়া পর্যন্ত ছড়িয়ে গিয়েছিল।[১১] এই জীবাশ্মের মধ্যে আছে হোমোনিডদের সবচেয়ে বড় শ্বদন্ত। [১] এই জীবাশ্ম যেস্থানে পাওয়া গিয়েছে; তার নাম মধ্য আওয়াশ, এই স্থানে অন্যান্য আধুনিক অস্ট্রালোপিথেকাসের ঘর বলে জানা যায়। এবং প্রাপ্ত জীবাশ্ম থেকে মাত্র ৬ মাইল (৯.৭ কি.মি.) দূরে আর্ডিপিথেকাস র্যামিডাস এর জীবাশ্ম পাওয়া গিয়েছে। আর্ডিপিথেকাস প্রাক হোমিনিড; বিবর্তনীয় বৃক্ষে আর্ডিপিথেকাসের নিচে অস্ট্রালোপিথেকসের স্থান। অঃ আনামেন্সিস ৪২ লক্ষ বছ আগে বিচরণ করত; যেখানে আর্ডিপিথেকাস র্যামিডাস ৪৪ লক্ষ বছর পূর্বে বাস করত বলে অনুমেয়।[১২]
অস্ট্রালোপিথেকাস আনামেন্সিস কেনিয়া বিশেষ করে পূর্ব তুরকানার আলিয়া অববাহিকায় পাওয়া গিয়েছে। অনুমান করা হয়, সে পরিবেশ অনেক বেশি আর্দ্র ছিল। তবে তা চূড়ান্ত নয়। এবিষয়ে আরো গবেষণার প্রয়োজন আছে।[১৩]
অস্ট্রালোপিথেকাস আনামেন্সিস এর আণবিক জীবাশ্মের উপর করা গবেষণা থেকে দেখা গিয়েছে, এই প্রজাতি এবং আধুনিক গরিলার খাদ্যাভ্যাস একই।[১৪]
অঃ অ্যানামেন্সিসের দন্ত-পাটি স্পষ্টতই বনমানুষ সুলভ। এদের দাঁতে অনেক আদিম লক্ষণ রয়ে গেছে। যেমন, বড় শ্ব-দন্ত, অধিবৃত্তের বদলে আয়তাকার দন্তসারি, সাদৃশ্যহীন প্রাকমাড়ি এবং মাড়ির দাঁত। নিচের ছেদন দাঁতের পিছনে বিরাট হাড়ের তাক, মায়োসিন আর আধুনিক বনমানুষের মত থুতনি পিছনে ঢালু হয়ে নেমে যাওয়া। আরেকটা আদিম বৈশিষ্ট্য হলো মুখের ভিতিরের তালু অগভীর হওয়া, যদিও পরবর্তী কালের হোমিনিড অঃ আফারেন্সিস এর বেলায়ও তেমনই অগভীর তালু দেখা গিয়েছে। সাধারণ ভাবে বলতে গেলে একটা হোমিনিডের জন্য অঃ অ্যানামেন্সিসের দন্ত চরিত্র বড়ই আদিম। অঃ অ্যানামেন্সিস এর দীর্ঘ নিম্নবাহু আর কবজি সন্ধির বৈশিষ্ট্য এর গাছে চড়ার সাক্ষ্য বহন করে।[১৫]
আর্ডিপিথেকাস র্যামিডাস এর মধ্যে দেখা যায় নি, এরকম অর্জিত অগ্রসর ঝোঁকও অঃ অ্যানামেন্সিস এর মধ্যে আছে। এদের দাঁতের এনামেল খুবই পুরু, মাড়ির দাঁতগুলো আড়াআড়িভাবে প্রসারিত, যাতে দৈর্ঘ্যের সাথে প্রস্থের ছোট অনুপাত হয়েছে, যা প্রায় অঃ আফারেন্সিস এর কাছাকাছি (মাড়ির দাঁতের দৈর্ঘ্যের সাথে প্রস্থের অনুপাত, আঃ র্যামিডাস এর ১.৪৯, অঃ অ্যানামেন্সিস এর ১.৪, অঃ আফারেন্সিস এর ১.২)।[১৫]
অস্ট্রালোপিথেকাস অ্যানামেন্সিস এর শিরপরবর্তী দেহকাঠামোতে অন্য গল্প লুকিয়ে আছে। এই দেহ কঙ্কালীয় লক্ষণগুলো হচ্ছে আসল, যা সন্দেহাতীত দ্বিপদ হিসাবে এর সত্যিকারের পরিচয় বহন করে। টিবিয়া বা পায়ের নিম্নাংশের বড় হাড়ের নিচের অংশ এর চলার ক্ষমতার সঠিক সুত্র দিয়েছে। দুই পায়ে হাটার সময় যে সব জায়গায় বেশি চাপ পরে, অঃ আনামেন্সিস এর টিবিয়ার সেসব জায়গা খুবই পুরু। টিবিয়ার সর্বনিম্ন সংযোগ তল, যা মুড়িসন্ধির ট্যালাস হাড়ের সাথে যুক্ত হয়, তা সরাসরি নিম্নমুখী হয়ে আছে। চতুষ্পদীর বেলায় টিবিয়ার নিচের সংযোগ তল নিচে এবং সামনের দিকে কোণাকুণি হয়ে থাকে। উপরন্তু উরুর হাড়ের নিম্নপ্রান্তের সাথে মিলে হাঁটুসন্ধি গঠনকারী এই টিবিয়া হাড়ের একদম উপরের সংযোগ তলগুলি গভীর ভাবে অবতল, সামনে পিছনে প্রশস্ত এবং দুইপাশে সমান আকারের। এই সব বৈশিষ্ট্য এখনো আধুনিক মানুষের হাটুঁতে রয়ে গেছে।[১৫]
অস্ট্রালোপিথেকাস অ্যানামেন্সিস এর এই টিবিয়ার হাড় আর ঐ উর্ধ্ববাহুর হাড় অঃ আফারেন্সিস এর চেয়ে হোমো বা নর গোত্রের সাথে বেশি সাদৃশ্যপুর্ণ। যদিও এটা সম্পূর্ণভাবে নিশ্চিত নয়, গবেষণা পর্যায়ে থাকা এই উপাত্ত সত্য হলে বলতে হবে হোমো স্যাপিয়েন্স; অঃ আফারেন্সিস এর চেয়ে ৪০ লক্ষ বছরের পুরোনো অস্ট্রালোপিথেকাস অ্যানামেন্সিস এর বেশি নিকটাত্মীয়।[১৫]