অ্যাঞ্জেলা ল্যান্সবারি | |
---|---|
Angela Lansbury | |
![]() ২০১৩ সালে ল্যান্সবারি | |
জন্ম | অ্যাঞ্জেলা ব্রিজিট ল্যান্সবারি ১৬ অক্টোবর ১৯২৫ |
মৃত্যু | ১১ অক্টোবর ২০২২ | (বয়স ৯৬)
নাগরিকত্ব | যুক্তরাজ্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আয়ারল্যান্ড |
পেশা |
|
কর্মজীবন | ১৯৪৩-বর্তমান |
দাম্পত্য সঙ্গী | রিচার্ড ক্রোমওয়েল (বি. ১৯৪৫; বিচ্ছেদ. ১৯৪৬) পিটার শ (বি. ১৯৪৯; মৃ. ২০০৩) |
সন্তান | ২ |
পিতা-মাতা | এডগার ল্যান্সবারি মোয়না ম্যাকগিল |
পরিবার | ব্রুস ল্যান্সবারি (ভাই) এডগার ল্যান্সবারি (ভাই) জর্জ ল্যান্সবারি (পিতামহ) টামারা ইউস্টিনফ (বোনঝি) জন পোস্টগেট (cousin) অলিভার পোস্টগেট (cousin) কোরাল ল্যান্সবারি (cousin) |
ডেম অ্যাঞ্জেলা ব্রিজিড ল্যান্সবারি ডিবিই (ইংরেজি: Angela Brigid Lansbury; ১৬ অক্টোবর ১৯২৫ - ১১ অক্টোবর ২০২২) হলেন একজন ব্রিটিশ-আইরিশ-মার্কিন অভিনেত্রী। তিনি মঞ্চ, টেলিভিশন ও চলচ্চিত্রে অভিনয় করে থাকেন। তার কর্মজীবনের ব্যপ্তি আট দশক, যার অধিকাংশই তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কাজ করেছেন। তার কাজগুলো আন্তর্জাতিক খ্যাতি অর্জন করেছে।
১৯৪২ সালে তিনি মেট্রো-গোল্ডউইন-মেয়ারের সাথে সাত বছরের জন্য চুক্তিবদ্ধ হন এবং গ্যাসলাইট (১৯৪৪) ও দ্য পিকচার অব ডোরিয়ান গ্রে (১৯৪৫) চলচ্চিত্রে কাজের সুযোগ পান। এই দুটি কাজের জন্য তিনি দুটি একাডেমি পুরস্কার ও একটি গোল্ডেন গ্লোব পুরস্কারের মনোনয়ন লাভ করেন। তিনি এরপর এমজিএমের আরও ১১টি চলচ্চিত্রে কাজ করেন, যার অধিকাংশই ছিল পার্শ্ব ভূমিকায়; তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য কাজ হল ন্যাশনাল ভেলভেট (১৯৪৪) ও দ্য হার্ভি গার্লস (১৯৪৬)। ১৯৫২ সালে এমজিএমের সাথে তার চুক্তি সমাপ্ত হলে তিনি চলচ্চিত্রের পাশাপাশি মঞ্চেও কাজ শুরু করেন। যদিও তাকে এই সময়ে বি-তালিকার তারকা হিসেবে দেখা যায়, তিনি দ্য মাঞ্চুরিয়ান ক্যান্ডিডেট (১৯৬২) চলচ্চিত্রে তার অভিনয়ের মধ্য দিয়ে ব্যাপক সমাদৃত হন এবং এটিকে তার অন্যতম সেরা কাজ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। এই কাজের জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেত্রী বিভাগে একাডেমি পুরস্কারের মনোনয়ন লাভ করেন। মঞ্চে ফিরে গিয়ে তিনি ব্রডওয়ের সঙ্গীতনাট্য মেম (১৯৬৬)-এ প্রধান চরিত্রে অভিনয় করে তারকা খ্যাতি অর্জন করেন এবং একাধিক পুরস্কার অর্জন করেন।
ল্যান্সবারি একটি সম্মানসূচক অস্কার, স্ক্রিন অ্যাক্টরস গিল্ড থেকে আজীবন সম্মাননা, ব্রিটিশ একাডেমি অব ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন আর্টস (বাফটা) থেকে একটি আজীবন সম্মাননা, পাঁচটি টনি পুরস্কার, ছয়টি গোল্ডেন গ্লোব পুরস্কার এবং একটি লরন্স অলিভিয়ে পুরস্কার অর্জন করেছেন। এছাড়া তিনি একাধিক পুরস্কারের মনোনয়ন লাভ করেছেন, সেগুলো হল তিনবার শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেত্রী বিভাগে একাডেমি পুরস্কার, এবং আটবার বিভিন্ন বিভাগে প্রাইমটাইম এমি পুরস্কার,[১] ও একটি গ্র্যামি পুরস্কার। ২০১৪ সালে রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ তাকে অর্ডার অব দ্য ব্রিটিশ এম্পায়ারের ডেম কমান্ডার উপাধিতে ভূষিত করেন।
ল্যান্সবারি ১৯২৫ সালের ১৬ই অক্টোবর এক উচ্চ মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।[২] যদিও পূর্ব লন্ডনের পোপলারকে তার জন্মস্থান হিসেবে উল্লেখ করা হয়,[৩] কিন্তু তিনি তাতে অস্বীকৃতি জানান এবং বলেন যে তার পূর্বপুরুষগণের পোপলারে বসতি থাকলেও তিনি মধ্য লন্ডনের রিজেন্ট্স পার্কে জন্মগ্রহণ করেন।[৪][৫] তার মাতা বেলফাস্টে জন্মগ্রহণকারী মোয়না ম্যাকগিল (জন্ম শার্লট লিলিয়ান ম্যাকইল্ডোই) নিয়মিত ওয়েস্ট এন্ড মঞ্চে অভিনয় করতেন এবং কয়েকটি চলচ্চিত্রে শ্রেষ্ঠাংশে অভিনয় করেছেন।[৬] তার পিতা এডগার ল্যান্সবারি ছিলেন একজন ধনাঢ্য ইংরেজ কাঠের বণিক ও রাজনীতিবিদ। তিনি গ্রেট ব্রিটেনের কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য ছিলেন এবং পোপলার মেট্রোপলিটন বরার সাবেক নগরপাল ছিলেন।[৭] অ্যাঞ্জেলার পিতামহ ছিলেন লেবার পার্টির নেতা ও যুদ্ধ-বিরোধী সক্রিয়কর্মী জর্জ ল্যান্সবারি।[৮] অ্যাঞ্জেলার এক বড় সৎ বোন ছিল, তার নাম ইসোল্ডে। ইসোল্ডে মোয়না ও তার পূর্বের স্বামী লেখক ও পরিচালক রেজিনাল্ড ডেনহামের কন্যা।[৯] ১৯৩০ সালের জানুয়ারি মাসে যখন অ্যাঞ্জেলার চার বছর বয়স, তখন তার মা দুই যমজ সন্তান জন্ম দেন, তারা হলেন ব্রুস ও এডগার ল্যান্সবারি।[১০]
তার মায়ের দেওয়া এক পার্টিতে ল্যান্সবারি জন ভ্যান ড্রুটেনের সাথে পরিচিত হন। ড্রুটেন সদ্য প্যাট্রিক হ্যামিলটনের ১৯৩৮ সালের নাটক গ্যাসলাইট অবলম্বনে একই নামের (১৯৪৪) রহস্য-রোমহর্ষক চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্য রচনা করেছেন। ভিক্টোরিয় লন্ডনের প্রেক্ষাপটে নির্মিত চলচ্চিত্রটি পরিচালনা করেন জর্জ কিউকর এবং এতে প্রধান চরিত্র পলা অ্যালকোয়েস্ট ভূমিকায় অভিনয় করেন ইংমার বারিমান। ভ্যান ড্রুটেন মনে করেন ল্যান্সবারি লন্ডনবাসী গৃহিপরিচারিকা ন্যাসি অলিভার চরিত্রের জন্য উপযুক্ত। ল্যান্সবারি এই ভূমিকায় কাজ করতে সম্মতি জানান। তখন তার বয়স ছিল ১৭, তার সেটে তাকে সঙ্গ দেওয়ার জন্য একজন সামাজিক কর্মী রাখা হয়। আর্ল ক্রেমার নামে একজন প্রতিনিধি নিয়োগ দেওয়ার পর তিনি মেট্রো-গোল্ডউইন-মেয়ারের সাথে প্রতি সপ্তাহে $৫০০ পারিশ্রমিকের বিনিময়ে সাত বছরের চুক্তিতে আবদ্ধ হন। তিনি তার প্রকৃত নামই মঞ্চনাম হিসেবে ব্যবহার করেন।[১১] গ্যাসলাইট চলচ্চিত্রটি মুক্তির পর মিশ্র প্রতিক্রিয়া অর্জন করে, যদিও ল্যান্সবারির অভিনয় প্রশংসিত হয়। চলচ্চিত্রটি ছয়টি বিভাগে একাডেমি পুরস্কারের মনোনয়ন লাভ করে, তন্মধ্যে একটি ছিল ল্যান্সবারির শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেত্রী বিভাগে।[১২]
১৯৪৫ সালের ২৭শে সেপ্টেম্বর ল্যান্সবারি চিত্রশিল্পী ও নকশাকার রিচার্ড ক্রোমওয়েলকে বিয়ে করেন। এই বিয়ের পর তার অভিনয় জীবন থমকে যায়। তাদের বৈবাহিক জীবনে সমস্যা দেখা যায়; ক্রোমওয়েল সমকামী ছিলেন এবং তিনি নিজের যৌন অভিমুখীতার পরিবর্তন আনার জন্য ল্যান্সবারিকে বিয়ে করেছিলেন। ১৯৪৬ সালের ১১ই সেপ্টেম্বর ল্যান্সবারির বিবাহবিচ্ছেদের নোটিশ প্রদানের মধ্য দিয়ে তাদের এই বিয়ের পরিসমাপ্তি ঘটে, তবে তারা আমৃত্যু বন্ধু ছিলেন।[১৩] ১৯৪৬ সালের ডিসেম্বর মাসে ওজাই ভ্যালিতে তার সাবেক সহশিল্পী হুর্ড হ্যাটফিল্ডের এক পার্টিতে তিনি ইংরেজ প্রবাসী অভিনেতা পিটার পুলেন শ'য়ের সাথে পরিচিত হন। শ সে সময়ে উদীয়মান অভিনেতা ছিলেন এবং তিনিও এমজিএমের সাথে চুক্তিবদ্ধ ছিলেন। শ কিছুদিন পূর্বেই জোন ক্রফোর্ডের সাথে সম্পর্কে জড়িত ছিলেন। শ ও ল্যান্সবারি একত্রে বসবাস শুরু করেন এবং ল্যান্সবারি বিয়ের প্রস্তাব দেন।[১৪]
২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাসে ল্যান্সবারি বিবিসি টেলিভিশনের মিনি ধারাবাহিক লিটল উইমেন-এ আন্ট মার্চ চরিত্রে অভিনয় শুরু করেন।[১৫] তিনি ১৯৬৪ সালের একাডেমি পুরস্কার বিজয়ী ম্যারি পপিন্স চলচ্চিত্রের অনুবর্তী পর্ব ম্যারি পপিন্স রিটার্নস (২০১৮) চলচ্চিত্রে এমিলি ব্লান্টের সাথে শ্রেষ্ঠাংশে অভিনয় করেন। গল্পটি মহামন্দার ২০ বছরের পরের লন্ডনের প্রেক্ষাপটে নির্মিত। চলচ্চিত্রটির চিত্রগ্রহণ শুরু হয় ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে শেপারটন স্টুডিওজে এবং এটি ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে মুক্তি পায়।[১৬]
২০১৯ সালের ১৮ই নভেম্বর ল্যান্সবারি ব্রডওয়ে মঞ্চে প্রত্যাবর্তন করেন এবং রাউন্ডঅ্যাবাউট থিয়েটার কোম্পানির আমেরিকান এয়ারলাইন্স থিয়েটারের জন্য অস্কার ওয়াইল্ডের দি ইমপোর্টেন্স অব বিয়িং আর্নেস্ট নাটকে লেডি ব্র্যাকনেল চরিত্রে অভিনয় করেন।[১৭]
ল্যান্সবারি ২০২২ সালের ১১ই অক্টোবর তার ৯৭তম জন্মদিনের পাঁচদিন পূর্বে লস অ্যাঞ্জেলেসে তার নিজ বাড়িতে মৃত্যুবরণ করেন। তার সন্তানেরা নিশ্চিত করেন যে তিনি ঘুমের মধ্যে মারা যান।[১৮][১৯]