অ্যাডাম হলিউক

অ্যাডাম হলিউক
ব্যক্তিগত তথ্য
পূর্ণ নাম
অ্যাডাম জন হলিউক
জন্ম (1971-09-05) ৫ সেপ্টেম্বর ১৯৭১ (বয়স ৫৩)
মেলবোর্ন, অস্ট্রেলিয়া
ব্যাটিংয়ের ধরনডানহাতি
বোলিংয়ের ধরনডানহাতি মিডিয়াম
ভূমিকাঅল-রাউন্ডার
সম্পর্কবিসি হলিউক (ভাই)
আন্তর্জাতিক তথ্য
জাতীয় দল
টেস্ট অভিষেক
(ক্যাপ ৫৮৭)
৭ আগস্ট ১৯৯৭ বনাম অস্ট্রেলিয়া
শেষ টেস্ট৯ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৮ বনাম ওয়েস্ট ইন্ডিজ
ওডিআই অভিষেক
(ক্যাপ ১৪৩)
৩১ আগস্ট ১৯৯৬ বনাম পাকিস্তান
শেষ ওডিআই৩০ মে ১৯৯৯ বনাম ভারত
ঘরোয়া দলের তথ্য
বছরদল
১৯৯২-২০০৪সারে
২০০৭এসেক্স
খেলোয়াড়ী জীবনের পরিসংখ্যান
প্রতিযোগিতা টেস্ট ওডিআই এফসি এলএ
ম্যাচ সংখ্যা ৩৫ ১৭৩ ২৮৪
রানের সংখ্যা ৬৫ ৬০৬ ৯,৩৭৬ ৫,৯৮৪
ব্যাটিং গড় ১০.৮৩ ২৫.২৫ ৩৮.৭৪ ২৮.০৯
১০০/৫০ ০/০ ০/৩ ১৮/৫৫ ২/৩০
সর্বোচ্চ রান ৪৫ ৮৩* ২০৮ ১১৭*
বল করেছে ১৪৪ ১,২০৮ ৮,৮০৮ ৯,০৭৪
উইকেট ৩২ ১২০ ৩৫২
বোলিং গড় ৩৩.৫০ ৩১.৮৪ ৪১.০৫ ২৩.২৫
ইনিংসে ৫ উইকেট
ম্যাচে ১০ উইকেট - -
সেরা বোলিং ২/৩১ ৪/২৩ ৫/৬২ ৬/১৭
ক্যাচ/স্ট্যাম্পিং ৪/– ১৩/– ১৫৭/– ৮৭/–
উৎস: ইএসপিএনক্রিকইনফো.কম, ২১ জুলাই ২০১৭

অ্যাডাম জন হলিউক (ইংরেজি: Adam Hollioake; জন্ম: ৫ সেপ্টেম্বর ১৯৭১) মেলবোর্নে জন্মগ্রহণকারী অস্ট্রেলীয় বংশোদ্ভূত সাবেক ইংরেজ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার। ইংল্যান্ড ক্রিকেট দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন তিনি। ১৯৯৬ থেকে ১৯৯৯ সময়কালে ইংল্যান্ডের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশগ্রহণ করেছেন।

ঘরোয়া প্রথম-শ্রেণীর ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে সারে ও এসেক্সের প্রতিনিধিত্ব করেছেন।[] দলে তিনি মূলতঃ অল-রাউন্ডার হিসেবে খেলতেন। ডানহাতে ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি ডানহাতে মিডিয়াম বোলিং করতেন অ্যাডাম হলিউক

একমাত্র আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার হিসেবে পেশাদার ক্রীড়াবিদের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন তিনি। পেশাদারী পর্যায়ে মিশ্র মার্শাল আর্ট ক্রীড়ায় অংশ নিয়েছেন।[] এছাড়াও, পেশাদার মুষ্টিযোদ্ধা হিসেবেও অংশ নিয়েছেন তিনি। তবে, সারে ও ইংল্যান্ড দলের পক্ষে ক্রিকেট খেলেই সর্বাধিক পরিচিতি লাভ করেছেন হলিউক। তন্মধ্যে, ১৯৯৭ থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত সারে দলের নেতৃত্বে ছিলেন। এ সময় দলকে তিনবার কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশীপের শিরোপা লাভে সহায়তা করেন। এছাড়াও, ইংল্যান্ড ক্রিকেট দলকে একদিনের আন্তর্জাতিকে অধিনায়ক হিসেব পরিচালনা করেছেন তিনি। ২০০৩ সালে উইজডেন কর্তৃক বর্ষসেরা ক্রিকেটার হিসেবে মনোনীত হন।[]

নিজ মাতৃভূমি অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৭ আগস্ট, ১৯৯৭ তারিখে তার টেস্ট অভিষেক হয়। একদিনের আন্তর্জাতিকে প্রথমবারের মতো ৩১ আগস্ট, ১৯৯৬ তারিখে পাকিস্তানের বিপক্ষে অভিষিক্ত হন তিনি।

২০০৪ সালে ক্রিকেট খেলা থেকে অবসর নেয়ার পর হলিউক দাতব্য সংস্থার অর্থ যোগানে নিজেকে সম্পৃক্ত করেন এবং গণমাধ্যমে অংশগ্রহণসহ আবাসন প্রকল্পের ব্যবসায় নিজেকে সম্পৃক্ত করেন।[] এরপর তিনি পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার পার্থে চলে যান[] ও পরবর্তীকালে কুইন্সল্যান্ডে স্থানান্তরিত হন। তবে, ২০১০ সালে তার আবাসন প্রতিষ্ঠানটি দেউলিয়া হয়ে যায়।[][][]

প্রারম্ভিক জীবন

[সম্পাদনা]

১৯৭১ সালে মেলবোর্নে হলিউকের জন্ম। খনিজ শহর বলারাটে তার শৈশবকাল অতিবাহিত হয়। সেখানে তার পরিবার পাঁচ প্রজন্ম ধরে বসবাস করতেন।[] প্রকৌশলী বাবা স্থানীয় দলের পক্ষে ক্রিকেট খেলায় অংশ নিতেন। তবে, বলারাটের সেন্ট প্যাট্রিকস কলেজে অধ্যয়নকালীন অস্ট্রেলীয় রুলস ফুটবলে অংশ নিতেন।[] ১৯৮৩ সালে তার পরিবার ইংল্যান্ডে চলে যায়। সেখানে হলিউক ওয়েব্রিজের সেন্ট জর্জেস কলেজে ভর্তি হন।

অস্ট্রেলিয়ায় জন্মগ্রহণ করলেও অ্যাডাম ও তার ভাই বেন তাদের ক্রিকেট জীবনে হংকং ক্রিকেট ক্লাব জুনিয়ন গ্যাপার্সের পক্ষে খেলতেন। এ সময় তাদের বাবা জন যুক্তরাজ্যে গমনের পূর্বে হংকংয়ে কাজ করতেন। ১৯৮৪ সালে কনিষ্ঠ ভ্রাতা বেন হলিউককে সাথে নিয়ে ইংল্যান্ডে চলে যান।

প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট

[সম্পাদনা]

১৯৮৯ সালে সারে দলের পক্ষে খেলার জন্য চুক্তিবদ্ধ হন। আগস্ট, ১৯৯৩ তারিখে ঐ কাউন্টি দলের পক্ষে প্রথমবারের মতো প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে তার।[] ১৯৯৫ সালে কাউন্টি ক্যাপ পরিধান করেন তিনি। ঐ মৌসুমে তিনি ১০৯৯ রান ও ২১ উইকেট পান।[] তিনি অল-রাউন্ডার হিসেবে চিত্রিত হন। আক্রমণধর্মী ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি মিডিয়াম পেস বোলিংয়ে দক্ষতা দেখিয়েছেন তিনি।[]

১৯৯৬ সালে অ্যালেক স্টুয়ার্টের সাথে যৌথভাবে সারে দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৭ থেকে ২০০৩ সালে পর্যন্ত সারের অধিনায়কত্ব করেন। ১৯৯৯, ২০০০ ও ২০০২ সালে কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশীপের শিরোপা বিজয়ে প্রভূতঃ ভূমিকা রাখেন।[] সারের অধিনায়ক থাকাবস্থায় ৯টি শিরোপা পান। এরফলে প্রথম-শ্রেণীর দলের সর্বকালের তালিকায় অন্যতম সফলতম অধিনায়কের মর্যাদা পান তিনি।[]

আন্তর্জাতিক ক্রিকেট

[সম্পাদনা]

আগস্ট, ১৯৯৬ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে দুইটি একদিনের আন্তর্জাতিকে অংশগ্রহণের মাধ্যমে তার ইংরেজ দলে অভিষেক ঘটে।[] ১৯৯৬-৯৭ মৌসুমে অস্ট্রেলিয়া সফরে ইংল্যান্ড এ দলের নেতৃত্ব দেন। মে, ১৯৯৭ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে একদিনের আন্তর্জাতিক সিরিজে ম্যান অব দ্য সিরিজ মনোনীত হন। তিন খেলার সবগুলোতেই তিনি জয়সূচক রান করেন।[] আগস্ট, ১৯৯৭ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সহোদর ভ্রাতা বেন হলিউককে সাথে নিয়ে টেস্টে অভিষিক্ত হন। প্রথম ইনিংসে ৪৫ রান করেন ও দুই উইকেট দখল করেন তিনি।[][]

১৯৯৭ সালে স্বীয় ভ্রাতা বেন হলিউকের সাথে একত্রে ইংল্যান্ডের একদিনের দলে যোগ দেন। ঐ বছর পর তারা একই খেলায় টেস্টে অংশ নেন। এরফলে, দুই ভাইয়ের একত্রে টেস্টে অংশগ্রহণের তৃতীয় ঘটনা সৃষ্টি করেন।

১৯৯৭ সালের অ্যাশেজ সিরিজে ইংল্যান্ডের ফলাফল ভালো হয়নি। ছয়-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ২-১ ব্যবধানে স্বাগতিক দল পরাজয়বরণ করে। ৭ আগস্ট, ১৯৯৭ তারিখে সিরিজের পঞ্চম টেস্টে বেন ও অ্যাডামের একত্রে টেস্ট অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। এরফলে, একই টেস্টে দুই ভাইয়ের ইংল্যান্ডের পক্ষে টেস্টে খেলার ঘটনা ঘটে। এছাড়াও, গ্রেস ও হার্ন ভ্রাতৃদ্বয়ের পর অভিষেকে তাদের অংশগ্রহণের তৃতীয় ঘটনার উৎপত্তি হয়।

তার টেস্ট খেলোয়াড়ী জীবন স্বল্পকালের জন্য ১৯৯৭ সাল ও ১৯৯৮ সালের শুরুরদিকে মাত্র চার টেস্টের হলেও একদিনের আন্তর্জাতিকে বেশ সফলতা পান। ১৯৯৬ থেকে ১৯৯৯ সময়কালে ৩৫ খেলায় অংশ নেন।[] মাইক অ্যাথারটনের পদত্যাগের কারণে অ্যাডাম হলিউককে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ওডিআই সিরিজে অধিনায়কের দায়িত্ব দেয়া হয়। ১৯৯৭ সালের শারজাহ কাপের শিরোপা বিজয়ে নেতৃত্ব দেন যা দশ বছরের মধ্যে কোন প্রতিযোগিতায় শিরোপা লাভের প্রথম ঘটনা।[][] আঘাতপ্রাপ্তি ও দূর্বল ক্রীড়াশৈলীর কারণে ১৪ খেলায় অধিনায়কত্বের পর পদত্যাগ করতে হয়।[][]

সারে দলের পক্ষে ১৭৩টি প্রথম-শ্রেণীর খেলায় অংশ নেয়ার পর ২০০৪ মৌসুম শেষে ক্রিকেট থেকে অবসর নেন হলিউক।[] ২০০৫ সালের এশীয় সুনামী আক্রান্তদের সহায়তায় দাতব্য খেলায় অংশ নেন ও হ্যাট্রিক করেন।[][১০] ২০০৭ সালে সংক্ষিপ্তকালের জন্য টুয়েন্টি২০ ক্রিকেটে ফিরে আসেন ও এসেক্সের পক্ষে আট খেলায় অংশ নেন।[১১][১২]

দাতব্য কর্ম

[সম্পাদনা]

২০০২ সালে তার ভাই, সারে ও ইংল্যান্ড দলীয় সঙ্গী বেন সড়ক দূর্ঘটনায় নিহত হন। এরপর হলিউক ও তার পরিবার শিশুদের চেস হসপিস কেয়ারের আর্থিক তহবিল বৃদ্ধিতে বেন হলিউক ফান্ড প্রতিষ্ঠা করেন।[]

২০০৩ সালে ‘দ্য জার্নি’ শিরোনামে এডিনবরা থেকে হাটা, ইংলিশ চ্যানেলের ব্রাইটন থেকে দাইপেয় নৌকাচালনা, দাইপেয়ে থেকে জিব্রাল্টার ও জিব্রাল্টার থেকে তাঞ্জিয়ার্স পর্যন্ত নৌকাচালনা অংশ নেন।[] এ ভ্রমণ শেষ করতে দুই মাসের অধিক সময় কেটে যায় ও হাজার হাজার পাউন্ড সংগৃহীত অর্থ চেস চ্যারিটিতে দান করেন। এছাড়াও, অর্থ সংগ্রহ কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ২০০৪ সালে ধারাবাহিকভাবে ১০০-মিটার রিলে দৌড় আয়োজনে বিশ্বরেকর্ড সৃষ্টি হয়।[১৩]

মিশ্র মার্শাল আর্ট

[সম্পাদনা]

এপ্রিল, ২০১২ সালে অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ডে মিশ্র মার্শাল আর্ট ক্রীড়ার লাইট হেভিওয়েট বিভাগে অংশগ্রহণের মাধ্যমে নতুন খেলোয়াড়ী জীবনের সূত্রপাত ঘটান তিনি।[][] ইতোপূর্বে একবার মুষ্টিযোদ্ধা হিসেবে অংশগ্রহণকারী হলিউক চতুর্থ রাউন্ডে তার প্রতিপক্ষকে ঘুষি মেরে ফেলে দেন। ৫ মে, ২০১২ তারিখে অনুষ্ঠিত ঐ খেলায় ড্রয়ের প্রাধান্য দেখা গেলেও[][] একজন বিচারক হলিউকের সমর্থনে এগিয়ে আসেন। এরফলে তিনি এমএমএতে ভবিষ্যত জীবন গড়ে তোলেন।[১৪] ১ সেপ্টেম্বর, ২০১২ তারিখে হলিউক ওয়ারেন ট্রেসিডারকে পরাভূত করেন।[১৫][১৬]

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. Wilde.S (2003) Adam Hollioake – Wisden cricketer of the year, Wisden. Retrieved 2011-05-29.
  2. "Adam Hollioake Sherdog Fight Record"। Sherdog.com। সংগ্রহের তারিখ ৫ মে ২০১২ 
  3. Hollioake calls it a day, BBC sport website, 2004-09-01. Retrieved 2011-05-29.
  4. Brett.O (2005) Life after cricket, BBC sport website, 2005-06-21. Retrieved 2011-05-29.
  5. Chronnell.P (2011) Former England cricket star Adam Hollioake declared bankrupt, The Guardian, 2011-07-15. Retrieved 2012-05-06.
  6. Ronay.B (2012) Former England cricket captain Adam Hollioake to become a cage-fighter, The Guardian, 2012-04-28. Retrieved 2012-05-06.
  7. Cricketer to cage-fighter, BBC, 2012-04-18. Retrieved 2012-05-06.
  8. England vs Australia, 5th test 1997, Scorecard, ESPNcricinfo. Retrieved 2011-05-29.
  9. Hollioake to run London Marathon, BBC sport website, 2007-03-21. Retrieved 2011-05-29.
  10. Blewett, Hollioake hit high notes, BBC sport website, 2005-06-20. Retrieved 2011-05-29.
  11. McGlashan.A Coverdale.B(2008) Welcome back, we weren't expecting you, ESPNcricinfo, 2008-05-08. Retrieved 2011-05-29.
  12. Essex sign Hollioake for Twenty20, BBC sport website, 2007-06-19. Retrieved 2011-05-29.
  13. World relay record for Hollioake, BBC sport website, 22 October 2004. Retrieved 2011-05-29.
  14. Sports new in brief, The Guardian, 2012-05-05. Retrieved 2012-05-06.
  15. From Test cricket to cage fighting for bankrupt Hollioake ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২২ জুলাই ২০১২ তারিখে, The Herald , 2012-07-18. Retrieved 2012-07-18.
  16. Adam Hollioake v Warren Tresidder[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ] Jul 12, 2013, from BoxRec.com, retrieved 14 November 2015

আরও দেখুন

[সম্পাদনা]

বহিঃসংযোগ

[সম্পাদনা]