এ্যাডামস নদী Adams River | |
The Lower Adams during the salmon run
| |
দেশ | কানাডা |
---|---|
রাজ্য | ব্রিটিশ কলম্বিয়া |
অঞ্চল | Interior |
উৎস | Monashee Range |
মোহনা | |
- অবস্থান | Shuswap Lake, British Columbia, Canada |
দৈর্ঘ্য | ১৭৭ কিলোমিটার (১১০ মাইল) (includes Adams Lake) |
অববাহিকা | ২,৮৬০ বর্গকিলোমিটার (১,১০৪ বর্গমাইল) |
প্রবাহ | for Shuswap Lake |
- গড় | ২৪০ m³/s (৮,৪৭৬ ft³/s) [১] |
- সর্বোচ্চ | ৩৯৬ m³/s (১৩,৯৮৫ ft³/s) |
অ্যাডামস নদী হলো কানাডার ব্রিটিশ কলাম্বিয়ায় অবস্থিত ফ্রেজার নদীর একটি উপনদী। মনাশী পর্বতমালার উত্তর দিক থেকে শুরু করে দক্ষিণ দিকে প্রবাহিত হয়ে অ্যাডামস লেক ছুঁয়েছে এই নদীটির উচ্চ দিক। নিম্নতর অ্যাডামস নদী অ্যাডামস লেকের দক্ষিণ দিক থেকে শুরু করে সুসওয়াপ হ্রদ এর একবারে পশ্চিম সীমানায় গিয়ে মিলেছে। উক্ত অ্যাডামস নদীটি উত্তর আমেরিকার শক-আই স্যামন প্রজনন অঞ্চলগুলোর মাঝে অন্যতম। অক্টোবারের মাঝামাঝি সময়ে নদীটি'র জোয়ার দখা যায় এবং এই জোয়ারের কারণে নদীর কাছাকাছি মোহনায় প্রচুর শক-আই স্যামন মাছ চলে আসে। উক্ত নদীর তীরে অবস্থিত এক গর্ত বসতি বা গ্রামের (সেকোয়েপেমক) লোকেরা দীর্ঘকাল ধরে স্যামন মাছ ধরার ঐতিহ্য বহন করছে। এছাড়াও এই নদীটি জলজগ্রাম গুলোর যোগাযোগের ক্ষেত্রে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
অ্যাডামস নদীর প্রধাণ অংশ উত্তর-পূর্ব এলাকার মনাশী রেঞ্জে প্রায় ২,০০০ মিটারের হিমবাহ তৈরী করে। অ্যাডামস নদীর উচ্চ জলাভূমি দক্ষিণ-পশ্চিম দিক হয়ে টুমটুম এবং মাইকা লেকের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে গেছে। এই নদীর একটি নদীপ্রপাত রয়েছে। এই নদীটি টুমটুম লেকের নিচে অবস্থিত প্রপাতের উপর দিয়ে বয়ে যায়। এই নদীটি নির্দিষ্ট বিভাগে প্রতি কিলোমিটারে ৫ মিটার ঝরে প্রবাহিত হয়। এভাবে ৯৪ কিলোমিটার প্রবাহিত হবার পর নদীটি স্যুসোয়াপ-এ প্রবেশ করে।[২]
অ্যাডামস লেক এর উত্তর-দক্ষিণ অক্ষ বরাবর প্রায় ৭২ কিলোমিটার (৪৫ মা) পর্যন্ত বিস্তৃত। অর্থাৎ, এর দৈর্ঘ্য ৭২ কিলোমিটার। আর এই লেকের গভীরতা সর্বোচ্চ ৪৫৭ মিটার বা ১,৪৯৯ ফুট।[৩] গভীরতার দিক থেকে এই লেকটি পৃথিবীর ২৪তম গভীর লেক নিম্নতর অ্যাডামস নদী অ্যাডামস লেকের সবচেয়ে দক্ষিণ দিক থেকে শুরু করে একটি সংকীর্ণ উপত্যকা'র মধ্য দিয়ে ১১ কিলোমিটার পর্যন্ত প্রবাহিত হয় এবং স্যুসোয়াপ লেকের কাছাকাছি স্থান দিয়ে সংকীর্ণ উপত্যাকা থেকে বেরিয়ে গেছে।[২]
উচ্চ অ্যাডামস নদীর উপনদীগুলো হলোঃ[২]
অ্যাডামস লেক এবং নিম্ন অ্যাডামস নদী যেসব উপনদীর অন্তর্ভুক্তঃ[২]
সেকোয়েপেম্ক মানুষেরা সহস্রাব্দ থেকে অ্যাডামস নদীর উপত্যাকায় বসবাস করে আসছে। ১৯৭৭ এর প্রাদসশিক সরকারের এক গবেষণায় ছেষট্টিটি প্রমাণ পাওয়া যায় যার মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হয় সেকোয়েপেম্ক মানুষেরা খ্রীষ্ঠপূর্ব ২০০০ অব্দ থেকে বসবাস করে আসছে।[৪] স্যামন অ্যাডামস নদীর তীরে অবস্থিত প্রথম জনবসতির প্রধাণ এবং গুরুত্বপূর্ণ খাদ্য ছিল।[৪]
নৃতত্ত্ববিদ জেম্স টাইট মনে করেন অ্যাডামস নদী অঞ্চলের মানুষেরা সেপওয়েক্যমক মানুষদের নিয়ে একটি উপদল গঠন করেছিল যার নাম ছিল "Sxste'lln", বর্তমানে অ্যাডামস লে ইন্ডিয়ান ব্র্যান্ড হিসেবে পরিচিত।[৪] Sxste'lln রা গ্রীষ্ম এবং শীতকালে নিম্ন অ্যাডামস নদীর বহির্গমন পথের একটি ছোট অঞ্চলে তাদের বাসস্থান সরিয়ে নিত। ১৮৬০-এর দশকের দিকে চিফ সেল-হঊট-কেন ছিলেন Sxste'lln এর নেতা।[৫] তিনি তাঁর নেতৃত্বাধীণ অন্যান্য ২০০ মানুষের মতোই গুটিবসন্ত মহামারীতে মারা যান।[৬]
যদিও সমীক্ষণকারী, শিকারীরা ১৮০০ খ্রীষ্ঠাব্দ এই জায়গাটিতে থেকেই বাস করে আসছে তবুও প্রথম ইউরোপিয়ানরা বৃহৎ আকারে প্রথম এই জায়গায় তাদের কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। জেপি ম্যাকগোল্ড্রিক, একজন স্পোকেনের অভিজ্ঞ করাতী থেকে জানা যায় অ্যাডামস রিভার লাম্বার কোম্পানি ১৯০৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়।[৭] জেপি ম্যাকগোল্ড্রিক এর কোম্পানীকে প্রথম ব্রিটশ-কলাম্বিয়া'র অভ্যন্তরীণ শীল্প কোম্পানী বলা হয়।[৭]
উচ্চ অ্যাডামস নদীর উপরে একটি ক্যাম্প গঠন হয়েছিল; গুঁড়ি কাটার সূচনা হয়েছিল টুমটুম লেকের উপর। গাছের কর্তনকৃত গুঁড়িগুলো অ্যাডামস লেকে পড়তো। পরে গুঁড়িগুলো দিয়ে তৈরী হয় লগ বুম। এবং ঐ কোম্পানি এর কর্তৃত্ব দখল করে নেয়। ১৯০৮ সালে অ্যাডামস রিভার লগিং কোম্পানি "স্পল্যাশ ড্যাম" তৈরী করেছিল যা নিম্ন অ্যাডামস নদীর বহির্গমন পথে অবস্থিত।[৮] "স্পল্যাশ ড্যাম" নামক বাঁধটির মাধ্যমে লেকের পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পায়। যখন পর্যাপ্ত পরিমাণ গাছের গুঁড়ি বাঁধের উপর পড়তো, বাঁধের দরজাগুলো খুলে যেত এবং এর ফলে বন্যার পানিগুলো স্যুসোয়াপ লেকে চলে যেত। তবে এর কারণে স্যামন চালানে সমস্যা হতো। মূলত এই স্পল্যাশ বাঁধের কারণেই স্যামনের চালান ক্ষতিগ্রস্থ হয়।[৮]
নিম্ন অ্যাডামস নদীর উপরের মালভূমি থেকে গাছের গুঁড়ি অগ্রসর করার জন্য অ্যাডামস রিভার লাম্বার কিছু ফ্লুম তৈরী করেছিল। ফ্লুম গুলো ভাসমান গাছের গুঁড়িগুলোকে উপত্যাকার নিচে নিয়ে যেত। এদের মধ্যে সবচেয়ে বড় ফ্লুম ছিল বিয়ার ক্রীক। এটি ছিল ২৫ মিটার বা ৮২ ফুট উচ্চ এবং এটি প্রতি মাসে ৩,০০০,০০০ মিটার বা ৯,৮০০,০০০ ফুট গাছের গুঁড়ি চালান করতে পারতো।.[৭] উচ্চতার দিক থেকে এটিই ছিল উত্তর আমেরিকার সবচেয়ে বড়ো ফ্লুম।[৪] এই কাঠামোটি স্থানীয় মানুষের প্রস্থানের পরে ভেঙে ফেলা হয়ছে।[৭]
বর্তমানে গাছের গুঁড়ি চালানের জন্য অ্যাডামস নদী আর ব্যবহার হয়না।[৯]
জলের বাস্তুসংস্থানের অধিকাংশই দাবানল এবং বন দ্বারা প্রভাবিত হয়েছে, বরং এটিকে সেরাল পর্যায়ের বলে মনে করা হয়। উক্ত নদীটি বিভিন্ন গাছপালভিত্তিক অঞ্চলের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়।[১] নদীটির উচ্চ এলাকার মধ্য দিয়ে নদীটি ইন্টেরিয়র কেডার হ্যামলক অঞ্চলে বয়ে যায়। এই বন ব্রিটিশ-কলাম্বিয়ার উপকূলীয় বনের অনুরূপ এবং এই বনে ১০০০ বছরেরও পুরানো গাছ রয়ছে।.[২] নদীর পাশে অবস্থিত পুরানো গাছগুলো লিচেন বহন করে, যা সম্ভবত গত বরফ যুগ থেকে বিচ্ছিন্ন। উচ্চ অ্যাডামস প্লাবনভূমি জলজ অনেক প্রজাতির গাছ বহন করে। যেমনঃ কালো তুলাগাছ।[২] নিম্ন নদী শুষ্ক ইন্টেরিয়র ডগলাস ফাইর নামক গাছপালাভিত্তিক অঞ্চল দিয়ে প্রবাহিত হয়। ইন্টেরিয়র ডগলাস ফাইর অঞ্চলে বর্তমানে পন্ডেরসা পাইন, এঙ্গল্ম্যান স্প্রুচ এবং আলপিন ফাইর প্রজাতির গাছ রয়েছে।[১] অ্যাডামস নদীর চারপাশের এলাকা মানুষের নানারকম কার্যক্রম দ্বারা পরিবর্তন হয়ে আসছে।[১]
অ্যাডামস নদীর শক-আই স্যামন মাছগুলো তাদের ডিম ছাড়ার স্থান থেকে থম্পসন নদী; হয়ে ফ্রেজার নদী-এ যায় এবং সেখান থেকে প্রশান্ত মহাসাগরে প্রবেশ করে। স্ট্রেইট অব্ জর্জ থেকে স্যামন মাছগুলো তিন বছর খোলা মহাসাগর, আলাস্কা এবং এলেটিয়ান আই্যান্ড-এ অতিক্রম করে। তিন বছর পর ৪,০০০ কিলোমিটার অতিক্রম করে স্যামন মাছগুলো আবার অ্যাডামস নদীতে ফিরে আসে। স্যামন মাছগুলো তাদের ভ্রমণ উজানের সময় এসে শেষ করে। ভ্রমণের মাঝে তারা আবার ফ্রেজার কেনিয় নামক একটি শাখা নদী ১৭ দিনের মধ্যে ভ্রমণ করে আসে। এসময় তারা কোনো খাবার গ্রহণ করেনা, বদলে তারা স্ট্রেইট অব্ জর্জিয়া থেকে আরহণকৃত খাদ্যগুলোর শক্তি দিয়ে তাদের কাজ চালায়।[৯]
অ্যাডামস নদীর নিচে গঠিত পাললিক নুড়ি পাথরগুলো স্যামনের বৃদ্ধির জন্য একটি আদর্শ স্থান। অ্যাডামস নদীর নিচের নুড়ি পাথরগুলোর কারণে পরিবর্তিত পানির তাপমাত্রা এবং প্রাকৃতিক Ph স্যামন মাছগুলোর বৃদ্ধির জন্য যথার্থ। অ্যাডামস নদীর নদীর নিচে অবস্থিত স্যুসোয়াপ লেককে এর অতিরিক্ত ঘনত্বের পাইকোপ্লাঙ্কটন এর কারণে বলা হয় 'নার্সারী' লেক। পাইকোপ্লাঙ্কটন ক্ষুদে স্যামন মাছগুলোর খাদ্যের একটি উৎস।[৯]
প্রতিবছরেই অ্যাডামস নদীর স্যামন মাছের চালান হয়, কিন্তু প্রতি চার বছর পর পর স্যামন মাছের এই চালান হয় আগের বছরগুলো থেকে অনেক বেশি। একে বলা হয় "প্রভাবশালী" বছর। ২০১৪ সালের প্রভাবশালী চালান ছিল অতি সাম্প্রতিক কালের প্রভাবশালী চালান। কানাডার ডিপার্ট্মেন্ট অব ফিশারিজ এন্ড অসেন এর তথ্য অনুসারে ১৯১৩ সালের পরে ২০১০ সালেই ফ্রেজার নদী সবচেয়ে বেশি শক-আই স্যামন চালান হয়, যার পরিমাণ ছিল ৩৪ মিলিয়ন।[১০] এদের মধ্যে ন্যূনতম ৩,৮৬৬,০০ট মাছ অ্যাডামস নদীতে তাদের ডিম পাড়ার স্থানে ফিরে এসেছিল।[১১] এমন কোনো সুস্পষ্ট কারণ নেই যার কারণে অ্যাডামস নদীতে পুনরায় অতিরিক্ত স্যামনের চালান শুরু হয়েছিল। সিমন ফ্রেজার বিশ্ববিদ্যালয়-এর এক জীববিজ্ঞানী জন রিনল্ডস বলেছেন," স্যামন মাছের সংখ্যা বের করা অত্যন্ত জটিল। এমনকি একজন বিজ্ঞানীর ক্ষেত্রেও।"[১২]
অ্যাডামস নদীর উপত্যাকায় সংখ্যায় প্রচুর পরিমাণ খচ্চর হরিণ সেই সাথে সাদা লেজের হরিণও রয়েছে অল্প সংখ্যায়। জালবিভাজিকায় (দুই নদীপ্রবাহের মধ্যস্থিত বিভাগ রেখা) কালো ভাল্লুকের সংখ্যা বেশি দেখা যায়। ভাল্লুকের সংখ্যা বৃদ্ধি পায় যখন নদীতে বেশি পরিমাণ স্যামন মাছ আসতে শুরু করে। উচ্চ নদী উপত্যকায় মুজ (আমেরিকার এধরনের বিশেষ হরিণ) বেশি দেখা যায় এবং প্রধাণ নদী উপত্যাকায় গ্রিজলি ভাল্লুক দেখা যায়। এছাড়াও এখানে বীবর (ধারালো দাঁতযুক্ত প্রাণী), বেজি এবং ভোঁদড় সহ বিভিন্ন প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী বসবাস করে।[১]
নদীর সম্মুখভাগে কানাডা গীজ (আমেরিকার একধরনের রাজহাঁস যার ঠোঁট এবং ঘাঁড় কালো) এবং অন্যান্য প্রজাতির রাজহাঁস দেখা যায়। বিভিন্ন ধরনের জলজ পাখিও দেখা যায় এই ভাগে। এই স্থানে পালকহীন ঈগল এবং বক দেখা যায়।[১]
উচ্চ অ্যাডামস নদী প্রদেশিক পা্ক-এর মধ্য দিয়ে অ্যাডামস নদী ৫,৭৩৩ হেক্টর এবং রড্রিক হেইগ ব্রাউন প্রদেশিক পার্ক এর মধ্য দিয়ে ১,০৭৬ হেক্টর পর্যন্ত বয়ে গেছে। রড্রিক-কে স্যামন মাছ পর্যবেক্ষণ করার জন্য প্লাটফর্ম হিসেবে ব্যবহার করা হয়।[১৩][১৪] ২০১০ সালে রড্রিক হেইগ ব্রাউন প্রদেশিক পার্ক-এ স্যামন মাছ পর্যবেক্ষণকারী মানুষের সংখ্যা ছিল ১৬০,০০ জন।[১৫] হেইগ ব্রাউন ছিলেন একজন সংরক্ষণবাদী, লেখক এবং আন্ত্জাতিক প্রশান্ত মহাসাগরের স্যামন ফিশারি কমিশন এর সদস্য।[১৪]