অ্যান আর্বার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান অঙ্গরাজ্যের রাজধানী ও ওয়াশতেনাউ কাউন্টির সদর দপ্তর। [১] ২০১০ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী অ্যান আর্বরের জনসংখ্যা ১,১৩,৯৩৪। এটি অ্যান আর্বর মেট্রোপলিটন পরিসংখ্যানগত এলাকার প্রধান শহর।
অ্যান আর্বারে মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয় অবস্থিত। ৩০,০০০ মানুষ এখানে চাকরি করেন। উচ্চমানের প্রযুক্তি ও গবেষণা খাতের উপর অ্যান আর্বারের অর্থনীতি নির্ভরশীল।[২]
অ্যান আর্বার পূর্বে গ্রাম ছিল। ১৮২৪ সালে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। গ্রামের প্রতিষ্ঠাতাদের উভয়ের সহধর্মিণীর নাম ছিল অ্যান। তাদের নামানুসারে শহরটির নাম হয় অ্যান আর্বার। ১৮৩৭ সালে মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয় ডেট্রয়েট থেকে অ্যান আর্বারে স্থানান্তরিত হয়। ১৯৬০ ও ১৯৭০ এর দশকে অ্যান আর্বার বামপন্থী ও প্রগতিশীল কার্যক্রমের কেন্দ্র হয়ে ওঠে।
অ্যান আর্বার বর্তমানে যে এলাকায় অবস্থিত,সেখানো ১৭৭৪ সালে পটাউয়াটামি জাতি দুইটি গ্রাম প্রতিষ্ঠা করে।
১৮২৪ সালে জন অ্যালেন ও এলিসা ওয়াকার রামসি অ্যান আর্বার শহরটি প্রতিষ্ঠা করেন।১৮২৪ সালের ২৫ মে ওয়েইন কাউন্টিতে অ্যান আর্বারের মানচিত্র নিবন্ধিত হয়। তারা নিজেদের স্ত্রী অ্যানের নামানুসারে শহরটির নাম দেন অ্যান আর্বার। প্রতি একর জমি ১ ডলার ২৫ সেন্ট দরে তারা ৮০০ ডলার ব্যয়ে ৬৪০ একর জমি ক্রয় করেন। অ্যালেনের করাতকল থেকে যে শব্দের উৎপত্তি হত, সেটি থেকে উদ্বুদ্ধ হয়ে স্থানীয় ওজিবোয়া আদিবাসীরা এর নাম দেন "কাউ-গুস-কাউ-নিক।"
১৮২৭ সালে শহরটি ওয়াশতেনাউ কাউন্টির সদর দপ্তর হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে। ১৮৩৩ সালে একটি গ্রাম হিসেবে শহরটি স্থানীয় শাসনের আওতাভুক্ত হয়। অ্যান আর্বার ভূমি কোম্পানি মিশিগান সরকারকে রাজ্য ক্যাপিটল ভবন নির্মাণের জন্য ৪০ একর জমি দান করে। কিন্তু শেষাবধি ল্যান্সিং মিশিগানের রাজধানী হয়। ১৮৩৭ সালে ঐ ভূমির উপরই মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়।
১৮৩৯ সালে মিশিগান কেন্দ্রীয় রেলসড়ক প্রতিষ্ঠার পর ক্রমশ অ্যান আর্বারের বৃদ্ধি ঘটতে থাকে। উত্তর-পশ্চিম রেলসড়কের মাধ্যমে ১৮৭৮ সালে টলেডো ও দক্ষিণের অন্যান্য শহর সংযুক্ত হয়। ১৮৪০-১৮৫০ এর দশকে জার্মান, আইরিশ ও আফ্রো-আমেরিকানরা এখানে বসতি স্থাপন করে।[৩] ১৮৫১ সালে অ্যান আর্বার শহর হিসেবে অনুমোদন পায়। ১৮৭৩ সালের মন্দার পর এর জনসংখ্যা হ্রাস পেতে থাকে। অ্যান আর্বারের ইহুদি সম্প্রদায়ের বিকাশ ঘটে; ১৯১৬ সালে এর প্রথম ইহুদি চার্চ বেথ ইসরাইল কংগ্রেগেশন প্রতিষ্ঠিত হয়।[৪]
১৯৬০ ও ১৯৭০ এর দশকে এখানে ভিয়েতনাম যুদ্ধ বিরোধী আবেগ তীব্র হয়ে ওঠে। ১৯৬০ সালে গণতান্ত্রিক ছাত্র সমিতির প্রথম বৈঠক আয়োজিত হয়। ১৯৬৫ সালে মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিয়েতনামবিরোধী প্রথম শিক্ষা ফোরাম আয়োজিত হয়। এরই ধারায় ১৯৭০ এর দশকে স্থানীয় রাজনীতিতে হিউম্যান রাইটস পার্টি প্রতিষ্ঠিত হয়। এর তিনজন সদস্য সিটি কাউন্সিলের সদস্যপদে নির্বাচিত হন।
এখানে দুইটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান স্থাপিত হয়। সেগুলো হলো- টমাস ম্যুর আইন কেন্দ্র ও ওয়ার্ড অব গড।[৫]
১৯৫৬ সালে আয়োজিত এক ভোটের ফলে অ্যান আর্বার ও পূর্ব অ্যান আর্বার শহর একীভূত হয়।
২০০৩ সালের ৪ নভেম্বর আয়োজিত এক ভোটের ফলে নগর সরকার অ্যান আর্বার সংলগ্ন কৃষিজমি ক্রয়ের ক্ষমতা লাভ করে। ভবিষ্যতে উক্ত জমিতে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালিত হবে। [৬] ২০০৮ সালে সিএনএন মানি অ্যান আর্বারকে ১০০টি সেরা ক্ষুদ্র শহরের তালিকায় ২৭-তম শহর হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।[৭] এছাড়াও ফোর্বস পত্রিকা একে যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম বসবাসযোগ্য শহর হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।[৮]
আদমশুমারি ব্যুরোর তথ্যানুযায়ী,অ্যান আর্বারের আয়তন ২৮.৭০ বর্গমাইল। এর ২৭.৮৩ বর্গমাইল স্থল ও ০.৮৭ বর্গকিলোমিটার জল। [৯] এর জলভাগের অধিকাংশই হুরন নদীর অংশ।
অ্যান আর্বারের জলবায়ু মধ্য-পশ্চিমাঞ্চলীয় আর্দ্র মহাদেশীয় ধরনের। শহরে চারটি ঋতু পরিলক্ষিত হয়। জুলাই মাসে গড় তাপমাত্রা ৭২.৬ ডিগ্রি ফারেনহাইট ; জানুয়ারি মাসে গড় তাপমাত্রা ২৪.৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট।
২০১০ সালের আদমশুমারি ব্যুরোর তথ্যানুযায়ী, অ্যান আর্বারের জনসংখ্যা ১,১৩,৯৩৪। শহরে ২০,৫০২টি পরিবার বসবাস করে। জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রতি বর্গকিলোমিটারে ১,৫৮০.৭ জন। বাসিন্দাদের ৭৩% শ্বেতাঙ্গ, ৭.৭% কৃষ্ণাঙ্গ বা আফ্রিকান আমেরিকান, ০.৩% আদিবাসী আমেরিকান ও ১৪.৪% এশীয়। বাসিন্দাদের ৪.১% হিস্পানিক অথবা লাতিনো।
আমেরিকার সম্প্রদায়গত সমীক্ষার তথ্যানুযায়ী, পরিবারগুলোর গড় আয় ৯৫,৫২৮ ডলার। পুরুষদের গড় আয় ৫১,৬৮২ ডলার ও নারীদের গড় আয় ৩৯,২০৩ ডলার। শহরের মাথাপিছু আয় ৩৭,১৫৮ ডলার। ২৩.৪% বাসিন্দা ও ৬.৭% পরিবার দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করে।