অ্যামবিগ্রাম বা অ্যাম্বিগ্রাম (কখনও কখনও ইনভারশন নামেও ডাকা হয়) হল এক ধরনের গ্রাফিক্যাল চিত্র বা লেখা যা একটি শব্দকে শুধুমাত্র এক দিক থেকে বানান করেনা বরং অন্য আরেকটি দিক বা অরিয়েন্টেশন থেকেও একইভাবে বানান করতে পারে। অথ্যাৎ যে শব্দ বা বাক্যকে একদিক থেকে পড়লে যেমন দেখায় উল্টা দিক থেকেও একই রকম দেখায় তাকে অ্যামবিগ্রাম বলে। ডগলাস আর. হফস্টাটার-এর মতে:
“
ক্যালিগ্রাফিক নকশা যা দুটি পৃথক পাঠকে একাধিক বক্ররেখার ঠিক একই সেটে সঙ্কুচিত করতে সমর্থ হয়।
”
এই হফস্টাটারই সর্বপ্রথম অ্যামবিগ্রাম শব্দটি কোন এক প্রকাশনায় ব্যবহার করেছিলেন। তিনি তার এক বন্ধুর কাছে এই শব্দের উৎপত্তি ও ইতিহাস ব্যাখ্যা করেছিলেন এবং বন্ধুদের কাছ থেকে এ বিষয়ে সাহায্যও নিয়েছিলেন। তার ১৯৯৯ সালে প্রকাশিত Gödel, Escher, Bach নামক বইয়ের প্রচ্ছদে একটি ত্রিমাত্রিক অ্যামবিগ্রাম ছাপা হয়েছিলো।
অ্যামবিগ্রাম শব্দটি দুটি লাতিন শব্দ থেকে উৎপত্তি লাভ করেছে। অ্যামবি (ambi) শব্দের অর্থ উভয় এবং গ্রাম (gram) শব্দের অর্থ বর্ণ। দুটি মিলিয়ে দাড়াচ্ছে উভয় বর্ণ। অর্থাৎ একই শব্দ যদি দুই দিক থেকে একইভাবে পড়া যায় তবে তা-ই অ্যামবিগ্রাম। ১৯৮৩-১৯৮৪ সালের দিকে ডগলাস আর. হফস্টাটার সর্বপ্রথম অ্যামবিগ্রাম শব্দটি এভাবে প্রকাশ করেন। তিনা বন্ধুদের সাথে বোস্টনে প্রায়ই আড্ডা দিতেন। এই আড্ডা থেকেই কোন এক সময় শব্দটি উঠে আসে। কৃতজ্ঞতা স্বীকারকল্পে হফস্টাটার যাদের নাম উল্লেখ করেছেন তারা হলেন; গ্রেগ হুবার, ডন বায়ার্ড, হেনরি লিবার্ম, বার্নি গ্রিনবার্গ ইত্যাদি ইত্যাদি। এরা সবাই তার বন্ধুবান্ধব।
অ্যামবিগ্রামগুলোকে সাধারণ নিচের বিষয়শ্রেণীগুলোর যেকোন একটিতে বিভক্ত করা যায়:
ঘূর্ণনশীল
এমন ধরনের নকশা যার ফলে কোন একটি শব্দকে অণুভূমিক দিক থেকে পড়ার পর একটি নির্দিষ্ট কোণে ঘুরালেও একইভাবে পড়া যাবে। এই কোণটি সাধারণ ১৮০°, অবশ্য অন্যান্য কোণবিশিষ্ট ঘূর্ণনশীল অ্যামবিগ্রামও রয়েছে; যেমন: ৪৫° এবং ৯০°। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নির্দিষ্ট ঘোরানোর পর শব্দটি একই থাকে; কিন্তু মাঝেমাঝে শব্দের খানিক পরিবর্তন হতে পারে। এর একটি উত্তম উদাহরণ হচ্ছে: down শব্দের সংক্ষিপ্ত রুপ dn যাকে ১৮০° কোণে ঘুরালে পড়া যায় up.
দর্পণ
এমন শব্দ যাকে কোন দর্পণের সামনে ধরে প্রতিবিম্ব করলেও একই বা সামান্য বিকৃতভাবে হলেও পড়া যায়। যে অ্যামবিগ্রামগুলোকে দর্পণ প্রতিবিম্ব করলে ভিন্ন শব্দের জন্ম দেয় তাদেরকে 'গ্লাস ডোর অ্যামবিগ্রাম বলা হয়। কারণ এই অ্যামবিগ্রামগুলোকে কাচের দরজায় এমনভাবে ছাপানো সম্ভব যাতে ঢোকা এবং বেরনোর সময় ভিন্ন ভিন্ন ভাবে চোখে পড়ে।
ফিগার-গ্রাউন্ড
এটি এমন নকশা যাতে এক শব্দের বর্ণগুলোর মধ্যবর্তী শূন্যস্থানের থেকে অন্য শব্দের বর্ণগুলোর মধ্যে শূন্যস্থান বেশি থাকে।
শিকল
এক্ষেত্রে একটি শব্দ বা অনেকগুলো শব্দ পরস্পরের সাথে সংযুক্ত হয়ে একটি পৌনঃপুনিক শিকলের সৃষ্টি করে। একটি বর্ণ অন্যটির উপর পতিত হয় যার অর্থ দাড়ায় ককটি বর্ণ শেষ হওয়ার আগেই অন্য একটি বর্ণ শুরু হয়ে যায়। অনেকসময় এ ধরনের অ্যামবিগ্রামগুলো বৃত্তের আকৃতিতে উপস্থাপিত হয়।
স্পেস-ফিলিং
অনেকটি শিকল অ্যামবিগ্রামের মতই, তবে এক্ষেত্রে যে দ্বিমাত্রিক ক্ষেত্রে অ্যামবিগ্রামটি আঁকা হয় তার পুরো স্থান জুড়ে টালিকৃত বর্ণগুলো অবস্থান করে।
পৌনঃপুনিক জ্যামিতিক গঠন
একে ফ্র্যাক্টাল অ্যামবিগ্রামও বলা হয়। এক ধরনের স্পেস-ফিলিং অ্যামবিগ্রাম যাতে টালিকৃত শব্দগুলো নিজেদের মধ্য থেকেই শাখা তৈরি করে এবং এরপর নিজেএর মতই আরেকটি রুপে পরিণত হয়। এর ফলে একটি ফ্র্যাক্টাল গঠিত হয়। স্কট কিম এ ধরনের অ্যামবিগ্রাম তৈরি করেছেন। তিনি TREE শব্দের একটি অ্যামবিগ্রাম করেছেন যা ক্লিক করে দেখতে পারেন।
ত্রিমাত্রিক
একটি ত্রিমাত্রিক নকশা হিসেবে উপস্থাপন করা হয় যার বিভিন্ন কোণ থেকে দেখলে বিভিন্ন বর্ণ বা শব্দ পড়া যায়। constructive solid geometry ব্যবহার করে এ ধরনের অ্যামবিগ্রাম আঁকা যায়।
পারসেপচুয়াল শিফ্ট
এ ধরনের নকশায় কোন প্রতিসাম্য থাকেনা। কিন্তু একই শব্দকে দুটি ভিন্ন শব্দরুপে পড়া যায়। এই পড়ার বিষয়টি নির্ভর করে বর্ণের বিভিন্ন বক্ররেখাগুলো কীভাবে আঁকা হয়েছে তার উপর।
প্রাকৃতিক
এমন ধরনের শব্দ বা বাক্য যা স্বাভাবিকভাবে লিখলেই উপরের যেকোন ধরনের অ্যামবিগ্রামের মত হতে পারে। এক্ষেত্রে কোন আলাদা নকশার প্রয়োজন নেই। উদাহরণস্বরুপ dollop এবং suns শব্দ দুটি এক ধরনের প্রাকৃতিক ঘূর্ণনশীল অ্যামবিগ্রাম। bud শব্দটিকে উলম্ব অক্ষের সাপেক্ষে দর্পণ প্রতিবিম্ব করলে একই রকম দেখায়। অতএব এটি প্রাকৃতিক দর্পণ প্রতিবিম্ব অ্যামবিগ্রাম। CHOICE শব্দটিকে বড় হাতের অক্ষরে লিখলে অণুভূমিক অক্ষের সাপেক্ষে একটি দর্পণ প্রতিবিম্ব অ্যামবিগ্রামে পরিণত করা যায়। TOOTH শব্দটিও দর্পণ প্রতিবিম্ব অ্যামবিগ্রাম। তবে এক্ষেত্রে উলম্ব অক্ষের সাপেক্ষে দর্পণ প্রতিবিম্ব করার আগে বর্ণগুলোকে সঠিকভাবে বিন্যস্ত করতে হবে।
গ্রাফিক শিল্পীরা তাদের অনন্য প্রতিসাম্য প্রদর্শনের জন্য অ্যামবিগ্রাম ব্যবহার করে থাকে। এ কারণে লোগে, বইয়ের প্রচ্ছদ, গানের অ্যালবাম এবং বিভিন্ন ট্যাটুর নকশায় অ্যামবিগ্রাম থাকতে দেখা যায়।
অ্যামবিগ্রামের সবচেয়ে সুস্পষ্ট প্রতীকায়ন ঘটেছে মার্কিন ঔপন্যাসিক ড্যান ব্রাউন রচিত অ্যাঞ্জেল্স অ্যান্ড ডেমন্স নামক রোমাঞ্চকর উপন্যাসে। এর প্রথম ব্রিটিশ মুদ্রণের প্রচ্ছদে বইয়ের নামটি অ্যামবিগ্রাম হিসেবে লেখা হয়েছে। এই বইয়ের জন্য অ্যামবিগ্রামগুলো এঁকে দিয়েছেন গ্রাফিক শিল্পী জন ল্যাংডন। আন্তর্জাতিক বেস্টসেলার বই দ্য দা ভিঞ্চি কোড প্রকাশের পর থেকে ড্যান ব্রাইনের সকল বইয়ের কাটতিই বেড়ে গেছে। এরই সাথে অ্যামবিগ্রাম নিয়ে মানুষের উৎসাহ এবং কর্মতৎপরতাও বেড়েছে কয়েকগুণ। সম্প্রতি জন ল্যাংডনের অ্যামবিগ্রাম বিষয়ক বই ওয়ার্ডপ্লে-এর পুনর্মুদ্রণেরও উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
Hofstadter, Douglas R., "Metafont, Metamathematics, and Metaphysics: Comments on Donald Knuth's Article 'The Concept of a Meta-Font'" Scientific American (August 1982) (republished in the book Metamagical Themas)
Langdon, John, Wordplay: Ambigrams and Reflections on the Art of Ambigrams, Harcourt Brace (1992, republished 2005)
Hofstadter, Douglas R., Ambigrammi, Hopefulmonster Editore Firenze (1987) (in Italian)
Polster, Burkard, Les Ambigrammes l'art de symétriser les mots, Editions Ecritextes (2003) (in French)