আলেক গিনেজ | |
---|---|
জন্ম | আলেক গিনেজ ডি কাফে ২ এপ্রিল ১৯১৪ মাইডা ভেল, লন্ডন, ইংল্যান্ড |
মৃত্যু | ৫ আগস্ট ২০০০ মিডহার্স্ট, ওয়েস্ট সাসেক্স, ইংল্যান্ড | (বয়স ৮৬)
সমাধি | পিটার্সফিল্ড সিমেট্রি |
পেশা | অভিনেতা |
কর্মজীবন | ১৯৩৪–১৯৯৬ |
দাম্পত্য সঙ্গী | মেরুলা সালামান (বি. ১৯৩৮; মৃ. ২০০০) |
সন্তান | ম্যাথু গিনেজ |
পুরস্কার | পূর্ণ তালিকা |
সামরিক কর্মজীবন | |
আনুগত্য | যুক্তরাজ্য |
সেবা/ | রাজকীয় নৌবাহিনী |
কার্যকাল | ১৯৪১–১৯৪৩ |
পদমর্যাদা | লেফটেন্যান্ট |
যুদ্ধ/সংগ্রাম | দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ |
স্যার আলেক গিনেজ, সিএইচ, সিবিই (ইংরেজি: Alec Guinness, জন্মনাম আলেক গিনেজ ডি কাফে; ২ এপ্রিল ১৯১৪ - ৫ আগস্ট ২০০০) ছিলেন একজন ইংরেজ অভিনেতা। মঞ্চে কয়েকবছর কাজ করার পর তিনি কয়েকটি হাস্যরসাত্মক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল দ্য লেডিকিলার্স ও কাইন্ড হার্ট্স অ্যান্ড করোনেট্স। তিনি পরিচালক ডেভিড লিনের পরিচালনায় তার অভিনীত ছয়টি চলচ্চিত্রের জন্য প্রসিদ্ধি লাভ করেন। চলচ্চিত্রগুলো হল - গ্রেট এক্সপেক্টেশন্স (১৯৪৬), অলিভার টুইস্ট (১৯৪৮), দ্য ব্রিজ অন দ্য রিভার কাওয়াই (১৯৫৭), লরেন্স অব অ্যারাবিয়া (১৯৬২), ডক্টর ঝিভাগো (১৯৬৫) এবং আ প্যাসেজ টু ইন্ডিয়া (১৯৮৪)। দ্য ব্রিজ অন দ্য রিভার কাওয়াই চলচ্চিত্রে কর্নেল নিকোলসন চরিত্রে অভিনয়ের জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ অভিনেতার জন্য একাডেমি পুরস্কার লাভ করেন। এছাড়া তিনি জর্জ লুকাস পরিচালিত মূল স্টার ওয়ার্স ত্রয়ী চলচ্চিত্রে ওবি-ওয়ান কেনবি চরিত্রে অভিনয়ের জন্য পরিচিত, এই চরিত্রে অভিনয়ের জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেতার জন্য একাডেমি পুরস্কারের মনোনয়ন লাভ করেন।
লরন্স অলিভিয়ে ও জন গিলগুডের পাশাপাশি গিনেজ তিনজন ব্রিটিশ অভিনেতার একজন, যিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অল্প কিছু দিন পরই ব্লকবাস্টার চলচ্চিত্র উপহার দিয়ে দর্শকদের শেকসপিয়রীয় নাট্যমঞ্চ থেকে চলচ্চিত্রে আকৃষ্ট করেন। গিনেজ দ্বিতীয় বিশযুদ্ধে রয়েল নেভাল রিসার্ভে দায়িত্ব পালন করেন এবং সিসিলি ও এলবা আক্রমণকালে একটি ল্যান্ডিং ক্রাফটের নির্দেশনা দেন। যুদ্ধকালে তাকে ফ্লেয়ার পাথ মঞ্চ নাটকে অভিনয়ের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল।
গিনেজ একবার করে একাডেমি পুরস্কার, বাফটা পুরস্কার, গোল্ডেন গ্লোব পুরস্কার ও টনি পুরস্কার অর্জন করেন। ১৯৫৯ সালে রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথ শিল্পকলায় অবদানের জন্য তাকে সম্মানসূচক নাইটহুড প্রদান করেন। ১৯৬০ সালে হলিউড ওয়াক অব ফেমে তার নামাঙ্কিত তারকা খচিত হয়, ১৯৮০ সালে আজীবন কৃতিত্বের জন্য একাডেমি সম্মানসূচক পুরস্কার লাভ করেন, এবং ১৯৮৯ সালে বাফটা ফেলোশিপ লাভ করেন। গিনেজ অভিনীত নয়টি চলচ্চিত্র ব্রিটিশ ফিল্ম ইনস্টিটিউট-এর বিংশ শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ ব্রিটিশ চলচ্চিত্রের তালিকায় রয়েছে, যার মধ্যে পাঁচটিই ডেভিড লিন পরিচালিত।
গিনেজ ১৯১৪ সালে ২ এপ্রিল লন্ডনের মাইডা ভেলের লডার্ডেলের ১৫৫ লডার্ডেল ম্যানসন্স সাউথে জন্মগ্রহণ করেন। তার জন্মনাম আলেক গিনেজ ডি কাফে।[১] তার মাতার জন্মনাম ছিল অ্যাগনেস কাফ। তিনি ১৮৯০ সালের ৮ ডিসেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। অ্যাগনেসের পিতা এডওয়ার্ড কাফ ও মাতা ম্যারি অ্যান বেনফিল্ড। গিনেজের জন্ম সনদের তার মায়ের নাম ছিল অ্যাগনেস ডি কাফে এবং শিশু গিনেজের নামের স্থানে ছিল আলেক গিনেজ। পিতার নাম ও উপনামের জন্য বরাদ্দ ঘরটি ফাঁকা ছিল।[২]
গিনেজের পিতার আসল পরিচয় কখনো পাওয়া যায় নি।[৩] ১৮৭৫ থেকে ইংরেজ আইন অনুসারে, যখন কোন অবৈধ সন্তানের নাম তালিকাভুক্ত করা হয়, তার পিতার নামে তখনই সনদে উল্লেখ করা হবে যখন সেই ব্যক্তি নিজে উপস্থিত হয়ে অনুমতি দিবে। গিনেজ বিশ্বাস করতেন যে স্কটিশ ব্যাংকার অ্যান্ড্রু গেডেস (১৮৬১-১৯২৮) তার পিতা, যিনি ফেটিস কলেজে তার শিক্ষার খরচ প্রদান করতেন। গেডেস মাঝে মাঝে তার চাচা হয়ে গিনেজ ও তার মায়ের সাথে দেখা করতে যেতেন।[৪] গিনেজের মা পরবর্তীতে স্টিভেন নামে একজন স্কটিশ আর্মি ক্যাপ্টেনকে বিয়ে করেন, যা মাত্র তিন বছর ঠিকেছিল। স্টিভেন স্বেচ্ছাচারী ও উগ্র ধরনের আচরণ করতেন।[৫][৬]
গিনেজ প্রথমে বিজ্ঞাপনের অনুলিপি লিখার কাজ করতেন। মঞ্চে তার প্রথম কাজ ছিল নাটক লিবেল। তিনি তার ২০তম জন্মদিনে প্রথম অভিনয় করেন। তখনও তিনি নাট্য স্কুলের শিক্ষার্থী ছিলেন। লিবেল নাটকটি হ্যামারস্মিথের ওল্ড কিংস থিয়েটারে প্রথম মঞ্চস্থ হয়, পরে তা প্লেহাউজে মঞ্চস্থ হয়। প্লেহাউজে নাটকটি মঞ্চস্থ হওয়ার পর তার সম্মাননা বৃদ্ধি পায় এবং তার পারিশ্রমিক সপ্তাহে ১ পাউন্ডে উন্নীত হয়।[৭] তিনি ১৯৩৬ সালে ২২ বছর বয়সে অ্যালবেরি থিয়েটারে জন গিলগুড নির্দেশিত হ্যামলেট নাটকে অসরিক চরিত্রে অভিনয় করেন। একই বছর তিনি ওল্ড ভিসের সাথে চুক্তিবদ্ধ হন এবং সেখানে তিনি বেশ কিছু ধ্রুপদী চরিত্রে কাজ করেন।[৮] ১৯৩৯ সালে তিনি রবার্ট আর্ড্রির পথনাট্য থান্ডার রক-এ চার্লসটন চরিত্রের জন্য মাইকেল রেডগ্রেভের স্থলাভিষিক্ত হন।[৯]
ওল্ড ভিসে তার সময়ে তিনি অনেক অভিনেতা-অভিনেত্রীদের সাথে কাজ করেন, যারা পরবর্তীতে তার বন্ধু হয়ে ওঠেন ও পরবর্তীতে প্রায়ই তাদের সাথে সহশিল্পী হিসেবে কাজ করেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন গিলগুড, রাফ রিচার্ডসন, পেগি অ্যাশক্রফ্ট, অ্যান্থনি কোয়াইল ও জ্যাক হকিন্স। গিনেজের শুরুর দিকের অনুপ্রেরণা ছিলেন স্ট্যান লরেল। গিনেজ তার প্রশংসা করতেন।[১০]
গিনেজ তার কর্মজীবন ব্যাপী শেকসপিয়রীয় চরিত্রে অভিনয় করে যান। ১৯৩৭ সালে তিনি জন গিলগুডের নির্দেশনায় দ্বিতীয় রিচার্ড নাটকে আমের্লে এবং দ্য মার্চেন্ট অব ভেনিস নাটকে লরেঞ্জো চরিত্রে অভিনয় করেন। ১৯৩৭ সালে তিনি লরন্স অলিভিয়ে'র সাথে টুয়েলফথ নাইট নাটকে অ্যান্ড্রু আগুয়েচিক ও পঞ্চম হেনরি নাটকে এক্সিটার চরিত্রে অভিনয় করেন।১৯৩৮ সালে হ্যামলেট নাটক তাকে সুখ্যাতি এনে দেয়।[৮] রোমিও অ্যান্ড জুলিয়েট (১৯৩৯) নাটকে রোমিও চরিত্রে এবং গিলগুডের সাথে দ্য টেম্পেস্ট নাটকে ফার্ডিনান্ড চরিত্রে অভিনয় করেন। ১৯৩৯ সালে তিনি চার্লস ডিকেন্স রচিত উপন্যাস গ্রেট এক্সপেক্টেশন্স মঞ্চের উপযোগী করেন এবং নিজে হার্বার্ট পকেট চরিত্রে অভিনয় করেন। নাটকটি সফলতা লাভ করে। এই নাটকে একজন দর্শক ছিলেন তৎকালীন ব্রিটিশ চলচ্চিত্র সম্পাদক ডেভিড লিন, যিনি পরবর্তীতে গিনেজকে নিয়ে ১৯৪৬ সালে একই নামের চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন।[১১]
গিনেজ তার চলচ্চিত্র কর্মজীবনের শুরুর দিকে কয়েকটি হাস্যরসাত্মক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। ১৯৪৯ সালে গিনেজ কাইন্ড হার্ট্স অ্যান্ড করোনেট্স চলচ্চিত্রে নয়টি ভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেন।এই সময়ে তার অভিনীত অন্যান্য চলচ্চিত্রগুলো হল হাস্যরসাত্মক নাট্যধর্মী দ্য ল্যাভেন্ডার হিল মব (১৯৫১), দ্য ম্যান ইন দ্য হোয়াইট সুইট (১৯৫১) এবং ব্ল্যাক কমেডিধর্মী দ্য লেডিকিলার্স (১৯৫৫), তিনটি চলচ্চিত্রই শ্রেষ্ঠ ব্রিটিশ চলচ্চিত্রের তালিকায় তালিকাভুক্ত রয়েছে।[১২] ১৯৫২ সালে পরিচালক রোনাল্ড নিয়াম তাকে তার প্রথম প্রণয়ধর্মী চলচ্চিত্রে পেটুলা ক্লার্কের বিপরীতে দ্য কার্ড চলচ্চিত্রে প্রধান চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ দেন। ১৯৫১ সালে প্রদর্শকেরা তাকে সবচেয়ে জনপ্রিয় ব্রিটিশ তারকা হিসেবে ভোট দেয়।[১৩]
তিনি পরিচালক ডেভিড লিনের পরিচালনায় তার চলচ্চিত্রগুলোর জন্য সমাদৃত হন, এই চলচ্চিত্রগুলো এখনো তার সবচেয়ে সমালোচনামূলকভাবে সফল কাজ। ১৯৪৬ সালে তিনি লিনের গ্রেট এক্সপেক্টেশন্স ছবিতে হারবার্ট পকেট ও ১৯৪৮ সালে অলিভার টুইস্ট ছবিতে হাগিন চরিত্রে অভিনয় করেন। ১৯৫৭ সালে দ্য ব্রিজ অন দ্য রিভার কাওয়াই চলচ্চিত্রে উইলিয়াম হোল্ডেনের সাথে মূল ভূমিকায় অভিনয় করেন। এই ছবিতে ব্রিটিশ কমান্ডিং অফিসার কর্নেল নিকোলসন চরিত্রে তার অভিনয়ের জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ অভিনেতার জন্য একাডেমি পুরস্কার ও শ্রেষ্ঠ প্রধান চরিত্রে অভিনেতার জন্য বাফটা পুরস্কার লাভ করেন। লিনের সাথে বিরূপ সম্পর্কের পরও গিনেজ তার সাথে কাজ করে যান। লিনের পরিচালনায় তার অভিনীত পরবর্তী চলচ্চিত্রগুলোর মধ্যে লরেন্স অব অ্যারাবিয়া (১৯৬২) ছবিতে আরবীয় নেতা যুবরাজ ফয়সাল চরিত্রে, ডক্টর ঝিভাগো (১৯৬৫) ছবিতে নাম চরিত্রের সৎ ভাই ও বলশেভিক নেতা ইয়েভগ্রাফ ঝিভাগো চরিত্রে এবং আ প্যাসেজ টু ইন্ডিয়া (১৯৮৪) ছবিতে ভারতীয় রহস্যময় অধ্যাপক গোডবোল চরিত্রে অভিনয় করেন। লিনের অপর একটি চলচ্চিত্র রায়ান্স ডটার (১৯৭০) এ তাকে একটি চরিত্রে অভিনয়ের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। সে সময়ে, গিনেজ লিনের প্রতি বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছিলেন এবং ভেবেছিলেন তাদের পূর্বতন ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ভেঙ্গে গেছে, যদিও গিনেজ লিনের শেষকৃত্যে বলেন যে প্রখ্যাত এই পরিচালক "মনোহর ও অমায়িক" ছিলেন।[১৪] লিনের পরিচালনায় গিনেজের অভিনীত পাঁচটি চলচ্চিত্র ব্রিটিশ ফিল্ম ইনস্টিটিউট-এর বিংশ শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ ব্রিটিশ চলচ্চিত্রের তালিকায় রয়েছে, ক্রমানুসারে চলচ্চিত্রগুলো হল - লরেন্স অব অ্যারাবিয়া (৩য় স্থান), গ্রেট এক্সপেক্টেশন (৫ম স্থান), দ্য ব্রিজ অন দ্য রিভার কাওয়াই (১১তম স্থান), ডক্টর ঝিভাগো (২৭তম স্থান) এবং অলিভার টুইস্ট (৪৬তম স্থান)।[১৫]
গিনেজ ১৯৩৮ সালে চিত্রশিল্পী, নাট্যকার ও অভিনেত্রী মেরুলা সিলভিয়া সালাম্যানকে (১৯১৪-২০০০) বিয়ে করেন। তাদের একমাত্র পুত্র ম্যাথু গিনেজ ১৯৪০ সালে জন্মগ্রহণ করেন। ম্যাথুও একজন অভিনেতা। গিনেজ পরিবার হ্যাম্পশায়ারে স্টিপ মার্শে বসবাস করত।[১৬]
গিনেজ যকৃতের ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ২০০০ সালের ৫ আগস্ট রাতে ওয়েস্ট সাসেক্সের মিডহার্স্টে মৃত্যুবরণ করেন।[১৭] তিনি গ্লুকোমার জন্য হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন এবং মৃত্যুর অল্প কয়েকদিন পূর্বে প্রোস্টেট ক্যান্সারের চিকিৎসা গ্রহণ করেন। তাকে পিটার্সফিল্ড সিমেট্রিতে সমাহিত করা হয়।