অ্যালেক্সিস কারেল (ফরাসি :alɛksi kaʁɛl; জুন ২৮, ১৮৭৩ - ৫ নভেম্বর, ১৯৪৪ খ্রিষ্টাব্দ) ছিলেন একজন খ্যাতনামা ফরাসি চিকিৎসাবিদ। ফ্রান্সের লিঁঅ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করেছিলেন। ১৯০০ খ্রিষ্টাব্দে চিকিৎসাবিদ্যায় উপাধি লাভ করার পর তিনি প্রথমে ফ্রান্সের 'ফাক্যুলতে দ্য মেদসিন' ও পরে আমেরিকার শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ে শরীরতত্ত্ববিদ্যা নিয়ে গবেষণা করেন। পরবর্তী কালে নিউইয়র্কের রকফেলার ইনস্টিটিড ফর মেডিক্যাল রিসার্চের সদস্য মনোনীত হন। রক্তবাহ সংক্রান্ত গবেষণায় উল্লেখযোগ্য কৃতিত্বের জন্য ১৯১২ খ্রিষ্টাব্দে তাকে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়।[১] ১৯২৪ ও ১৯২৭ সালে তিনি দু-বার 'আকাদেমি অফ সায়েন্সেস অফ দি ইউ.এস.এস.আর'- এর সাম্মানিক সদস্য নির্বাচিত হন।[২] টিসু কালচার অর্থাৎ দেহকলার সংরক্ষণ ও বৃদ্ধি বিষয়ক তার গবেষণা স্মরণীয় হয়ে থাকবে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় আঘাতপ্রাপ্ত সৈনিকদের ক্ষতের চিকিৎসার জন্য তিনি এক নতুন ধরনের চিকিৎসা পদ্ধতির উদ্ভাবন করেন। ১৯৩৫ সালে তিনি 'ম্যান দি আননোন' নামে একটি যুগান্তকারী গ্রন্থ রচনা করেন।
১৮৯৪ সালের ২৪ জুন ফরাসি রাষ্ট্রপতি মেরি ফ্রাঙ্কোস সাদি কার্নো গুপ্তঘাতকের হাতে ছুরিকাহত হন, সে'সময় ক্যারেল ২১ বছরের তরুণ সার্জেন। ছুরিকাঘাতে কার্নোর পেটের রক্তবাহগুলি ভীষণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যে ডাক্তার তার চিকিৎসা করছিলেন তিনি উপলব্ধি করেন যে রক্তবাহগুলির পর্যাপ্ত ক্ষতি ঘটায় তা পুনঃসংযোগ ঘটিয়ে রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক রাখা অসম্ভব। সঙ্গত কারণে মধ্যরাতের পর অর্থাৎ ২৫ জুন সাদি কার্নো মারা যান। এই ঘটনা কারেলের উপর গভীর রেখাপাত করে এবং তিনি নিরলস পরিশ্রম ক'রে রোগীর দেহে রক্তদান ও রক্তবাহ অধিরোপণ (ট্রান্সপ্লান্টেশন অফ ব্লাড ভেসেলস) প্রক্রিয়া সহজসাধ্য ক'রে তোলেন। তিনি প্রথমত বিভিন্ন প্রাণিদেহে প্রয়োগ করেন এবং প্রতি ক্ষেত্রে তার উন্নতি সাধন করেন, যা আজকে ভাসক্যুলার সার্জারি নামে খ্যাত হয়ে আছে।[৩]
আলেকসিস ক্যারেল ও চার্লস এ লিণ্ডবার্গ যুগ্মভাবে দি কালচার অফ অরগ্যানস বইটি প্রকাশ করেন। ১৯৩০-এর দশকের মাঝামাঝি তারা দু-জন যৌথভাবে গবেষণা করে পারফিউসন পাম্প তৈরী করেন। এই যন্ত্রের সাহায্যে অস্ত্রপ্রচারের সময় রোগীর দেহের ভেতরকার অঙ্গকে সুবিধামত বাইরে নিয়ে আসা সম্ভব হয়। তাদের এই যুগান্তকারী আবিষ্কার পরবর্তীকালে ওপেন হার্ট সার্জারি, অঙ্গপ্রতিস্থাপন এবং কৃত্রিম হৃদযন্ত্রের সাহায্যে দেহকে সাময়িক সচল রাখার পদ্ধতিকে আরও অনেকদূর এগিয়ে দিয়েছে।[৪]
১৯৩৫ সালে প্রকাশিত কারেলের সাড়া জাগানো গ্রন্থ ম্যান দি আননোন (ফরাসি ভাষায়- L'Homme, cet inconnu) বেস্ট সেলারের তালিকাভুক্ত হয়। ঔষধ, পদার্থবিদ্যা ও জীবতত্ত্বের আলোকে সমাজ প্রকৃতির আলোচনাই এ'বইয়ের আলোচ্য বিষয়।[৩] এ বইয়ে তিনি একজন সমাজতাত্ত্বিকের ভূমিকায় মানব জাতির উদ্দেশ্যে তার নিজস্ব গবেষণা ও উপলব্ধি থেকে কিছু সামাজিক ব্যবস্থাপনার উল্লেখ করেছেন।