অ্যাস্কারিস নেমাটোডা পর্বের অন্তর্ভুক্ত কৃমির একটি প্রজাতি যা "ক্ষুদ্রান্ত্রের গোলকৃমি" নামে পরিচিত, যা এক ধরনের পরজীবী কৃমি।[১] এদের একটি প্রজাতি, অ্যাস্কারিস লুম্ব্রিকইডিস, মানুষকে আক্রমণ করে এবং অ্যাসকারিয়াসিস রোগের সৃষ্টি করে। আরেকটি প্রজাতি, অ্যাস্কারিস সুম, এর মাধ্যমে সাধারণত শূকর সংক্রমিত হয়। এছাড়াও অন্যান্য প্রজাতি প্যারাস্কারিস ইকুরাম, ইকুইন রাউন্ডওয়ার্ম, যাদের সাধারণভাবে "অ্যাস্কারিড" বলা হয়।[২]
তাদের ডিম মল এবং মাটিতে জমা হয়। যে সব উদ্ভিদে অ্যাস্কারিসের ডিম রয়েছে তা যে কোন প্রাণী গ্রহণ করলে সংক্রামিত হয়।[৩] অ্যাস্কারিস লুম্ব্রিকইডিস বৃহত্তম আন্ত্রিক গোলকৃমি এবং বিশ্বব্যাপী মানুষের সবচেয়ে সাধারণ হেলমিন্থ রোগের সংক্রমণকারী। এর সংক্রমণ পুষ্টি অবস্থাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে, স্বাভাবিক বিকাশকে প্রভাবিত করে, টিস্যু প্রতিক্রিয়া যেমনঃ গ্র্যানুলোমা থেকে লার্ভা পর্যায়ে প্ররোচিত করতে পারে, এবং অন্ত্রে বাধা সৃষ্টি করে, যা মারাত্মক হতে পারে।[৪]
এদের দেহ লম্বা, বেলনাকার, অখণ্ডিত সূতোর মত। দেহের প্রাচীরটি কিউটিকল, এপিডার্মিস এবং পেশী সমন্বয়ে গঠিত। একটি সিউডোকোলোম আছে। শ্বাস প্রশ্বাস সহজ ব্যাপন প্রক্রিয়ার দ্বারা হয়। স্নায়ুতন্ত্র একটি স্নায়ু রিং এবং অনেক অনুদৈর্ঘ্য স্নায়ু কর্ড নিয়ে গঠিত। গোল কৃমির দেহে রক্ত সংবহন তন্ত্র থাকে না। এদের পৌষ্টিক নালী সোজা এবং সম্পূর্ণভাবে থাকে। সামনে মুখ ছিদ্র এবং পিছনে পায়ু ছিদ্র বর্তমান। এদের দেহে পৌষ্টিক গ্রন্থি থাকে না। গোলকৃমি একলিঙ্গ প্রাণী, যৌন দ্বিরূপতা দেখা যায়। প্রজনন একচেটিয়াভাবে যৌন হয় এবং পুরুষরা সাধারণত স্ত্রীদের চেয়ে দৈর্ঘ্যে ছোট হয়।[৫]
পরজীবী প্রতিরক্ষা কৌশলের অংশ হিসাবে, অ্যাস্কারিস গোলকৃমিগুলো হজম এবং প্রতিরোধ-সম্পর্কিত হোস্ট প্রোটিয়েজগুলোকে লক্ষ্য করতে একাধিক ইনহিবিটর নিঃসরণ করে, যার মধ্যে পেপসিন, ট্রিপসিন, কাইমোট্রিপসিন/ইলাস্টেজ, ক্যাথেপসিন এবং মেটালোকারবক্সিপ্টিডিসেস(এমসিপি) থাকে। অ্যাস্কারিস প্রজাতি এমসিপিগুলোকে দমন করে এবং অ্যাস্কারিস কার্বক্সেপটিটিস ইনহিবিটার(এসিআই) নামে পরিচিত একটি এনজাইম নিঃসরণ করে। এই এনজাইম এমসিপির সক্রিয় সাইটকে আবদ্ধ করে এবং হোস্ট এমসিপি দ্বারা নিজস্ব প্রোটিনের ক্লিভেজকে বন্ধ করে দেয়। একইভাবে, তারা অ্যাসকারিস ট্রিপসিন ইনহিবিটর প্রোটিন নিঃসরণ করে ট্রিপসিনকে দমন করে।
অ্যাস্কারিস অন্তত কয়েক হাজার বছর ধরে মানুষের মধ্যে উপস্থিত আছে, যেমনঃ অ্যাসকারিসের ডিম প্যালিওফাইসে এবং মমিতে পরিণত মানুষের অন্ত্রে পাওয়া গেছে।[৬]
কয়েক হাজার বছর ধরে মানুষের মধ্যে অ্যাস্কারিসের উপস্থিতির প্রমাণ মিলেছে। প্যালিওফেসে এবং মমি করা মানুষের অন্ত্রে অ্যাস্কারিসের ডিম পাওয়া গিয়েছে।[৭]
অ্যাস্কারিস লুম্ব্রিকইডিস কৃমিকে মূলত লুমব্রিকাস টেরেস বলা হতো এবং ১৬৮৩ সালে এডওয়ার্ড টাইসন সর্বপ্রথম বিস্তারিতভাবে এর বর্ণনা করেন।[৮] ১৭৫৮ সালে ক্যারোলাস লিনিয়াস আসকারিস প্রজাতিটিকে মূলত অ্যাস্কারিস লুম্ব্রিকইডিসের প্রজাতি হিসেবে বর্ণনা করেন।[৯] ১৭৮২ সালে ইয়োহান আগস্ট ইফ্রয়িম গোয়েজ শূকর থেকে একই ধরনের অ্যাস্কারিস সুম বর্ণনা করেন।[৬]
বিশ্বের আনুমানিক ৮০৭ মিলিয়ন - ১.২ বিলিয়ন মানুষ অ্যাস্কারিস লুম্ব্রিকইডিসে আক্রান্ত(কখনো কখনো শুধু অ্যাস্কারিস বা অ্যাসকারিয়াসিস রোগে আক্রান্ত হয়)। অ্যাস্কারিস, হুকওয়ার্ম, এবং হুইপওয়ার্ম পরজীবী কৃমি যা সয়েল-ট্রান্সমিটেড হেলমিন্থস(এসটিএইচ) নামে পরিচিত। একসাথে, এই অ্যাস্কারিস বিশ্বব্যাপী পরজীবী রোগের একটি প্রধান বোঝা হিসেবে দায়ী। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অ্যাসকারিয়াসিসে আক্রান্তের সংখ্যা বর্তমানে খুব কম। অ্যাস্কারিসে আক্রান্ত ব্যক্তির প্রায়ই কোন লক্ষন প্রকাশ হয় না। যদি উপসর্গ দেখা দেয় তাহলে তা হালকা হতে পারে এবং পেটের অস্বস্তি অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে। ভারী সংক্রমণের ফলে অন্ত্রের প্রতিবন্ধকতা হতে পারে এবং শিশুদের বৃদ্ধি কে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। অন্যান্য উপসর্গ যেমনঃ কাশি, শরীরের কৃমি অভিপ্রয়ানের কারণে হয়। স্বাস্থ্য সেবা প্রদানকারী কর্তৃক নির্ধারিত ওষুধের মাধ্যমে অ্যাসকারিয়াসিসের চিকিৎসা করা হয়।[৩]