আ শর্ট ফিল্ম আবাউট কিলিং | |
---|---|
পরিচালক | ক্রিস্তফ কিয়েশ্লফ্স্কি |
প্রযোজক | রাইজার্ড চুতকোভস্কির |
রচয়িতা |
|
শ্রেষ্ঠাংশে |
|
সুরকার | বিগনিউ প্রেইসনার |
চিত্রগ্রাহক | স্লাভমির ইদজিয়াক |
সম্পাদক | ইভা স্মাল |
প্রযোজনা কোম্পানি | Zespoły Filmowe "টর" |
পরিবেশক | ফিল্ম পলস্কি |
মুক্তি |
|
স্থিতিকাল | ৮৪ মিনিট |
দেশ | পোল্যান্ড |
ভাষা | পোলীয় |
আ শর্ট ফিল্ম আবাউট কিলিং (পোলীয়: Krótki film o zabijaniu) ১৯৮৮ সালের পোলিশ নাট্য চলচ্চিত্র। এটি পরিচালনা করেছেন ক্রিস্তফ কিয়েশ্লফ্স্কি। রাইজার্ড চুতকোভস্কিরর প্রযোজনায় চলচ্চিত্রটি রচনা করেছেন ক্রিস্তফ কিয়েশ্লফ্স্কি এবং ক্রিস্তফ পাইসেভিজ। অভিনয়ে ছিলেন মিরোস্লাভ বাকা, ক্রিস্তফ গ্লোবিজ, য়ান তেসজার প্রমুখ। ডেকালগ পাঁচ শিরোনামের পোলিয় টেলিভিশন ধারাবাহিক দ্য ডেকালগের পঞ্চম পর্বের বিস্তৃত সংস্করণ হিসেবে নির্মাণ করা হয়েছে চলচ্চিত্রটি।[১] পোল্যান্ডের ওয়ারশ অঞ্চলে ধারণকৃত এই চলচ্চিত্রে এক তরুণের খুনের দায়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের আইনের যৌক্তিকতায় কীভাবে একটি মৃত্যুদণ্ড হত্যায় পরিণত হয় তা দেখানো হয়েছে।
চলচ্চিত্রটির সঙ্গীত পরিচালনা করেছেন বিগনিউ প্রেইসনার। চিত্রগ্রহণ করেন স্লাভমির ইদজিয়াক এবং সম্পাদনা করেন ইভা স্মাল। চলচ্চিত্রটি ১৯৮৮-এর কান চলচ্চিত্র উৎসবে জুরি পুরস্কার ও এফআইপিআরইএসসিআই পুরস্কার[২] এবং ইউরোপিয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অনুষ্ঠানে শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রের পুরস্কার লাভ করে।[৩] পাশাপাশি পোলিশ চলচ্চিত্র উৎসব এবং রবার্ট চলচ্চিত্র উৎসবসহ আরও কয়েকটি অনুষ্ঠানে চলচ্চিত্রটি উল্লেখযোগ্য পুরস্কার জেতে।
তিনজন ব্যক্তির আবর্তে চলচ্চিত্রের কাহিনী বিস্তৃত হয়েছে। ভাল্ডমার রিকোভস্কি (য়ান তেসজার) ভার্শ অঞ্চলের একজন মাঝবয়সী ট্যাক্সি চালক যিনি নিজের স্বাধীন পেশা উপভোগ করতো। সে তার ইচ্ছে মতোন যাত্রীদের ক্যাবে উঠাতো। একজন স্থুল এবং অপ্রিয় লোক ভাল্ডমার মেয়েদের কামনালালসাপূর্ণ দৃষ্টিতে দেখতে পছন্দ করতো। আর খুশি হত কোন তরুণীকে তার ট্যাক্সিতে চড়াতে পারলে।
জাসেক লাজার (মিরোস্লাভ বাকা) ২১ বছর বয়সী উদ্দেশ্যহীন যুবক যে সম্প্রতি গ্রাম থেকে ভার্শে আসে এবং শহরের সড়কে লক্ষহীনভাবে ঘুরে বেড়ায়। অন্যের দূর্ভোগের কারণ হতে পারলে সে আনন্দিত হতো: সে একঝাঁক কবুতরকে উড়িয়ে দেয় যখন একটি মহিলা সেগুলোকে খাবার দিচ্ছিলো, এরপর সেতুর উপর থেকে চলন্ত যানবাহনে একটি পাথর ফেলে দুর্ঘটনা ঘটায়; এবং গণশৌচাগারে একজন আগুন্তুককে হঠাৎ টেনে মেঝেতে ফেলে দেয়।
পিয়োত বালিকি (ক্রিস্তফ গ্লোবিজ) একজন তরুণ-আদর্শবাদী উকিল যিনি সম্প্রতি উকালতি পাশ করেছে। পাশ করার পর সে তার স্ত্রীকে নিয়ে একটি ক্যাফেতে আসে যেখানে তারা তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা করে। একই ক্যাফেতে, আরেকটি টেবিলে বসে জাসেক তার হাতে ব্যাগ থেকে বের করা এক গোছা দড়ি পেঁচিয়ে নেয় যা পরবর্তীতে অস্ত্র হিসেবে কাজে লাগায়। এ সময় ক্যাফের বাইরে কাচের ওপাশে দুইটি মেয়েকে খেলতে দেখে সে দড়ি এবং লাঠি ব্যাগে রেখে দেয় এবং তাদের উদ্দেশ্য করে হাসে!
একই সময়ে ভাল্ডমার ক্যাফের বাইরে যাত্রীর জন্য অপেক্ষা করতে থাকে এবং হঠাৎ হর্ন বাজিয়ে পথচারীদের ভয় পাইয়ে দেয়ার চেষ্টা করে। জাসেক ক্যাফে থেকে বেরিয়ে ভাল্ডমারের ট্যাক্সিতে উঠে এবং গ্রামের দিকে চালিয়ে নিয়ে যেতে বলে। গন্তব্যে পৌছানোর পর জাসেক তার হাতের দড়ি দিয়ে ভাল্ডমারকে হত্যার চেষ্টা করে কিন্তু পথচারী দেখে লুকিয়ে যায় এবং তাদের চলে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করে। ততোক্ষণ পর্যন্ত ভাল্ডমার জীবিত থাকে এবং দড়ি থেকে নিজেকে মুক্ত করতে চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। ফিরে এসে জাসেক ভাল্ডমারের মাথায় লাঠি দিয়ে আঘাত করে। এরপর জাসেক ট্যাক্সিক্যাবটি নদীর তীরে চালিয়ে নেয় মৃতদেহ ফেলে দেয়ার উদ্দেশ্যে। কিন্তু ভাল্ডমার তখনো জীবিত থাকায় জাসেক তার মাথায় পাথর দিয়ে আঘাত করে হত্যা করে। এরপর জাসেক ট্যাস্কিক্যাবের বেতার চালু করলে একটি শিশুতোষ গান শোনা যায় যা তাকে বিপর্যস্ত করে তুললে সে তা খুলে বাইরে ফেলে দেয়। জ্যাসেক ট্যাক্সিক্যাবের সাইন পাল্টে একটি দোকানের সামনে আসে যেখানে সে একটি মেয়ের সাথে কথা বলে তাকে ক্যাবে উঠিয়ে নেয়। মেয়েটি গাড়িতে ঝুলতে থাকা একটি ক্লাউনের মাথা দেখে সন্দেহবশত জ্যাসেককে এ গাড়ি কোথায় পেয়েছে তা জিজ্ঞেস করে। জাসেক মেয়েটিকে একসাথে পাহাড়ের দিকে যেতে ইঙ্গিত করে এবং মেয়েটি জানায় যে তার স্বামী রয়েছে!
কিছু পরে, জাসেক ধরা পরে এবং বন্দী হয়। ক্রিমিনাল ডিফেন্স উকিল পিয়োত উকালতি পাশের পর তার প্রথম মামলা হিসেবে জাসেকের জবানবন্দি নিতে আসে। জাসেকের দোষি সার্বস্ত হওয়ার জন্য যথেষ্ট উপযুক্ত প্রমাণ থাকায় পিয়োতের মামলাটি জেতার ক্ষীণ সম্ভাবনা ছিল। জাসেকের ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের আদেশ হয়। জাসেককে নির্দোষ প্রমাণ করতে পিয়োত অনেক চেষ্টা করেও উপযুক্ত প্রমাণের বিপক্ষে ব্যর্থ হয়।
এরপরের দৃশ্যে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের প্রস্তুতি নিতে দেখা যায়। মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের সময় পিয়োত সেখানে উপস্থিত থাকে এবং সে সময়ে বাবা হওয়ার জন্য তাকে আনুষ্ঠানিক শুভকামনা জানানো হয়।
মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের কিছুক্ষণ পূর্বে জাসেক পিয়োরের মাধ্যমে জানতে পারে তার ছোট বোন ট্রাক দুর্ঘটনায় মারা গেছে এবং চালকটি ছিলো তার এক মাতাল বন্ধু। সে আরও জানতে পারে, তারা একইসাথে মদ্যপান করেছিল। অণুতপ্ত জাসেক অণুরোধ জানায় যেনো তার পারিবারিক সমাধিস্থানে তার বোন এবং বারার পাশে তাকে সমাধিস্থ করা হয়। জাসেক এরপর শেষবারের মতো তার উকিলের নিকট অণুরোধ জানায়।
জাসেককে কয়েকজন কারারক্ষীর সাহার্যে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের নির্দিষ্ট স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়। ওয়ার্ডেন তাকে শেষ একটি সিগারেট এগিয়ে দেয়। সিগারেটে কয়েক টান দেবার পর সে পালাতে চেষ্টা করে এবং পরে তাকে জোর করে কোনভাবে ফাঁসিতে ঝোলানো হয়। এরপর পিয়োত একটি খালি মাঠে গাড়ি চালিয়ে যায় যেখানে তাকে কাঁদতে দেখা যায়।
চলচ্চিত্রে সমাজতান্ত্রিক যুগের শেষার্ধে বিষণ্ন পোল্যান্ডের চিত্র ফুটে উঠেছে। এতে রঙিন ফিল্টারের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার রয়েছে। রঙিন চলচ্চিত্র হওয়া সত্ত্বেও এখানে সেপিয়া টোন বা ব্লিচ বাইপাস ধরনের এফেক্টের ব্যবহার করা হয়েছে। এছাড়াও ধূসর অবস্থানের সঙ্গে মিলিত একরঙা বা মনোক্রোম আলোকচিত্রের অনুরূপ প্রভাব রয়েছে।
১৯৮৮ সালে, চলচ্চিত্রটির মুক্তির বছর পোল্যান্ডে মৃত্যুদণ্ড স্থগিত রাখা হয়। সে বছর পোলান্ডে একমাত্র মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছিলো, এবং ১৯৮৭ সালে ৬ জন নিরীহ বন্দির ফাঁসির আদেশ দেওয়া হয়েছিল।
পোল্যান্ডের মাজোভিকি প্রদেশের ভার্শ, সিডলেক অঞ্চলে চলচ্চিত্রটির চিত্রগ্রহণ করা হয়। ভার্শ অঞ্চলের স্রোডমিশি এলাকার ক্রাকোভস্কি প্রজ্ডমিশি এবং ওল্ড টাউন এলাকায়ও এর চিত্রগ্রহণ করা হয়।[৪]