আ স্ট্রিটকার নেমড ডিজায়ার | |
---|---|
প্রথম মুদ্রণের প্রচ্ছদ (নিউ ডিরেকশন্স) | |
রচয়িতা | টেনেসি উইলিয়ামস |
চরিত্র |
|
উদ্বোধনের তারিখ | ৩ ডিসেম্বর ১৯৪৭ |
উদ্বোধনের স্থান | এথেল ব্যারিমোর থিয়েটার নিউ ইয়র্ক সিটি, নিউ ইয়র্ক |
মূল ভাষা | ইংরেজি |
বর্গ | সাউদার্ন গথিক |
প্রেক্ষাপট | ফ্রেঞ্চ কোয়ার্টার ও ডাউনটাউন নিউ অরলিন্স |
আ স্ট্রিটকার নেমড ডিজায়ার হল টেনেসি উইলিয়ামস রচিত একটি নাটক। এটি ১৯৪৭ সালের ৩রা ডিসেম্বর ব্রডওয়েতে প্রথম মঞ্চস্থ হয়।[১] এই নাটকে দেখা যায় ব্ল্যাঞ্চ ডুবোয়া নামে একজন প্রাক্তন সাউদার্ন বেলে ঋণে জর্জরিত হয়ে সব হারিয়ে তার এক সময়ের সমৃদ্ধ্ব জীবন রেখে নিউ অরলিন্সে তার ছোট বোন স্টেলা ও বোনের স্বামী স্ট্যানলির ভাড়া করা জীর্ণ অ্যাপার্টমেন্টে ওঠেন।
আ স্ট্রিটকার নেমড ডিজায়ার বিংশ শতাব্দীর অন্যতম সমাদৃত নাটক[২] এবং উইলিয়ামসের সবচেয়ে জনপ্রিয় সৃষ্টিকর্ম। এটি এখনও তার রচিত সর্বাধিক মঞ্চস্থ নাটকগুলোর মধ্যে শীর্ষ স্থানে রয়েছে এবং অন্যান্য সৃষ্টিকর্মে নাটকটি উপযোগ করা হয়েছে, তন্মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হল ১৯৫১ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত একই নামের সমাদৃত চলচ্চিত্র।[৩] এটি ১৯৪৮ সালে নাটকে পুলিৎজার পুরস্কার অর্জন করে।[৪]
এই নাটকে ব্ল্যাঞ্চ ডুবোয়া ডিজায়ার স্ট্রিটকার লাইনের একটি স্ট্রিটকারে চড়ে স্টেলার অ্যাপার্টমেন্টে পৌঁছান। টেনেসি উইলিয়ামস যখন এই নাটকটি লিখেন, তখন নিউ অরলিন্সের ফ্রেঞ্চ কোয়ার্টারের তুলুজে একটি অ্যাপার্টমেন্টে বাস করতেন। পুরনো ডিজায়ার স্ট্রিটকার লাইনটি সেখান থেকে আধা ব্লক দূর দিয়ে চলত।
১৯৫১ সালের চলচ্চিত্রে ব্ল্যাঞ্চকে গাড়িতে চড়তে দেখা যায়। নাটকটি লেখা ও চলচ্চিত্রের চিত্রায়নের মধ্যকার সময়ে স্ট্রিটকার লাইনটি বাস পরিষেবায় (১৯৪৮) রূপ নেয় এবং চলচ্চিত্রের প্রযোজনা দলকে কর্তৃপক্ষের নিকট থেকে একটি গাড়ি ভাড়া করার অনুমতি নিতে হয়, যে গাড়িতে "ডিজায়ার" নাম লেখা রয়েছে।[৫]
ঋণে জর্জরিত হয়ে মিসিসিপির লরেলের পারিবারিক বাড়ি হারানোর পর ব্ল্যাঞ্চ ডুবোয়া নিউ অরলিন্সের ফ্রেঞ্চ কোয়ার্টারে তার ছোট বোন স্টেলা ও তার স্বামী স্ট্যানলি কোয়াল্স্কির বাড়িতে গিয়ে ওঠেন। ব্ল্যাঞ্চের বয়স ত্রিশের ঘরে। তার হাতে কোন অর্থ নেই এবং আর কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই। ব্ল্যাঞ্চ স্টেলাকে জানায় সে তার শিক্ষকতা পেশা থেকে ছুটি নিয়েছে (পরে দেখা যায় আসলে সেটা মিথ্যা ছিল)। ব্ল্যাঞ্চ তার বোনের দুই কক্ষবিশিষ্ট জীর্ণ ফ্ল্যাট নিয়ে পরিতাপ করে। সে দেখে যে স্ট্যানলি খুবই রুষ্ট ও কঠোর। অপরদিকে, স্ট্যানলি ব্ল্যাঞ্চের ব্যাপারে সন্দিহান এবং তার শিষ্টাচারকে পাত্তা দেয় না বরং ব্ল্যাঞ্চের উপস্থিতি তার জীবনধারায় বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
প্রথম দৃশ্য থেকেই ব্ল্যাঞ্চ উদ্বিগ্ন ও ভীতসন্ত্রস্ত। তার মদ্যপানের সমস্যা রয়েছে। সে প্রতারনার আশ্রয়ও নেয় এবং তার বোন ও বোনের স্বামীর ব্যাপারে সমালোচনা করে। স্ট্যানলি ব্ল্যাঞ্চকে তার বিয়ে সম্পর্কে প্রশ্ন করে। ব্ল্যাঞ্চ অল্প বয়সে বিয়ে করেছিল কিন্তু তার স্বামী আত্মহত্যা করে। এই স্মৃতি তাকে কষ্ট দেয়। ব্ল্যাঞ্চ তার স্বামীর মৃত্যুর জন্য অনুতপ্ত কারণ তার স্বামীর সমকামিতার কথা জানার পর তার প্রতিক্রিয়া তার স্বামীকে আত্মহত্যার মত মারাত্মক সিদ্ধান্তের দিকে ঠেলে দেয়। স্ট্যানলি মনে করে উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত সম্পত্তি থেকে তাকে বঞ্চিত করা হয়েছে এবং সে ডুবোয়াদের পারিবারিক বাড়ি ও এক সময়ে বৃহৎ আবাদি জমি বেলা রেভে সম্পর্কে জানতে চায়। সে স্টেলাকে নাপোলিওনিক কোড সম্পর্কে জানায় এবং বলে এর মাধ্যমে একজন স্বামী তার স্ত্রীর আর্থিক বিষয়াবলির উপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারে। ব্ল্যাঞ্চ বেলা রেভ সম্পর্কিত সকল নথি তাকে দিয়ে দেয়। কাগজপত্রগুলো দেখতে দিয়ে স্ট্যানলি কিছু পত্র খুঁজে পায় যেগুলোকে ব্ল্যাঞ্চ তার মৃত স্বামীর নিকট থেকে প্রাপ্ত প্রেমপত্র বলে দাবি করে। কিছু সময়ের জন্য স্ট্যানলি তার অনুভূতির কাছে পরাস্ত হয়। এরপর সে ব্ল্যাঞ্চকে জানায় যে স্টেলা অন্তঃসত্ত্বা।
ব্ল্যাঞ্চ আসার পরের রাতে স্ট্যানলির পোকার গেম খেলাকালীন স্ট্যানলির পোকার খেলার সাথী মিচের সাথে ব্ল্যাঞ্চের সাক্ষাৎ হয়। তার শিষ্টাচার তাকে অন্যদের থেকে আলাদা করে। তাদের কথাবার্তা তোষামোদে পরিণত হয় এবং তাদের মধ্যে বন্ধুত্ব হয়ে যায়। ব্ল্যাঞ্চ তাকে বিমোহিত করে এবং তারা একে অপরকে পছন্দ করে ফেলে। তাদের কথাবার্তায় বিরক্ত ও খেলায় বাধাপ্রাপ্ত হয়ে মদ্যপ স্ট্যানলি হঠাৎ স্টেলাকে আঘাত করে বসে। ব্ল্যাঞ্চ ও স্টেলা উপরের তলার বাসিন্দা ইউনিস হুবেলের ঘরে আশ্রয় নেয়। স্ট্যানলি স্বাভাবিক হওয়ার পর উঠান থেকে বারংবার স্টেলাকে তার নাম ধরে ডাকে এবং নিচে আসার জন্য অনুরোধ করে। স্টেলা নিচে নেমে আসে এবং তারা ঘরে ফিরে যায়। ব্ল্যাঞ্চ কিছুটা হতবাক হয় যে তার বোনকে আঘাত করার পরও সে তার স্বামীর কাছে ফিরে গেছে। স্টেলা স্ট্যানলির কাছে ফিরে যাওয়ার পর ব্ল্যাঞ্চ ও মিচ উঠানে সিড়ির গোড়ায় বসে এবং মিচ স্ট্যানলির এই নিকৃষ্ট আচরণের জন্য তার কাছে ক্ষমা চায়।
পরের দিন সকালে ব্ল্যাঞ্চ স্টেলার কাছে যায় এবং বলে স্ট্যানলি একটা অমানুষ, কিন্তু স্টেলা ব্যাঞ্চকে নিশ্চয়তা দেয় তারা দুজনে সুখে আছে। স্ট্যানলি বাইরে থেকে তাদের কথা শুনতে পায় কিন্তু নিশ্চুপ থাকে। স্ট্যানলি ঘরে আসলে স্টেলা তাকে জড়িয়ে ধরে এবং চুমু দিয়ে ব্ল্যাঞ্চকে বুঝাতে চায় স্ট্যানলি সম্পর্কে তার মতামতের পরোয়া করে না।
সপ্তাহ যেতে থাকে এবং ব্ল্যাঞ্চ ও স্ট্যানলির মধ্যে দ্বন্দ্ব বাড়তে থাকে। ব্ল্যাঞ্চ মিচের মধ্যে আশা দেখে এবং স্টেলাকে জানায় সে মিচের সাথে চলে যেতে চায় যেন সে কারও সমস্যার কারণ না হয়। ব্ল্যাঞ্চ ও মিচ সাক্ষাৎ করে এবং ব্ল্যাঞ্চ মিচের সাথে আত্মপক্ষ সমর্থন করে বলে সে অ্যালান গ্রে নামে এক যুবককে বিয়ে করেছিল। পরবর্তী সময়ে সে আবিষ্কার করে গ্রে আরেকজন পুরুষের সাথে সমকামিতায় লিপ্ত। ব্ল্যাঞ্চ তার এই কর্মকাণ্ডে বিতৃষ্ণ এটা জানার পর গ্রে আত্মহত্যা করে। এই কাহিনী মিচের অনুভূতিকে নাড়া দেয় এবং ব্ল্যাঞ্চকে জানায় তাদের একে অপরকে প্রয়োজন। মিচও একজনকে হারিয়েছে এবং ব্ল্যাঞ্চের অবস্থার প্রতি তার সহানুভূতি রয়েছে।
একদিন স্ট্যানলি স্টেলাকে লরেলের একজন আলুথালু বিক্রয়কর্মীর নিকট থেকে শোনা গল্প বলে। তার গল্প অনুসারে কম বয়সী ছাত্রের সাথে প্রেমের সম্পর্কে জড়ানোর অপরাধে ব্ল্যাঞ্চকে তার শিক্ষকতার চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয় এবং সে যৌনবৃত্তির জন্য পরিচিত একটি হোটেলে থাকত। স্ট্যানলি এই কথা মিচকে ইতোমধ্যে জানিয়েছে তা শোনার পর স্টেলা নির্মম ব্যবহারের জন্য স্ট্যানলির প্রতি রাগান্বিত হয়। সেই সন্ধ্যায় ব্ল্যাঞ্চের জন্মদিনের অনুষ্ঠানে মিচের জন্য সংরক্ষিত টেবিলটি খালি রয়ে যায়। স্ট্যানলি ব্ল্যাঞ্চকে জন্মদিনের উপহার হিসেবে লরেলে যাওয়ার জন্য গ্রেহাউন্ড বাসের একটি একমুখী টিকেট দেয়। স্টেলা ও স্ট্যানলি বিতর্কে লিপ্ত হয়, কিন্তু স্টেলার হঠাৎ করে প্রসব বেদনা শুরু হলে স্ট্যানলি তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়।
ব্ল্যাঞ্চ বাড়িতে অপেক্ষা করছিল, এসময় মিচ বাড়িতে আসে ও স্ট্যানলির নিকট থেকে শোনা গল্প সম্পর্কে ব্ল্যাঞ্চের কাছে জবাব চায়। ব্ল্যাঞ্চ এই গল্প সত্য বলে স্বীকার করে এবং তার কাছে ক্ষমা চায়। ক্ষুব্ধ ও অপমানিত মিচ তাকে প্রত্যাখ্যান করে। অধিকন্তু, মিচ তার সাথে শারীরিক সম্পর্কে জড়াতে চায় কারণ সে দীর্ঘদিন কিছু না পেয়েই তার জন্য অপেক্ষা করেছে। ব্ল্যাঞ্চ চিৎকার করবে বলে হুমকি দেয় এবং তাকে বাড়ি থেকে বের হয়ে যেতে বলে।
স্ট্যানলি বাড়ি ফিরে দেখে অ্যাপার্টমেন্টে ব্ল্যাঞ্চ একা। ব্ল্যাঞ্চ এই সময়ে ভাবতে থাকে একজন বয়স্ক লোক তাকে বিয়ে করে ভরণপোষণের দায়িত্ব নিবে এবং তাকে নিউ অরলিন্সে নিয়ে যাবে। সে জানায় মিচ তার কাছে ক্ষমা চেয়েছিল কিন্তু সে তাকে ফিরিয়ে দিয়েছে। স্ট্যানলি কিছুক্ষণ তার এই গল্প শোনে এবং পরে তার মিথ্যা, কপটতা ও আচরণের জন্য তিরস্কার করে। স্ট্যানলি তার দিকে ধাবিত হতে থাকলে এর প্রতিক্রিয়ায় ব্ল্যাঞ্চ তাকে একটি ভাঙ্গা বোতল দিয়ে আঘাত করার হুমকি দেয়, কিন্তু স্ট্যানলির শক্তির কাছে পরাজিত হয়। ব্ল্যাঞ্চ মেঝেতে লুটিয়ে পড়ে এবং শেষ দৃশ্যে স্ট্যানলিকে তাকে অজ্ঞান অবস্থায় বিছানায় নিয়ে যেতে দেখা যায়।
কিছুদিন পর কোয়াল্স্কি অ্যাপার্টমেন্টে পোকার খেলার সময় স্টেলা ও ইউনিসকে ব্ল্যাঞ্চের সামান্য জিনিসপত্র গোছাতে দেখা যায়, অন্যদিকে ব্ল্যাঞ্চকে মানসিকভাবে ভঙ্গুর ক্যাটাটোনিক অবস্থায় গোসল করতে দেখা যায়। ব্ল্যাঞ্চকে স্টেলাকে জানায় স্ট্যানলি তাকে ধর্ষণ করেছে (যদিও স্ট্যানলি তা নাকচ করে দেয়), স্টেলা তার বোনের এই গল্প বিশ্বাস করে না। একজন ডাক্তার ও সেবিকা ব্ল্যাঞ্চকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে আসলে সে প্রথমে বাধা দেয়। ফলে সেবিকাটি তাকে বেদনা প্রদান করে সংযত করে। পোকার খেলায় উপস্থিত মিচ কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে। অন্যদিকে, ডাক্তার অনেক ভদ্র ছিলেন এবং ব্ল্যাঞ্চ তার সাথে স্বেচ্ছায় যেতে যেতে বলে, "তুমি যেই হও না কেন - আমি সবসময় অপরিচিতদের দয়ার প্রতি নির্ভরশীল।" পোকার খেলা কোন প্রকার বাধা ছাড়াই চলতে থাকে।
আ স্ট্রিটকার নেমড ডিজায়ার নাটকটির প্রথম ব্রডওয়ে মঞ্চায়নের প্রযোজক ছিলেন আইরিন মেয়ার সেলৎসনিক ও নির্দেশক ছিলেন এলিয়া কাজান।[৩] এটি ১৯৪৭ সালের নভেম্বরের শুরুর দিকে কানেটিকাটের নিউ হেভেনের শুবার্ট থিয়েটারে প্রথম মঞ্চস্থ হয়। এরপর এটি ফিলাডেলফিয়ার ওয়ালনাট স্ট্রিট থিয়েটারে এবং পরে ১৯৪৭ সালের ৩রা ডিসেম্বর এথেল ব্যারিমোর থিয়েটারে মঞ্চস্থ হয়।[৩] সেলৎসনিক প্রথমে মার্গারেট সুলাভান ও জন গারফিল্ডকে মূল দুটি চরিত্রে নিতে চেয়েছিলেন, কিন্তু পরে অল্প-পরিচিত জেসিকা ট্যান্ডি এবং সে সময়ে একেবারে অপরিচিত মার্লোন ব্রান্ডোকে বাছাই করেন। প্রথম রাতের মঞ্চায়নে অন্যান্য অভিনয়শিল্পীদের মধ্যে ছিলেন স্টেলা চরিত্রে কিম হান্টার ও মিচ চরিত্রে কার্ল মালডেন।[৩] টেনিসি উইলিয়ামস ওয়েস্ট কোস্টের একাঙ্কিকা পোট্রেট অব আ ম্যাডোনা-য় ট্যান্ডির অভিনয় দেখার পর তাকে এই নাটকের জন্য বাছাই করেন। উইলিয়ামস ভেবেছিলেন ব্রান্ডো যদিও তার চরিত্রের বিবেচনায় বেশ তরুণ ছিলেন, তবুও তাকে দুষ্ট বৃদ্ধ লোক হিসেবে না দেখিয়ে বরং তার অনিচ্ছাকৃত নিষ্ঠুরতাকে তারুণ্যের অজ্ঞতা হিসেবে আরোপ করা যাবে। নাটকটির মর্মান্তিক দৃশ্য এবং জঘন্য সংলাপ স্বত্তেও দর্শকেরা প্রথম মঞ্চায়নের প্রশংসা করেন।[৬] দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস-এ নাটকটির প্রথম মঞ্চায়নের এক পর্যালোচনায় ব্রুক্স অ্যাটকিনসন ট্যান্ডির "দারুণ অভিনয়"-কে "প্রায় অবিশ্বাস্যভাবে সত্য" বলে বর্ণনা করেন এবং লিখেন যে টেনেসি উইলিয়ামস "একটি মর্মস্পর্শী এবং আলোকিত গল্প রচনা করেছেন।"[৭]
পরবর্তী সময়ে ইউটা হ্যাগেন ট্যান্ডির স্থলে, কার্মেলিটা পোপ হান্টারের স্থলে এবং অ্যান্থনি কুইন ব্রান্ডোর স্থলে স্থলাভিষিক্ত হন। হ্যারল্ড ক্লারম্যানের নির্দেশনায় হ্যাগেন ও কুইন নাটকটি নিয়ে জাতীয় সফরে বের হন এবং ফিরে এসে ব্রডওয়েতে আরও অভিনয় করেন। রালফ মিকারও স্ট্যানলি চরিত্রে ব্রডওয়ে মঞ্চে ও সফররত কোম্পানির সাথে অভিনয় করেন। ট্যান্ডি ১৯৪৮ সালে মঞ্চনাটকে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে টনি পুরস্কার অর্জন করেন।[৮] ১৯৪৯ সালের ১৭ই ডিসেম্বর ৮৫৫ বার মঞ্চায়নের পর মূল ব্রডওয়ে মঞ্চায়নের সমাপ্তি ঘটে।[৩]
১৯৪৮ সালে কোন্স আর্ট থিয়েটারে আ স্ট্রিটকার নেমড ডিজায়ার নাটকের প্রথম উপযোগকরণ মঞ্চস্থ হয়। এটি নির্দেশনা দেন কারোলস কোন, এতে ব্ল্যাঞ্চ চরিত্রে অভিনয় করেন মেলিনা মার্কুরি ও স্ট্যানলি চরিত্রে অভিনয় করেন ভাসিলিস দিয়ামান্তোপোলোস এবং সুরায়োজন করেন মানোস হাদিয়াদাকিস।
নাটকটি লন্ডনে ১৯৪৯ সালের ১২ই অক্টোবর অল্ডউইচ থিয়েটারে লরন্স অলিভিয়ের নির্দেশনায় প্রথম মঞ্চস্থ হয়। এতে স্ট্যানলি চরিত্রে বোনাল কোলেনো, ব্ল্যাঞ্চ চরিত্রে ভিভিয়েন লেই, স্টেলা চরিত্রে রেনে অ্যাশারসন এবং মিচ চরিত্রে বের্নার্ড ব্র্যাডেন অভিনয় করেন।[৯]
এটি অস্ট্রেলিয়ায় প্রথম ১৯৫০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে মেলবোর্নের কমেডি থিয়েটারে প্রথম মঞ্চস্থ হয়। এতে ব্ল্যাঞ্চ চরিত্রে ভায়োলা কিটস ও স্ট্যানলি চরিত্রে আর্থার ফ্রানৎজ অভিনয় করেন।[১০]
১৯৫৩ সালের আগস্ট মাসে মিজুরি অঙ্গরাজ্যের জেফারসন সিটিতে লিংকন বিশ্ববিদ্যালয়ে সামার থিয়েটার কোম্পানির প্রযোজনায় প্রথমবার সকল কৃষ্ণাঙ্গ কলাকুশলী নিয়ে এই নাটকের মঞ্চায়ন হয়। এটি নির্দেশনা দেন উইলিয়ামসের আইওয়ার সাবেক সহপাঠী টমাস ডি. পাওলি। ১৯৫০-এর দশকের মাঝামাঝি থেকে কৃষ্ণাঙ্গ ও আন্তঃলিঙ্গের সমন্বয়ে অসংখ্য মঞ্চায়ন হয়েছে।
উইলিয়ামস যার কথা মাথায় রেখে ব্ল্যাঞ্চ চরিত্রটি লিখেছিলেন, সেই ট্যালুলা ব্যাঙ্কহেড ১৯৫৬ সালে নিউ ইয়র্ক সিটি সেন্টার কোম্পানির প্রযোজনায় হার্বার্ট ম্যাচিজের নির্দেশনায় এই চরিত্রে অভিনয় করেন।[১১]
১৯৭২ সালে মার্কিন সুরকার ফ্রান্সেস জিফার আ স্ট্রিটকার নেমড ডিজায়ার-কে সঙ্গীতে রূপ দেন।[১২]
১৯৭৩ সালে এই নাটকের প্রথম ব্রডওয়েতে পুনঃমঞ্চায়ন হয়। এটি প্রযোজনা করে লিংকন সেন্টার। ভিভিয়ান বিউমন্ট থিয়েটারে মঞ্চস্থ এই নাটকে ব্ল্যাঞ্চ চরিত্রে রোজম্যারি হ্যারিস, স্ট্যানলি চরিত্রে জেমস ফ্যারেন্টিনো ও স্টেলা চরিত্রে প্যাট্রিশিয়া কনলি অভিনয় করেন।[১৩]
১৯৭৬ সালে রিপ টর্ন ইলিনয়ের লেক ফরেস্টের এক সময়ের খ্যাতনামা একাডেমি ফেস্টিভাল থিয়েটারে এই নাটকের পুনঃমঞ্চায়নের জন্য পরিচালক জ্যাক গেলবারকে নিয়োগ দেন।[১৪] টর্ন এতে স্ট্যানলি চরিত্রে এবং তার স্ত্রী জেরাল্ডিন পেজ ব্ল্যাঞ্চ চরিত্রে অভিনয় করেন। মঞ্চস্থ নাটকটি বাস্তবসম্মত, উজ্জ্বল আলোকিত, আবর্জনা-পূর্ণ মঞ্চ প্রতিকূল পরিবেশের প্রতিফলন ঘটায় এবং দর্শকদের পূর্ণ নাটকীয় আবেশে মগ্ন করে। একেবারে স্বভাবজাত ও এমনকি বিপজ্জনক হওয়ার ফলে গেলবারের নির্দেশিত নাটকটি নিয়ে প্রতিক্রিয়া প্রদান সমালোচকদের জন্য কষ্টসাধ্য ছিল। এই মঞ্চায়নে নাটকটির পাণ্ডুলিপি শহুরে সহিংসতা এবং নিরবচ্ছিন্ন প্রকৃতিবাদের সর্বোচ্চ সীমায় পৌঁছে। এক পর্যালোচনায় বলা হয়, "এটি প্রজাপতির পাখার ন্যায় কোমল ব্ল্যাঞ্চ নয়। এটি হিম্মত সম্পন্ন মাকড়সার জাল।" পেজের অভিনয়কে ভিভিয়েন লেইয়ের আবেগোন্মত্ততা বা জেসিকা ট্যান্ডির অসহায়ত্ব হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে।[১৫]
সার্কেল ইন দ্য স্কয়ার থিয়েটারে ১৯৮৮ সালের বসন্তকালীন পুনঃমঞ্চায়নে এইড্যান কুইন স্ট্যানলি চরিত্রে, ব্লাইদ ড্যানার ব্ল্যাঞ্চ চরিত্রে এবং ফ্রান্সেস ম্যাকডোরম্যান্ড স্টেলা চরিত্রে অভিনয় করেন।[১৬]
১৯৯২ সালের ব্যাপক প্রচারপ্রাপ্ত ও সমাদৃত পুনঃমঞ্চায়নে স্ট্যানলি চরিত্রে আলেক বল্ডউইন ও ব্ল্যাঞ্চ চরিত্রে জেসিকা ল্যাং অভিনয় করেন। এটি এথেল ব্যারিমোর থিয়েটারে মঞ্চস্থ হয়, যেখানে মূল নাটকটি মঞ্চস্থ হয়েছিল। এই প্রযোজনাটি এতটাই সফল হয়েছিল যে এটি টেলিভিশনের জন্য চিত্রধারণ করা হয়েছিল। এতে টিমথি কারহার্ট মিচ চরিত্রে, অ্যামি ম্যাডিগান স্টেলা চরিত্রে এবং ভবিষ্যৎ সোপরানো তারকা জেমস গ্যান্ডোলফিনি ও এইডা টুর্টুরো অভিনয় করেন। গ্যান্ডোলফিনি কারহার্টের স্থলাভিষিক্ত হয়ে কাজ করতেন।[১৭]
১৯৯৭ সালে নিউ অরলিন্সের ল্য পেতি থিয়েটার দ্যু ভো কারেতে নাটকটির ৫০তম বার্ষিকী উপলক্ষে এটি মঞ্চস্থ হয়। এতে সুরায়োজন করে মার্সালিস পরিবার এবং এতে শ্রেষ্ঠাংশে অভিনয় করেন মাইকেল অ্যারাটা ও শেলি পোন্সি। একই বছর শিকাগোর স্টেপেনউল্ফ থিয়েটারে গ্যারি সিনিস স্ট্যানলি চরিত্রে, জন সি. রাইলি মিচ চরিত্রে, ক্যাথরিন এর্ব স্টেলা চরিত্রে এবং লায়লা রবিন্স ব্ল্যাঞ্চ চরিত্রে অভিনয় করেন।
২০০২ সালে রয়্যাল ন্যাশনাল থিয়েটারের জন্য ট্রেভর নানের নির্দেশিত প্রযোজনায় লন্ডনের লাইটেলটন থিয়েটারে মঞ্চস্থ নাটকে গ্লেন ক্লোজ শ্রেষ্ঠাংশে অভিনয় করেন এবং তার অভিনয় বিপুল প্রশংসিত হয়।[১৮][১৯] ২০০৫ সালের ব্রডওয়ে পুনঃমঞ্চায়নটির নির্দেশনা দেন এডওয়ার্ড হল এবং প্রযোজনা করে দ্য রাউন্ডঅ্যাবাউট থিয়েটার কোম্পানি। এতে স্ট্যানলি চরিত্রে জন সি. রাইলি, স্টেলা চরিত্রে অ্যামি রায়ান ও ব্ল্যাঞ্চ চরিত্রে নাতাশা রিচার্ডসন অভিনয় করনে।[২০] এটি রিচার্ডসনের ব্রডওয়েতে সর্বশেষ উপস্থিতি ছিল; ২০০৯ সালে তিনি স্কিইং দুর্ঘটনায় মৃত্যুবরণ করেন।[২১]
২০০৯ সালের জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত র্যাচেল ভাইস ও রুথ উইলসন লন্ডনের ওয়েস্ট এন্ডের প্রযোজনায় ডনমার ওয়্যারহাউজে এই নাটকের পুনঃমঞ্চায়নে শ্রেষ্ঠাংশে অভিনয় করেন।[২২] রব অ্যাশফোর্ড নির্দেশিত এই প্রযোজনাটি বিপুল সমাদৃত হয়।[২৩] সিডনি থিয়েটার কোম্পানির প্রযোজনায় ২০০৯ সালের ৫ই সেপ্টেম্বর প্রথমবার নাটকটি মঞ্চস্থ হয় এবং ২০০৯ সালের ১৭ই অক্টোবর পর্যন্ত চলে। এই প্রযোজনার নির্দেশনা দেন লিভ উলমান এবং ব্ল্যাঞ্চ চরিত্রে কেট ব্লানচেট, স্ট্যানলি চরিত্রে জোয়েল এজার্টন, স্টেলা চরিত্রে রবিন ম্যাকলিভি এবং মিচ চরিত্রে টিম রিচার্ডস অভিনয় করেন।[২৪] একই বছর ফিলাডেলফিয়ার ওয়ালনাট স্ট্রিট থিয়েটারে মূল প্রাক-ব্রডওয়ে প্রচেষ্টা অনুষ্ঠিত হয়, সেখানে এই নাটকের মঞ্চায়ন হয়।
২০১২ সালের এপ্রিল মাসে ব্রডহার্স্ট থিয়েটারে ব্লেয়ার আন্ডারউড, নিকোল এরি পার্কার, ড্যাফনে রুবিন-ভেগা ও উড হ্যারিস অভিনীত বহুবর্ণ সংবলিত প্রযোজনা মঞ্চস্থ হয়।[২৫] মঞ্চনাটক পর্যালোচনা সংগ্রাহক কার্টেন ক্রিটিক ১৭ জন সমালোচকের মতামতের ভিত্তিতে এই প্রযোজনাটিকে ১০০-এ ৬১ স্কোর প্রদান করে।[২৬]
লন্ডনের ইয়াং ভিসে নাটকটি ২০১৪ সালের ২৩শে জুলাই প্রথম মঞ্চস্থ হয় এবং ২০১৪ সালের ১৯শে সেপ্টেম্বর মঞ্চায়ন সমাপ্ত হয়। বেনেডিক্ট অ্যান্ড্রুজের নির্দেশনায় এতে শ্রেষ্ঠাংশে অভিনয় করেন জিলিয়ান অ্যান্ডারসন, বেন ফস্টার, ভ্যানেসা কার্বি ও কোরি জনসন। এটি বিপুল সমাদৃত হয় এবং এটি ইয়াং ভিসের প্রযোজিত দ্রুততম-সর্বাধিক বিক্রীত নাটক।[২৭] ২০১৪ সালের ১৬ই সেপ্টেম্বর ন্যাশনাল থিয়েটার লাইভ প্রকল্পের অংশ হিসেবে যুক্তরাজ্যের এক সহস্রাধিক প্রেক্ষাগৃহে এই নাটকটি সরাসরি প্রদর্শন করা হয়।[২৮] এরপর এটি ২০০০ এর বেশি ভেন্যুতে প্রদর্শিত হয়।[২৯] ২০১৬ সালের ২৩শে এপ্রিল থেকে ২০১৬ সালের ৪ঠা জুন পর্যন্ত এটি নিউ ইয়র্ক সিটির ব্রুকলিনের নতুন সেন্ট অ্যান্স ওয়্যারহাউজে পুনঃমঞ্চায়িত হয়।[৩০] ২০২০ সালে কোভিড-১৯ এর বৈশ্বিক মহামারিকালীন লকডাউনে এই মঞ্চায়নটি ন্যাশনাল থিয়েটার অ্যাট হোম ধারাবাহিকের অংশ হিসেবে ইউটিউবে বিনামূল্যে প্রকাশ করা হয়।[৩১]
২০১৬ সালে সারা ফ্র্যাঙ্কম ম্যানচেস্টারের রয়্যাল এক্সচেঞ্জে এই নাটকের একটি মঞ্চায়নের নির্দেশনা দেন, যাতে শ্রেষ্ঠাংশে অভিনয় করেন ম্যাক্সিন পিক, বেন ব্যাট, শ্যারন ডানকান ব্রিউস্টার ও ইউসেফ কেরকোর। এটি ২০১৬ সালের ৮ই সেপ্টেম্বর প্রথম মঞ্চস্থ হয় এবং ১৫ই অক্টোবর পর্যন্ত চলে। এটি সমাদৃত হয় এবং বিশেষ করে পিকের অভিনয় প্রশংসা অর্জন করে।[৩২]
২০১৮ সালে গ্র্যান্ডেল থিয়েটারে তৃতীয় বার্ষিক টেনেসি উইলিয়াস উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। উৎসবের নির্বাহী সৃজনশীল পরিচালক ক্যারি হোক ও নাটকের নির্দেশন টিম ওসেল এমন সব অভিনয়শিল্পীদের বাছাই করেন যাদের বয়স টেনেসি উইলিয়ামসের মূল পরিকল্পনা অনুসারে কাছাকাছি হয়। এই মঞ্চায়নে সোফিয়া ব্রাউন ব্ল্যাঞ্চ চরিত্রে, নিক নার্সিসি স্ট্যানলি চরিত্রে, লানা ডিভোরাক স্টেলা চরিত্রে ও স্পেন্সার সিকমান মিচ চরিত্রে অভিনয় করেন। হেনরি পোকস মৌলিক সুর সৃষ্টি করেন এবং জেমস ওক সেট পরিকল্পনা করেন। সমালোচকগণ সর্বসম্মতভাবে এই মঞ্চায়নের প্রশংসা করেন।[৩৩][৩৪]
২০২২ সালে লন্ডনের আলমিডা থিয়েটারে রেবেকা ফ্রেকনলের নির্দেশনায় নাটকটির পুনঃমঞ্চায়ন হয়। এতে প্যাটসি ফেরান ব্ল্যাঞ্চ চরিত্রে, পল মেসকল স্ট্যানলি চরিত্রে এবং অঞ্জনা বাসন স্টেলা চরিত্রে অভিনয় করেন। এই মঞ্চায়নটি বিপুল সমাদৃত হয়[৩৫] এবং এর ওয়েস্ট এন্ডের মঞ্চায়ন সেই সময় পর্যন্ত কোন অ্যাম্বাসেডর থিয়েটার গ্রুপ ভেন্যুর দ্রুততম সময়ে সর্বাধিক বিক্রীত নাটকে পরিণত হয়।[৩৬] এই পুনঃমঞ্চায়ন ৬টি লরন্স অলিভিয়ে পুরস্কারের মনোনয়ন থেকে শ্রেষ্ঠ পুনঃমঞ্চায়ন, শ্রেষ্ঠ অভিনেতা (মেসকল) ও শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেত্রী (বাসন) বিভাগে তিনটি পুরস্কার অর্জন করে।[৩৭][৩৮]
২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে লিবারেল আর্টস স্কুলে সিওয়ানি: দি ইউনিভার্সিটি অব দ্য সাউথ টেনেসি উইলিয়ামসের স্থাবর সম্পত্তির অধিকাংশের স্বত্বাধিকার লাভ করে। তারা জেমস ক্রফোর্ডের নির্দেশনায় নাটকটির পুনঃমঞ্চায়ন করে। সিওয়ানিতে অবস্থিত টেনেসি উইলিয়ামস সেন্টারে বিশ্ববিদ্যালয়টির নাট্যকলা বিভাগ অবস্থিত, অপরদিকে উইলিয়ামসের সৃষ্টিকর্মের মালিকানা স্কুলটির অধিকারে রয়েছে।[৩৯] কয়েকদিনের মধ্যে নাটকটির টিকেট বিক্রি হয়ে গেলে, এটি স্থানীয় বাসিন্দা ও শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে প্রশংসিত হয়।
২০২৪ সালের অক্টোবর ও নভেম্বর মাসে এডিনবরার লাইসিয়াম থিয়েটারে এলিজাবেথ নিউম্যানের নির্দেশনায় পিটলখরি ফেস্টিভাল থিয়েটারের প্রযোজনায় মঞ্চস্থ এই নাটকে কার্স্টি স্টুয়ার্ট ব্ল্যাঞ্চ ডুবোয়া চরিত্রে অভিনয় করেন।[৪০]
২০২২ সালের আলমিডা থিয়েটারের মঞ্চায়নটি ওয়েস্ট এন্ডে সীমিত আকারে তিন সপ্তাহের জন্য ২০২৫ সালের ৩রা ফেব্রুয়ারি থেকে নোয়েল কাওয়ার্ড থিয়েটারে মঞ্চায়ন হয়।[৪১] এটি এরপর নিউ ইয়র্ক সিটিতে ব্রুকলিন একাডেমি অব মিউজিকে ২০২৫ সালের ২৮শে ফেব্রুয়ারি থেকে চলবে। ২০২২ সালের পুনঃমঞ্চায়নের অভিনয়শিল্পীরাই এই প্রযোজনায় অভিনয় করবেন।[৪২]
১৯৫১ সালে ওয়ার্নার ব্রস. এই নাটকটির চলচ্চিত্ররূপ মুক্তি দেয়। এলিয়া কাজান পরিচালিত চলচ্চিত্রটিতে মার্লোন ব্রান্ডো, কার্ল মালডেন, কিম হান্টার ও ডেনিস ব্রডওয়েতে মঞ্চস্থ নাটকে তাদের স্ব স্ব চরিত্রে অভিনয় করেন। অন্যদিকে, ব্ল্যাঞ্চ চরিত্রের জন্য লন্ডনে মঞ্চস্থ নাটকের অভিনেত্রী ভিভিয়েন লেইকে বাছাই করা হয়। চলচ্চিত্রটি অভিনয় শাখায় তিনটি (শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে লেই, শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেতা বিভাগে মালডেন ও শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেত্রী বিভাগে হান্টার) বিভাগে সহ মোট চারটি পুরস্কার অর্জন করেন। সুরকার আলেক্স নর্থ শ্রেষ্ঠ মৌলিক সুর বিভাগে একাডেমি পুরস্কারের মনোনয়ন লাভ করেন।[৪৩] জেসিকা ট্যান্ডি মূল ব্রডওয়ে মঞ্চায়নের একমাত্র মূল অভিনয়শিল্পীদের একজন, যাকে ১৯৫১ সালের চলচ্চিত্রে দেখা যায়নি। চলচ্চিত্রের শেষভাগে কিছুটা পরিবর্তন করা হয়। স্টেলা মূল নাটকে স্ট্যানলির সাথে থাকলেও চলচ্চিত্রে সে স্ট্যানলির সাথে থাকেনি।[৪৪]
পেদ্রো আলমোদোবারের ১৯৯৯ সালের একাডেমি পুরস্কার বিজয়ী চলচ্চিত্র তোদো সোব্রে মি মাদ্রে-এ কয়েকটি পার্শ্ব চরিত্রকে এই নাটকের স্পেনীয় সংস্করণে অভিনয় করতে দেখা যায় এবং নাটকটি চলচ্চিত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তবে চলচ্চিত্রটির কিছু সংলাপ মূল মঞ্চস্থ নাটক থেকে নয়, বরং ১৯৫১ সালের চলচ্চিত্ররূপ থেকে নেওয়া হয়েছে।[৪৫]
১৯৭৩ সালের উডি অ্যালেনের চলচ্চিত্র স্লিপার-এর শেষ দিকের একটি দৃশ্যে মাইলস (উডি) ও লুনা (ডায়ান কিটন)-কে স্ট্যানলি (লুনা) ও ব্ল্যাঞ্চ (মাইলস)-এর মত চরিত্রে দেখা যায়।
অনেক সমালোচক উল্লেখ করেন যে ২০১৩ সালে উডি অ্যালেনের পরিচালিত একাডেমি পুরস্কার বিজয়ী চলচ্চিত্র ব্লু জেসমিন-এর সাথে আ স্ট্রিটকার নেমড ডিজায়ার-এর মিল পাওয়া গেছে এবং খুব সম্ভবত এর ছায়া অবলম্বনে নির্মিত। এতে একই ধরনের গল্প ও চরিত্র দেখা যায়, তবে এটি আধুনিক চলচ্চিত্র দর্শকদের জন্য যথাযথভাবে আধুনিকায়ন করা হয়েছে।[৪৬][৪৭]
২০১৪ সালে জিলিয়ান অ্যান্ডারসন আ স্ট্রিটকার নেমড ডিজায়ার-এর স্বল্পদৈর্ঘ্য অনুবর্তী খণ্ড দ্য ডিপার্চার পরিচালনা করেন এবং এতে শ্রেষ্ঠাংশে অভিনয় করেন। স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রটি রচনা করেন ঔপন্যাসিক অ্যান্ড্রু ও'হ্যাগ্যান। এটি ইয়াং ভিসের স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ধারাবাহিকের অংশ, যা তারা দ্য গার্ডিয়ান-এর সাথে যৌথভাবে প্রযোজনা করে।[৪৮]
১৯৯৫ সালে অঁদ্রে প্র্যভাঁ নাটকটি গীতিনাট্যে উপযোগ করেন ও সুরায়োজন করেন এবং ফিলিপ লিটেল এর সংলাপ লিখেন। এটি ১৯৯৮-১৯৯৯ মৌসুমে সান ফ্রান্সিস্কো অপেরায় মঞ্চস্থ হয় এবং এতে ব্ল্যাঞ্চ চরিত্রে অভিনয় করেন রেনে ফ্লেমিং।[৪৯]
১৯৫২ সালে একটি ব্যালের নৃত্য পরিচালনা করেন ভ্যালেরি বেটিস এবং স্লাভেন্স্কা-ফ্রাঙ্কলিন ব্যালে যুগলের মিয়া স্লাভেন্স্কা ও ফ্রেডরিক ফ্রাঙ্কলিনের নৃত্য সংবলিত ব্যালেটি মন্ট্রিয়লের হার ম্যাজেস্ট্রিস থিয়েটারে মঞ্চস্থ হয়। এতে আলেক্স নর্থের সঙ্গীত যুক্ত করা হয়, যেটি তিনি ১৯৫১ সালের চলচ্চিত্রের জন্য সুরায়োজন করেছিলেন।[৫০]
জন ন্যুমেইয়ার ১৯৮৩ সালে ফ্রাঙ্কফুর্টে আরেকটি ব্যালে মঞ্চস্থ করেন। এতে সের্গেই প্রকফিয়েভ ও আলফ্রেড শ্নিটকার ফার্স্ট সিম্ফনির ভিশন্স ফিউজিটিভস সঙ্গীত অন্তর্ভুক্ত ছিল।
২০০০-এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে মোবাইল ব্যালের তদানীন্তর সৃজনশীল পরিচালক উইনথ্রপ কোরি আরেকটি ব্যালে মঞ্চস্থ করেন।[৫১] ২০০৬ সালে ব্যালে বিসির তদানীন্তন সৃজনশীল পরিচালক জন অ্যালিন একটি ব্যালে মঞ্চস্থ করেন।
২০১২ সালে মঞ্চ ও চলচ্চিত্র পরিচালক ন্যান্সি মেকলার ও আন্তর্জাতিক নৃত্য পরিচালক অ্যানাবেল লোপেজ অচোয়ার সাথে স্কটিশ ব্যালে যৌথভাবে একটি ব্যালে মঞ্চস্থ করে।[৫২]
২০১৮ সালে এর্কেল থিয়েটার বুদাপেস্টে মারিয়ানা ভেনেকির নৃত্য পরিচালনায় একটি ব্যালে মঞ্চস্থ হয়। এতে ইউরি কেকালো স্ট্যানলি চরিত্রে, লিয়া ফোল্ডি ব্ল্যাঞ্চ চরিত্রে এবং অ্যানা ক্রুপ স্টেলা চরিত্রে নৃত্য করেন।[৫৩]
১৯৫৫ সালে টেলিভিশন অনুষ্ঠান অমনিবাস-এ জেসিকা ট্যান্ডিকে মূল ব্রডওয়ে নাটকে তার অভিনীত ব্ল্যাঞ্চ চরিত্রে পুনরায় অভিনয় করতে দেখা যায়। তার স্বামী হিউম ক্রোনিন মিচ চরিত্রে অভিনয় করেন। এই অনুষ্ঠানে নাটকের কিছু অংশ দেখানো হয়, যেখানে ব্ল্যাঞ্চ ও মিচ চরিত্র দুটি রয়েছে।
১৯৮৪ সালে টেলিভিশন চলচ্চিত্রে অ্যান-মার্গরেট ব্ল্যাঞ্চ চরিত্রে, ট্রিট উইলিয়ামস স্ট্যানলি চরিত্রে, বেভারলি ডিঅ্যাঞ্জেলো স্টেলা চরিত্রে এবং র্যান্ডি কোয়েড মিচ চরিত্রে অভিনয় করেন। এটি পরিচালনা করেন জন এরমান এবং এটি টেলিভিশন নাটকের উপযোগী করেন অস্কার সোল। মার্ভিন হ্যামলিশ সঙ্গীতের সুরায়োজন করেন। অ্যান-মার্গরেট, ডিঅ্যাঞ্জেলো ও কোয়েড এমি পুরস্কারের মনোনয়ন লাভ করেন, কিন্তু কেউ'ই বিজয়ী হতে পারেননি। তবে এটি শ্রেষ্ঠ চিত্রগ্রহণসহ চারটি বিভাগে এমি পুরস্কার অর্জন করে।[৫৪] অ্যান-মার্গরেট তার অভিনয়ের জন্য সীমিত ধারাবাহিক বা টেলিভিশন চলচ্চিত্রে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে গোল্ডেন গ্লোব পুরস্কার অর্জন করেন এবং চলচ্চিত্রটি শ্রেষ্ঠ সীমিত ধারাবাহিক বা টেলিভিশন চলচ্চিত্র বিভাগে ও ট্রিট উইলিয়ামস সীমিত ধারাবাহিক বা টেলিভিশন চলচ্চিত্রে শ্রেষ্ঠ অভিনেতা বিভাগে গোল্ডেন গ্লোবের মনোনয়ন লাভ করেন।[৫৫]
১৯৯২ সালে দ্য সিম্পসন্স-এর "আ স্ট্রিটকার নেমড মার্জ পর্বটি এই নাটকের সঙ্গীতধর্মী রূপান্তর। এতে ও, স্ট্রিটকার! গানটি পরিবেশিত হয়। নেড ফ্ল্যান্ডার্স ও মার্জ সিম্পসনকে যথাক্রমে স্ট্যানলি ও ব্ল্যাঞ্চ চরিত্রে দেখা যায়।[৫৬]
১৯৯৫ সালের টেলিভিশন চলচ্চিত্রটি ছিল ব্রডওয়েতে ব্যাপক সফল পুনঃমঞ্চায়ন অবলম্বনে। এতে শ্রেষ্ঠাংশে অভিনয় করেন আলেক বল্ডউইন ও জেসিকা ল্যাং। তবে মঞ্চনাটকটি থেকে শুধু বল্ডউইন ও ল্যাং-ই অভিনয় করেন। এতে মিচ চরিত্রের জন্য জন গুডম্যান ও স্টেলা চরিত্রের জন্য ডায়ান লেনকে যুক্ত করা হয়। এই টিভি চলচ্চিত্রটি পরিচালনা করেন গ্লেন জর্ডান। বল্ডউইন, ল্যাং ও গুডম্যান এমি পুরস্কারের মনোনয়ন লাভ করেন। ল্যাং সীমিত ধারাবাহিক বা টেলিভিশন চলচ্চিত্রে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে গোল্ডেন গ্লোব অর্জন করেন এবং বল্ডউইন সীমিত ধারাবাহিক বা টেলিভিশন চলচ্চিত্রে শ্রেষ্ঠ অভিনেতা বিভাগে গোল্ডেন গ্লোবের মনোনয়ন লাভ করেন।[৫৭]
১৯৯৮ সালে পিবিএস মূল সান ফ্রান্সিস্কো অপেরার অভিনয়শিল্পীদলকে নির্মিত গীতিনাট্যটির ধারণকৃত চিত্র প্রচার করে। অনুষ্ঠানটি সেরা ধ্রুপদী সঙ্গীত/নৃত্য অনুষ্ঠান বিভাগে এমি পুরস্কারের মনোনয়ন লাভ করে।[৫৮]
২০১৬ সালে দি অরিজিনালস-এর "আ স্ট্রিটকার নেমড ডিজায়ার" পর্বে ক্লাউস মিকেলসন ও এলাইজা মিকেলসনকে তাদের এক সময়ের বন্ধু কিন্তু বর্তমানে শত্রুতে পরিণত হওয়া ট্রিস্টান ও অরোরা দে মার্টেলের মুখোমুখি হতে বাধ্য করা হয়।
নিউ অরলিন্সে স্ট্রিটকার ব্যবহারের শীর্ষ সময় ১৯২০ থেকে ১৯৪৮ সাল পর্যন্ত ডিজায়ার লাইন চলত। রাস্তাটি রয়্যাল থেকে কোয়ার্টার হয়ে বাইওয়াটার জেলার ডিজায়ার স্ট্রিট পর্যন্ত এবং ক্যানেল স্ট্রিট পর্যন্ত ফিরে আসত। নাটকের ব্ল্যাঞ্চের রাস্তা ছিল - "তারা আমাকে বলেছিল ডিজায়ার নামের স্ট্রিটকারটি নিতে, এরপর সেমেটারিস নিয়ে ছয় ব্লক পর এলিসিয়ান ফিল্ডসে নেমে যেতে।" এটি রূপক অর্থে নিউ অরলিন্সের রঙ-বেরঙের রাস্তা নাম ব্যবহার করে: ডিজায়ার লাইন ক্যানেল স্ট্রিটে যেতে এলিসিয়ান ফিল্ডস অ্যাভিনিউ অতিক্রম করে। সেখানে কেউ সেমেটারিস লাইন ব্যবহার করতে পারে, যেটি এলিসিয়ান ফিল্ডস থেকে কয়েক ব্লক পরে ক্যানেলের দিকে যায়।
ধারণা করা হয় ব্ল্যাঞ্চ চরিত্রটি টেনেসি উইলিয়ামসের বোন রোজ উইলিয়ামসের থেকে অনুপ্রাণিত, যিনি মানসিক স্বাস্থ সমস্যায় ভুগছিলেন এবং লোবোটমির পর অক্ষম হয়ে পড়েছিলেন। এই নাটকের সফলতার মধ্য দিয়ে উইলিয়ামস তার বোনের চিকিৎসার জন্য আর্থিক সহযোগিতা করতে পেরেছিলেন।[৫৯] অন্যান্য জীবনীমূলক উপাদান হল উইলিয়ামসের মা ছিলেন দক্ষিণাঞ্চলের এবং নাটকে স্টেলা ও ব্ল্যাঞ্চকেও দক্ষিণাঞ্চলের দেখানো হয়; তার পিতা ভ্রমণরত বিক্রয়কর্মী, যিনি মদ্যপান করতে ও বন্ধুদের সাথে পোকার খেলতেন, যা নাটকে স্ট্যানলির চরিত্রে দেখা যায়। উইলিয়ামস মিসিসিপির কলাম্বাসে জন্মগ্রহণ করেন এবং সেন্ট লুইসে তাদের পারিবারিক বাড়ি রয়েছে। নাটকে বিদ্যমান সমকামিতা ও মানসিক ব্যাধি এসেছে তার নিজের যৌন অভিমুখিতা ও তার বোনের মানসিক ব্যাধির নিয়ে তার অভিজ্ঞতার আলোকে। ব্ল্যাঞ্চের পরিপাটি ও ভদ্র মনোভাব স্ট্যানলির ঘৃণার কারণ হয়ে ওঠা সম্ভবত উইলিয়ামসের বাবার মায়ের দক্ষিণাঞ্চলীয় অভিব্যক্তির প্রতি বিদ্বেষ থেকে অনুপ্রাণিত।[৬০]
মঞ্চ সমালোচক ও সাবেক অভিনেত্রী এবং উইলিয়ামসের বান্ধবী ব্ল্যাঞ্চ মারভিন বলেন নাট্যকার ব্ল্যাঞ্চ ডুবোয়া চরিত্রের জন্য তার নামটি ব্যবহার করেন, এই চরিত্রের বোনের নাম স্টেলা রাখেন মারভিনের সাবেক উপনাম জোহার (যার অর্থ তারকা) থেকে এবং নাটকের "I've always depended on the kindness of strangers" (আমি সবসময় অপরিচিতদের দয়ার উপর নির্ভরশীল) এই ছত্রটি তিনি উইলিয়ামসকে বলেছিলেন।[৬১]
"অন আ স্ট্রিটকার নেমড সাকসেস" হল সমাজে শিল্পকলা ও শিল্পীদের ভূমিকা নিয়ে রচিত টেনেসি উইলিয়ামসের প্রবন্ধ। এটি প্রায়ই আ স্ট্রিটকার নেমড ডিজায়ার নাটকের মুদ্রিত সংস্করণে যুক্ত হয়ে থাকে। ১৯৪৭ সালের ৩০শে নভেম্বর আ স্ট্রিটকার নেমড ডিজায়ার নাটকটির প্রথম মঞ্চায়নের চারদিন পূর্বে দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস-এ এই প্রবন্ধের একটি সংস্করণ প্রথম প্রকাশিত হয়।[৬২] প্রবন্ধটির আরেকটি সংস্করণ "দ্য ক্যাটাস্ট্রফি অব সাকসেস" প্রায়ই দ্য গ্লাস মেনেজারি-এর ভূমিকা হিসেবে ব্যবহৃত হয়।[৬২]