মালয়েশিয়া সরকার কর্তৃক গৃহীত আংকাসাওয়ান প্রকল্প দ্বারা দেশটি প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে মালয়েশিয়ার নাগরিক পাঠানোর প্রস্তুতি নেয়। মালয় শব্দ আংকাসাওয়ান-এর অর্থ নভোচারী। প্রকল্পটির অংশ হিসেবে ২০০৭ সালের ১০ই অক্টোবর, প্রথম মালয়েশীয় নাগরিক শেখ মুসযাফার শুকরের মহাশূন্যে গমন করেন।
মালয়েশিয়ার প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মাহাথির বিন মোহাম্মদ রাশিয়ার সাথে যৌথভাবে এই প্রকল্পের ঘোষণা দেন। মালয়েশিয়ার বিমান বাহিনীর জন্য সুখোই সু-৩০এমকেএম ফাইটার জেট বিমান ক্রয় করার সময় দুই সরকারের মধ্যকার সমঝোতায় এই প্রকল্পের চুক্তি করা হয়।
চুক্তি অনুযায়ী রাশিয়া ফেডারেশন দুইজন মালয়েশীয় নাগরিকের মহাশূন্য ভ্রমণের ট্রেনিং এবং একজনকে ২০০৭ সালের অক্টোবরে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে পাঠানোর সকল খরচ বাবদ বহন করে।
মালয়েশিয়ার সরকার দেশটির তরুণ সমাজকে গণিত ও বিজ্ঞানে আগ্রহী করে তোলার পাশাপাশি দেশের ভাবমূর্তি উচুতে নিয়ে যেতে এই প্রকল্প হাতে নেয়। মালয়েশিয়ার বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও উদ্ভাবন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী, জামালউদ্দিন জারজিস বলেন, "এই প্রকল্প শুধু একজন মালয়েশীয়কে মহাশূন্যে পাঠানোর প্রকল্প নয়। স্বাধীনতার ৫০ বছর পর আমাদের জাতি হিসেবে সফলতার নতুন ধাপে পা রাখা প্রয়োজন।"[১]
মালয়েশিয়ার প্রথম নভোচারী শেখ মুসযাফার শুকর বলেন, "আমি কোন খ্যাতি বা তারকা হওয়ার আশা করছি না। আমার এই যাত্রা মালয়েশীয়দের বিশেষ করে স্কুলের বাচ্চারা যেন বিজ্ঞান ও মহাকাশ বিষয়ে আগ্রহী হয় সে ব্যাপারে অনুপ্রেরণা যোগাতে।"
শেষ ধাপ পর্যন্ত চারজন প্রতিদ্বন্দী হলেন:[২]
২০০৭ সালের ২৩শে জুলাই শেখ মুসাযাফার নাসার একটি সংবাদ কনফারেন্সে এক্সপেডিশন ১৬-এর অন্যান্য সদস্যদের সাথে যোগ দেন।[৭] শেখ মুসযাফারের বদলি হিসেবে ফাইজ খালীদ পাইপলাইনে ছিলেন।
২০০৭ সালের ১০ই অক্টোবর সয়োজ টিএমএ-১১তে শেখ মুসাযাফার প্রথম মালয়েশিয়ার নাগরিক হিসেবে মহাশূন্যের পাড়ি জমান।[৮] তিনি দশ দিন আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে পার করেন। সয়োজ টিএমএ-১০-এ করে তিনি পৃথিবীতে ১০ দিন পরে ফিরে আসেন।[৯][১০]
শেখ মুস্পযাফরকে মহাশূন্যে পাঠাতে প্রায় ২৬ মিলিয়ন মার্কিন ডোলার সমমূল্যের অর্থ মালয়েশিয়ার সরকারকে গুণতে হয়েছে। মালয়েশিয়ার মহাশূণ্য প্রকল্প একটি উন্নয়নশীল রাষ্ট্রের নিছক অর্থের অপচয় বলে সমালোচিত হয়েছে। অবশ্য সরকারি কর্মকর্তারা ২০০৩ সালে মস্কো থেকে ১৮টি ফাইটার জেট বিমান ক্রয়ের সময়ে হওয়া সামরিক প্রতিরক্ষা সমঝোতায় প্রায় ৯০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার এই প্রকল্পের অর্থায়নের জন্য পাওয়া গিয়েছিল বলে দাবী করেন।[১১]
একাধিক ব্যক্তি, বিশেষ করে মালয়েশিয়াবাসীরা শেখ মুসযাফারকে মহাশূন্যেগামী বিমানে যাত্রাকারী নয় বরং একজন নভোচারী বলে উপাধি পাওয়ার যোগ্য বলে মনে করেন। কেননা, তিনি এই যাত্রার পূর্বে সম্পূর্ণ নভোচারীর মতই ট্রেনিং নিয়েছিলেন।[১২][১৩]