ইতিহাস | |
---|---|
ভারত | |
নাম: | আইএনএস অরিহন্ত |
নির্মাতা: | জাহাজ নির্মাণ কেন্দ্র (এসবিসি), বিশাখাপত্তনম, ভারত |
অভিষেক: | ২৬ জুলাই ২০০৯ |
অর্জন: | ১৩ ডিসেম্বর ২০১৪ |
কমিশন লাভ: | অগাস্ট ২০১৬[১] |
মাতৃ বন্দর: | বিশাখাপত্তনম বন্দর |
অবস্থা: | সক্রিয়[২] |
সাধারণ বৈশিষ্ট্য | |
প্রকার ও শ্রেণী: | অরিহন্ত-শ্রেণি দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ডুবোজাহাজ |
ওজন: | ভেসে ত্তঠা অবস্থায়: ৬,০০০ টন (আনুমানিক) [৩] |
দৈর্ঘ্য: | ১১১ মি (৩৬৪ ফু)[৪] |
প্রস্থ: | ১৫ মি (৪৯ ফু)[৪] |
ড্রাফট: | ১১ মি (৩৬ ফু)[৪] |
ইনস্টল ক্ষমতা: | ৮৩ মেওয়াট (১,১১,৩০৫ অশ্বশক্তি) |
প্রচালনশক্তি: | ৪০% সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম জ্বালানী (৮৩ মেগাওয়াট) ব্যবহার করে পিডব্লুআর;[৪] একটি টার্বাইন (৪৭,০০০ hp/৭০ MW)[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]; একটি খাদ; একটি ৭-ব্লাডেড, উচ্চ স্কুভেল প্রপেলার (আনুমানিক) |
গতিবেগ: | |
সীমা: | খাদ্য সরবরাহ ছাড়া সীমাহীন |
পরীক্ষিত গভীরতা: | ৩৫০ মি (১,১৫০ ফু) (আনুমানিক)[৬] |
লোকবল: | ৯৫–১০০ আধিকারিক ও সৈনিকদের |
সেন্সর এবং কার্যপদ্ধতি: |
|
রণসজ্জা: |
|
আইএনএস অরিহন্ত হল পরমাণু বা নিউক্লিয়ার সাবমেরিন। এটি ভারতের দ্বিতীয় পরমাণু সাবমেরিন বা ডুবোজাহাজ এবং ভারতে তৈরি প্রথম পরমাণু শক্তি চালিত ডুবোজাহাজ। বন্দর নগরী বিশাখাপত্তনম শহরে জাহাজ নির্মাণ কেন্দ্রের এডভান্সড টেকনোলজিস ভেসেল (এটিভি) প্রকল্প-এর অধীনে ৬ হাজার টনের এই ডুবোজাহাজটি নির্মাণ করা হয়েছিল। এই ডুবোজাহাজটি বর্তমানে বিশাখাপত্তনম বন্দরের নৌ-ঘাটিতে মোতায়েন আছে। এই ডুবোজাহাজ ভারতের পূর্ব উপকূলভাগের নৌ-শক্তি বৃদ্ধি করেছে।
২০০৯ সালের ২৬ জুলাই অরিহন্তের উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ বিজয় দিবস (কার্গিল যুদ্ধের বিজয় দিবস) এর বার্ষিকী উদ্যাপন করেন। ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সালে পরিচালনার জন্য প্রস্তুত হিসাবে নিশ্চিত করা হয়েছে,[৭][৮] এবং আগস্ট ২০১৬ সালে কমিশন করা হয়েছিল ডুবোজাহাজটিকে। [১]
ভারত অন্য অনেক প্রকল্পের মতো এই নিউক্লিয়ার সাবমেরিনের নির্মাণ কাজ খুব গোপনে শুরু করেছিল । ২০০৯ সালে আইএনএস অরিহন্ত তৈরির কথা প্রথামবার প্রকাশ্যে আনে প্রতিরক্ষা মন্ত্রী । সে বছরই পরীক্ষামূলকভাবে চালানোর জন্য সমুদ্রে পাঠানো হয় অরিহন্তকে। কিন্তু তখনও এই ডুবোজাহাজে নিউক্লিয়ার রিঅ্যাক্টর বা পরমাণু চুল্লিটি লাগানোই হয়নি। ২০১০ সালে নিউক্লিয়ার রিঅ্যাক্টর লাগানো হয় আইএনএস অরিহন্তে। তার পর সেটি পুরোদস্তুর নিউক্লিয়ার সাবমেরিন হয়ে ওঠে। ২০১৩ সালে সেই নিউক্লিয়ার রিঅ্যাক্টর চালু করা হয়। ২০১৪ সালের মধ্যে আইএনএস অরিহন্ত যে কোনও ধরনের লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত হয়ে যাবে বলে মনে করা হয়েছিল। কিন্তু তা হয়নি। সমুদ্রের বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন ধরনের পরিস্থিতিতে আইএনএস অরিহন্ত কতটা স্বচ্ছন্দে কাজ করতে পারে, সেই পরীক্ষা শেষ করতে সময় লেগে যায় অনেকটা। এই নিউক্লিয়ার সাবমেরিনে মিসাইল মজুত করা এবং সমুদ্রগর্ভ থেকে মিসাইল ছুড়ে হামলা চালানোর মহড়া দেওয়ারও দরকার ছিল। সব রকম পরীক্ষা এবং মহড়া নৌসেনা তথা প্রতিরক্ষা মন্ত্রী আইএনএস অরিহন্তের পারদর্শীতা নিয়ে খুবই সন্তুষ্ট। তাই এত দিনে ঘোষণা করা হল, যে কোনও রকম যুদ্ধ বা অভিযানের জন্য আইএনএস অরিহন্ত এখন সম্পূর্ণ তৈরি।[৯]
ভারতীয় নৌবাহিনীর গোপনীয় অ্যাডভান্সড টেকনোলজিস ভেসেল (এটিভি) প্রকল্পের একটি অংশ হিসেবে ডিজাইন ও নির্মাণ করা অরিহন্ত শ্রেণীর পাঁচটি ডুবোজাহাজের মধ্যে প্রথমটি হল আইএএনএস অরিহান্ত। অরিহান্ত শ্রেণীর সাবমেরিনগুলি আকুলা-ডুবোজাহাজের উপর ভিত্তি করে নির্মাণ হয়েছে। [১০] এই ডুবোজাহাজের কর্মীরা আকুলা শ্রেণীর আইএনএস চক্র নামে একটি ডুবোজাহাজে প্রশিক্ষণের সুযোগ পাবে, যা ভারতীয় নৌবাহিনীকে রাশিয়া থেকে ভাড়া দেওয়া হবে। [১১][১২] অ্যাডমিরাল নির্মল বর্মা অনুযায়ী একটি পুরোপুরি কর্মক্ষম এসএসবিএন ছাড়াও অরিহন্ত'কে আরো একটি "প্রযুক্তি প্রদর্শনী" সক্রিয় অংশগ্রহণ করতে হবে। [১৩]
জাহাজটি একটি ৮৩ মেগাওয়াট (১,১১,৩০৫ এইচপি) চাপযুক্ত হাল্কা-জলের চুল্লী [১৪] দ্বারা সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম জ্বালানী দিয়ে চালিত হবে। [১৫] কল্পক্কামে একটি ভূ-ভিত্তিক প্রোটোটাইপ তৈরি করা হয়েছিল এবং সেপ্টেম্বর ২০০৬ সালে এটি কার্যকরী হয়। তিন বছরের মেয়াদে সফল কার্যক্রমটি থেকেই অরিহন্তের জন্য তৈরি করা চুল্লীর সংস্করণটি সরবরাহ করা হয়। [১৬][১৭] এটি জানায় যে জানুয়ারী ২০০৮ সালে এটিভির একটি ৮০ মেগাওয়াট পারমাণবিক চুল্লীকে একত্রিত করা হয়েছিল। [১৮]
জাহাজের জন্য হুল এল-টি টি হজির জাহাজ বিল্ডিং সুবিধা দিয়ে নির্মিত হয়েছিল। টাটা পাওয়ার এসইডি (স্ট্র্যাটেজিক ইঞ্জিনিয়ারিং ডিভিশন) ডুবোজাহাজের জন্য নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা (কন্ট্রোল সিস্টেম) তৈরি করেছে। ওয়ালচন্দনগর শিল্প দ্বারা বায়ু টারবাইনের জন্য সংযোজিত ব্যবস্থাগুলি সরবরাহ করা হয়েছে। [১৯] এই প্রকল্পের জন্য পরামর্শ রাশিয়া দ্বারা প্রদান করা হয়। [২০] রাশিয়াও পারমাণবিক ডুবোজাহাজের জন্য ক্ষুদ্র মাপের পরমাণু চুল্লি তৈরি করার জন্য ভাবা পরমাণু গবেষণা কেন্দ্র (বিএআরসি)-এর বিজ্ঞানীদের সহায়তা প্রদান করেছে। [২১]
অরিহন্ত-এর চারটি উল্লম্ব লঞ্চ টিউব রয়েছে, যা ১২ (তিনটি প্রবর্তনযোগ্য নল) ছোট কে-১৫ মিসাইল বা চারটি বৃহৎ কে-৪ ক্ষেপণাস্ত্র বহন করতে পারে। কে-৪ মিসাইলগুলি ৩,৫০০ (২,২০০ মাইল) কিলোমিটার দূরের লক্ষ্য বস্তুতে আঘাত হানতে পাড়ে এবং এই মিসাইগুলির পরিক্ষামূলক কর্মকার্ন্ড শুরু হয়েছে। [২২][২৩][২৪]
২০০৯ সালের ২৬ জুলাই একটি প্রতীকী লঞ্চ অনুষ্ঠানে প্রাক্তণ প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের স্ত্রী গুরুশারণ কণির দ্বারা আইএনএস অরিহন্ত'কে জনসাধারণের কাছে উপস্থাপন করা হয়। [২৫] এই অনুষ্ঠানের মধ্যদিয়ে কার্গিল যুদ্ধের ১০ তম বার্ষিকী উদযাপিত হয় [২৬] এবং শুকনো ডক দ্বারা জাহাজকে জলে ভাসমান হয়। প্রতিরক্ষা পেশাদারদের দৈনিক দাবি অরিহন্তকে তার পারমাণবিক চুল্লী, নজরদারী সরঞ্জাম, এবং অর্ডন্যান্স সহ মুখ্য সিস্টেমগুলি ছাড়া চালু করা হয়। নৌ ঐতিহ্য প্রতি শ্রদ্ধা রেখে গুর্শরণ কৌর বিশাখাপত্তনম গোপন নৌ বেসে ডুবোজাহাজ উদ্বোধন উপলক্ষে জাহাজের কাঠাম উপর একটি নারকেল কর্কশ করেন। [২৭] অনুষ্ঠানে ছবি তোলা বা ফটোগ্রাফি নিষিদ্ধ ছিল এবং পুরো জাহাজের কোন ছবি পাওয়া যায় না। [২৮][২৯] জনসাধারণের উদ্দেশে ভাষণে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং সাবমেরিনকে একটি পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের ফলাফল হিসেবে অভিহিত করেছেন। তিনি ডুবোজাহাজ তৈরিতে রাশিয়ার অবদানের জন্য ধন্যবাদ জানান তার বক্তৃতায়, এবং বলেন- "আমি রাশিয়ার সাথে আমাদের বন্ধুত্বপূর্ণ সহযোগিতার জন্য আমাদের রাশিয়ান বন্ধুদের প্রতি আমাদের উপলব্ধি প্রকাশ করতে চাই, যা আমরা রাশিয়ার সাথে ঘনিষ্ঠ কৌশলগত অংশীদারিত্বের প্রতীক হিসেবে চিহ্নিত করি"। [৩০] অরিহন্ত প্রবর্তন একটি বিশ্বাসযোগ্য পারমাণবিক ত্রিভুজ তৈরির জন্য ভারতের প্রচেষ্টাকে শক্তিশালী করে। এর ফলে বায়ু, ভূমি ও সমুদ্র থেকে পারমাণবিক অস্ত্র পরিচালনার ক্ষমতা অর্জন করে ভারত।
অরিহন্ত'য়ের বাইরের দেওয়াল নোনাজলের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। ক্ষতিগ্রস্ত অংশ মেরামত করার জন্য অরিহন্তকে ড্রাইডকে ফিরিয়ে আনা হয় এবং মেরামত কর জন্য অরিহন্তকে অচল করে দেওয়া হয় এবং ১০ মাস ধরে ডুবোজাহাজটিতে ক্ষতিগ্রস্ত কিছু পাইপ প্রতিস্থাপিত করা হয়। [৩১]
আগস্ট ২০১৬ সালে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ভারতীয় নৌবাহিনীর জন্য আইএনএস অরিহন্তকে কমিশন করেন। [১][৩২]
|সংগ্রহের-তারিখ=
(সাহায্য)