দেশ অনুযায়ী ইসলাম |
---|
ইসলাম প্রবেশদ্বার |
৯০–১০০% | |
৭০–৮০% | কাজাখস্তান |
৫০–৭০% | |
৩০–৫০% | উত্তর মেসেডোনিয়া |
১০–২০% | |
৫–১০% | |
৪–৫% | |
২–৪% | |
১–২% | |
< ১% |
আইসল্যান্ডে ইসলাম একটি সংখ্যালঘু ধর্ম। পিউ রিসার্চ সেন্টার অনুমান করেছে যে আইসল্যান্ডে মুসলমানদের সংখ্যা ১০,০০০ এর নিচে এবং সরকারী পরিসংখ্যান অনুসারে তা ১,৩০০ বা মোট জনসংখ্যার প্রায় ০.৪% এর চেয়ে কম।[২][৩]
মুসলিম উৎসে আইসল্যান্ডের প্রাচীনতম উল্লেখ মুহাম্মদ আল-ইদ্রিসির (১০৯৯-১১৬৫/৬৬) বিখ্যাত তাবুলা রোজারিয়ানার রচনায় উদ্ভূত, যেখানে উত্তর সাগরে আইসল্যান্ডের অবস্থান উল্লেখ করা হয়েছে।[৪]
ভাইকিংদের দূরপাল্লার বাণিজ্যিক ও ভ্রমণ নৌকার জন্য নরওয়েজিয়ান রোগনভাল্ড কালি কোলসন বা হারাল্ড হার্ডরাডার মতো বিভিন্ন আইসল্যান্ডবাসীর মধ্যযুগে মুসলিম বিশ্বের সাথে সরাসরি যোগাযোগ হয়েছিল;[৫] পরোক্ষ সংযোগ বা যোগাযোগ আইসল্যান্ডে প্রাপ্ত আরবি মুদ্রার সন্ধান দ্বারা সর্বোত্তম সত্যায়িত হয় যা ভাইকিং বিশ্বে ব্যাপকভাবে বিদ্যমান ছিল।[৬]
১০০০ সালের দিকে আইসল্যান্ডের খ্রীষ্টধর্মে ধর্মান্তরিত হওয়ার পর, কিছু আইসল্যান্ডবাসী তীর্থযাত্রার মাধ্যমে ইসলামিক বিশ্বের সংস্পর্শে এসেছিল, উদাহরণস্বরূপ জেরুজালেমে, অ্যাবট নিকুলাস বার্গসন তার লেয়ারভারসির ও বার্গারস্কিপনে যে ধরনের বর্ণনা করেছিলেন।
ত্রয়োদশ শতাব্দীর শেষের দিক থেকে, মধ্যযুগীয় আইসল্যান্ডে রোমান্স ভাষায় ইসলামিক বিশ্বের কল্পকাহিনী ভিত্তিক বর্ণনা ও চিত্রায়ণ ছিল যা আংশিকভাবে ক্রুসেড দ্বারা প্রভাবিত কন্টিনেন্টাল আখ্যান দ্বারা অনুপ্রাণিত ছিল। যদিও এই চিত্রটি সাধারণত ইসলামিক বিশ্বকে 'হেথেন' হিসাবে চিহ্নিত করে, এবং মধ্যযুগীয় পাশ্চাত্যে ইসলাম সম্পর্কে ভুল ধারণার পুনরাবৃত্তি করে,[৭] যদিও বিভিন্ন উৎসে তা কিছুটুকু পরিবর্তিত ছিলো, উদাহরণস্বরূপ, ইসলামিক বিশ্ব বিশাল সম্পদ, প্রজ্ঞা বা শৌখিনতার আধার।[৮] রোমান্স ভাষা আইসল্যান্ডবাসীদের মধ্যযুগীয় পরবর্তী সময়েও ইসলাম নিয়ে চিন্তাভাবানার করার একটি মাধ্যম হিসেবে কাজ করে গেছে, উদাহরণস্বরূপ জন অডসন হজলতালিনের অষ্টাদশ শতাব্দীর রোম্যান্স সাহিত্য ফিম্বব্রার গাথা। যেখানে কন্টিনেন্টাল এনলাইটেনমেন্ট স্কলারশিপের সাথে কল্পকাহিনীর গল্প মিলিত হয়েছিল।
সম্ভবত মুসলমানদের আইসল্যান্ডে আসার প্রাচীনতম জানা উদাহরণটি ছিল ১৬২৭ সালে, যখন ডাচ মুসলিম জন জানসজুন এবং তার বারবারি জলদস্যুরা আইসল্যান্ডের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূল, ভেস্টমান্নায়েজার এবং পূর্ব ফজর্ডসহ কিছু অংশে অভিযান চালায়।[৯] এই ঘটনা আইসল্যান্ডের ইতিহাসে টাইর্কজারানি ("তুর্কি অপহরণ") নামে পরিচিত। আনুমানিক ৪০০-৮০০ আইসল্যান্ডবাসীকে হিসাবে বিক্রি করা হয়েছিল।
১৯৭০-এর দশকে ইসলাম আইসল্যান্ডীয় সংস্কৃতিতে উপস্থিতি অর্জন করতে শুরু করে, আংশিকভাবে ইসলামিক বিশ্ব থেকে অভিবাসনের মাধ্যমে (উদাহরণস্বরূপ সালমান তামিমি) এবং আংশিকভাবে ভ্রমণের সময় আইসল্যান্ডের লোকজনের ইসলামিক সংস্কৃতির সংস্পর্শে আসার মাধ্যমে (উদাহরণস্বরূপ ইব্রাহিম স্ভেরির আগনারসন)। কিছু অভিবাসী কেবল তাদের নিজস্ব ইচ্ছায় এসেছিল; অন্যরা শরণার্থী হিসেবে এসেছিল, যার মধ্যে কসোভোর দলও ছিল। [১০] কোরান প্রথম আইসল্যান্ডীয় অনুবাদ করা হয় ১৯৯৩ সালে। ২০০৩ সালে একটি সংশোধিত সংস্করণ বের করা হয়।[১১]
সালমান তামিমি অনুমান করেছেন যে ১৯৭১ সালে তিনি আইসল্যান্ডে আসার সময় সেখানে সম্ভবত সাতজন মুসলমান বাস করতেন।[১২] তবে ২০১৩ পর্যন্ত
আইসল্যান্ডে জন্মগ্রহণকারী মুসলমানদের প্রথম প্রজন্ম সম্ভবত সালমানের নিজের সন্তানদের বয়সের লোকদের দিয়ে শুরু হয়েছিল, যেমন ইউসেফ ইঙ্গি তামিমি (জন্ম ১৯৮৮)।[১৪] আইসল্যান্ডের মুসলিম জনসংখ্যা জাতি ও পরিবেশের যার মধ্যে আরব বিশ্ব, আলবেনিয়া, আফ্রিকা এবং আইসল্যান্ডে জন্মগ্রহণকারী ব্যক্তিরাও রয়েছে।[১৫]
মুসলিম এসোসিয়েশন অফ আইসল্যান্ড (Félag múslima á Íslandi) ১৯৯৭ সালে ফিলিস্তিনি অভিবাসী সালমান তামিমি দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়; এটি ২৫ শে ফেব্রুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃত হয়েছিল।[১৬] ২০১০ সাল থেকে সভাপতি ছিলেন ইব্রাহিম সোভেরির অ্যাগারসন।[১৭] ২০১৪ সালের হিসাবে, সমিতির সদস্য সংখ্যা ৪৬৫। অর্ধেকেরও বেশি আইসল্যান্ডে জন্মগ্রহণকারী; সম্ভবত ৪০-৫০ জন অমুসলিম পিতা মাতার ঘরে জন্ম হয়েছিল।[১৭]
মুসলিম এসোসিয়েশন অফ আইসল্যান্ড বর্তমানে রেইকিয়াভিক মসজিদ পরিচালনা করে, যা রেকজাভিকের ৩৮ নং আরমুলির একটি অফিস ভবনের তৃতীয় তলায় সুন্নি মসজিদ হিসাবে রয়েছে।[১৩] এখানে দুজন ইমাম রয়েছে এবং প্রতিদিন এবং রাত্রিকালীন প্রার্থনা প্রদান করে যেখানে স্থানীয় আইসল্যান্ডবাসী এবং সফরকারী মুসলমানদের মিশ্রণ রয়েছে। এটি জুমার জন্য সাপ্তাহিক শুক্রবারের নামাজ আদায় করে। ২০০০ সালে মুসলিম এসোসিয়েশন রেইকিয়াভিক মসজিদ নির্মাণের জন্য আবেদন করে; দীর্ঘ প্রক্রিয়ার পর, ৬ জুলাই, ২০১৩ তারিখে নির্মাণের অনুমতি দেওয়া হয়।[১৮]
ইবাদত বা খুতবা আরবি ভাষায় বলা হয়, কিন্তু মণ্ডলীর বৈচিত্র্যময় প্রকৃতির কারণে ইংরেজি এবং আইসল্যান্ডীয়ও ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। এসোসিয়েশন নিয়মিতভাবে আরবি এবং আইসল্যান্ডীয় উভয় ক্ষেত্রেই কোর্স পরিচালনা করে। শনিবারবিভিন্ন বয়সের বাচ্চাদের জন্য কুরআনের পাঠ রয়েছে।[১৫]
ইসলামী সাংস্কৃতিক কেন্দ্র আইসল্যান্ড (Menningarsetur múslima á Íslandi) ২০০৮ সালে করিম আসকারি দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, যিনি মূলত মরোক্কোর বাসিন্দা এবং ২০১৪ সাল পর্যন্ত এর সদস্য সংখ্যা ৩০৫ জন।[১৭] কেন্দ্রটি মূলত মিশর থেকে আসা আহমেদ সিদ্দিককে ২০১১ সালে ইমাম হিসাবে নিয়োগ করেছিল।[১৯]
আইসল্যান্ডের ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র রিকভাভিকের স্কাডগলির এমিশিশিতে একটি মসজিদ পরিচালনা করছে।[২০]
জাতিগত এবং ধর্মীয় গোষ্ঠীগুলোর প্রতি আইসল্যান্ডের মনোভাবের অন্যতম প্রধান গবেষক ক্রিস্টিন লফটসডোটির দেখেছেন যে আইসল্যান্ডের অনেক মানুষ ইসলামোফোবিয়ার সাথে যুক্ত অভিবাসী বিরোধী বক্তৃতা প্রদর্শন করে, যা অন্যান্য ইউরোপীয় দেশগুলোর সাথে সমান্তরাল ভাবে চলে, যদিও আইসল্যান্ডের ইসলামিক সংস্কৃতির সাথে যোগাযোগের প্রায় সম্পূর্ণ ভিন্ন ইতিহাস রয়েছে।[২১]
একবিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় দশকে ইসলামোফোবিয়ার অনেক প্রকাশ্য অভিব্যক্তি উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে রেইকিয়াভিক মসজিদ তৈরির বিরোধিতা করেছে। ইসলামের বিরোধিতা প্রায়শই লিঙ্গ সমতার সমর্থনের ক্ষেত্রে উপস্থাপন করা হয়। এটি এক ধরনের বয়ান বা ন্যারেটিভ যা ক্রিস্টিনরা সমাজ মূল্যায়নের জন্য 'সাধারণভাবে মুসলমানদের সমালোচনা এবং ইউরোপীয় সমাজের গৌরবের শ্রেষ্ঠত্ব উপর চিন্তা করার উপায় হিসাবে ব্যবহার করে'।[২২] আত্তার এম নরফজুরির ২০১০ সালের উপন্যাস Örvitinn eða; Hugsjónamaðurinn ইসলামোফোবিক মনোভাবকে ব্যঙ্গ করে রচিত।[২৩]
অনেক আইসল্যান্ডীয় মুসলমান ঈশ্বরের সাথে তাদের ব্যক্তিগত সম্পর্ককে বিবেচনা করে একটি আনুষ্ঠানিক সংগঠনে যোগদান না করা পছন্দ করে।[১২]
২০১১ সালে আইসল্যান্ডের মুসলমানরা আল জাজিরার চ্যানেলের আগ্রহ আকর্ষণ করে; চ্যানেলটি আইসল্যান্ড এবং নিউজিল্যান্ডের মুসলমানদের সাথে সম্পর্কিত একটি তথ্যচিত্র তৈরি করা পরিকল্পনা করে। আল জাজিরা উচ্চ অক্ষাংশে রমজানকে কীভাবে পালিত করা হয় তা নিয়ে আগ্রহী ছিল যেখানে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম ভূমির তুলনায় রাতটি অস্বাভাবিক দৈর্ঘ্যের হতে পারে।[২৪][২৫]