আইসল্যান্ডের ভূ-তাপীয় শক্তি

রেইকজানেস পাওয়ার স্টেশনের বাইরে জিওথার্মাল বোরহোল

আইসল্যান্ডে জিওথার্মাল শক্তি বলতে আইসল্যান্ডে জিওথার্মাল শক্তি ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদনকে বোঝায়। আইসল্যান্ডের বিশেষভাবে সক্রিয় ভূতত্ত্বের কারণে প্রাকৃতিক পরিবেশ এমনভাবে উপযুক্ত হয়েছে যে সেখানে জিওথার্মাল শক্তি জমা হয়ে থাকা সম্ভব।[] আইসল্যান্ডবাসীরা দীর্ঘদিন ধরে ঘর এবং স্নান ঘর গরম করতে জিওথার্মাল শক্তি প্রয়োগ সরাসরি ব্যবহার করছে।[] সাম্প্রতিক সময়ে আইসল্যান্ডে বিদ্যুৎ মূল্যের স্থিতিশীলতা এবং শক্তি উৎপন্নের স্বাধীনতা বাড়ানোর জন্য জিওথার্মাল শক্তির বিস্তৃত ব্যবহারের সূচনা হয়েছে। যার ফলে আইসল্যান্ড জিওথার্মাল শক্তি ব্যবহারের দিকে আরো নির্ভরশীল হয়ে উঠছে, যা বিদ্যুৎ উৎপাদনসহ সরাসরি প্রয়োগে ব্যবহৃত হচ্ছে। এইজন্য আইসল্যান্ডের কার্বন নিঃসরণ কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।[]

আইসল্যান্ড সরকারের অবিচ্ছিন্ন সমর্থনের কারণে জিওথার্মাল শক্তির বৃদ্ধি পাচ্ছে এমন দেশের তালিকায় এটি উল্লেখযোগ্য।[] ২০২০ সালের হিসাবে আইসল্যান্ডের স্থাপিত জিওথার্মাল শক্তি উৎপাদন ক্ষমতা ছিল ৭৯৯ মেগাওয়াট[] যা জিওথার্মাল শক্তি আইসল্যান্ডের মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনের এক চতুর্থাংশেরও বেশি উৎপন্ন করছে।[]

ভূতত্ত্ব

[সম্পাদনা]
উপরের ছবিতে আইসল্যান্ডের টেকটোনিক প্লেটের ফাটলগুলি দেখানো হয়েছে। NVZ, যা তাদের মধ্যে সবচেয়ে বড়, এটি আকুরেয়ারি থেকে রেইকজাভিক পর্যন্ত বিস্তৃত। এই ফাটলের সঙ্গে অনেক আগ্নেয়গিরি রয়েছে, যার মধ্যে ক্রাফলা, ফ্রেমরি-নামার, আস্কজা, টুঙ্গনাফেলসজোকুল, হেকলা, ভাট্নাফেল্ল, ক্যাটলা, টর্ফাজোকুল এবং এজ্যাফ্যাতলাজোকুল অন্যতম।

আইসল্যান্ডের অঞ্চল পৃথিবীর অন্যতম ভূতত্ত্বগতভাবে সক্রিয় এলাকা।[] দেশটি মিড-অ্যাটলান্টিক রিজের (একটি ফাটল যা মহাদেশীয় প্লেটগুলির মধ্যে রয়েছে) এবং একটি ভলকানিক হটস্পটের উপর অবস্থিত।[][] এইস্থানে উপাদানগুলির সংমিশ্রণ ঘটেছে, যা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য অগ্ন্যুৎপাত এবং জিওথার্মাল কার্যকলাপ সৃষ্টি করেছে।[] তাছাড়া দ্বীপটি ভূগর্ভস্থ জলাধারাও ধারণ করে যা বৃষ্টির মাধ্যমে স্থায়ীভাবে পূর্ণ হয়।[] দ্বীপের নিচে থাকা লাভা এই জলাধারগুলোকে শত শত ডিগ্রি ফারেনহাইট তাপমাত্রা পর্যন্ত উত্তপ্ত করে।[] কমপক্ষে ২৫টি এমন জিওথার্মাল জলাধার রয়েছে যা আগ্নেয়গিরির অঞ্চলের মধ্যে অবস্থান করে।[] আইসল্যান্ডের এসব প্রাকৃতিক ব্যপারগুলো জিওথার্মাল শক্তি উৎপাদনের জন্য অনুকূল বলা চলে।[]

ইতিহাস

[সম্পাদনা]

আইসল্যান্ডে ভূ-তাপীয় শক্তি

[সম্পাদনা]
Reykjavik-এর Laugardalslaug সুইমিং পুল এবং বাথ কমপ্লেক্সের একটি ছবি
আইসল্যান্ডে একটি ভূ-তাপীয়ভাবে গরম সুইমিং পুল কমপ্লেক্স

আইসল্যান্ডবাসীরা ভিকিং যুগ থেকে ভূ-তাপীয় শক্তি ব্যবহার করে আসছেন, যার প্রাথমিক ব্যবহারগুলোর মধ্যে ছিল কাপড় ধোয়া এবং স্নান করা।[] পরবর্তীতে, এটি ঘর গ্রীনহাউস এবং সুইমিং পুল গরম করতে, পাশাপাশি রাস্তা এবং সাইডওয়াক থেকে তুষার এবং বরফ সরাতে ব্যবহৃত হতে শুরু করে।[] আজকাল আইসল্যান্ডের কমপক্ষে ৯০% বাড়ি ভূ-তাপীয় শক্তি দিয়ে গরম করা হয়।[]

ব্লু লেগুন একটি ভূ-তাপীয় স্নানের একটি প্রধান উদাহরণ।[] এটি সমুদ্রের পানি এবং নিকটস্থ স্বার্তসেঙ্গি বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে নিষ্ক্রিয় পরিস্কার পানি মিশ্রিত করে। ব্লু লেগুনের আয়তন ৫,০০০ বর্গমিটার এবং এটি আইসল্যান্ডের সবচেয়ে জনপ্রিয় একটি পর্যটন আকর্ষণ কেন্দ্র।[]

যদিও ভূ-তাপীয় শক্তির আইসল্যান্ডে অনেক ধরনের ব্যবহার ছিল, তবে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য এর ব্যবহার সেখানে তুলনামূলকভাবে সম্প্রতি শুরু হয়েছে।[] ১৯৭০ সাল পর্যন্ত আইসল্যান্ডে ব্যবহৃত মোট শক্তির বেশিরভাগটাই জ্বালানী থেকে আসতো, সেই সময়ে জাতীয় সরকার দেশের শক্তির মূল্য বৈষম্য দূর করার জন্য কাজ শুরু করে।[][] ১৯৭০ সালে দেশের ন্যাশনাল এনার্জি অথরিটি অর্কুস্টোফন একটি প্রতিবেদন কমিশন করে, যা ভূ-তাপীয় শক্তি এবং হাইড্রোইলেকট্রিক উৎপাদন বাড়ানোর সুপারিশ করে। পাশাপাশি শক্তির মূল্য স্থিতিশীল করতে এবং দেশের বাহ্যিক শক্তি সম্পদে নির্ভরতা কমাতে সরকারকে পরামর্শ দেয়।[] ১৯৭৩ সালে একটি আন্তর্জাতিক শক্তি সংকট শুরু হয়, যা আইসল্যান্ডে তেল দামের অস্থিতিশীল করে তোলে এবং অনিশ্চিত শক্তি বাজারের মুখোমুখি দাড় করিয়ে দেয়।[] এই সংকট আইসল্যান্ডের সরকারের ভূ-তাপীয় শক্তির উৎসকে আরও জনপ্রিয় করে তোলে।[] এর ফলে পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি উৎপাদনের দ্রুত বৃদ্ধি শুরু হয়, যা অধিকাংশভাবে শক্তির স্বাধীনতা অর্জনের রাজনৈতিক আকাঙ্ক্ষা থেকে উদ্ভূত হয়। ১৯৭০ সালের শক্তি সংকটের কারণে এটি দ্রুততর হতে শুরু করে।[] তারপর থেকে আইসল্যান্ডের শক্তি স্বাধীনতা বাড়ানোর পাশাপাশি এটি দেশের বৈদ্যুতিক গ্রিডের ব্যাপক কার্বন মুক্তকরণে সাফল্য অর্জন করেছে।[]

সরকারী নীতি

[সম্পাদনা]
Nesjavellir ভূ-তাপীয় শক্তি প্ল্যান্ট থেকে রেইকিয়াভিকের দিকে একটি পাইপলাইন

আইসল্যান্ডের সরকারী নীতিগুলি শক্তি উৎপাদনে নবায়নযোগ্য শক্তি সম্পদের ব্যবহারকে দৃঢ়ভাবে উৎসাহিত করে। এই নীতিগুলো অতীতের শক্তি সমস্যাগুলোর উপর ভিত্তি করে তৈরি; যেমন ১৯৭০ সালে আইসল্যান্ডের সরকার তেল মূল্য বৃদ্ধির প্রতিক্রিয়ায় ডিসট্রিক হিটিং-এ তেলের পরিবর্তে ভূ-তাপীয় শক্তি ব্যবহার করতে শুরু করে।[] এর ফলে গরম করার খরচ উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যায় এবং অন্যান্য বেশিরভাগ দেশের তুলনায় কম খরচে কাজ হয়ে যায়।

ভূ-তাপীয় শক্তি প্রকল্পগুলোর উপর অগ্রগতি অব্যাহত থাকায়, ন্যাশনাল এনার্জি অথরিটি তাদের মাস্টার প্ল্যান তৈরি করে যা দুইটি পর্বে ভূ-তাপীয় শক্তি ব্যবহারের পরিকল্পনা করে।[] প্রথম পর্বটি ১৯৯৯–২০০৩ সালের মধ্যে অনুষ্ঠিত হয়, যা মূলত তথ্য সংগ্রহের উপর গুরুত্ব দিয়েছিল।[] দ্বিতীয় পর্বটি ২০০৪–২০০৯ সালের মধ্যে অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে প্রথম অংশের উপর আরও গবেষণা এবং পরবর্তী অংশে ভূ-তাপীয় ক্ষেত্র মূল্যায়ন করা হয়।[] মোট ২৪টি সম্ভাব্য ভূ-তাপীয় প্রকল্প মাস্টার প্ল্যানের অধীনে বিবেচনা করা হয়েছিল।[] বর্তমানে এই প্রকল্পগুলির অনেকটাই এখনও আইসল্যান্ডের পার্লামেন্ট দ্বারা বিবেচিত হচ্ছে।[১০]

সরকার এখনও সমস্ত গৃহস্থলিকে ভূ-তাপীয় শক্তি ব্যবহারের জন্য প্রবেশাধিকারের সুযোগ দিতে সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে, কারণ কিছু গ্রামীণ এলাকায় এখনো ভূ-তাপীয় গরম করার অবকাঠামো নেই।[] এই সমস্যার মোকাবেলায় আইসল্যান্ডের সরকার গ্রাম এবং গ্রামীণ এলাকার জন্য ভূ-তাপীয় শক্তির অবকাঠামো স্থাপনের জন্য গবেষণা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। ২০১৯ সালে হোফিন শহরের জন্য একটি ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ গরম পানি পরিবহন পাইপলাইন নির্মাণ করা হয়েছিল যাতে তাদের ১,৮০০ জন মানুষকে বিদ্যুৎ ব্যবহারের বিপরীতে গরম করার উৎস হিসেবে ভূ-তাপীয় শক্তি ব্যবহার করতে দেওয়া হয়।[]

আইসল্যান্ডের সরকার বিদেশী নীতিমালা এবং বিনিয়োগের মাধ্যমেও অন্যান্য দেশগুলোকে নবায়নযোগ্য শক্তি যেমন ভূ-তাপীয় শক্তি ব্যবহারে উৎসাহিত করতে কাজ করেছে। আইসল্যান্ডের একটি বিদেশী উদ্যোগ হল আফ্রিকান রিফট ভূ-তাপীয় উন্নয়ন সুবিধা প্রকল্প, যা ২০১০ সালে শুরু হয় এবং জাতিসংঘ পরিবেশ প্রোগ্রাম (UNEP) এর সহযোগিতায় ইথিওপিয়া, কেনিয়া এবং রুয়ান্ডা সহ দেশগুলিতে পরিচালিত হয়েছিলো।[১১] আইসল্যান্ড জাতিসংঘ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূ-তাপীয় প্রশিক্ষণ কর্মসূচির মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী ভূ-তাপীয় প্রকৌশলী প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রেও সাহায্য করেছে।[১১]

রিকইয়াভিকে একটি রাস্তায় ভূতাপীয় তুষার গলানোর পরিকাঠামোর উদাহরণ

আইসল্যান্ড একটি উচ্চ ভূতাপীয় অঞ্চলে অবস্থিত হওয়ায়, ২০২০ সালের হিসাবে দেশের মোট ব্যবহৃত শক্তির ৭০.৩৮% ভূতাপীয় উৎস থেকে এসে থাকে।[১২] এর মানে ১৭৩.২ পেটাজুল (৪৮,১০০ gigawatt-hour) মোট ২৪৬.১ পেটাজুল (৬৮,৪০০ gigawatt-hour) প্রাথমিক শক্তি যা আইসল্যান্ড ২০২০ সালে ব্যবহার করেছে তা ভূতাপীয় উৎস থেকে এসেছে।[১২] ভূতাপীয় শক্তি প্রধানত দুইভাবে ব্যবহৃত হয়: সরাসরি প্রয়োগ এবং পরোক্ষভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদনের মাধ্যমে।[১৩]

সরাসরি প্রয়োগ

[সম্পাদনা]

আইসল্যান্ডে অধিকাংশ ভূতাপীয় শক্তি গরমের কাজে ব্যবহৃত হয়।[১৩] ২০২০ সালের হিসাবে, ভূতাপীয় তাপের প্রধান ব্যবহার ঘর গরম করা (২৩,০৯৪ টেরাজুল (৬,৪১৫ gigawatt-hour)), এরপর উষ্ণ সুইমিং পুল (৩,৬২৮ টেরাজুল (১,০০৮ gigawatt-hour)), তুষার গলানো (২,০৩৬ টেরাজুল (৫৬৬ gigawatt-hour)), মাছ চাষ (১,৪০৪ টেরাজুল (৩৯০ gigawatt-hour)), গ্রীনহাউস (৪২৯ টেরাজুল (১১৯ gigawatt-hour)), এবং শিল্প ব্যবহারে (৩৯৩ টেরাজুল (১০৯ gigawatt-hour))।[১৪] যেহেতু এই ব্যবহারগুলো কেবল ভূতাপীয় তাপের উপর নির্ভরশীল, তাই এগুলোতে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সময় ঘটে যাওয়া শক্তি ক্ষতি হয় না। বরং অনেক সরাসরি প্রয়োগে পানি পরিবাহক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। আইসল্যান্ডের রাজধানী রিকইয়াভিক-এ, ১০০° থেকে ৩০০°সে তাপমাত্রার গরম পানি বাড়ি গরম করতে ব্যবহৃত হয়, তারপর রাস্তা ও ফুটপাতের নিচে থাকা প্লাস্টিকের পাইপে ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস (৮৬ ডিগ্রি ফারেনহাইট) তাপমাত্রায় প্রবাহিত হয়ে তুষার ও বরফ গলাতে ব্যবহৃত হয়।[১৫]

আইসল্যান্ডের বিদ্যুৎ উৎপাদনের উৎস অনুযায়ী বিভাজন

বিদ্যুৎ উৎপাদন

[সম্পাদনা]

আইসল্যান্ড সম্প্রতি বিদ্যুৎ উৎপাদনে আত্মনির্ভরশীল হয়েছে, যেখানে দেশের বিদ্যুতের চাহিদা প্রধানত ভূতাপীয় ও জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের মাধ্যমে পূরণ করা হচ্ছে।[] ২০২০ সালে আইসল্যান্ডের ৯৯.৯৪% বিদ্যুৎ জলবিদ্যুৎ ও ভূতাপীয় উৎস থেকে উৎপাদিত হয়েছে, যেখানে যথাক্রমে ১৩,১৫৭ এবং ৫,৯৬১ গিগাওয়াট-ঘণ্টা উৎপাদিত হয়েছে।[] ভূতাপীয় শক্তি আইসল্যান্ডের মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনের এক চতুর্থাংশেরও বেশি।[১৬]

তবে ২০২১ সালের গ্রীষ্মকালে খরার কারণে জলবিদ্যুৎ উৎপাদনে জলাধারের স্তর কমে যায় এবং দেশের বিদ্যুতের চাহিদা বেড়ে যায়, ফলে বিদ্যুৎ সংকট তৈরি হয়।[১৭] এই সংকট মোকাবেলায় আইসল্যান্ড সরকার কিছু শিল্পে বিদ্যুৎ সরবরাহ কমাতে বাধ্য হয়।[১৭] জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের তারতম্য থেকে সৃষ্ট এই সংকট আইসল্যান্ডকে বিদ্যুৎ উৎপাদন অবকাঠামো সম্প্রসারণ বিবেচনা করতে বাধ্য করেছে।[১৭]

বিদ্যুৎ উৎপাদন অবকাঠামো

[সম্পাদনা]

আইসল্যান্ডের জাতীয় জ্বালানি কর্তৃপক্ষের মতে ২০২০ সালে আইসল্যান্ডের ভূতাপীয় স্থাপনাগুলোর মোট ইনস্টল্ড ক্যাপাসিটি ছিল ৭৯৯ মেগাওয়াট (MWe), যা আইসল্যান্ডের মোট বিদ্যুৎ সক্ষমতার ২৫.৯% প্রতিনিধিত্ব করে। এই হিসাবটি জলবিদ্যুৎ, বায়ু শক্তি, এবং জীবাশ্ম জ্বালানির পাশাপাশি ছিল।[]

ক্রাফলা ভূতাপীয় বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্যানোরামিক ছবি
ক্রাফলা ভূতাপীয় বিদ্যুৎকেন্দ্র

আইসল্যান্ডের একটি জ্বালানি পরামর্শ প্রতিষ্ঠান আস্কজা এনার্জি পার্টনারসের মতে, আইসল্যান্ডের বৃহত্তম ভূতাপীয় বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো মালিকানা ও পরিচালনা করে তিনটি প্রতিষ্ঠান: এইচএস অরকা, অরকা পাওয়ার, এবং ল্যান্ডসিভিরজুন (আইসল্যান্ডের জাতীয় বিদ্যুৎ কোম্পানি)।[১৮][১৯]

নীচে ২০২০ সালের আইসল্যান্ডের ভূতাপীয় বিদ্যুৎ উৎপাদনে অবদান রাখা নয়টি প্রধান বিদ্যুৎকেন্দ্রের তালিকা দেওয়া হলো; প্রতিটির মালিকানাও উল্লেখ করা হয়েছে:

২০২০ সালের আইসল্যান্ডের ভূতাপীয় বিদ্যুৎ কেন্দ্রসমূহ
নাম ক্ষমতা (MWe)[] মালিকানা[১৮]
হেল্লিশেইদি ৩০৩.৪ ON Power
নেসজাভেল্লির ১২০ ON Power
রেইক্যনেস ১০০ HS Orka
থেইস্তারেইকির ৯০ Landsvirkjun
সভার্টসেঙ্গি ৭৬.৪ HS Orka
ক্রাফলা ৬০ Landsvirkjun
বিয়ারনারফ্ল্যাগ Landsvirkjun[২০]
হুসাভিক Wasabi Energy[২১]
ফ্লুথির ০.৬ Varmaorka[২২]

রেইক্যাভিকে হাইড্রোজেন সালফাইড (H2S) নির্গমনকারী দুটি নিকটবর্তী ভূতাপীয় বিদ্যুৎ কেন্দ্র, হেল্লিশেইদি এবং নেসজাভেল্লির স্থানীয় বাসিন্দাদের স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব ফেলতে পারে।[২৩][২৪] ২০১২ সালে আইসল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, রেইক্যাভিকে H2S ঘনত্বের জন্য জাতীয় ২৪-ঘণ্টার স্বাস্থ্য সীমা (৫০ μg m−৩) অতিক্রমকারী আবহাওয়াজনিত ঘটনা গড়ে বছরে দুইবার ঘটতে পারে।[২৪]

আইসল্যান্ড আইসল্যান্ড ডিপ ড্রিলিং প্রকল্পের মতো ভূতাপীয় জ্বালানি গবেষণা প্রকল্পে বিনিয়োগ করছে।[২৫] যদি সফল হয়, IDDP দ্বারা উন্নত প্রযুক্তি বর্তমান ভূতাপীয় শক্তি প্রযুক্তির চেয়ে দশগুণ বেশি শক্তি উৎপাদন করতে সক্ষম হবে।[২৫][২৬] আইসল্যান্ডের রেইক্যনেস উপদ্বীপে আগ্নেয়গিরির নিচে ১৫,০০০ ফুট (৪.৫ কিমি) গভীরে খনন করে গবেষকরা ভূতাপীয় শক্তি আহরণের জন্য সুপারক্রিটিক্যাল তরল ব্যবহারের সম্ভাবনা অনুসন্ধান করছেন।[২৬] যদি সফল হয় IDDP-এর মতো প্রকল্পগুলো ভূতাপীয় উপায়ে আইসল্যান্ডের বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়িয়ে তুলবে।[২৬]

আরও দেখুন

[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. Mims, Christopher (২০ অক্টোবর ২০০৮)। "ওয়ান হট আইল্যান্ড: আইসল্যান্ডের পুনঃনবীকরণযোগ্য জিওথার্মাল শক্তি"Scientific American (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১০-২৫ 
  2. Kristjánsdóttir, Helga (২০১৫), Kristjánsdóttir, Helga, সম্পাদক, "দ্য জিওথার্মাল সোর্স", Sustainable Energy Resources and Economics in Iceland and Greenland, SpringerBriefs in Energy (ইংরেজি ভাষায়), Cham: Springer International Publishing, পৃষ্ঠা ৪১–৬৩, আইএসবিএন 978-3-319-15174-8, ডিওআই:10.1007/978-3-319-15174-8_5, সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১০-২৫ 
  3. Melsted, Odinn (২০২১-১০-০২)। "ফসিল জ্বালানি নির্মূল: আইসল্যান্ডের কয়লা এবং তেল থেকে জিওথার্মাল জেলা গরমকরণের দিকে ১৯৩০–১৯৮০"। History and Technology৩৭ (৪): ৫২৭–৫৪৭। আইএসএসএন 0734-1512এসটুসিআইডি ২৪৭২৫৭৫৯৯ Check |s2cid= value (সাহায্য)ডিওআই:10.1080/07341512.2022.2033386অবাধে প্রবেশযোগ্য 
  4. "জিওথার্মাল"National Energy Authority of Iceland (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১১-০৪ 
  5. "আইসল্যান্ডে শক্তির পরিসংখ্যান ২০২০" (পিডিএফ)Orkustofnun। সেপ্টেম্বর ২০২১। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১০-২৬ 
  6. থোর্ডারসন, থর (জুন ২০১২)। "আইসল্যান্ডের ভূতত্ত্বের সারাংশ" (পিডিএফ)আমেরিকান জিওফিজিক্যাল ইউনিয়ন চ্যাপম্যান কনফারেন্স অন ভলকানিজম অ্যান্ড দ্য অ্যাটমস্ফিয়ার। ২০১৬-০৩-২৭ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। 
  7. রাগনারসন, আর্নি; স্টেইনগ্রিমসন, বেনেডিক্ট; থোরহালসন, সভারির (২০২১)। "আইসল্যান্ডে জিওথার্মাল উন্নয়ন ২০১৫-২০১৯" (পিডিএফ)প্রোসিডিংস ওয়ার্ল্ড জিওথার্মাল কংগ্রেস ২০২০+১ 
  8. Logadóttir, Halla Hrund (ডিসেম্বর ২০১৫)। "Iceland's Sustainable Energy Story: A Model for the World?"United Nations (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১০-২৯ 
  9. "Master Plan"National Energy Authority of Iceland (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১১-০৫ 
  10. "The Master Plan today"Rammaáætlun (আইসল্যান্ডীয় ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১১-০৫ 
  11. "Iceland, a world leader in clean energy, supports Africa's push for geothermal power"UNEP (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২০-০৬-২৪। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১০-২৫ 
  12. "Primary Energy Use in Iceland 1940-2020" (পিডিএফ)Orkustofnun। ২০২১-০৫-২৬। 
  13. "Direct Use of Geothermal Resources"National Energy Authority of Iceland (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১০-৩১ 
  14. "Final Heat Use in Iceland 2019 by District Heating Area" (পিডিএফ)Orkustofnun। ২০২০-১২-০১। 
  15. "Heated sidewalks: Iceland has them, Saskatoon wants them"CBC News। ২০১৩-১২-১১। 
  16. Kjeld, Alexandra; Bjarnadottir, Helga Johanna; Olafsdottir, Ragnheiður (২০২২-১১-০১)। "Life cycle assessment of the Theistareykir geothermal power plant in Iceland"। Geothermics (ইংরেজি ভাষায়)। 105: 102530। আইএসএসএন 0375-6505ডিওআই:10.1016/j.geothermics.2022.102530অবাধে প্রবেশযোগ্যবিবকোড:2022Geoth.10502530K 
  17. Sigurdardottir, Ragnhildur (২০২২-০৪-০৯)। "Geothermal Powerhouse Iceland Hit by Lack of Electricity"Bloomberg। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১০-২৪ 
  18. "Power Plants"Askja Energy - The Essential Perspective on Energy in the Northern Atlantic and Arctic Region (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১১-১১-১০। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১১-০৪ 
  19. "Landsvirkjun.com - The National Power Company of Iceland"landsvirkjun.com (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১১-০৫ 
  20. "Bjarnarflag Power Station - The National Power Company of Iceland"landsvirkjun.com (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১১-০৪ 
  21. GeoEnergy, Think (২০১১-০১-১০)। "Wasabi Energy acquires Husavik Kalina Geothermal Power Plant in Iceland | ThinkGeoEnergy - Geothermal Energy News" (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১১-০৪ 
  22. "New small-scale Geothermal Power Plant | News"EFLA-engineers.com (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১১-০৪ 
  23. Finnbjornsdottir, R. G.; Oudin, A.; Elvarsson, B. T.; Gislason, T.; Rafnsson, V. (২০১৫-০৪-০৮)। "Hydrogen sulfide and traffic-related air pollutants in association with increased mortality: a case-crossover study in Reykjavik, Iceland"BMJ Open (ইংরেজি ভাষায়)। 5 (4): e007272। আইএসএসএন 2044-6055ডিওআই:10.1136/bmjopen-2014-007272পিএমআইডি 25854971পিএমসি 4390682অবাধে প্রবেশযোগ্য 
  24. Olafsdottir, S.; Gardarsson, S. M. (২০১৩-১০-০১)। "Impacts of meteorological factors on hydrogen sulfide concentration downwind of geothermal power plants"Atmospheric Environment (ইংরেজি ভাষায়)। 77: 185–192। আইএসএসএন 1352-2310ডিওআই:10.1016/j.atmosenv.2013.04.077বিবকোড:2013AtmEn..77..185O 
  25. Baraniuk, Chris (২১ ডিসেম্বর ২০১৬)। "The most extreme geothermal plant in the world"bbc.com (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১০-২৫ 
  26. Worland, Justin (জুলাই ২৫, ২০১৭)। "A Solution to Our Clean Energy Problem May Lie Right Beneath Our Feet"Time (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১০-২৫ 

বহিঃসংযোগ

[সম্পাদনা]