গ্রিক পুরাণের, আগামিডিস (Agamedes) /ˌæɡəˈmiːdiːz/ ( প্রাচীন গ্রিক: Ἀγαμήδης , Agamēdēs) ছিলেন আরগিনাসের পুত্র (কিছু কিছু ঐতিহ্য অনুসারে স্টিমফ্যালাসের পুত্র ও আরকাসের প্রপৌত্র)।[১]
আগামিডিস তার স্ত্রী এপিকাস্টার দ্বারা সারসিয়নের পিতা হন। এপিকাস্টার দ্বারা তার ট্রোফোনিয়াস নামে এক সৎপুত্রও হয়, অ্যাপোলোকে যার আসল পিতা বলে দাবি করা হয়। অন্যদের মতে, আগামিডিস ছিলেন অ্যাপোলো ও এপিকাস্টা, অথবা জিউস ও জোকাস্টার সন্তান, এবং ট্রোফোনিয়াসের পিতা। তবে সবচেয়ে জনপ্রিয় নথি অনুযায়ী ট্রোফোনিয়াস এবং আগামিডিস দুই ভাই।
গ্রিক পুরাণে স্থপতি হিসেবে দুই ভাইয়ের সুনাম আছে, বিশেষ করে মন্দির ও প্রাসাদ নির্মাণের ক্ষেত্রে। তারা অ্যাপলোর মন্দিরটি নির্মাণ করেছিলেন যেখানে ডেলফির ওরাকল বাস করত। [২][৩] সিসেরো বর্ণিত একটি কাহিনী অনুসারে, মন্দিরটি নির্মাণের পর আগামিডিস ও ট্রোফোনিয়াস দেবতার কাছে তাদের শ্রমের পুরস্কার হিসেবে একজন মানুষের জন্য সর্বোত্তম পুরস্কার চান। [৪] ওরাকল এই ভাইদেরকে বলেন, তারা ৬ দিন ধরে যা খুশি ইচ্ছা করতে পারেন, এবং ৭ম দিনে এগুলোর সর্বোত্তমটি পূরণ হবে। তারা তাই করে এবং সপ্তম দিনে তাদের মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। এই গল্পটি থেকে "দেবতারা যাদের ভালোবাসেন তাদেরকে তাড়াতাড়ি তুলে নেন" প্রবাদটি এসেছে। [৫]
তারা বিওটিয়ায় হিরিয়ার রাজা হিরিয়াসের কোষাগারও নির্মাণ করেছিলেন। Scholiast উপর অ্যারিস্টোফেনিসের উপর খারাক্স ও পারগামামের রচিত স্কোলিয়ায় ভিন্ন রকমের কাহিনী পাওয়া যায়, এবং সে অনুসারে তারা রাজা অজিয়াসের কোষাগার নির্মাণ করেন।[৬] পসানিয়াস (ভুগোলবিদ) এই কোষাগার নিয়ে যে কাহিনী রচনা করেন হেরোডোটাস তাকে মিশরীয় রাজা রাম্পসিনিতের কোষাগারের কাহিনীর সাথে সম্পর্কিত করেছেন।[৭] হাইরিয়াসের কোষাগারটি নির্মাণের সময় আগামিডিস এবং ট্রফোনিয়াস একটি পাথরকে এমনভাবে স্থাপন করেছিলেন যাতে এটি বাইরে সরিয়ে নেওয়া যেতে পারে, এরফলে সেই কোষাগারে প্রবেশের পথ তৈরি হয়ে যায়, কিন্তু কেউই তা টের পায়না। আগামিডিস ও ট্রফোনিয়াস ক্রমাগত কোষাগার লুঠ করতে থাকে; এদিকে রাজাও বুঝতে পারছেন যে তার কোষাগার লুণ্ঠিত হচ্ছে কিন্তু কোষাগারের তালা বা সিল অক্ষত। তাই তিনি চোরকে ধরতে কোষাগারের মধ্যে ফাঁদ পাতেন। আগামিডিস এই ফাঁদে ধরা পড়েছিলেন এবং ট্রফিনিয়াস আগামিডিসের পরিচয় গোপন রাখতে তার মাথা কেটে নিয়েছিলেন।
এর পরে, ট্রফোনিয়াসকে তৎক্ষণাৎ পৃথিবী গ্রাস করে নেয়। যে স্থানে পৃথিবী তাকে গ্রাস করে, পরবর্তীতে সেই ল্যাবাডিয়ার গর্তই আগামিডিসের গুহা নামে পরিচিতি লাভ করে, যার পাশে একটি স্তম্ভ ছিল। এখানে ট্রফোনিয়াসের ওরাকলও প্রতিষ্ঠিত ছিল, এবং যারা এই ওরাকলের পরামর্শ নিতে আসত তাদেরকে প্রথমে আগামিডিসের গুহায় ভেড়া নিক্ষেপের মাধ্যমে ভেড়াকে উৎসর্গ করতে হত, এবং এভাবে আগামিডিসকে আহ্বান করতে হত।[৮]
পণ্ডিতদের মধ্যে কারও কারও মতে এই কাহিনী গ্রিস থেকে মিশরে গিয়েছিল, আবার কারও কারও মতে এই কাহিনী মিশর থেকেই গ্রিসে এসেছিল। তবে মুলার বলেন, এই কাহিনীটির উদ্ভব হয়েছিল মিনীয়দের মধ্যে। সেখান থেকে এটি অজিয়াসের কাছে যায়, এবং যে মিশরের রাজা ১ম সামটিকের রাজত্বের সময় গ্রিক ও মিশরীয়দের মধ্যে মিথোস্ক্রিয়ার সূচনা ঘটে তার অনেক পুর্বেই কাহিনীটি গ্রিস জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছিল।
আগামিডিসের পুত্র ছিলেন সারসিয়ন। সার্সিয়নের পুত্র ছিলেন হিপ্পোথুয়াস। ক্যালডনীয় শূকর বধের জন্য মেলিজার যে বীরদের একটি দল পরিচালনা করেছিলেন তার মধ্যে হিপ্পোথুয়াস ছিলেন। পরবর্তিতে ট্রয়ের যুদ্ধে আর্কাডিয়ার রাজা আগাপিনর গ্রিকদের পক্ষে অংশগ্রহণ করেছিলেন। ফিরে আসার সময় তিনি সাইপ্রাসের তীরের নিকট ঝড়ে আটকা পড়েন এবং ফলে তিনি আর্কাডিয়ায় ফিরে না এসে সাইপ্রাসেই পাফস নামে এক নতুন নগর স্থাপন করে সেখানে থেকে যান। রাজা আগাপিনর আর্কাডিয়ায় ফিরে না আসার ফলে হিপ্পোথুয়াস আর্কাডিয়ার রাজা হন। হিপ্পোথুয়াসের মৃত্যুর পর তার পুত্র দ্বিতীয় ঈপিটাস আর্কাডিয়ার রাজা হন।[৯][১০]