ইউনাইটেড প্রভিন্স অফ আগ্রা অ্যান্ড আঔধ | |||||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
ব্রিটিশ রাজের অধীনে ভারতের ব্রিটিশ ইন্ডিয়ার অধীনে প্রভিন্স ও প্রেসিডেন্সি গুলি | |||||||||
১৯০২–১৯২১ | |||||||||
ইউনাইটেড প্রভিন্সের মানচিত্র ,১৯০৯ | |||||||||
রাজধানী | এলাহাবাদ | ||||||||
ইতিহাস | |||||||||
• প্রতিষ্ঠিত | ১৯০২ | ||||||||
• বিলুপ্ত | ১৯২১ | ||||||||
| |||||||||
বর্তমানে যার অংশ | উত্তরপ্রদেশ উত্তরাখন্ড |
১৯০২ থেকে ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত দ্য ইউনাইটেড প্রভিন্স অফ আগ্রা অ্যান্ড ঔধ ছিল ব্রিটিশের অধীনে একটি প্রদেশ। সরকারীভাবে ভারত সরকার আইন ১৯৩৫ দ্বারা নাম ছোট করে এটিকে রাখা হয় ইউনাইটেড প্রভিন্স(ইউপি) । এই প্রদেশটির নাম ১৯৫০ সাল পর্যন্ত এই নামেই ডাকা হতো । এটি বর্তমান ভারতের উত্তরপ্রদেশ (ইউপি) এবং উত্তরাখন্ড নিয়ে গঠিত । এলাহাবাদ ছিল প্রদেশের রাজধানী এবং প্রশাসনিক সদর দপ্তর । ১৮৫৬ থেকে ১৯০২ সাল পর্যন্ত এই প্রদেশের দুটি পৃথক অঞ্চল ছিল একটি উত্তর-পশ্চিম প্রদেশ এবং অন্যটি ঔধ রাজ্য ।
অষ্টাদশ শতাব্দীর মধ্যে এককালের বিশাল মুঘল সাম্রাজ্য ভেঙে পড়তে শুরু করেছিল । অবশ্য এর পিছনে যেসব কারণ গুলি বর্তমান ছিল সেগুলি হল আভ্যন্তরীন বিভেদ, ডেকান থেকে মারাঠাদের আক্রমণ , বঙ্গ থেকে ব্রিটিশদের আক্রমণ , আফগানিস্তান থেকে আফগানরা সাম্রাজ্য বাড়িয়ে আসছিল । এই শতাব্দীর মাঝামঝি বর্তমানের উত্তরপ্রদেশ রাজ্য বেশ কয়েকটি রাজ্যে বিভক্ত ছিল । কেন্দ্রে ও পুর্বে নবাব দ্বারা শাসিত ছিল যা মুঘল সম্রাটের কাছে দায়বদ্ধ ছিল , যদিও তিনি স্বাধীন ছিলেন । উত্তরে আফগান শাসিত রোহিলাখন্ড , দক্ষিণে মারাঠা শাসিত বুন্দেলখন্ড , মোঘল সাম্রাজ্য নিয়ন্ত্রণ করত সমগ্র দোয়াব অঞ্চল (গঙ্গা ও যমুনা নদীর মধ্যবর্তী অঞ্চল) পাশাপাশি দিল্লী কেও শাসন করত।
১৭৬৫ সালে , ঔধ এবং মোগল সম্রাটের সম্মিলিত বাহিনী বক্সারের যুদ্ধে ব্রিটিশদের সাথে লড়াই করেছিল । এতে ব্রিটিশরা জয়লাভ করেছিল । কিন্তু তারা কোন অঞ্চল অধিগ্রহণ করেনি । সমগ্র ঔধ নবাব কে ফিরিয়ে দিয়েছিল , মুঘল সম্রাট শাহ আলম কে ব্রিটিশ সেনা দ্বারা এলাহাবাদের সুবা এবং নিম্ন দোয়াব অঞ্চলের সুবা ফিরিয়ে দিয়েছিল । গভর্নর-জেনারেল ওয়ারেন হেস্টিংস জয়ের সময় রোহিলা যুদ্ধের জন্য শাহ আলম কে সেনা দিয়ে সাহায্য করেন । এতে শাহ আলম নিজেকে মারাঠাদের ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হন এবং এলাহাবাদ ও কোরা পর্যন্ত নিজের অঞ্চল বৃদ্ধি করেন । এই সময়েই ব্রিটিশরা নবাবের কাছ থেকে বেনারস প্রদেশ টি গ্রহণ করেন ।
পরবর্তীকালে, লর্ড ওয়েলেসলির ( গভর্নর-জেনারেল ১৭৯৭-১৮০৫) না হওয়া পর্যন্ত বিশেষ কিছু পরিবর্তন ঘটেনি । তিনি দুটি ধাপে এই অঞ্চলটি লাভ করেছিলেন ১৮০১ সালে ঔধের নবাবের কাছ থেকে নিম্ন দোয়াব অঞ্চলের রোহিলাখন্ড লাভ করেছিলেন ও গোরখপুর বিভাগ লাভ করেন । এভাবে ঔধের কেবলমাত্র উত্তরাংশ বাদে চারদিক দিয়ে ঘিরে নিয়েছিলেন । ১৮০৪ সালে দ্বিতীয় ইঙ্গ-মারাঠা যুদ্ধে লর্ড লেকের বিজয়ের ফল স্বরূপ বুন্দেলখন্ডের কিছু অংশ , আগ্রা সহ দোয়াবের বাকী অংশ , এবং সিন্ধিয়া থেকে দিল্লী বয়স্ক ও অন্ধ সম্রাট শাহ আলমের অভিভাবকত্ব পেয়ে ছিলেন । ১৮১৫ সালে গোর্খা যুদ্ধে কুমায়ুন বিভাগ জয়লাভ করে । ১৮১৭ সালে মারাঠা পেশোয়াদের কাছ থেকে বুন্দেলখন্ডের বাকী অংশ জয়লাভ করে । এইসব নতুন অধিগৃহীত যেগুলি সমর্পিত এবং জয়যুক্ত প্রদেশ বাংলার অংশ হিসেবে গভর্নর জেনারেল দ্বারা চালিত হতে থাকে। ১৮৩৩ সালে পার্লামেন্টে একটি আইন পাস হয় যাতে আগ্রাকে রাজধানী করে নতুন একটি প্রেসিডেন্সি গঠন করা হয়। কিন্ত এটি পুরোপুরি কার্যকর হয়নি। ১৮৩৫ সালে নতুন একটি আইন প্রণয়ন হয় যাতে উত্তর-পশ্চিমের জন্য একজন লেফটেন্যান্ট গভর্নর নিয়োগ করা হয় কারণ তারা ততক্ষনে পরিচিত ছিল ।
উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রভিন্সের মধ্যে দিল্লী ,গুরগাঁও অন্তর্ভুক্ত ছিল । যদিও ১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহের পর এদের পাঞ্জাবে স্থানান্তরিত করা হয়েছিল । এবং তাছাড়াও (১৮৫৩ সালের পরে ) সাগর এবং নেরবুদ্দা অঞ্চল গুলি যা ১৮৬১ সালে কেন্দ্রীয় প্রদেশের অংশ হয়ে যায় । ঔধের নবাব স্বাধীন থেকে যায় , যাকে ১৮১৯ সালে রাজা উপাধি গ্রহণের অধিকার দেওয়া হয় । ১৮৫৬ আলে ঔধ জয়লাভের পরে তাকে নিয়ে নতুন একটি আলাদা কমিশনারশিপ গঠিত হয় । এরপর ১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহের পরে এক সময়ের জন্য দুটি প্রদেশের বৃহত্তর অংশে রাজ করছিল । আগ্রা দুর্গ বন্ধ হয়ে থাকার সময় লেফটেন্যান্ট গভর্নর মারা গিয়েছিলেন । আঠারো মাস ধরে বেশ কয়েকটি প্রচার চালানোর পরে ঔধকে পুনরুদ্ধার করা হয়েছিল ।
১৮৭৭ সালে উত্তর-পশ্চিম প্রদেশের লেফটেন্যান্ট গভর্নর এবং ঔধের চিফ কমিশনারের কার্যালয় একই ব্যক্তির সাথে মিলিত হয়েছিল । এই নিয়মটি ব্রিটিশ প্রশাসনে প্রচলিত ছিল এবং এটি "ডাবল-হ্যাটিং" নামে পরিচিত । ১৯০২ সালে যখন আগ্রা এবং ঔধের ইউনাইটেড প্রদেশগুলির নতুন নামটি প্রবর্তিত হয়েছিল তখন চিফ কমিশনারের খেতাব বাতিল করা হয়েছিল । যদিও সেই সময় ঔধ তার পূর্বের স্বাধীনতার কিছু চিহ্ন বজায় রেখেছিল। ১৯৩৫ সালে প্রদেশটির সরকারী নামটি সংক্ষিপ্ত করে ইউনাইটেড প্রভিন্স (ইউপি) করা হয়েছিল ।
ইউনাইটেড প্রভিন্স টি ১৯৪৭ সালে সদ্য স্বাধীন ভারতের একটি প্রদেশে পরিণত হয় । ১৯৫০ সালের ২৬ জানুয়ারি ভারতের নতুন সংবিধান কার্যকর হওয়ার পরে এটি উত্তর প্রদেশ নামে একটি রাজ্যে পরিণত হয়েছিল । ২০০০ সালে রাজ্যের কিছু অংশ উত্তরাঞ্চল রাজ্যটির নতুন রাজ্য গঠনের জন্য বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় । পরে নাম পরিবর্তন করে উত্তরাখণ্ড নামকরণ করা হয় ।
প্রদেশগুলি উত্তর দিকে তিব্বত দ্বারা এবং উত্তর-পূর্বে নেপাল দ্বারা ঘেরা ছিল । পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব দিকে চম্পারান , সরণ , শাহাবাদ এবং বাংলার পালামৌ জেলা , দক্ষিণে ছোটনাগপুর রাজ্যের কেন্দ্রীয় প্রদেশের দুটি নাগপুর রাজ্য , রেওয়া এবং মধ্য ভারতের কিছু ছোট রাজ্য কানপুরের প্রযুক্তি প্রবর্তক জেলা , পশ্চিমে গোয়ালিয়র , ধোলপুর এবং ভরতপুর রাজ্যগুলি , গুরগাঁও জেলাগুলি , দিল্লি , কর্ণাল এবং পাঞ্জাবের আম্বালা এবং সিরমুর ও জুব্বাল জেলাগুলি । যমুনা নদী পশ্চিম সীমান্তে , দক্ষিণের গঙ্গার অংশ এবং পূর্বে গন্ডক অংশ দ্বারা সীমানা গঠন করেছিল । জেলা সমীক্ষা অনুসারে দুটি প্রদেশের ক্ষেত্রগুলি বর্গমাইলে : আগ্রা, ৮৩,১৯৮; অযোধ্যার, ২৩,৯৬৬ ; মোট, ১০৭,১৬৪,৯০৪৪, কিছু নদী নালাগুলি দ্বারা জেলার সীমানা গঠন করে । জেলার বিবরণ থেকে বাদ যায় ০৪১ । মোট ক্ষেত্রফল ১,০৭,৪৯৪ বর্গমাইল (২,৭৮,৪১০ কিমি২) । প্রদেশগুলি (রামপুর এবং তেহরি) এ দুটি নেটিভ রাজ্যের ক্ষেত্রফল ৫,০৭৯ বর্গমাইল (১৩,১৫০ কিমি২) এর বেশি । আগ্রা প্রেসিডেন্সি প্রথম ১৮৩৪ সালে গঠিত হয়েছিল । ততদিন পর্যন্ত এই অঞ্চলটি আলাদা করে বাংলার প্রেসিডেন্সিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল । যাকে কখনও কখনও ওয়েস্টার্ণ প্রভিন্স বলা হত । এই ইউনাইটেড প্রদেশটি চারটি বড় জেলা নিয়ে গঠিত । সেগুলি হিমালয়ের কিছু অংশ , উপ-হিমালয়ের ট্র্যাক্টস , বৃহত্তর গাঙ্গেয় সমভূমি এবং মধ্য ভারতের পার্বত্য ব্যবস্থার কিছু অংশকে অন্তর্ভুক্ত করেছিল । [১]
ইউনাইটেড প্রদেশগুলি আগ্রা এবং ঔধে ৪৮ টি জেলার সাথে ৯ টি বিভাগ অন্তর্ভুক্ত ছিল ।